bayyinaat

Published time: 06 ,March ,2017      00:49:50
প্রবন্ধ
প্রত্যেক নবী তাঁর নিজ নিজ সামর্থ্য ও যুগের পরিস্থিতি অনুযায়ী এ পথে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং কোন কোন নবী বিশেষ কোন ভৌগোলিক পরিসরে কোন বিশেষ যুগে খোদায়ী সরকার ও প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করতেও সক্ষম হয়েছেন। তবে কোন নবীর পক্ষেই সমগ্র বিশ্বব্যাপী সত্য ও ন্যায়ের সরকার ও প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করার যাবতীয় শর্ত ও সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হয় নি। তবে এরূপ ক্ষেত্র প্রস্তুত না হওয়ার অর্থ নবীদের ঐশী শিক্ষা ও নীতিমালা অপূর্ণাঙ্গ ও অপর্যাপ্ত হওয়া নয়। কারণ, মহান আল্লাহর লক্ষ্যই হচ্ছে বিকাশ ও পূর্ণতা প্রাপ্তির পানে মানবজাতির ঐচ্ছিক অগ্রযাত্রা ও অগ্রগতির জন্য উপযোগী ক্ষেত্র ও প্রয়োজনীয় পরিবেশ-পরিস্থিতি প্রস্তুত করা।
সংবাদ: 33

মহান আল্লাহ প্রতি যুগের সমুদয় শর্ত ও পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রত্যেক উম্মতের জন্য নবীদেরকে প্রেরণ করেছেন, তবে কোন নবীই তাঁর নিজ পরিকল্পনা ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে সফল ছিলেন না এবং ব্যাপকভিত্তিক ন্যায়ের প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করে যেতে পারেন নি। কারণ, জনগণ এ ধরনের ব্যাপকভিত্তিক সত্য ও ন্যায়ের সরকার ও প্রশাসন মেনে নেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল না। যখন মহান আল্লাহর নবিগণ জনগণকে এক-অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করার আহ্বান জানাতেন তখন তাঁরা জনগণের বিরোধিতার সম্মুখীন হতেন। বিশেষ করে শাসকবর্গ ও ধনী শ্রেণী যারা আপাদমস্তক বিলাসিতা ও আমোদ-প্রমোদে মত্ত এবং ধন-সম্পদ ও ক্ষমতার দর্পে অথবা বিদ্যা ও জ্ঞানের কারণে গর্বিত থাকত তারাই মহান নবীদের এ আহ্বানের তীব্র বিরোধিতা করত। তারা সমাজের অন্যান্য শ্রেণীকেও নিজেদের দিকে টেনে নিত এবং তাদেরকে সত্য পথে চলা থেকে বিরত রাখত। এ কারণেই মানব সমাজের অতি নগণ্য সংখ্যক ব্যক্তি কেবল নবীদের প্রতি ঈমান আনত। সঠিক আকীদা-বিশ্বাস এবং ন্যায়পরায়ণতার মূল-নীতিমালার ওপর কোন সমাজ কদাচিৎ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যা মহান আল্লাহ ও নবীদের আদেশ-নির্দেশের প্রতি অনুগত থেকেছে। যেমন এ ধরনের সমাজ হযরত সুলাইমান (আ.)-এর যুগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যদিও নবীদের সুমহান শিক্ষামালার বেশ কিছু অংশ ধীরে ধীরে মানব সমাজসমূহের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির ভেতর অনুপ্রবেশ করে ও অনুসৃত হতে থাকে।

সুতরাং নবীদের প্রেরণের প্রথম ও মূল লক্ষ্যই ছিল মানবজাতির প্রগতি, বিকাশ ও পূর্ণতার প্রয়োজনীয় সকল শর্ত ও অবস্থার উন্মেষ যা আসমানী ওহীর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে। নবীদের লক্ষ্যসমূহের মধ্যে ছিল যোগ্য ব্যক্তিদের বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ও উন্নতি এবং তাদের আত্মিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। সকল নবীই বিশ্বব্যাপী আদর্শ তৌহীদী সমাজ গঠন এবং ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচার প্রসারের জন্য অক্লান্ত চেষ্টা করেছেন। প্রত্যেক নবী তাঁর নিজ নিজ সামর্থ্য ও যুগের পরিস্থিতি অনুযায়ী এ পথে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং কোন কোন নবী বিশেষ কোন ভৌগোলিক পরিসরে কোন বিশেষ যুগে খোদায়ী সরকার ও প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করতেও সক্ষম হয়েছেন। তবে কোন নবীর পক্ষেই সমগ্র বিশ্বব্যাপী সত্য ও ন্যায়ের সরকার ও প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করার যাবতীয় শর্ত ও সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হয় নি। তবে এরূপ ক্ষেত্র প্রস্তুত না হওয়ার অর্থ নবীদের ঐশী শিক্ষা ও নীতিমালা অপূর্ণাঙ্গ ও অপর্যাপ্ত হওয়া নয়। কারণ, মহান আল্লাহর লক্ষ্যই হচ্ছে বিকাশ ও পূর্ণতা প্রাপ্তির পানে মানবজাতির ঐচ্ছিক অগ্রযাত্রা ও অগ্রগতির জন্য উপযোগী ক্ষেত্র ও প্রয়োজনীয় পরিবেশ-পরিস্থিতি প্রস্তুত করা। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে:

﴿لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللَّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ

"নবী-রাসূলদের প্রেরণের পরে যেন মহান আল্লাহর সমীপে মানবজাতির আর কোন যুক্তিই বিদ্যমান না থাকে।” (নিসা: ১৬৫।)

তাই মানবজাতিকে সত্যধর্ম গ্রহণ এবং মহান আল্লাহর মনোনীত নেতৃবর্গের অনুসরণ করতে বাধ্য করা হয় নি।

সর্বশেষ নবী হিসেবে মহানবী (সা.), ইমাম আলী এবং তাঁর পরবর্তী ইমামগণ যাঁদের দায়িত্ব ছিল বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচারের আলোকরশ্মির বিচ্ছুরণ ঘটানো এবং মানবজাতিকে দ্বীনে ইসলামের দিকে আহ্বান করা, তাঁরাও মানবজাতির আত্মিক ও চিন্তামূলক বিকাশের প্রয়োজনীয় শর্তাবলী সৃষ্টি না হওয়ার কারণে সমগ্র বিশ্বব্যাপী সত্য ও ন্যায়ের শাসন (হুকুমাত) প্রতিষ্ঠা করতে পারেন নি। কারণ, মানবজাতির চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তির পর্যায় তখনও এমন পর্যায়ে উন্নীত হয় নি যে, তাদের মধ্যে পরিবর্তন এবং সত্য ও ন্যায়ের সরকার ও প্রশাসন মেনে নেয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে যাবে। প্রকৃতপক্ষে, মানুষ ঐ শিশুর মত যে শিক্ষা-প্রশিক্ষণের মুখাপেক্ষী যাতে সে চড়ান্ত বিকাশ ও উন্নতির পর্যায়ে পৌঁছতে সক্ষম হয় এবং ধীরে ধীরে তাকে অবশ্যই বিকাশ ও উৎকর্ষের পর্যায়সমূহ অতিক্রম করতেই হবে। এ কারণেই উক্ত লক্ষ্য পৌঁছানোর জন্য পর্যাপ্ত শর্তাবলী ও ক্ষেত্র প্রস্তুত করা ব্যতীত বিশ্বব্যাপী সত্য ও ন্যায়ের সরকার ও প্রশাসন বাস্তবায়নের প্রস্তুতি ঐশ্বরিক নেতৃবর্গের ছিল না। আর এটা তাঁদের ত্রুটির কারণে নয়; বরং প্রকৃত সমস্যা হচ্ছে প্রয়োজনীয় শর্তাবলী ও ক্ষেত্র বিদ্যমান না থাকা এবং এক্ষেত্রে জনগণের অপ্রস্তুত থাকা।

হাদীসসমূহের আলোকে বিশ্বব্যাপী সত্য ও ন্যায়ের সরকার ও প্রশাসন মেনে নেয়া ও জনগণের চিন্তামূলক পরিবর্তন মানবজাতির সামাজিক, চিন্তামূলক ও সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি এবং বুদ্ধিবৃত্তিক পূর্ণতা ইত্যাদির মত বিভিন্ন কারণ ও শর্তের ওপর নির্ভরশীল যেগুলো ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের যুগে বিদ্যমান থাকবে। এগুলোর মধ্য থেকে কয়েকটি  নিচে বর্ণিত হলো:

১. সামাজিক প্রস্তুতি

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের অন্যতম শর্ত হচ্ছে সামাজিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমগ্র মানবজাতির প্রস্তুতি।  ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের আগে সমগ্র বিশ্ব অন্যায়-অবিচার দিয়ে পূর্ণ হয়ে যাবে। জাতি ও দেশসমূহের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ-বিগ্রহ দেখা দেবে এবং নিহত নর-নারীর লাশের স্তূপে সমগ্র বিশ্ব ভরে যাবে। ইমাম সাদেক (আ.) বলেছেন: ‘যে পর্যন্ত পৃথিবীর জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ নিহত না হবে সে পর্যন্ত ইমামে যামান (ইমাম মাহদী) আবির্ভত হবে না।’ তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো: ‘এরপরে মানবজাতির মধ্যে কতজন জীবিত থাকবে?’ তিনি বললেন: ‘তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তোমরা (পৃথিবীর) জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে বিদ্যমান থাকবে?’

ঐ যুগে (আবির্ভাবের যুগে) জনগণের জান-মালের কোন নিরাপত্তা থাকবে না। সড়কসমূহ সম্পূর্ণ অনিরাপদ হয়ে যাবে। পুরো মানব সমাজ ত্রাস ও ভয়ভীতিতে ছেয়ে যাবে। আকস্মিক ও অকাল মৃত্যু সর্বত্র প্রসার লাভ করবে। ইমাম আলী (আ.) বলেছেন: ‘ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের জন্য বেশ কিছু নিদর্শন রয়েছে। যেমন বিশ্বব্যাপী অপ্রীতিকর হত্যাযজ্ঞ ও গণহত্যাসমূহ, দ্রুত ও একের পর এক মৃত্যু এবং প্লেগ ও মহামারীর প্রাদুর্ভাব।’

রেওয়ায়াতসমূহের ভিত্তিতে ঐ যুগে নিষ্পাপ শিশুদেরকে অত্যাচারী শাসনকর্তারা সবচেয়ে নিকৃষ্ট পন্থায় নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করবে। মৃত্যু আনয়নকারী রোগসমূহের (সম্ভবত নিহতদের লাশ পঁচে গলে যাওয়ার কারণে অথবা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করার দরুন) বিস্তার ঘটবে। এ ধরনের কঠিন পরিস্থিতিতে সমগ্র মানব সমাজে হতাশা-নিরাশা ব্যাপক প্রসার লাভ করবে। মৃত্যু তখন মানবজাতির জন্য সবচেয়ে উত্তম উপহার বলে গণ্য হবে। তখন জগগণের একমাত্র আশা-আকাক্সক্ষা হবে তাদের জীবনাবসান। ঐ সময় হিংস্রতা ও একে অন্যের অধিকার লঙ্ঘনের কারণে জনগণ দিবারাত্রি মৃত্যু কামনা করবে। 

এ ধরনের পরিস্থিতিতে মানবজাতির হৃদয়সমূহ খোদামুখী হবে এবং বিশ্ব-বিপ্লবের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে যাবে। আর তখন আসমান থেকে স্বর্গীয় আহ্বান সমগ্র পৃথিবীব্যাপী ধ্বনিত হবে এবং তা সবার কর্ণগোচর হবে: ‘হে বিশ্ববাসী! জালেম শাসকদের দিন শেষ হয়ে গেছে এবং মাহদী (আ.) আত্মপ্রকাশ করেছেন।’ এই আসমানী আহ্বান জনগণের মৃতপ্রায় দেহগুলোয় নতুন করে প্রাণসঞ্চার করবে এবং সমগ্র মানব জাতির জীবন প্রেম-ভালোবাসা ও ঈমানে ভরপুর হয়ে যাবে এবং তা নব উদ্যম ও উদ্দীপনা সহকারে পুনরায় শুরু হবে।

সুতরাং ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের অন্যতম শর্ত হচ্ছে সামাজিক প্রস্তুতি। বিশ্বের বিদ্যমান সরকার ও প্রশাসনসমূহের অন্যায়-অত্যাচারের কারণে মানবজাতি ক্লান্ত হয়ে পড়বে এবং তারা সবাই এ পার্থিব ও বস্তুবাদী জীবনের তিক্ততা এমনভাবে অনুভব করবে যে, হতাশা ও নৈরাজ্য সবার মধ্যে বিস্তার লাভ করবে এবং তারা (বিশ্বব্যাপী) এক ঈমানী বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। এমন এক পরিস্থিতিতেই ইমাম মাহদী (আ.) আত্মপ্রকাশ করবেন।

২. চিন্তামূলক ও সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের অন্যতম শর্ত হচ্ছে মানবসমাজের চিন্তামূলক ও সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি। অবশ্য চিন্তা-চেতনার এ পর্যায়ে উপনীত হওয়া তখনই সম্ভব হবে যখন মানবজাতি কার্যত বংশ, জাতি-গোত্র, বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চল, কৃত্রিম সীমান্ত রেখা, ভাষা ইত্যাদি ত্যাগ করবে এবং তারা সূর্যালোক, প্রাণ সঞ্চারণকারী মৃদুমন্দ সমীরণ, বৃষ্টিবর্ষণকারী মেঘমালা এবং প্রকৃতির অন্যান্য শক্তির ন্যায় উদার হবে এবং সকল কৃত্রিম রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক সীমান্ত ও সীমারেখা উপেক্ষা করে সমগ্র পৃথিবীকে এক দেশ ও এক রাষ্ট্র বলে বিবেচনা করবে।

পুঁজিবাদ, উদারতাবাদ, সমাজবাদ, বর্ণবাদ, জাতীয়তাবাদের মত সকল ধরনের ইজ্ বা মতবাদ মানব সমাজসমূহের কোন সমস্যাই সমাধান করতে সক্ষম নয়। মানব সমাজসমূহকে অবশ্যই চিন্তামূলক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এবং তৌহিদী (একত্ববাদী) নীতি-নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে বিকাশ ও অগ্রগতি লাভ করতে হবে। আর তা অর্জিত হলেই ইমাম মাহদী (আ.) আবির্ভূত হবেন।

৩. জ্ঞানগত প্রস্তুতি ও শিল্পের বিকাশ

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের আরেকটি শর্ত হচ্ছে জ্ঞানগত প্রস্তুতি এবং প্রযুক্তি ও শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ও প্রসার। আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শীরাযী বলেন: ‘একটি একক বিশ্ব-ব্যবস্থার গোড়াপত্তন ও অতঃপর তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কতকগুলো অত্যাধুনিক উপায়-উপকরণ ও যানবাহনের প্রয়োজন যেগুলোর মাধ্যমে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই সমগ্র বিশ্ব পরিক্রমণ করা, বিশ্বের সকল স্থান পরিদর্শন করা, পৃথিবীর সকল অঞ্চলের অবস্থা সম্পর্কে অবগত হওয়া, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা অল্প সময়ের মধ্যে স্থানান্তর করা এবং ন্যূনতম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সকল বাণী ও তথ্যসমূহ বিশ্বের সকল অঞ্চলে প্রেরণ করা...পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে কোন বাণী প্রেরণ করতে যদি এক বছর লেগে যায় তাহলে কিভাবে সমগ্র বিশ্ব শাসন করা এবং ন্যায়বিচারকে বিশ্বজনীন করা সম্ভব হবে?’

এক্ষেত্রে এমন কিছু রেওয়ায়াত ও হাদীস বিদ্যমান যেগুলোয় বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এ ব্যাপারে দৃকপাত করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে হযরত ইমাম মাহদী (আ.)-এর যুগের প্রযুক্তি মানবজাতির বর্তমান কালের প্রযুক্তি হতে ভিন্ন ধরনের হবে। বর্তমান কালের প্রযুক্তি ধর্মহীনতার বলয়ে আবদ্ধ হয়ে গেছে। মানবজাতির বর্তমান যুগের প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যে সীমাবদ্ধতা বিরাজ করছে তা ইমাম মাহদী (আ.)-এর যুগের প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিদ্যমান থাকবে না এবং এর পরিধি বর্তমান যুগের মানবজাতি যা চিন্তা ও অনুধাবন করতে সক্ষম তার চেয়েও অনেক ব্যাপক হবে।

ঐ সব হাদীসের ভিত্তিতে ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ ও আবির্ভাবের যুগে শিল্প ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ ও পূর্ণতার আলোকে সমগ্র বিশ্ব আসলে একটি গ্রাম বা শহরের মত হয়ে যাবে। প্রাচ্য দেশীয়রা পাশ্চাত্যবাসীদের দেখতে এবং তাদের কথা শুনতে পাবে। ইমাম সাদেক (আ.) বলেছেন:

‘আল-ক্বায়েম আল-মাহদীর যুগে ঈমানদার ব্যক্তি যে প্রাচ্যে জীবন-যাপন করছে, সে পাশ্চাত্যে বসবাসরত নিজ ভাইকে দেখতে পারবে।’

আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শীরাযী বলেন:

‘প্রযুক্তি ও শিল্পের উন্নতি ও অগ্রগতি বিশেষ করে পরিবহণ শিল্প ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সেই যুগে এতটা হবে যে, পৃথিবীর বৃহৎ মহাদেশগুলো কার্যত পরস্পর নিকটবর্তী গুটিকতক নগরী ও শহরে পরিণত হবে। সঠিক ও মৌলিকভাবে স্থান ও কালগত দূরত্বজনিত সমস্যারও পূর্ণ সমাধান হয়ে যাবে... এ সব বিষয়ের কিয়দংশ সেই যুগে এক ধাপে এবং শিল্প বিপ্লবের কারণেই বাস্তবায়িত হতে পারে। তবে এক ধরনের শিক্ষা ও জ্ঞানগত প্রস্তুতি আবির্ভাবের যুগের সূচনালগ্নে পটভূমি স্বরূপ অবশ্যই বিদ্যমান থাকবে। উন্নত শিল্প ও কল-কারখানার অস্তিত্ব ন্যায়পরায়ণ বিশ্ব সরকার ও প্রশাসনের জন্য বাধা তো নয়ই; বরং এগুলো ব্যতীত এ ধরনের সুমহান লক্ষ্যে উপনীত হওয়াও অসম্ভব।’

৪. জ্ঞান-বিকাশের বিকাশ ও উন্নতি

ইমাম মাহদী (আ.)-এর যুগে ধর্মের প্রতি আগ্রহ ও আকর্ষণ জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারের সাথে সাথে এবং একই সময়ে প্রসার লাভ করবে এবং সেই যুগের মানুষ ধার্মিকতাকে প্রযুক্তির বিকাশ ও উন্নতির সাথে মোটেও অসামঞ্জস্যশীল বলে মনে করবে না। রেওয়ায়াতসমূহের ভিত্তিতে অসৌর শক্তি, অত্যন্ত দ্রুতগামী যানবাহনের ব্যবহার এবং শব্দ, ধ্বনি, চিত্রসমূহ বিশ্বব্যাপী প্রত্যক্ষ ও সরাসরি সম্প্রচার করা সম্ভব হবে। সব কিছুই হাতের তালুর মত দৃষ্টিশক্তির নাগালে থাকবে এবং ইমাম মাহদী (আ.) সমগ্র বিশ্ব শাসন করবেন। পুণ্যবান ব্যক্তিগণ পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে এবং অসৎকর্ম সম্পাদনকারীরা সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হবে। এ সব ইমাম মাহদী (আ.)-এর প্রশাসনের অধীনে বাস্তবায়িত হবে যা মানবজাতি এর আগে কখনো প্রত্যক্ষ করে নি।

অবশ্য আশ্চর্যজনক এ সব উন্নতি ও প্রগতি অলৌকিকভাবে সংঘটিত ও বাস্তবায়িত হবে না; বরং এ সব উন্নতি ও প্রগতি আবির্ভাব-উত্তর যুগের জ্ঞানগত (বৈজ্ঞানিক) পূর্ণতার পরিণতি ও ফল হবে। কারণ, মানবজীবনকে অবশ্যই প্রকৃতিজগতের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী নিয়ম-কানুনের সাথে পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল হতে হবে। আর তা স্বভাবত অলৌকিক হবে না। কারণ, এ’জায বা অলৌকিক হচ্ছে ব্যতিক্রম এবং জরুরি ক্ষেত্রসমূহেই কেবল তা ঘটে থাকে। সুতরাং ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পূর্ণতা পাবে।

ইমাম সাদিক (আ.) বলেন:

‘জ্ঞান-বিজ্ঞান হচ্ছে ২৭ ভাগ। যা কিছু মহান নবিগণ আনয়ন করেছেন তা হচ্ছে ২ ভাগ মাত্র। আর মানবজাতি এ পর্যন্ত কেবল ঐ দুই ভাগ ব্যতীত জ্ঞানের অন্যান্য ভাগের সাথে পরিচিতি লাভ করে নি। আর যখন আমাদের ক্বায়েম (ইমাম মাহদী) আবির্ভূত হবেন তখন জ্ঞানের অন্য ২৫ ভাগ মানবজাতির কাছে উপস্থাপন করবেন এবং তা মানবজাতির মাঝে প্রসার ও প্রচার করবেন। তিনি জ্ঞানের দুই ভাগের সাথে এই ২৫ ভাগ যোগ করে সমগ্র মানবজাতির মাঝে জ্ঞানের মোট ২৭ ভাগ অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান প্রচার করবেন।’

এ রেওয়ায়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মানবজাতি যদিও জ্ঞান-বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে উন্নত হচ্ছে তবুও ইমাম মাহদী (আ.)-এর যুগে এক ধাপে ১২ গুণেরও বেশি উন্নতি লাভ করবে। একটু সূক্ষভাবে চিন্তা করলে আমরা বুঝতে পারব যে, ইমাম মাহদী (আ.)-এর যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞানের কতই না আশ্চর্যজনক ও চোখ ধাঁধাঁনো উন্নতি সাধিত হবে।

৫. বুদ্ধিবৃত্তিক পূর্ণতা

মানবজাতিকে অবশ্যই বুদ্ধিবৃত্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে উন্নতির এমন এক উচ্চতর পর্যায় পৌঁছতে হবে যাতে ইমাম মাহদী (আ.) আবির্ভূত হন। ইমাম বাকির (আ.) বলেন:

‘ইমাম মাহদীর যুগে মহান আল্লাহ স্বীয় রহমতের হাত সকল বান্দার মাথার ওপর স্থাপন করবেন। আর এ ভাবেই সমগ্র মানবজাতির বিবেক-বুদ্ধি কেন্দ্রীভ হবে ও পূর্ণতা লাভ করবে...

ইমাম মাহদী যেহেতু ইসলামী বিধি-বিধানসমূহ পূর্ণরূপে প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করবেন সেহেতু তা মানবজাতির চিন্তামূলক উৎকর্ষের কারণ হবে এবং মহানবী (সা.), যিনি বলেছেন: ‘আমি মানবজাতির চারিত্রিক ও নৈতিক পূর্ণতা বিধান করার জন্য প্রেরিত হয়েছি’, তাঁর  লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যও তখন বাস্তবায়িত হবে।

ইমাম মাহদী (আ.)-এর সরকার মানবের বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ও পূর্ণতা সাধন, জাগরণ এবং মানবজাতির লুক্কায়িত সামর্থ্যসমূহের বিকাশ ঘটাবে। মানবজাতি মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহে এবং বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘমেয়াদী অভিজ্ঞতাসমূহ অর্জন করার পর উপলব্ধি করতে পারবে যে, মানবজাতির যাবতীয় কর্মসূচি ও পরিকল্পনা মানবসমাজের সমস্যাসমূহ সমাধান করতে অপারগ। এ কারণেই গোটা মানবজাতি সন্তুষ্টচিত্তে ইমাম মাহদীর মহান বিপ্লবকে স্বাগত জানাবে ও মেনে নেবে।

৬. চারিত্রিক (নৈতিক) ও আধ্যাত্মিক পূর্ণতা

হাদীসসমূহের আলোকে, ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের যুগে চারিত্রিক ও আধ্যাত্মিক পূর্ণতা বাস্তবায়িত হবে। মুহাদ্দিসগণ মহানবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম মাহদী (আ.)-এর সরকার ও প্রশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ন্যায়পরায়ণতার প্রসার এবং অন্যায়-অবিচারের বিলুপ্তি। ‘আল্লাহ ইমাম মাহদী (আ.)-এর মাধ্যমে পৃথিবীকে ন্যায় ও সুবিচারে পূর্ণ করে দেবেন’Ñ বাক্যটি মানবজাতির চারিত্রিক ও আধ্যাত্মিক পূর্ণতা নির্দেশ করে।

মহানবী (সা.) বলেছেন:

‘যখন মাহদী আবির্ভত হবে তখন মহান আল্লাহ বান্দাদের হৃদয়ে নিরভাব বোধ ও অমুখাপেক্ষিতার অনুভূতি সৃষ্টি করবেন এমনভাবে যে, মাহদী যখন ঘোষণা করবে: ‘যার ধন-সম্পদের প্রয়োজন রয়েছে সে যেন আমাদের কাছে আসে’, কিন্তু কোন ব্যক্তি তখন সেজন্য আসবে না।’

এ হাদীসে ই’বাদ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে যা ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের যুগে মানবজাতির আত্মিক ও অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনাদির কথা সু¯পষ্টভাবে ব্যক্ত করে।

রেওয়ায়াতসমূহ ইমাম মাহদী (আ.)-এর যুগে বিশ্বকে এক সুসভ্য এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প, চরিত্র, আধ্যাত্মিকতা ও বিবেক-বুদ্ধির দৃষ্টিকোণ থেকে উন্নত ও অগ্রসর বিশ্ব হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় যার সাথে বর্তমান যুগের জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প ও প্রযুক্তিগত উন্নতির দুস্তর ব্যবধান রয়েছে। অবশ্য বর্তমান যুগের উন্নতি ও প্রগতির সাথে ইমাম মাহদী (আ.)-এর যুগের উন্নতি ও প্রগতির মৌলিক পার্থ্যকটা এর মধ্যে নিহিত আছে যে, আমাদের যুগের জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে বা হচ্ছে তা মানবজাতির সাংস্কৃতিক ও চারিত্রিক অবক্ষয় এবং স্খলনের কারণ হচ্ছে বা হয়েছে এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ যত উন্নত হচ্ছে, সে মানবতা থেকে তত বেশি দূরে সরে যাচ্ছে এবং দুর্নীতি, ধ্বংস ও হত্যাযজ্ঞের দিকেই ধাবিত হচ্ছে। কিন্তু ইমাম মাহদী (আ.)-এর যুগে এ সব অবস্থা ও পরিস্থিতি বর্তমান অবস্থা ও পরিস্থিতির সম্পূর্ণ বিপরীত হবে। অর্থাৎ মানবজাতি জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প ও প্রযুক্তিগত বিকাশ ও উন্নতির সর্বশীর্ষে আরোহণ করেও সেই পরিমাণে মানবীয় পূর্ণতা ও চরিত্রের আরও অধিক নিকটবর্তী হবে।

ফলাফল ও সিদ্ধান্ত

ব্যাপকভিত্তিক সত্য ও ন্যায়ের প্রশাসন যা মানবজাতির জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প, বুদ্ধিবৃত্তি, আধ্যাত্মিকতা, চরিত্র ইত্যাদির বিকাশ ও পূর্ণতার কারণ হবে তা প্রতিষ্ঠা করা সকল নবী ও নিষ্পাপ ইমামের যুগে বাস্তবে সম্ভব হয় নি। তবে এ প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করার যাবতীয় পরিবেশ, শর্ত ও পরিস্থিতি মাহদীর আবির্ভাবের যুগে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান থাকবে। এ কারণেই ইমাম মাহদী (আ.)-এর সরকার ও শাসন ব্যবস্থা মেনে নেওয়া ও এর প্রতি আনুগত্য করার কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে ঐ সময়ের উত্তেজনাকর ও উত্তপ্ত বিশ্ব-পরিস্থিতি। এ সময় বহু রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং নিষ্ঠুর ও লোমহর্ষক গণহত্যা সংঘটিত হবে। বিশ্ববাসী পৃথিবীর সরকার ও প্রশাসনসমূহের অন্যায়-অত্যাচারে এতটা অতিষ্ঠ ও ক্লান্ত হয়ে যাবে যে, এর ফলে হতাশা ও নৈরাজ্য সবাইকে পেয়ে বসবে এবং সবাই তখন এক মহান ঈমানী বিপ্লবের জন্য (আত্মিকভাবে) প্রস্তুত হয়ে যাবে। আর ঠিক এ ধরনের পরিস্থিতিতেই ইমাম মাহদী আত্মপ্রকাশ করবেন।

উদারতাবাদ, পুঁজিবাদ, সমাজবাদ, বর্ণ বৈষম্য, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদির মত মানবরচিত কোন মতবাদই মানব সমাজের কোন সসমস্যারই সমাধান করতে সক্ষম হবে না অধিকন্তু, মানবজাতিকে অবশ্যই চিন্তাগত ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আধ্যাত্মিক এবং তৌহীদী চরিত্র ও আদর্শের ভিত্তিতে উন্নত হতে হবে। আর তারা শিল্প ও প্রযুক্তিগতভাবে অবশ্যই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ সম্পন্ন করবে যে, এর ফলে সবাই ইমাম মাহদীর আবির্ভাব এবং তাঁর পক্ষ হতে বিশ্বব্যাপী ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে গোটা মানবজাতির জ্ঞান-বিজ্ঞানের (চূড়ান্ত) বিকাশ এবং চারিত্রিক-আধ্যাত্মিক পূর্ণতা অবলোকন করতেও সক্ষম হবে।

‘হে মাহদী! আমার নয়নে দৃশ্যমান এ ভুবন যে আপনারই আবাসভূমি। দয়া করে (অন্তর্ধান থেকে) এ ধরাতলে নেমে আসুন। কারণ, এ ভুবন তো আপনারই।’

অধিক অধ্যয়নের জন্য নিম্নোক্ত গ্রন্থাদি দ্রষ্টব্য

১. আয়াতুল্লাহ মাকারেম শীরাযী প্রণীত ইমাম মাহদী (আ.) এক মহান বিপ্লব, পৃ. ৮৩।

২. সাইয়্যেদ আসাদুল্লাহ হাশেমী মাহদী প্রণীত ইসলাম ও বিশ্বের অন্য সকল ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাব, পৃ. ৯৯।

সমাপনী হাদীস

‘যখন হযরত মাহদী (আ.) আবির্ভূত হবেন তখন মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অন্তরে অমুখাপেক্ষিতা ও অভাবহীনতা বোধের উন্মেষ ঘটাবেন এমনভাবে যে, হযরত ইমাম মাহদী (আ.) যখন ঘোষণা করবেন যে, যে ব্যক্তির ধন-সম্পদ ও অর্থের প্রয়োজন আছে সে যেন (তাঁর কাছে) তা নেয়ার জন্য আসে তখন কেউ তা নেয়ার জন্য এগিয়ে আসবে না।’১০

 

মূল: মুনির হোসাইন খান

সম্পাদনা: আবুল কাসেম



. বিহারুল আনওয়ার, খ. ৫২, পৃ. ২০৭, হাদীস ৪৪।

. প্রাগুক্ত, পৃ. ১৪৫।

. মাহদী (আ.) মহাবিপ্লব, পৃ. ৮৪।

. বিহারুল আনওয়ার, খ. ৫২, পৃ. ৩৯১।

. মাহদী মহাবিপ্লব, পৃ. ২৪৫।

. বিহারুল আনওয়ার, খ. ৫২, পৃ. ৩৩৬।

. প্রাগুক্ত, পৃ. ৩২৮।

. মির্জা হুসাইন নূরী তাবারসী, মুস্তাদরাকুল ওয়াসায়িল, খ. ২, পৃ. ২৮২।

. বিহারুল আনওয়ার, খ. ৫২, পৃ. ৩৩৭।

১০. বিহারুল আনওয়ার, খ. ৫২, পৃ. ৩৩৭।

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: