bayyinaat

Published time: 13 ,November ,2018      20:12:32
রাসূল (সা.) এর সাহাবাদের প্রকারভেদ ও তাদের থেকে বর্ণিত হাদিসের বিভিন্নতা

ইমাম আলী মানুষের হাতে বিদ্যমান হাদীসসমূহকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করেছেন এবং এ বিষয়ে কেন মতপার্থক্য হয়েছে তার কারণও নিম্নের বাণীতে বর্ণনা করেছেন : নিশ্চয় মানুষের হাতে যা রয়েছে তার মধ্যে সঠিক ও ভ্রান্ত, সত্য ও মিথ্যা, রহিত ও রহিতকারী, সার্বিক ও বিশেষ, দ্ব্যর্থহীন (স্পষ্ট) ও বিভিন্ন অর্থবাহী (সংশয় উদ্দীপক) এবং সঠিকভাবে সংরক্ষিত ও ভুল ধারণাপ্রসূত বিষয় মিশ্রিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর ওপর তাঁর জীবদ্দশায়ই মিথ্যা আরোপ করা হতো। এ কারণে তিনি একদিন বক্তব্য দানকালে বলেন : হে লোকসকল! আমার ওপর মিথ্যা আরোপকারীদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। যে কেউ আমার ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা আরোপ করবে সে জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্ধারণ করবে। তাঁর ইন্তেকালের পরও তাঁর ওপর মিথ্যারোপ (অব্যাহত রয়েছে ও) করা হয়েছে। তোমাদের নিকট চার ধরনের ব্যক্তি হাদীস বর্ণনা করে থাকে এর বাইরে পঞ্চম কোন প্রকার নেই।

রাসূল (সা.) চার ধরনের ব্যক্তি হাদীস বর্ণনা করে থাকে মুনাফিক ব্যক্তি, অনিচ্ছাকৃত ভুলকারী, হাদিসের সার্বিক দিক সম্পর্কে অজ্ঞাত ব্যক্তি, সত্যপরায়ন সঠিক বর্ণনাকারী। তাদের মধ্যে কেবল চতুর্থ দলের হাদিস গ্রহণযোগ্য।
সংবাদ: 106
ইমাম আলী মানুষের হাতে বিদ্যমান হাদীসসমূহকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করেছেন এবং এ বিষয়ে কেন মতপার্থক্য হয়েছে তার কারণও নিম্নের বাণীতে বর্ণনা করেছেন :নিশ্চয় মানুষের হাতে যা রয়েছে তার মধ্যে সঠিক ও ভ্রান্ত, সত্য ও মিথ্যা, রহিত ও রহিতকারী, সার্বিক ও বিশেষ, দ্ব্যর্থহীন (স্পষ্ট) ও বিভিন্ন অর্থবাহী (সংশয় উদ্দীপক) এবং সঠিকভাবে সংরক্ষিত ও ভুল ধারণাপ্রসূত বিষয় মিশ্রিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর ওপর তাঁর জীবদ্দশায়ই মিথ্যা আরোপ করা হতো। এ কারণে তিনি একদিন বক্তব্য দানকালে বলেন : হে লোকসকল! আমার ওপর মিথ্যা আরোপকারীদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। যে কেউ আমার ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা আরোপ করবে সে জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্ধারণ করবে। তাঁর ইন্তেকালের পরও তাঁর ওপর মিথ্যারোপ (অব্যাহত রয়েছে ও) করা হয়েছে। তোমাদের নিকট চার ধরনের ব্যক্তি হাদীস বর্ণনা করে থাকে এর বাইরে পঞ্চম কোন প্রকার নেই।

রাসূল (সা.) এর সাহাবাদের প্রকারভেদ ও তাদের থেকে বর্ণিত হাদিসের বিভিন্নতা

 
 

সারাংশ: রাসূল (সা.) চার ধরনের ব্যক্তি হাদীস বর্ণনা করে থাকে মুনাফিক ব্যক্তি, অনিচ্ছাকৃত ভুলকারী, হাদিসের সার্বিক দিক সম্পর্কে অজ্ঞাত ব্যক্তি, সত্যপরায়ন সঠিক বর্ণনাকারী তাদের মধ্যে কেবল চতুর্থ দলের হাদিস গ্রহণযোগ্য

ট্যাগ: রাসূলের সাহাবাগণ, সঠিক হাদিস, জাল হাদিস, হযরত আলীর জ্ঞানগত ফজিলত

ইমাম আলী মানুষের হাতে বিদ্যমান হাদীসসমূহকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করেছেন এবং এ বিষয়ে কেন মতপার্থক্য হয়েছে তার কারণও নিম্নের বাণীতে বর্ণনা করেছেন :

নিশ্চয় মানুষের হাতে যা রয়েছে তার মধ্যে সঠিক ও ভ্রান্ত, সত্য ও মিথ্যা, রহিত ও রহিতকারী, সার্বিক ও বিশেষ, দ্ব্যর্থহীন (স্পষ্ট) ও বিভিন্ন অর্থবাহী (সংশয় উদ্দীপক) এবং সঠিকভাবে সংরক্ষিত ও ভুল ধারণাপ্রসূত বিষয় মিশ্রিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর ওপর তাঁর জীবদ্দশায়ই মিথ্যা আরোপ করা হতো। এ কারণে তিনি একদিন বক্তব্য দানকালে বলেন : হে লোকসকল! আমার ওপর মিথ্যা আরোপকারীদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। যে কেউ আমার ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা আরোপ করবে সে জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্ধারণ করবে। তাঁর ইন্তেকালের পরও তাঁর ওপর মিথ্যারোপ (অব্যাহত রয়েছে ও) করা হয়েছে। তোমাদের নিকট চার ধরনের ব্যক্তি হাদীস বর্ণনা করে থাকে এর বাইরে পঞ্চম কোন প্রকার নেই।

মুনাফিক ব্যক্তি যে বাহ্যিকভাবে ঈমানকে (নিজেকে ঈমানদার হিসাবে) প্রকাশ করে। তার ইসলাম হল কৃত্রিম। সে গুনাহ থেকে সংযত থাকে না। আল্লাহর রাসূলের ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে (উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে) মিথ্যা আরোপ করা থেকে বিরত থাকে না। যদি লোকেরা জানত সে মুনাফিক ও মিথ্যাবাদী তবে তার কথা গ্রহণ করত না ও তাকে সত্যায়ন করত না। কিন্তু মানুষ বলে সে আল্লাহর রাসূলের সঙ্গে ছিল, তাঁকে দেখেছে, তাঁর থেকে গ্রহণ করেছে। কিন্তু তারা তার অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞাত নয়। অথচ নিশ্চয় আল্লাহ্ মুনাফিকদের সম্পর্কে যথার্থভাবে অবহিত করেছেন এবং তাদের প্রকৃত অবস্থাকে তুলে ধরেছেন। তিনি সেই সত্তা যিনি বলেছেন : ‘(হে রাসূল!) তাদেরকে যখন দেখ তাদের দৈহিক অবয়ব তোমাকে বিস্মিত করে এবং যদি তারা কথা বলে তাদের কথা শুনতে (ও বুঝতে পারে)’সূরা মুনাফিকুন : ৪।

এ মুনাফিকরা তাঁর ইন্তেকালের পরও টিকে রয়েছে। (এভাবে যে,) তারা অন্যায, মিথ্যা ও অপবাদমূলক কথার দ্বারা বিভ্রান্তি ও বিপথে পরিচালনাকারী নেতৃবর্গ ও জাহান্নামের দিকে আহবানকারীদের নৈকট্য লাভ করেছে। আর তারা তাদেরকে শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছে ও মানুষের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। তারা ঐ সকল বিচ্যুত নেতাদের সহযোগিতায় দুনিয়ার সম্পদ ভক্ষণে রত হয়েছে। মানুষ সাধারণত তাদের শাসকদের সাথেই থাকে ও দুনিয়ায় লিপ্ত থাকতে অভ্যস্ত। তবে তারা ব্যতীত যাদের আল্লাহ্ সংরক্ষণ করেছেন। এরা হল চারটি দলের একটি।

একদল হল এমন যে, তারা রাসূলুল্লাহ্ থেকে কোন কিছু শুনেছে অতঃপর তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে নি এবং এক্ষেত্রে ভুল করেছে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা আরোপ করে নি। তারা যা কিছু তাদের নিকট রয়েছে তা-ই বলে ও সে অনুযায়ী আমল করে। আর যখন তারা বর্ণনা করে তখন বলে : আমি আল্লাহর রাসূল থেকে তা শুনেছি। যদি মুসলমানরা জানত যে, সে ভুল ধারণা ও বর্ণনা করছে তবে তারা তার থেকে গ্রহণ করত না। তেমনি সে নিজেও যদি জানত সে সে ভুল করেছে তবে সে তা ত্যাগ করত (ও বর্ণনা করত না)

তৃতীয় দলে রয়েছে এমন ব্যক্তিরা যারা আল্লাহর রাসূল থেকে কিছু বিষয়ে নির্দেশকারী হতে দেখেছে কিন্তু পরবর্তীতে তিনি তা থেকে নিষেধ করেছেন অথচ সে তা শুনে নি অথবা তাঁর থেকে কোন বিষয়ের নিষেধাজ্ঞা শুনেছে অথচ তিনি পরে তা বৈধ ঘোষণা করেছেন কিন্তু সে তা শুনেছি। ফলে সে রহিত বিধানকে সংরক্ষণ করেছে এবং রহিতকারী বিধানকে (সে সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে) সংরক্ষণ করে নি। যদি সে জানত যে, ঐ বিধান রহিত হয়ে গিয়েছে তবে অবশ্যই তা সে তা ত্যাগ করত। আর মুসলমানরাও যদি জানত যা সে আল্লাহর রাসূল থেকে শুনেছে তা রহিত হয়ে গিয়েছে তবে তারাও তা প্রত্যাখ্যান করত।

চতুর্থ দল হল যারা আল্লাহর রাসূলের ওপর কখনই মিথ্যা আরোপ করে নি। আল্লাহর ভয় এবং আল্লাহর রাসূলের মর্যাদার কারণে তারা মিথ্যাকে নিজেদের শত্রু জ্ঞান করে। তারা যা কিছু তাঁর থেকে শুনেছে তা সম্পূর্ণরূপে সংরক্ষণ করেছে কোন কিছুই ভুলে যায় নি। আর তাই তারা যেমনটি শুনেছি ঠিক সেভাবেই বর্ণনা করে, কোন কিছুই তাতে হ্রাস বৃদ্ধি করে না, তারা রহিতকারী ও রহিত উভয় বিধান সম্পর্কে অবগত। এ কারণে রহিতকারী বিধান অনুযায়ী আমল করে ও রহিত বিধানকে পরিত্যাগ করে। নিশ্চয় মহানবী (সা.)-এর  বাণী ও কর্ম পবিত্র কোরআনের ন্যায়, তাতে রহিতকারী ও রহিত, সার্বিক ও বিশেষ এবং স্পষ্ট ও সংশয়মূলক বিভিন্নরূপ অর্থবাহী বাণী ও বিধান রয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের বাণী দু ধরণের কোরআনের ন্যায় তার মধ্যে কোনটি সার্বিক ও কোনটি বিশেষ। মহান আল্লাহ্ তার গ্রন্থে বলেছেন : ‘যা কিছু রাসূল তোমাদের জন্য এনেছেন তা গ্রহণ করুন এবং যা থেকে তোমাদের নিষেদ করেন তা থেকে বিরত থাক।’*সূরা হাশর : ৭।

সুতরাং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল যা উদ্দেশ্য করেছেন সে সম্পর্কে যে ব্যক্তি অনবগত রয়েছে ও জানতে পারে নি সে ভুলে (ও সংশয়ে) পতিত হয়েছে। এমন নয় যে, আল্লাহর রাসূলের সাহাবারা সকলেই যে সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করতেন তার উত্তর সঠিকভাবে অনুধাবন করতেন। তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তিরাও ছিলেন যারা উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তর বুঝতেন না। এজন্য তারা আকাক্সক্ষা করতেন (অপেক্ষায় থাকতেন) কোন বেদুইন ও মরুবাসী (নিরপেক্ষ) ব্যক্তি এসে রাসূলকে প্রশ্নটি করুক। যখন তাদের কেউ এসে তাঁকে প্রশ্ন করত তখন তারা শুনত (ও বুঝতে পারত)

আমি প্রতিদিন দিবসে একবার এবং রাতে একবার আল্লাহর রাসূলের নিকট যেতাম। তখন তিনি আমার সাথে একান্ত বৈঠক করতেন। আমি তাঁর প্রতি পূর্ণ মনযোগ দিতাম। রাসূলুল্লাহ্র সাহাবাগণ নিশ্চিত জানেন যে, এরূপ আচরণ তিনি আমি ব্যতীত অন্য কারো সাথে করতেন না। কখনও কখনও তিনি নিজেই আমার গৃহে আসতেন। আমি যখন তার কোন (স্ত্রীর) গৃহে যেতাম তখন তিনি একাকী আমাকে নিয়ে বসতেন। তার স্ত্রী সেখান থেকে চলে যেতেন। ফলে তাঁর নিকট আমি ব্যতীত অন্য কেউ থাকত না। আর যখন তিনি আমার গৃহে একান্ত বৈঠকের জন্য আসতেন তখন ফাতেমা এবং আমার সন্তানদের মধ্যে কেউই সেখান থেকে চলে যেত না। আমি যখন তাঁকে প্রশ্ন করতাম তিনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিতেন। আমি যখন নিরব হতাম এবং আমার প্রশ্ন শেষ হয়ে যেত তখন তিনি শুরু করতেন। পবিত্র কোরআনের যে আয়াতই আল্লাহর রাসূলের ওপর অবতীর্ণ হতো তিনি তা আমার জন্য পাঠ করতেন এবং আমাকে লিখতে বলতেন এবং আমি নিজের হাতে তা লিখে রাখতাম। তিনি আমাকে তার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থ ও ব্যাখ্যা শিক্ষা দিতেন। কোন্টি রহিত, কোন্টি রহিতকারী, কোন্টি সুস্পষ্ট অর্থবাহী, কোন্টি বিভিন্নরূপ অর্থবাহী ও সংশয়মূলক, কোন্টি সার্বিক ও কোন্টি বিশেষ তা বলতেন। ... এমন কোন জ্ঞান নেই যা তিনি আমার জন্য বলেন নি আর আমি তা লিখে রাখি নি। এমনকি তিনি আল্লাহর নিকট আমার জন্য বিশেষভাবে দোয়া করেছিলেন। আল্লাহ্ তাঁকে হালাল ও হারাম, আদেশ ও নিষেধ সম্পর্কিত যা কিছু বিধান পূর্বে এসেছে অথবা পরবর্তীতে আসবে এবং তাঁর পূর্বে যে কোন গ্রন্থই অবতীর্ণ হয়েছে ও তাতে আনুগত্য ও গুনাহ সম্পর্কে যা কিছু এসেছে সে সম্পর্কে (অবহিত করেছেন ও) শিক্ষা দিয়েছেন। আর এ সব কিছুই তিনি আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন এবং আমি তা সংরক্ষণ ও মুখস্ত করেছি। তার থেকে একটি বর্ণও আমি ভুলে যাই নি। অতঃপর তিনি তাঁর হাত আমার বুকের ওপর রাখেন এবং আল্লাহর নিকট আমার জন্য এ বলে দোয়া করেন যে, যেন তিনি আমার অন্তরকে জ্ঞান, বোধশক্তি, প্রজ্ঞা ও আলো দ্বারা পূর্ণ করেন।*(নাহজুল বালাগাহ, ২১০ নং খুতবা, অবশ্য নাহজুল বালাগায় পূর্ণ বাণী লিপিবদ্ধ হয় নি; আল কাফি, ১ম খ-, পৃ. ৬২, বাবু ইখতিলাফিল হাদীস, হাদীস নং ১, সালিম ইবনে কাইস হিলালী, পৃ. ১৮২, বাবু ইল্লাতিল ফারক বাইনা আহাদি সিশ শিয়া ওয়া আহাদিসী মুখালিফিহিম। বর্ণনাটি এখান থেকে নেয়া হয়েছে।)

অনুবাদ: আবুল কাসেম

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: