bayyinaat

Published time: 02 ,December ,2018      08:25:13
মহান আল্লাহ কোন কিছুর সদৃশ নন’- আয়াতটির অর্থ
‘মহান আল্লাহ কোন কিছুর সদৃশ নন’- আয়াতটির অর্থ লেখক: আবুল কাসেম সারাংশ: (لیس کمثله شی)- আয়াতটি সকল দিক ও বৈশিষ্ট্যে আল্লাহ অদ্বিতীয় হওয়াকে প্রমাণ করে। তিনি অসীম সত্তা হওয়ার কারণেই তার সৃষ্ট সসীম কোন সত্তার সাথে তাকে তুলনা করা যায় না। সূরা ইখলাসের শেষ আয়াতটিও (ولم یکن له کفوا احد) এবিষয়টিকে সত্যায়ন করে। ফলে তিনি স্থান, কাল ও পাত্রের ঊর্ধে বলে গণ্য হন।
সংবাদ: 143

মহান আল্লাহ কোন কিছুর সদৃশ নন’- আয়াতটির অর্থ

লেখক: আবুল কাসেম                                     পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহকে এমন এক সত্তা বলে পরিচয় করিয়েছে যিনি কোন কিছুর সদৃশ নন। আল্লাহ বলেছেন : ‘কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়।’ (সূরা শূরা:১১)

সারাংশ: (لیس کمثله شی)- আয়াতটি সকল দিক ও বৈশিষ্ট্যে আল্লাহ অদ্বিতীয় হওয়াকে প্রমাণ করে তিনি অসীম সত্তা হওয়ার কারণেই তার সৃষ্ট সসীম কোন সত্তার সাথে তাকে তুলনা করা যায় না সূরা ইখলাসের শেষ আয়াতটিও (ولم یکن له کفوا احد) এবিষয়টিকে সত্যায়ন করে ফলে তিনি স্থান, কাল ও পাত্রের ঊর্ধে বলে গণ্য হন

ট্যাগ: আল্লাহ, সদৃশ, মুহকাম আয়াত, মুতাশাবিহ আয়াত, অসীম সত্তা, সসীম সত্তা

মূল প্রবন্ধ: পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহকে এমন এক সত্তা বলে পরিচয় করিয়েছে যিনি কোন কিছুর সদৃশ নন। আল্লাহ বলেছেন : ‘কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়।’ (সূরা শূরা:১১)

প্রকৃতপক্ষে এ বাক্যটি মহান আল্লাহর গুণাবলি সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে মৌলিকতম (ভিত্তিগত) জ্ঞান। কেননা, আয়াতটি কোরআনের মুহকাম (স্পষ্ট অর্থবাহী ও দ্ব্যর্থহীন) এক আয়াত যা সকল মুতাশাবিহ (দ্ব্যর্থবোধক, অস্পষ্ট ও রূপক অর্থবাহী) আয়াতকে ব্যাখ্যাকারী। তাই যদি এ আয়াতটিকে সঠিকভাবে অনুধাবন করা না হয়, তবে তাঁর কোন গুণকেই চেনা সম্ভব নয়। কারণ, আল্লাহর পরিচিতির পথে সবচেয়ে বিপজ্জনক যে গর্তটি রয়েছে তা হলো তাঁকে তাঁর সৃষ্টির অনুরূপ মনে করা। কারণ, এটি মানুষকে শিরকের ভয়ঙ্কর গহ্বরে ফেলে দেয়। মহান আল্লাহ এমন এক সত্তা যিনি সকল দৃষ্টিতে অসীম। আর তিনি ব্যতীত যা কিছু রয়েছে তা সসীম। এ কারণেই কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়। তিনি জীবন, আয়ু, শক্তি ও ক্ষমতা, জ্ঞান, ইচ্ছা শক্তিসহ সকল বৈশিষ্ট্যে অসীমত্বের অধিকারী। এটি অন্য সকল অস্তিত্বের অপূর্ণতা থেকে তাঁকে মুক্ত রেখেছে। ‘সুবহান আল্লাহ’ শব্দটির অর্থও হলো আল্লাহকে সকল ত্রুটি ও অপূর্ণতা থেকে পবিত্র ঘোষণা করা। এ কারণেই অনেক বিষয়ই- যা অন্যদের জন্য প্রযোজ্য, তাঁর জন্য প্রয়োজন নয়। যেমন আমাদের জন্য কোন কাজ সহজ, কোন কাজ কঠিন (এর বিপরীতে সব কাজ আল্লাহর নিকট একরূপ সহজ) , কোন কিছু আমাদের নিকটে রয়েছে, আবার অসংখ্য ও অগণিত বস্তু আমাদের থেকে দূরে অবস্থান করছে। [কিন্তু মহান আল্লাহ বলেছেন : ‘আমরা তার (মানুষ) শাহরগ হতেও তার নিকটে অবস্থান করছি।’ (কাফ : ১৬), ‘তোমরা যেখানেই থাক তিনি (আল্লাহ) তোমাদের সঙ্গে আছেন’(সূরা হাদিদ:) এবং ‘যখন আমার বান্দারা প্রশ্ন করে (তাদের বল :) আমি নিকটেই আছি এবং আহ্বানকারীর আহ্বানকে শুনি যখন সে ডাকে’ (বাকারা:১৮৬) (সুতরাং মহান আল্লাহ কারো থেকে কাছে, আবার কারো থেকে দূরেও নন। সকলের নিকটে থাকার কারণে তিনি একই মুহূর্তে তাদের সকলের দোয়া শুনেন ও জবাব দেন। এটা তাঁর সর্বত্র বিরাজমান থাকার দলিল। তাই তিনি অনেক দূরে সপ্ত আসমানের উপরে নন যে, কোন মাধ্যমে তাঁকে শুনতে হবে] অনেক ঘটনা আমাদের জন্য অতীত, অনেক ঘটনা বর্তমান বা ভবিষ্যৎ। অনেক বস্তু আমাদের থেকে ক্ষুদ্র, অনেক বস্তু আমাদের থেকে বড়। কারণ, যেহেতু আমরা সীমিত সত্তা তাই অন্য বস্তু ও ধারণার সাথে তুলনা করে আমরা নিজেদের অবস্থান যাচাই করে দেখি। কিন্তু এমন সত্তা যিনি অনন্ত ও অসীমতার জন্য নিকট-দূর, কঠিন-সহজ, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ ইত্যাদি অর্থহীন কারণ তাঁর জন্য সবই নিকটে, সবই সহজ এবং সবই বর্তমান। ‘কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়’- আয়াতটি কখনই এ বিষয়টি বলার জন্য অবতীর্ণ হয়নি যে, কোন বস্তুর সঙ্গে আল্লাহর একশ ভাগ মিল নেই, কিন্তু এক ভাগ বা দশ ভাগ মিল রয়েছে। কারণ, পৃথিবীতে এমন কোন বস্তু নেই যা অপরটির সাথে একশ ভাগ সদৃশ ও অনুরূপ। যেমন জড় পদার্থসমূহের আকৃতি ও গঠন পরস্পর থেকে ভিন্ন এমনকি সকল পাহাড় ও সকল সমুদ্র একরূপ নয়, জীবজগতও রূপ, বৈশিষ্ট্য ও আকার-আকৃতিতে পরস্পর অসদৃশ। এমনকি সকল মানুষ আকৃতি ও প্রকৃতিতে একরূপ নয় যদিও মানুষ হওয়ার দৃষ্টিতে তারা সকলে এক। তাই আয়াতটি তাঁর সঙ্গে অপর কোন বস্তুর বিন্দুমাত্র সদৃশতা প্রত্যাখ্যান করতেই অবতীর্ণ হয়েছে।

মহান আল্লাহর একটি না-বাচক গুণ হল (لیس کمثله شی) বা কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয় দুটি বস্তু সদৃশ বা অনুরূপ হওয়ার অর্থ হল তারা তাদের অস্তিত্ব ও সত্তায় (রূপ ও বৈশিষ্ট্যাবলীতে) একে অপরের সদৃশ কিন্তু বাস্তব জগতে দুটি স্বতন্ত্র বস্তু। যেমন যায়েদ ও আমর মানুষ হওয়ার দৃষ্টিতে পরস্পরের অনুরূপ অর্থাৎ তারা উভয়ে বাকশক্তিসম্পন্ন প্রাণী কিন্তু বাস্তব জগতে তারা অনুরূপ দুটি ভিন্ন সত্তা। যদি আল্লাহর অনুরূপ সত্তা থাকে তবে এর অর্থ হবে বাস্তব জগতে রূপ ও বৈশিষ্ট্যের দৃষ্টিতে তার অনুরূপ অন্য এক সত্তা আছে যা অস্তিত্বগতভাবে তার থেকে ভিন্ন। সেক্ষেত্রে তার মধ্যে অস্তিত্ব ও বৈশিষ্ট্য নামক পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন স্বতন্ত্র দুটি বিষয় রয়েছে এর অর্থ আল্লাহ দুই মৌলের সমন্বয়ে এক যৌগ সত্তা এরূপ যৌগ তার অস্তিত্বের জন্য তার গঠনকারী মৌলের ওপর নির্ভরশীল যারা না থাকলে সেও থাকবে না আর এ বিষয়টি আল্লাহকে মুখাপেক্ষী প্রমাণ করে যা নির্ভরশীল ও সম্ভাব্য অস্তিত্বের বৈশিষ্ট্য; স্বনির্ভর (স্বয়ম্ভু) ও অপরিরহার্য সত্তার বৈশিষ্ট্য নয় সুতরাং আল্লাহর স্বনির্ভর (স্বয়ম্ভু) ও অপরিরহার্য সত্তা হওয়ার গুণ তাঁর অনুরূপ সত্তা থাকার সম্ভাবনাকে প্রত্যাখ্যান করে এভাবে এ আয়াতটি সকল দিক ও বৈশিষ্ট্যে আল্লাহ অদ্বিতীয় হওয়াকে প্রমাণ করে তিনি অসীম সত্তা হওয়ার কারণেই তার সৃষ্ট সসীম কোন সত্তার সাথে তাকে তুলনা করা যায় না সূরা ইখলাসের শেষ আয়াতটিও (ولم یکن له کفوا احد) এবিষয়টিকে সত্যায়ন করে ফলে তিনি স্থান, কাল ও পাত্রের ঊর্ধে বলে গণ্য হন

আয়াতটির ব্যাকরণগত দিকও এ সত্যকে প্রমাণ করে কেননা, আয়াতে বলা হয়েছে কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয় এটি একটি ইঙ্গিতমূলক বাক্য যা নিরঙ্কুশভাবে তাঁর অনুরূপ সত্তা থাকার বিষয়টিকে এভাবে প্রত্যাখ্যান করছে যে, তিনি এমন এক সত্তা যার অনুরূপ থাকা সম্ভব নয় অর্থাৎ যেহেতু তাঁর সত্তা ও বৈশিষ্ট্য অনন্য সেহেতু কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয় আয়াতটি এ বাক্যের মত যে, ‍কোন ভাল মানুষ এমন কাজ করতে পারে না যার অর্থ যদি ঐরূপ কাজ কারো থেকে সংঘটিত হয়ে যায় সে আর ভাল মানুষ থাকবে না তাই মহান আল্লাহর অনুরূপ কিছু থাকলে আল্লাহ আর আল্লাহ নামের উপযুক্ত থাকবেন না যেহেতু কোন কিছু তার অনুরূপ নয় সেহেতু তিনি অদ্বিতীয় এক সত্তা

এ আয়াত দৈহিকভাবে ‘মহান আল্লাহর আরশে সমাসীন হওয়ার বিশ্বাসকে বাতিল ঘোষণা করে

মহান আল্লাহ কোন কিছুর সদৃশ নন’- আয়াত এবং আল্লাহর অসীমতার ও দলিলসমূহ তাঁর বিশেষ স্থানে অবস্থানকে প্রত্যাখ্যান করে। মহান আল্লাহর দৈহিক সত্তা হওয়ার দাবি তাঁর অসীমতার পরিপন্থী এবং তা الله اکبر অর্থাৎ মহান আল্লাহর সকল কিছুর ঊর্ধ্বে ও শ্রেষ্ঠ হওয়ার ইসলামের চিরন্তন স্লোগানকে প্রত্যাখ্যান করে। তাছাড়াও এটি বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে স্বতঃসিদ্ধ একটি বিষয় যে, কোন সীমিত সত্তাই অসীম ও অনন্ত জ্ঞান ও ক্ষমতার অধিকারী হতে পারে না। তেমনি অসীম কোন সত্তাকে সীমিত কোন আসন ধারণ করতে পারে না। তাই নিশ্চিতভাবে বলা যায়ثمّ استوی علی العرش আয়াতটিতে আরশে সমাসীন হওয়া কথাটি রূপক অর্থে এসেছে। কোন অবস্থাতেই একে বস্তুগত অর্থে গ্রহণ করা যায় না।

অতএব, যারা আয়াতটিকে বাহ্যিক অর্থে গ্রহণ করে তারা প্রকৃতপক্ষে কোরআনের অন্যান্য স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন আয়াত এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দলিলকে প্রত্যাখ্যান করে। আর তাই ثمّ استوی علی العرش আয়াতকে মহান আল্লাহর বিশ্বজগৎ পরিচালনা কর্মে নিয়োজিত হওয়া অর্থ করাই বাঞ্ছনীয়।

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: