bayyinaat

Published time: 03 ,December ,2018      10:47:57
আল-কোরআনে গাদীরের ঐতিহাসিক ঘোষণা (১)
আল-কোরআনে গাদীরের ঐতিহাসিক ঘোষণা (১) অনুবাদ: কামরুল হাসান সংযোজন ও সম্পাদনা: আবুল কাসেম সারাংশ: দশম হিজরির ১৮যিলহজে মহানবি (সা.) কাফেলাসহ গাদিরে খুমে প্রবেশের প্রাক্কালে সূরা মায়িদার ৬৭নং আয়াত অবতীর্ণ হওয়া এবং রাসূল (সা.) হযরত আলীকে (আ.) মুমিনদের নেতা ও মাওলা ঘোষণা করার পর সূরা মায়িদার ৩নং আয়াতের যে অংশে দ্বীনের পূর্ণতা ও নেয়ামতের সমাপ্তির কথা বলা হয়েছে তা অবতীর্ণ হওয়ার মধ্যে অবিচ্ছিন্ন এক সম্পর্ক রয়েছে। এ দুই আয়াতের শানে নুযুল এবং সার্বিক অর্থ থেকে হযরত আলী (আ.) এর বেলায়েতের বিষয়টি নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়।
সংবাদ: 148

বিসমিল্লাহীর রহমানীর রহীম

আল-কোরআনে গাদীরের ঐতিহাসিক ঘোষণা (১)

অনুবাদ: কামরুল হাসান

সংযোজন ও সম্পাদনা: আবুল কাসেম           আল-কোরআনে গাদীরের ঐতিহাসিক ঘোষণা

সারাংশ: দশম হিজরির ১৮যিলহজে মহানবি (সা.) কাফেলাসহ গাদিরে খুমে প্রবেশের প্রাক্কালে সূরা মায়িদার ৬৭নং আয়াত অবতীর্ণ হওয়া এবং রাসূল (সা.) হযরত আলীকে (আ.) মুমিনদের নেতা ও মাওলা ঘোষণা করার পর সূরা মায়িদার ৩নং আয়াতের যে অংশে দ্বীনের পূর্ণতা ও নেয়ামতের সমাপ্তির কথা বলা হয়েছে তা অবতীর্ণ হওয়ার মধ্যে অবিচ্ছিন্ন এক সম্পর্ক রয়েছে এ দুই আয়াতের শানে নুযুল এবং সার্বিক অর্থ থেকে হযরত আলী (আ.) এর বেলায়েতের বিষয়টি নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়।

ট্যাগ: গাদীরের হাদিস, বেলায়েতের ঘোষণা, গাদীর সম্পর্কিত আয়াত, তাবলীগের আয়াত, দ্বীন-পরিপূর্ণের আয়াত

মূল প্রবন্ধ: এ আলোচনায় আমরা পবিত্র কোরআন মজীদে গাদীরের ঐতিহাসিক ঘোষণা সম্পর্কিত দুটি আয়াতের- "আয়াতে তাবলীগ দ্বীন-পরিপূর্ণ হওয়া”- দিকে দৃষ্টিপাত সেগুলোর বিশ্লেষণ করব।

কোরআনের যে সব আয়াত গাদীরের ঘোষণার পূর্বে পরে নাযিল হয়েছে এবং উক্ত বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত রয়েছে, সেগুলি গাদীর বিষয়ক আয়াত হিসাবে পরিচিত গাদীরের বিষয় মূলত: কারো প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের লক্ষ্যে ঘোষিত হয়নি বরং তা রাসুল (সা.) কর্তৃক তাঁরই স্থলাভিষিক্তের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হিসাবে প্রচারিত হয়েছে

আয়াতে তাবলীগ বা তাবলীগের আয়াত

يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغْ مَآ أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَۖ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُۥۚ وَٱللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ ٱلنَّاسِۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ ٱلْكَٰفِرِينَ

"হে রাসূল! পৌছে দিন, আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি তা (মানুষের নিকট) না পৌছান, তবে আপনি তাঁর রেসালাতের দায়িত্ব কিছুই পালন করলেন না। আর আল্লাহ আপনাকে মানুষদের থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ একগুয়ে-কাফেরদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না!

শানে-নযুলঃ

আয়াতে তাবলীগের শানে-নযুল সম্পর্কিত রেওয়ায়াতসমূহ যা আমীরুল মোমেনীন হযরত আলী (আ.) এর নেতৃত্বের সাথে সম্পর্ক-যুক্ত সেগুলো খুবই নির্ভরযোগ্য

রাসুল (সা.) বিদায়-হজ্জ শেষে, মদিনায় প্রত্যাবর্তনের পথে গাদীরে-খোম নামক স্থানে পৌছালে, ১০ম হিজরীর জিলহাজ্জ্ব মাসের আঠার তারিখে এই আয়াত-শরিফ নাযিল হয় তখন হযরত জিবরাঈল (আ.) এসে বলেন- হে মুহাম্মাদ (সা.)! আল্লাহ-তাআলা আপনার প্রতি যে ভাবে দুরুদ পাঠিয়ে থাকেন, সেভাবেই দুরুদ পাঠিয়েছেন অতপর বলেন, `হে আল্লাহর রাসুল! প্রচার করুন যা কিছু আপনার প্রতিপালকের নিকট থেকে,  আলী (আ.) এর সম্পর্কে নাযিল হয়েছে যদি আপনি এই নির্দেশ পালন না করেন তবে যেন আপনি রেসালাতের কোন দায়িত্বই পালন করলেন না!’

ঐ সময়ে তাৎক্ষণিক ভাবে রাসুল (সা.) মদীনার দিকে অগ্রসরমান তাঁর কাফেলা যা জোহফা নামক স্থানের নিকটবর্তী ছিল এবং যার সদস্য সংখ্যা এক-লক্ষ বা তারও বেশী ছিল, তাদের সকলকে এ মর্মে নির্দেশ পাঠালেন যে, যারা গাদীরে-খুম ছেড়ে অগ্রসর হয়েছে তারা যেন ফিরে আসে এবং যারা উক্ত স্থান থেকে পেছনে পড়ে আছে তারা যেন উক্ত নির্ধারিত স্থানে পৌছে যায়! অতপর: রাসুল (সা.) সেখানে আল্লাহ তায়ালা হযরত আলী (আ.) এর সম্পর্কে যে নির্দেশ পাঠিয়েছেন, তা প্রচারের আয়োজনে নিয়োজিত হন এ সময় হযরত জিবরাঈল (আ.)- রাসুল (সা.) কে নিশ্চয়তা দেন যে, আল্লাহ তাঁকে মানুষের অনিষ্টতা থেকে রক্ষা করবেন

আয়াতের শব্দাবলীর অর্থের ওপর আলোকপাত

এখন আমরা উক্ত আয়াতের কিছু শব্দাবলীর দিকে দৃষ্টি দেব এবং দেখব যে, সেগুলি কি নির্দেশ করছে-

আমীরুল মোমেনীন হযরত আলী (আ.) এর বেলায়েত (কর্তৃত্ব) ও ইমামত  সম্পর্কে, এ আয়াতের শানে-নযুলের বর্ণনা ছাড়াও উক্ত আয়াতের কিছু শব্দাবলীর দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, বিষয়টা সম্পূর্ণ পূর্বনির্ধারিত এক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ ছিল এবং এটা রাসুলের পরবর্তী ইসলামী-সমাজের নেতৃত্ব নির্ধারণ ও তাঁর স্থলাভিষিক্তের ঘোষণার যথাযথ বাস্তবায়ন ছাড়া অন্য কোন বিষয় ছিল না! উদাহরণ স্বরূপঃ-

يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ

কোরআনুল কারীমে মহানবী (সা.) কে বিভিন্নরূপ শব্দ-গুচ্ছ দ্বারা, সম্ভাষণ-পূর্বক নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে যেমনঃ- يَٰٓأَيُّهَا ٱلْمُدَّثِّر/ يَٰٓأَيُّهَا ٱلْمُزَّمِّلُ / يأيها النبي

এ ধরনের প্রতিটি আহ্বান বা সম্বোধন-বোধক শব্দ সর্বদা তার উপযুক্ত বিষয়াবলীর সাথে সম্পর্ক যুক্ত হয়ে থাকে আলোচ্য আয়াতে "ইয়া-আইয়ুহার্-রাসুলশিরোনামের সম্বোধনটি থেকে বোঝা যায় এতে "রেসালাতের প্রচারএর সাথে সম্পর্কিত বিষয় বিবৃত হয়েছে! একই ভাবে তাতে অধিক গুরুত্বারোপ করে বলা হয়েছে যে, এই তাবলীগ (প্রচার) না করা হলে, রেসালাতের কোন কার্য্যই যেন সম্পাদিত হয় নি! বিষয়টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এবং বিরোধিতাকারীদের শত্রুতার প্রবল-শঙ্কা থাকায়, এভাবে সম্ভাষণ করে নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে যে, এরূপ নতুন বিষয়ের অবতরণা করা তা বাস্তবায়নের কঠিনতা বা চ্যলেঞ্জ সহ্য করার শক্তি তাঁকে প্রদান করা হবে

مَآ أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ: উল্লেখিত আয়াতের অংশে, যে বিষয়টি প্রচার করতে বলা হয়েছে তা উল্লেখ না করে যদিও উহ্য রাখা হয়েছে, এভাবে তার গুরুত্বের প্রতি বিশেষ ভাবে ইশারা করা হয়েছে এবং রেসালাতের উপযুক্ত হিসাবে যে ভাবে ইঙ্গিত করা হয়ে থাকে ঠিক সে ভাবেই বিষয়টার প্রতিও ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে অর্থাৎ সুস্পষ্ট যে, এটা এমন একটা বিষয়ের নির্দেশ, যার উপর রাসুলে খোদাকে কোন রূপ এখতিয়ার বা স্বাধীনতা দেওয়া হয়নি বরং তা সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে আদেশকৃত আর নির্দেশ রাসুলের জীবদ্দশায় তারই পবিত্র-মুখে ঘোষণা করতে হবে

وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُۥ- বাক্যাংশে অন্য একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, আর তা হলো- রাসুল (সা.) এর উপর যে বিষয়টি প্রচারের দায়িত্ব রয়েছে, তা প্রকৃত: অর্থে রেসালাতের ভিত্তি বা স্তম্ভ (খুঁটি) স্বরূপ আর এটা এই কথার মধ্যে ফুটে উঠেছে যে, যেহেতু বলা হয়েছে, যদি রাসুল (সা.) দায়িত্ব পালন না করেন তবে যেন তিঁনি নিজ-রেসালাতের কোন দায়িত্বই পালন করলেন না!

যেহেতু আয়াতটি সুরা মায়েদার অন্তর্ভূক্ত এবং সুরা মায়েদা সর্বশেষ নাযিল হওয়া সুরাগুলোর অন্যতম আর ইতিমধ্যে ইসলামের সকল গুরুত্বপূর্ণ আহকামের নির্দেশগুলোও বর্ণিত হয়ে গেছে, তাই নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, বিষয়টি অবশ্যই নামাজ-রোজা-হজ্জ-যাকাত বা সবের অনুরূপ কোন কিছুর নির্দেশ ছিলনা!

وَٱللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ ٱلنَّاسِ-  এই বাক্যাংশের عصمت শব্দটি এসমে মাসদার যা (ع-ص-م) হুরুফে-আসলি (বর্ণগুলো) থেকে গৃহীত হয়েছে এবং এর অর্থ হলো- দূরে রাখা বা সংরক্ষণ করা ইত্যাদি

অতএব আয়াতে عصمت শব্দটি মানুষের ক্ষতি থেকে দূরে রাখা বা সংরক্ষণ করা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে এখানে ক্ষতির অর্থ রাসুলের পবিত্র-জীবনের প্রতি হুমকি তাঁর পবিত্র লক্ষ্য-উদ্দেশ্যর প্রতি বাধা হওয়া অংশটি পরিষ্কার ভাবে ইঙ্গিত করে- এটা এমনই একটা বিষয় ছিল যে, কিছু লোকের উক্ত বিষয়ের বিপক্ষে শক্ত-অবস্থান রয়েছে যা রাসুলের জীবন কে হুমকির সম্মুখিন করতে পারে অতএব, এখানে সকল ব্যাপারে, আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে

রাসুলের দূশ্চিন্তার কারণঃ- তৎকালীন নতুন মুসলমানদের মধ্যে পূর্ব থেকে বিদ্যমান মন-মানসিকতা, স্বভাব-প্রকৃতি, জাহেলিয়াতের রীতিপ্রথাসমূহ এবং গোত্র-প্রীতি - এসবের দিকে দৃষ্টি রেখে এবং বিশেষ করে মুসলমানদের মধ্যে মুনাফিকদের উপস্থিতির ১০ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে রাসুল (সা.) এরূপ দুশ্চিন্তিত ছিল কারণ সম্ভাবনা ছিল যে, এ সকল লোক আল্লাহর নির্দেশ কে গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়ে, জাহেলিয়াতের অনুসরণ করে বসবে! তাবলীগের আয়াতের শানে-নযুল সম্পর্কিত যে সব রেওয়ায়াত এসেছে, সেগুলোতে রাসুলের দূশ্চিন্তার উপকরণ উল্লেখিত হয়েছে১১

আয়াতে-তাবলীগ সম্পর্কে ইমামদের বক্তব্য দলীল স্বরূপঃ-

আয়াতে-তাবলীগের শানে-নযুল ও আয়াতের মধ্যকার শব্দাবলী থেকে এ বিষয়টি পরিষ্কার ভাবে ফুটে উঠেছে যে, উক্ত আয়াতের লক্ষ্য ইমামত ও রাসুলের স্থলাভিষিক্ত নির্ধারণ করা। আর এ কথাটি ইমামদের বিভিন্ন বক্তব্যে আরো স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। কোন এক ব্যক্তি ইমাম রেজা (আ.) বললো- "হে রাসুলের সন্তান! উরউয়া ইবনে জোবায়ের থেকে এরূপ বর্ণনা করা হয় যে, রাসুলে খোদা (তাঁর স্থলাভিষিক্ত নিয়োগের বিষয়ে) তাকিয়া (সতর্কতার লক্ষ্যে কোন কিছু গোপন করা) করা অবস্থায় এন্তেকাল করেছেন জবাবে ইমাম বলেন, যদি -তর্কের খাতিরে- এ কথা সত্য বলে মেনেও নেই যে, রাসুল (সা.) আল্লাহর সরাসরি নির্দেশ প্রাপ্তির পূর্বে অনুরূপ করেছিলেন কিন্তু পরবর্তিতে এই আয়াত-

)يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغْ مَآ أُنزِلَ إِلَيْكَ ..... إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ ٱلْكَٰفِرِينَ

"হে রাসূল! পৌছে দিন, আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি তা মানুষের নিকট না পৌছান, তবে আপনি তাঁর রেসালাতের দায়িত্ব কিছুই পালন করলেন না। নিশ্চয় আল্লাহ একগুয়ে-কাফেরদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না!(আল-মাইদাহ ৫:৬৭(

নাযিল করে, জনগন ও রাসুল (সা.) এর মধ্যে উক্ত বিষয়ে যে তাকিয়া ছিল, তা মহান আল্লাহ তায়ালা উঠিয়ে নিয়েছেন এবং রাসুল (সা.) তা যথাযথ ভাবে প্রচার করেছেন কিন্তু রাসুলের (সা.) এর মৃত্যুর পর কোরায়েশরা (তাঁর নির্দেশ অমান্য করে) নিজেদের পছন্দমত কাজ সম্পাদন করেছিলো১২

অন্যান্য শানে-নযুল

ইমামী-ধারার মতানুযায়ী আয়াতটির শানে-নযুল হলো- এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে আলী (আ.) এর ইমামতের ঘোষণার নির্দেশের প্রেক্ষাপটে নাযিল হয়েছে তবে এর বিপরীতে আহলে সুন্নাতের কিছু মত রয়েছে, যেমন বলা হয়ে থাকে যে,

১. ইসলাম মুসলমাদের দুই বড় শত্রু ইয়াহুদ-নাসারা যারা সর্বদা বড়-বাধা হিসাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্রুতা করতো এবং ইসলামের উন্নতি অগ্রগতি রোধ করার জন্য যে প্রচেষ্টা নিত তারই ইঙ্গিত এ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং বিষয়টিই রাসূলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত ছিল আয়াতে যাদের ক্ষতি থেকে রক্ষার কথা বলে তাঁকে নিশ্চিন্ত করা হয় অতএব, বেলায়েতের (কর্তৃত্বের) সাথে আয়াতের কোন সম্পর্ক আছে কি?

জবাবঃ ইয়াহুদ-নাসারাদের সরাসরি শত্রুতার বিষয় ১০ম হিজরি সালের পূর্বেই (৭ম হিজরিতে খায়বারের যুদ্ধে পরাজয়ের পর) সমাধান হয়ে গিয়েছিলকারণ, তাদের অধিকাংশই ইসলামের আধিপত্যকে মেনেনিয়েছিল আর বাকিরা (বনি নাযির, বনি কায়নুকা বনি কুরায়যা) অন্যত্র নির্বাসিত হয়ে চলে যায় আর নাজরানসহ অন্যান্য অঞ্চলের খ্রিস্টানরা শক্তিহীন হয়ে জিযিয়া কর দিয়ে ইসলামী সরকারের অধীনে বাস করছিল তা সুরা মায়েদার ৪১ নং আয়াত অনুসারে বলা যায় যে, রাসুল (সা.) এর শঙ্কা ইয়াহুদ-নাসারাদের মত বহিঃশত্রুদের থেকে ছিল না বরং তা ছিল মুসলমানদের একদল থেকেই

) يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ لَا يَحْزُنكَ ٱلَّذِينَ يُسَٰرِعُونَ فِى ٱلْكُفْرِ مِنَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓا۟ ءَامَنَّا بِأَفْوَٰهِهِمْ وَلَمْ تُؤْمِن قُلُوبُهُمْۛ(

"হে রসূল, তাদের জন্যে দুঃখ করবেন না, যারা দৌড়ে গিয়ে কুফরে পতিত হয় এবং যারা মুখে বলেঃ আমরা মুসলমান, অথচ তাদের অন্তর ঈমান আনেনি!” (সুরা মায়েদা আয়াত নং- ৪১)

২. উক্ত আয়াতের পূর্বাপর আয়াতের সংশ্লিষ্ট বিষয়ঃ- কিছু লোক বলে থাকেন- আয়াতের পূর্বাপরের ধারাবাহিকতা বা রীতি অনুসারে আয়াতটি আহলে কিতাবগনের সাথে সংশ্লিষ্ট, ফলে ইমামত বা খেলাফতের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই কারণ আহলে কিতাবদের আলোচনার মধ্যে ইমামত বা খেলাফতের বিষয় নিয়ে আসা একপ্রকার দ্বি-মুখিতা যা কোরআনের বালাগাত ফাসাহাতের (সাহিত্যমান অলঙ্কারশাস্ত্রের নীতির) পরিপন্থী

জবাবঃ কোরআনের আয়াতগুলো ধাপে ধাপে বিভিন্ন প্রেক্ষাপট ও প্রয়োজন অনুসারে নাযিল হয়ে ছিল, এ কারণে দেখা যায় যে, একই সুরার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বিষয়াবলীর বর্ণনা রয়েছে যেমন একই সুরার কিছু আয়াতে ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণ তুলে ধরছে; পরক্ষণে দেখা যাবে পরবর্তি আয়াতগুলোতে ইসলামী শরীয়তের আহকাম বর্ণিত হচ্ছে অথবা, দেখা যায় যে, আগের আয়াতগুলোতে হয়তো মোনাফিকদের নিয়ে কিছু বলা হয়েছে; পরক্ষণে মোমিনদের উদ্দেশ্যে কথা বলা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে কোরআন কখনই সেই ক্লাসিক গ্রন্থের মত নয় যাতে পূর্ব থেকে সুনির্দিষ্ট একক কোন বিষয় ঠিক করে নেওয়া হয়েছে১৩ তবুও দাবি করা যায় আয়াতটির পূর্ব ও পরবর্তী আয়াতগুলোতে যে ইয়াহুদিদের সম্পর্কে বলা হয়েছে তাদের সাথে মুসলমানদের মধ্যে বিদ্যমান মুনাফিকদের সম্পর্ক বেলায়েত প্রতিষ্ঠার পথে বাধা সৃষ্টির কাজে তাদের পরস্পরের যোগসাজস থাকার কারণে আয়াতটি সাহিত্যিক দৃষ্টিতেও তার উপযুক্ত স্থানে স্থান পেয়েছে

1.   সুরা মায়েদা, আয়াত-৬৭

2.     মিনহাজুল কারামাহ ফি মারেফাতুল ইমামাহ পৃ-117, আল্লামাহ আমিনি সেখানে আহলে সুন্নাতের ৩০ জন আলেম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, এ আয়াত গাদীরের ঘোষণার সাথে সম্পর্কিত।

3.     গাদীর ফিল কেতাব ওয়াস সুন্নাত ওয়াল আদাব খণ্ড-১, পৃ-৪২৩

4.     তাফসিরে আল-মিজান খ-৬, পৃ-৪২ ও আয়াতে বেলায়েত দার কোরআন পৃ-২৫

5.     তাফসিরে আল-মিজান খ-৬, পৃ-৪২

6.     তাফসিরে আল-মিজান খ-৬, পৃ-৪২

7.     তাফসিরে আল-মিজান খ-৬, পৃ-৪২ ও আয়াতে বেলায়েত দার কোরআন পৃ-২৮

8.     রাগেব ইস্পাহানি এর অর্থ করেছেন- সংরক্ষণ করা

9.     তাফসিরে আল-মিজান খ-৬, পৃ-৪২

10.   মুনাফিকদের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা এতটাই ছিল যে, পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরান, সূরা নিসা, সূরা মায়েদাহ্, সূরা আনফাল, সূরা তাওবা, সূরা আনকাবুত, সূরা আহযাব, সূরা হাদীদ, সূরা মুনাফিকীন এবং সূরা হাশরে তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে। বিশেষত মহানবির ওপর অবর্তীর্ণ শেষ দুটি সূরায়- সূরা তওবা ও সূরা মায়িদা- মুনাফিকদের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যতই রাসূলের মৃত্যু ঘনিয়ে আসছিল এ মুনাফিকদের তৎপরতা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এমনকি তারা মহানবীর প্রাণনাশেরও চেষ্টা করেছিল অর্থাৎ তারা তাঁকে তাবুক যুদ্ধ থেকে মদীনায় ফেরার পথে হত্যা করতে চেয়েছিল। বারো জন মুনাফিক, যাদের আট জন ছিল কুরাইশ বংশোদভূত এবং বাকী চার জন ছিল মদীনার অধিবাসী, সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, দুই পাহাড়ের মাঝের দুর্গম সরু পথের (গিরিপথ) উপর থেকে মহানবীর উটকে ভীত-সন্ত্রস্ত্র করে দেবে এবং এভাবে তারা মহানবীকে উপত্যকার গভীরে ফেলে দিতে সক্ষম হবে। আল ওয়াকিদী প্রণীত আল মাগাযী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১০৪২-১০৪৩; বিহারুল আনওয়ার, ১১তম খণ্ড, পৃ. ২৪৭ এবং সীরাতে হালাবী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৬২ আর মুনাফিকদের মধ্যকার একটি দল নিজেদের মধ্যে গোপনে বলাবলি করত, রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর মৃত্যুর সাথে সাথে ইসলামী আন্দোলনেরও পরিসমাপ্তি হবে; আর তখন সবাই প্রশান্তি লাভ করবে। (সূরা তূর : ৩০)-সম্পাদক

11.   আল কাফি খণ্ড-১ পৃ-২৮৯

12.   উয়ুনে আখবারের-রেযা (আ:), খণ্ড-2, পৃ-১৩০

13.   মাকারেম সিরাজি, আয়াতে বেলায়াত দ্বার কোরআনে, পৃ-49

 

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: