bayyinaat

Published time: 15 ,December ,2018      21:42:47
কে মু’তা বিবাহ নিষিদ্ধ করেছে? (২)
দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর তার খেলাফত কালে মিম্বারে বসে জনগণের উদ্দেশ্যে বক্তৃতার এক পর্যায়ে উল্লেখ করেন: “রাসূলের (সা.) যুগে দু’ধরনের মু’তার প্রচলন ছিল। কিন্তু আমি সে দু’টি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছি। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে তামাত্তু হজ্ব এবং অপরটি মু’তাতুন্নেসা বা সাময়িক বিবাহ।
সংবাদ: 175

প্রবন্ধ: ঘ- মু’তা বিবাহ নিষিদ্ধ ঘোষণার সময় সম্পর্কে বিতর্ক কে মু’তা বিবাহ নিষিদ্ধ করেছে? (২)

     পূর্বোক্ত রেওয়ায়েতটি (যা সুন্নী মাযহাবের অধিকাংশ মুহাদ্দেস, মুফাসসের ও ফিকাহবিদ কর্তৃক বর্ণিত) অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ বহন করে যে, মু’তা বিবাহ রাসূলুল্লাহর (সা.) জীবদ্দশায় নয় বরং খলিফা উমরের যুগে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। এছাড়া এ প্রসঙ্গে বর্ণিত আরো অনেক রেওয়ায়েত (যা পূর্বোক্ত হাদীস গ্রন্থাবলীতে বর্ণিত হয়েছে) এ বিষয়ের প্রতিই ইঙ্গিত দেয়; উদাহরণস্বরূপ :

    (১) সুন্নী মাযহাবের খ্যাতনামা হাদীসবিশারদ তিরমিজী স্বীয় হাদীস গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন: জনৈক শামবাসী একদা আব্দুল্লাহ বিন উমরের নিকটে মু’তা বিবাহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। জবাবে তিনি বলেন: এ বিবাহ জায়েয। প্রশ্নকারী বলল: আপনার পিতা খলিফা উমর তা নিষিদ্ধ করেছেন। এবার তিনি জবাবে বলেন:

 أرأیت إن کان أبی قد نهی عنها و قد سنّها رسول الله أنترک السنة و نتبع قول أبی؟!

"যদি আমার পিতা (খলিফা উমর) এ বিবাহকে নিষিদ্ধ করেন, কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) সেটাকে নিজের সুন্নাত হিসাবে নির্ধারণ করেন; তবে কী সে অবস্থাতে রাসূলের (সা.) সুন্নাত অমান্য করে আমার পিতার কথানুযায়ী আমল করবে?!”

     (২) সহীহ মুসলিমে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারীর উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে, তিনি বলেছেন: আমরা রাসূলের (সা.) যুগে খোরমা ও আটার দেন মোহরের বিনিময়ে কিছু দিনের জন্য সাময়িক বিবাহে আবদ্ধ হতাম। এ অবস্থা প্রথম খলিফার যুগেও অব্যাহত ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে দ্বিতীয় খলিফার যুগে তা নিষিদ্ধ করা হয়।

     (৩) একই গ্রন্থে অপর একটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে: মু’তা বিবাহ ও মু’তাতুল হাজ্ব প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস ও ইবনে জুবাইরের সাথে বাগ-বিত-া দেখা দেয়। ফলে তারা জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারীর মধ্যস্থতা চান। তিনি বলেন: আমরা রাসূলের (সা.) যুগে এ দু’টি আমল সম্পন্ন করতাম। কিন্তু খলিফা উমরের যুগে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ কারণে আমরা তা হতে বিরত থেকেছি।

     (৪) ইবনে আব্বাস (যিনি তৎকালীন মুসলিম উম্মাহর বিশিষ্ট মনীষী ও বিশেষজ্ঞ উপাধিতে ভূষিত) রাসূলুল্লাহর (সা.) জীবদ্দশায় মু’তা বিবাহের বিধান রহিত হওয়ার ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ কারণে আব্দুল্লাহ বিন জুবাইরের সাথে তার তুমুল বাগ-বিত-া ঘটে। সহীহ মুসলিমে ঘটনাটি এভাবে বর্ণিত হয়েছে: একদা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর মক্কায় সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করছিলেন। সে সময়ে উপস্থিত লোকদের মাঝে হযরত ইবনে আব্বাসও ছিলেন। বক্তৃতার এক পর্যায়ে তিনি বলেন: এমনও ব্যক্তি রয়েছে, আল্লাহ যাদের অন্তরকে চোখের ন্যায় অন্ধ করে দিয়েছেন। (এখানে সে ইবনে আব্বাসের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। তিনি তখন বৃদ্ধ ও দৃষ্টিশক্তি হীন হয়ে পড়েছিলেন।) তারা মু’তা বিবাহের বৈধতার পক্ষে ফতওয়া প্রদান করে থাকেন। এ কথা শোনার পর জবাবে ইবনে আব্বাস বলেন: তুমি একজন অজ্ঞ ও মূর্খ। আমার প্রাণের শপথ! রাসূলুল্লাহর (সা.) জীবদ্দশায় আমরা এ কাজ করেছি।

     ইবনে জুবাইর [রাসূলের (সা.) নাম শোনা সত্ত্বেও কোনরূপ সৌজন্যতা প্রদর্শন না করেই] বলেন: সাহস থাকলে তুমি তা এখন সম্পন্ন করে দেখাও। আল্লাহর শপথ! যদি তুমি তা সম্পন্ন কর তবে তোমার উপর পাথর বর্ষণ করব।  অর্থাৎ যৌক্তিক কথার জবাবে জবরদস্তি ও হুমকি প্রদান করা হয়।

     সম্ভবতঃ এ বাগ-বিতণ্ডা যখন সংঘটিত হয়েছিল, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর মক্কার শাসক হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন। যে কারণে সে ক্ষমতার দর্পে হযরত ইবনে আব্বাসের ন্যায় বিশিষ্ট সাহাবীর সাথে এমন শিষ্টাচার বর্জিত আচরণ করেছেন। বয়সের দিক থেকে ইবনে আব্বাস তার পিতার বয়সী এবং জ্ঞানের দিক থেকে তাঁর সাথে মোটেও তুলনীয় ছিলেন না।

     ধরে নিলাম যে, জ্ঞানের দিক থেকে তারা উভয়ে সমপর্যায়ে ছিলেন। কিন্তু তদুপরি ইবনে আব্বাসের সাথে তার এমন অসৌজন্য আচরণের কোন অধিকার নেই। কারণ যদি কেউ এরূপ বিধানের ক্ষেত্রে স্বীয় ফতোয়া অনুযায়ী আমল করে এবং তা যদি ভুলও হয়ে থাকে; তবে তা ভুলবশত কর্ম হিসেবে গণ্য হবে। আর ভুলবশত কোন কাজের জন্য পাথর বর্ষণ কিংবা শাস্তি দানের হুমকি প্রদান একটি অহেতুক ও অর্থহীন বিষয় হিসেবে পরিগণিত।

     এখানে মজার ব্যাপারটি রাগেব ইসফাহানী স্বীয় ‘মুহাদ্বারাত’ গ্রন্থে এভাবে বর্ণনা করেছেন: আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর ভর্ৎসনার সুরে ইবনে আব্বাসের নিকট জিজ্ঞাসা করেন: কেন মু’তা বিবাহকে জায়েয মনে করেন। তিনি জবাবে বলেন: এটির কারণ তোমার মাতার নিকট জিজ্ঞাসা কর। সে এসে তার মাতার নিকট এ বিষয়ে প্রশ্ন করায় তার মাতা বলেন :

ما ولدتک الا فی المتعة.

" আমি তোমার পিতার সাথে মু’তা বিবাহের ফলশ্রুতিতে তোমাকে জন্ম দান করেছি।”

     (৫) মুসনাদে আহমাদ গ্রন্থে উল্লেখিত হয়েছে যে, ইবনে হাসসীন হতে বর্ণিত: মু’তা বিবাহের আয়াত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতির্ণ হয় এবং আমরা এ আয়াতের বিধান অনুযায়ী আমল করতাম। আর রাসূলের (সা.) জীবদ্দশায় এ বিধান রহিত করণে অন্য কোন আয়াত নাযিল হয় নি।

     হ্যাঁ, এ রেওয়ায়েতসমূহ ও দলিলাদি সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে যে, রাসূলের (সা.) জীবদ্দশায় মু’তা বিবাহের বিধান রহিত করা হয় নি।

     উপরোক্ত রেওয়ায়েতগুলোর পাশাপাশি এমন কিছু রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে, যেগুলো এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে যে, মু’তা বিবাহের বিধান রাসূলের (সা.) যুগে রহিত হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে সেগুলো এক ও অভিন্ন কোন সময়ের কথা নির্দিষ্ট করে নি। বরং প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন্ সময়ের কথা উল্লেখ করেছে; যেমন:

(ক) এ রেওয়ায়েতগুলোর কিছু অংশে বর্ণিত হয়েছে যে, মু’তা বিবাহের বিধান খায়বার যুদ্ধের সময় (৭ম হিজরীতে) নিষিদ্ধ হয়েছে।

(খ) কিছু কিছু রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে: রাসূলুল্লাহ (সা.) মক্কা বিজয়ের বর্ষে (৮ম হিজরীতে) মু’তা বিবাহের অনুমতি প্রদান করেন। কিন্তু কিছু দিন পর একই বছরে এ বিবাহ হতে বিরত থাকার আদেশ দিয়েছেন।

     কিন্তু এ সম্পর্কে বর্ণিত নানাবিধ রেওয়ায়েত ও মতাবলীর উপর যদি আরও বিশ্লেষণ করা হয়, তাহলে দেখা যাবে যে, বিষয়টি আরও জটিল। কেননা সুন্নী মাযহাবের খ্যাতনামা ফিকাহবিদ নাভাবী তার রচিত ‘শারহে সহীহ মুসলিম’ গ্রন্থে এ সম্পর্কে ৬টি মতের কথা উল্লেখ করেছেন। যেগুলোর প্রত্যেকটি সুন্নী মাযহাবের হাদীস গ্রন্থাবলীর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে,যথা:

(১)    মু’তা বিবাহ খায়বার যুদ্ধের সময় বৈধ এবং অল্প কিছু দিন পর পুনরায় নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।

(২)    উমরাতুল কাযার সময় হালাল ঘোষিত এবং কিছু দিন পর নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

(৩)    মক্কা বিজয়ের সময় বৈধ এবং পরবর্তীতে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে।

(৪)    রাসূলুল্লাহ (সা.) তাবুকের যুদ্ধের সময় এ বিবাহের বিধান রহিত করেছেন।

(৫)    আওতাস যুদ্ধের সময় এ বিবাহকে বৈধ করা হয়েছে।

(৬)    বিদায় হজ্বের সময় [রাসূলের (সা.) জীবন সায়ােহ্ন] এ বিবাহ বৈধ ঘোষিত হয়েছে।

     এখানে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে সুন্নী মাযহাবের অন্যতম শীর্ষ মনীষী শাফেয়ীর উক্তি উল্লেখ করেছেন: আমি এমন কোন বিষয়কে দেখি নি যা আল্লাহ হালাল করেছেন, অতঃপর হারাম ঘোষণা করেছেন। পুনরায় সেটাকে হালাল এবং তারপর হারাম ঘোষণা করেছেন; আর তা হলো সাময়িক বিবাহ।

যে কোন বিবেকবান ও বিচক্ষণ ব্যক্তি এ বিষয়কে কেন্দ্র করে এমন পরস্পর বৈপরিত্যপূর্ণ রেওয়ায়েত সমূহ দেখে এটি সহজেই বুঝতে পারবেন যে, এগুলো ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তা বর্ণনা করা হয়েছে।

 

সর্বোত্তম সমাধান

     এ ধরনের মতভিন্নতা ও বর্ণিত রেওয়ায়েতসমূহের মধ্যে পারস্পরিক বৈপরিত্য যে কোন বিচক্ষণ ব্যক্তিকে এ বিষয়ে গভীর অনুসন্ধানে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করে। এ ক্ষেত্রে এমন কী ঘটনার অবতারণা ঘটেছে, যে কারণে এ বিষয়ে [সাময়িক বিবাহ রাসূলের (সা.) যুগে রহিত হওয়া প্রসঙ্গে] এত অধিক পরিমাণে পারস্পরিক বৈপরিত্যপূর্ণ রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে এবং প্রত্যেক হাদীস বিশারদ ও ফিকাহবিদ ভিন্ন ভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন?

এ ধরনের পারস্পরিক বৈপরিত্যপূর্ণ রেওয়ায়েতসমূহকে কী আদৌ সমন্বিত করা সম্ভব?

     মূলত: এমন পারস্পরিক বৈপরিত্যপূর্ণ রেওয়ায়েতসমূহ এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত দেয় যে, এখানে একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করছে; যে কারণে একশ্রেণীর হাদীস জালকারীরা নিজেদের  মনগড়া রেওয়ায়েত জাল করে সেগুলোকে অসদুপয়ে অবলম্বনের মাধ্যমে সাহাবীদের নামে প্রচার করছে।

     আর সে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যটি হচ্ছে এটাই যে, দ্বিতীয় খলিফার একটি অপরিণামদর্শী মন্তব্যের নেতিবাচক প্রভাবকে ধামাচাপা দেওয়া। তিনি বলেছেন: রাসূলুল্লাহর (সা.) যুগে দু’টি বিষয় হালাল ছিল। কিন্তু আমি তা হারাম ঘোষণা করছি। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে মু’তা বিবাহ।

     তার এহেন মন্তব্য মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে; তা হল যদি কেউ ইসলামের একটি বিশেষ বিধানকে প্রকাশ্যে পরিবর্তনের ঘোষণা দিতে পারেন, তাহলে এ বিষয়টি শুধুমাত্র দ্বিতীয় খলিফার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে না, বরং অন্য যে কেউ এভাবে প্রকাশ্যে রাসূল (সা.) কর্তৃক ঘোষিত কোন বিধানের ক্ষেত্রে ইজতেহাদের ধৃষ্টতা দেখাতে পারে। ফলে এমতাবস্থায় ইসলামের চিরন্তন বিধানাবলী একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির ক্রীড়ানকে পরিণত হবে। আর সময়ের আবর্তে উক্ত বিধানাবলীর অক্ষুন্নতা ও অকাট্যতা হুমকির শিকার হবে।

     অতএব উক্ত মন্তব্যের নেতিবাচক প্রভাবকে ধামাচাপা দিবার উদ্দেশ্য একশ্রেণীর ব্যক্তি সক্রিয় হয়ে পড়ে। তারা প্রচার করতে থাকে যে, এ বিধান দু’টি রাসূলের (সা.) যুগে রহিত হয়েছে। আর তাদের এহেন প্রচারের সপক্ষে মনগড়া রেওয়ায়েত জাল করার পর সেগুলো রাসূলের (সা.) কিছু সাহাবীর নাম ব্যবহার করে বর্ণনা করা হয়েছে। যেহেতু সেগুলোর কোনটিও সত্য ও বাস্তব ছিল না, সেহেতু তাতে অহরহ পারস্পরিক বৈপরিত্য ফুটে উঠেছে।

     নতুবা এমনটি কিভাবে সম্ভব যে, একটি মাত্র বিষয়ে এত অধিক পারস্পরিক বৈপরিত্যপূর্ণ রেওয়ায়েত বর্ণিত হবে। এমনকি এগুলোর সমন্বিতকরণের প্রয়াসে একশ্রেণীর  ফিকাহবিদ এমন মন্তব্য করবেন যে, মু’তা বিবাহ এক সময় বৈধ ছিল পরে তা হারাম করা হয়েছে। আবার তা হালাল করা হয়েছে এবং পুনরায় হারাম ঘোষিত হয়েছে। তাহলে কী আল্লাহ প্রদত্ত বিধানাবলী খেলনাতুল্য?

     সর্বোপরি রাসূলুল্লাহর (সা.) যুগে অনিবার্য প্রয়োজনের তাগিদেই সাময়িক বিবাহের বিধানকে জায়েয করা হয়েছিল। আর এ প্রয়োজনটি অন্যান্য যুগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরবাসে জীবনযাপনকারীদের জন্য তীব্রতরভাবে অনুভূত হচ্ছে। তবে কেন তা বৈধ হবে না?

     তৎকালীন সময়ে এত অধিক পরিমাণে যৌন উদ্দীপক সরঞ্জামাদির সমাহার যেমন: নারী দেহের নগ্নতা প্রদর্শন, যৌন উত্তেজক ফিল্ম ও সিনেমা, টিভি, ভিসিপি, ইন্টারনেট, শত শত স্যাটেলাইট চ্যানেল এবং চরিত্র বিধ্বংসী প্রচার মাধ্যমসমূহের (যা বর্তমান যুবসমাজকে অক্টোপাসের মত গ্রাস করছে) কোন লেশমাত্র ছিল না।

     মু’তা বিবাহ একটি অনিবার্য  প্রয়োজন মিটানোর মাধ্যম হিসেবে কোন বিশেষ যুগে সীমিত সময়ের জন্য বৈধ ঘোষিত হয়েছিল এবং অতঃপর তা চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছে। এমন দাবী কি আদৌ প্রহণযোগ্য?

     এতদসত্ত্বেও আমরা যদি মনে করি যে, মুসলিম উম্মাহর অধিকাংশ ফিকাহবিদ মু’তা বিবাহকে হারাম গণ্য করেছেন। কিন্তু পাশাপাশি ফিকাহবিদদের একটি অংশ এ বিবাহকে জায়েয মনে করেন এবং এ বিষয়ে তাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। সুতরাং এমতাবস্থায় এ বিবাহকে যারা বৈধ মনে করেন তারা তাদের বিরোধিদেরকে ইসলামের বিধান অমান্যকারী হিসেবে অভিহিত করবেন, কিংবা যারা অবৈধ মনে করেন তারা তাদের বিরোধিদের উপর ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ করবে; এমনটি তো মোটেও সমীচীন নয়। যদি এমন মনগড়া অপবাদের ধারা অব্যাহত থাকে তাহলে তারা কিয়ামতের দিন আল্লাহর সম্মুখে কিভাবে জবাবদিহি করবে? কাজেই বলা যেতে পারে যে, ইজতিহাদগত দিক থেকে এ বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।

     প্রখ্যাত সুন্নী মুফাসসির ফাকরুদ্দীন রাজী (যিনি এ জাতীয় বিষয়ে প্রবল গোড়া মানসিকতা রাখেন) স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে মু’তা বিবাহের বিধান প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন:

ذهب السواد الأعظم من الأمّة إلی أنّها صارت منسوخة و قال السواد منهم أنّها بقیت کما کانت.

"অধিকাংশ মুসলমানরা বিশ্বাস পোষণ করেন যে, এ বিধানটি রহিত হয়েছে। কিন্তু মুসলমানদের মধ্যে একটি অংশ আকিদা পোষণ করেন যে, এ বিধানটির বৈধতা অক্ষুন্ন রয়েছে।”  অর্থাৎ এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর মাঝে মতভেদ রয়েছে।

     এ পর্যায়ে আমরা সাময়িক বিবাহের অধ্যায়ের আলোচনার উপসংহারে সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই যে, কোনরূপ যাচাই-বাছাই ব্যতিরেকে কোন বিশেষ মাযহাবের অনুসারীদের প্রতি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অপবাদ আরোপ হতে সর্বোতভাবে বিরত থাকবেন। অনুগ্রহপূর্বক, নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিষয়টি আরও একবার পবিত্র কোরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে বিশ্লেষণ করুন। নিঃসন্দেহে আপনারা নিশ্চিত হতে পারবেন যে, এ বিবাহটি বিশেষ শর্তসাপেক্ষে মহান আল্লাহ প্রদত্ত শাশ্বত বিধান হিসেবে বহাল রয়েছে এবং তা অনেক সামাজিক সমস্যার সর্বোত্তম সমাধান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

মূল : আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজি

অনুবাদ: মোহাম্মাদ মিজানুর রহমান

ট্যাগ: সাময়িক বিবাহ, মুতা, খলিফা উমর, পবিত্র কোরআন, সুন্নাত, ফিকাহশাস্ত্র

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: