bayyinaat

Published time: 03 ,December ,2018      12:30:55
ইসলাম ও এরফান: মিল ও অমিল
ইসলাম ও এরফান: মিল ও অমিল মূল: আয়াতুল্লাহ মুর্তাজা মুতাহহারী অনুবাদ: আবুল কাসেম সারাংশ: যদি কেউ নিরপেক্ষভাবে আরেফদের গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করেন এ শর্তে যে, তিনি এরফানশাস্ত্রের বিশেষ পরিভাষার সঙ্গে পরিচিত তাহলে হয়তো লক্ষ্য করবেন, তাঁদের বেশ কিছু ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে, কিন্তু এটি বুঝতে পারবেন যে, আরেফ ও সুফিগণ ইসলামের প্রতি পূর্ণ আন্তরিক ছিলেন।
সংবাদ: 154

ইসলাম ও এরফান: মিল ও অমিল

মূল: আয়াতুল্লাহ মুর্তাজা মুতাহহারী

অনুবাদ: আবুল কাসেম            ইসলাম ও এরফান: মিল ও অমিল

সারাংশ: যদি কেউ নিরপেক্ষভাবে আরেফদের গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করেন এ শর্তে যে, তিনি এরফানশাস্ত্রের বিশেষ পরিভাষার সঙ্গে পরিচিত তাহলে হয়তো লক্ষ্য করবেন, তাঁদের বেশ কিছু ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে, কিন্তু এটি বুঝতে পারবেন যে, আরেফ ও সুফিগণ ইসলামের প্রতি পূর্ণ আন্তরিক ছিলেন।

ট্যাগ: আরেফ, সুফি, ইসলাম, আধ্যাত্মিকতা, কোরআন, সুন্নাত, নবী (সা.)-এর জীবনপদ্ধতি

মূল প্রবন্ধ: তত্ত্বগত ও ব্যবহারিক উভয় ক্ষেত্রেই এরফানের সঙ্গে ইসলামের অনেক দিক হতে সম্পর্ক ও মিল এবং অনেক দিক হতে অমিল ও সংঘর্ষ রয়েছে। অন্যান্য ধর্ম ও মতের মত (বাস্তবে অন্যান্য ধর্ম ও মত হতে অধিকতর) এরফান মানুষের সঙ্গে স্রষ্টা, বিশ্বজগৎ ও নিজ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছে এবং অস্তিত্বজগৎকে ব্যাখ্যা দিয়েছে। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই এ প্রশ্ন দেখা দেবে, এরফান এ বিষয়গুলো সম্পর্কে কি বলেছে ও ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি এ বিষয়সমূহে কিরূপ এবং এ দু’দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে মিল বা অমিল কতটুকু?

অবশ্য মুসলিম সুফী ও আরেফগণ কখনই দাবি করেন না যে, তাঁরা ইসলাম বহির্ভূত কিছু বলছেন, বরং তাঁরা দাবি করেন অন্যদের হতে তাঁরা উত্তমরূপে ইসলামের বাস্তবতাকে অনুভব ও অনুধাবন করতে পেরেছেন ও তাঁরাই প্রকৃত মুসলমান। তত্ত্বগত ও ব্যবহারিক উভয় ক্ষেত্রেই তাঁরা কোরআন, সুন্নাত, নবী (সা.)-এর জীবনপদ্ধতি, আহলে বাইতের পবিত্র ইমামদের বাণী ও বিশিষ্ট সাহাবীদের কর্মপদ্ধতি হতে উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন।

কিন্তু অন্যরা তাঁদের সম্পর্কে ভিন্নদৃষ্টি পোষণ করেন। আমরা এ মতসমূহ ক্রমানুসারে তুলে ধরছি :

১. কোন কোন ফকীহ্ ও মুহাদ্দিসের মত হলো সুফী ও আরেফগণ আমলের ক্ষেত্রে ইসলামের অনুসারী নয়। তাঁদের কোরআন ও হাদীস হতে দলিল-প্রমাণ উপস্থাপনের বিষয়টি মানুষকে প্রতারণার উদ্দেশ্য বলা হয়ে থাকে। তাঁদের সঙ্গে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই।

২. বর্তমান সময়ের কিছু নব্য চিন্তার অনুসারীদের মত : এ দলের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে ইসলামের তেমন ভাল সম্পর্ক নেই বিধায় তারা তাদের দৃষ্টিতে যাদের মধ্যে নিরপেক্ষতার গন্ধ পাওয়া যায় তাদের মতকে উষ্ণভাবে গ্রহণ করে আর সেই মতকে ইসলাম ও ইসলামী বিধিবিধানের প্রতি এক প্রকার অনীহা ও প্রতিবাদ বলে প্রচার করে থাকেন। তাই তারাও প্রথম দলের ন্যায় আরেফদের মধ্যে কোন ইসলামী আচরণ ও বিশ্বাস নেই বলে মনে করে ও দাবি করে যে, এরফান ও সুফীবাদ ইসলাম ও আরবদের বিরুদ্ধে অনারবদের প্রতিবাদের রূপ। অর্থাৎ আধ্যাত্মিকতার ছত্রচ্ছায়ায় তারা ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

এ ব্যক্তিবর্গও প্রথম দলের ন্যায় এরফান ও সুফীবাদকে ইসলামের বিরুদ্ধবাদী একটি মত বলে মনে করে। তবে প্রথম দল ইসলামের পবিত্রতার ধারণা ও সাধারণ মুসলমানদের অনুভূতির ওপর নির্ভর করে আরেফ ও সুফীবাদের তীব্র সমালোচনা করে তাঁদের মতকে ইসলামী জ্ঞানের বহির্ভূত বলার প্রয়াস চালান, আর দ্বিতীয় দল কোন কোন আরেফ ও সুফীর বিশ্বজনীন মর্যাদার ওপর ভিত্তি করে ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ইসলামকে ছোট করার চেষ্টা চালায়। তারা বলে, এরফানের সূক্ষ্ম ও উচ্চ মর্যাদার চিন্তা ইসলাম ও এর সংস্কৃতি বহির্ভূত। অর্থাৎ ইসলামী সংস্কৃতির বাইরে থেকে তা ইসলামে প্রবেশ করেছে এবং ইসলাম ও ইসলামী চিন্তা এরফানী চিন্তা হতে অনেক নিম্নমানের। তারা দাবি করে যে, আরেফগণ জনসাধারণের ভয়ে ও তাকিয়াগত কারণে কোরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে তাঁদের বিশ্বাসের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করতেন এবং এভাবে তাঁরা চেয়েছেন নিজেদের জীবন রক্ষা করতে।

৩. নিরপেক্ষ দলের মতামত : এ দলের মতে তাসউফ ও এরফানে বিশেষত এরফানের ব্যবহারিক ক্ষেত্রে অনেক স্থানে কোরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী বিদআত ও বিচ্যুত কর্ম লক্ষ্য করা যায় যা অনেক সময় স্বতন্ত্র ফির্কার জন্ম দিয়েছে। কিন্তু আরেফগণ ইসলামী সংস্কৃতির অন্যান্য দলের (ইসলামের বিভিন্ন মতের অনুসারী) ন্যায় খাঁটি নিয়্যতে ইসলামের সেবায় রত হয়েছিলেন এবং কখনো তাঁরা ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেননি। হয়তো আরেফ ও সুফিগণের মধ্যে ইসলামী সংস্কৃতির বিভিন্ন ধারার পণ্ডিতগণ, যেমন কালামশাস্ত্রবিদ, দার্শনিক, মুফাসসির এবং ফকীহদের মধ্যকার অনেকের ন্যায় ভুলভ্রান্তি রয়েছে। কিন্তু তাঁদের ভুল-ভ্রান্তির পেছনে কোন অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না।

আরেফদের সঙ্গে ইসলামের দ্বন্দ্ব রয়েছে এ ধারণা এক বিশেষ শ্রেণীর পক্ষ হতে বিশেষ উদ্দেশ্যে করা হয়ে থাকে। তাঁরা বলেন, হয় ইসলামকে গ্রহণ কর অথবা এরফান ও সুফীবাদকে। যদি কেউ নিরপেক্ষভাবে আরেফদের গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করেন এ শর্তে যে, তিনি এরফানশাস্ত্রের বিশেষ পরিভাষার সঙ্গে পরিচিত তাহলে হয়তো লক্ষ্য করবেন, তাঁদের বেশ কিছু ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে, কিন্তু এটি বুঝতে পারবেন যে, আরেফ ও সুফিগণ ইসলামের প্রতি পূর্ণ আন্তরিক ছিলেন।

আমরা তৃতীয় মতটিকে প্রাধান্য দিই এবং বিশ্বাস করি, আরেফগণ কখনই অসৎ উদ্দেশ্যে কাজ করেন নি। তাই প্রয়োজন রয়েছে ইসলামের গভীর জ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত এবং এরফানশাস্ত্রের ওপর বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিগণ নিরপেক্ষভাবে ইসলামের সঙ্গে এরফানের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্যের বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করবেন।

একটি বিষয় এখানে উপস্থাপিত হওয়া প্রয়োজন, আর তা হলো ইসলামী এরফান কি উসূল, ফিকাহ্শাস্ত্র, তাফসীর ও হাদীসের ন্যায় জ্ঞান যা মুসলমানগণ ইসলামের মৌলিক নীতিমালা ও উৎস হতে গ্রহণ করেছে এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় আইন-কানুন ও বিধিমালা উদ্ঘাটন করেছে নাকি গণিতশাস্ত্র ও চিকিৎসাবিদ্যার মতো বিষয় যা ইসলামী বিশ্বের বাইরে থেকে ইসলামী বিশ্বে প্রবেশ করেছে এবং মুসলমানদের মাধ্যমে ইসলামের সভ্যতা ও সংস্কৃতির ক্রোড়ে বিকশিত হয়ে পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হয়েছে নাকি তৃতীয় কোন মত এ বিষয়ে গ্রহণযোগ্য হবে?

আরেফ ও সুফিগণ প্রথম মতটিকে গ্রহণ করেছেন এবং অন্য মতগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কোন কোন প্রাচ্যবিদ প্রমাণ করতে চান এরফানশাস্ত্র এবং এর সূক্ষ্ম ও যথার্থ চিন্তাধারা ইসলামী বিশ্বের বাইরে থেকে ইসলামী বিশ্বে প্রবেশ করেছে। কখনো কখনো তাঁরা বলেন, ইসলামী এরফানের মূল খ্রিষ্টধর্ম হতে এসেছে এবং মুসলমানদের সঙ্গে খ্রিষ্টান দুনিয়াবিমুখ পাদ্রীদের পরিচয় লাভের ফলশ্রুতিতে তা ঘটেছে। কখনো তাঁরা এরফানী মতের উৎপত্তিকে ইসলাম ও আরবদের প্রতি ইরানীদের প্রতিক্রিয়ার ফলশ্রুতি বলে উল্লেখ করে থাকেন। কখনো তাঁরা এরফানশাস্ত্রকে নব্য প্লেটোনিক দর্শনের  (যাকে অ্যারিস্টটল, প্লেটো, পিথাগোরাস, আলেকজান্দ্রীয় সুফী এবং খ্রিষ্ট-ইহুদী মতবাদের সংমিশ্রণ বলা হয়ে থাকে) হুবহু অনুকরণ বলে থাকেন। কেউ কেউ আবার এরফান বা সুফীবাদকে বৌদ্ধ বা হিন্দু চিন্তা হতে উৎসারিত মনে করেন; যেমনটি ইসলামী বিশ্বে সুফীবাদের বিরোধী ব্যক্তিবর্গও বলে থাকেন। অর্থাৎ এরফান ও তাসাউফকে তাঁরা অনৈসলামী ও ইসলাম বহির্ভূত বলে বিশ্বাস করেন।

এ বিষয়ে তৃতীয় মত হলো এরফানের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় দিকই (মূল উপাদানসমূহ) ইসলাম হতে গ্রহণ করা হয়েছে এবং তার ওপর ভিত্তি করেই মৌল নীতি ও বিধান তৈরি করা হয়েছে। তবে তা ইসলাম বহির্ভূত দর্শন ও চিন্তাধারা বিশেষত এশরাকী চিন্তাধারা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।

কিন্তু আরেফগণ ইসলামের মৌল উপাদানের ভিত্তিতে সঠিক কোন নীতিমালা ও বিধি প্রণয়ন করতে কতটুকু সক্ষম হয়েছেন বা এ ক্ষেত্রে তাঁদের সফলতা ফকীহ্গণের সমপর্যায়ের কিনা বা এ ক্ষেত্রে তাঁরা ইসলামের প্রকৃত মৌল নীতি হতে বিচ্যুত না হওয়ার বিষয়ে কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন? তা ছাড়া ইসলাম বহির্ভূত চিন্তাধারা এরফানশাস্ত্রে কতটা প্রভাব ফেলেছে বা ইসলামী এরফান তাঁদের (অন্যান্য চিন্তাধারার ব্যক্তিবর্গ) কতটা আকৃষ্ট করেছে ও তাঁদের স্বীয় রঙে রঞ্জিত করেছে বা নিজ পথ পরিক্রমায় তাঁদের হতে কতটা গ্রহণ করেছে তা যেরূপ বিবেচ্য তেমনি ইসলামী এরফান তাঁদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করেছিল কিনা তাও বিবেচ্য। উপরোক্ত বিষয়সমূহ স্বতন্ত্রভাবে যথার্থরূপে আলোচিত হওয়া আবশ্যক। এটি নিশ্চিত যে, ইসলামী এরফান তার মূল পুঁজি ইসলাম হতেই গ্রহণ করেছে।

এরফান সম্পর্কিত তিনটি মতের (এরফান কোরআন ও সুন্নাতের প্রতি অনুগত কিনা) মধ্যে প্রথম মতটি পূর্ণরূপে এবং দ্বিতীয় মতটি প্রায় তার অনুরূপ দৃষ্টিতে মনে করে ইসলাম ধর্ম একটি সহজ, সাধারণের বোধগম্য, অস্পষ্টতামুক্ত ও গভীর চিন্তামুক্ত ধর্ম। তাঁদের ধারণা মতে ইসলামের মূল ভিত্তি তাওহীদ হলো গৃহ নির্মাতা ও গৃহের ন্যায় পরস্পর বিচ্ছিন্ন দু’টি সত্তা সম্পর্কে ধারণা। তাই মানুষের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য বস্তুসমূহের সম্পর্ক তাওহীদের ধারণায় যুহদের ভিত্তিতে হওয়া উচিত। তাঁদের মতে যুহদ অর্থ বিশ্বের ধ্বংসশীল ও অস্থায়ী  বস্তুসমূহকে ত্যাগ করে আখেরাতের চিরস্থায়ী নেয়ামতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়া। এর পাশাপাশি ইসলামের কিছু দৈনন্দিন পালনীয় কর্তব্য রয়েছে যা বর্ণনার দায়িত্ব হলো ফিকাহ্শাস্ত্রের ওপর। এ দলের মতে আরেফগণ তাওহীদ বলতে যা বলেন তা ইসলামের তাওহীদী ধারণার বহির্ভূত বিষয়। কারণ এরফানের পরিভাষায় তাওহীদ হলো ওয়াহ্দাতে উজুদ (অস্তিত্বের একতা) এবং আল্লাহর পবিত্র নামসমূহ, গুণাবলী এবং শ্রেষ্ঠত্ব ছাড়া অন্য কিছুর কোন অস্তিত্ত্ব নেই। তা ছাড়া এরফানের পথ পরিক্রমা ইসলামী যুহদ বহির্ভূত পথ পরিক্রমা। কারণ এরফানের পথ পরিক্রমায় এমন কিছু কথা রয়েছে যা ইসলামী যুহদের ধারণায় অনুপস্থিত। যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা, আল্লাহর মধ্যে বিলীন হওয়া (ফানাফিল্লাহ্), আরেফের হৃদয়ে আল্লাহর জ্যোতির প্রতিফলন ও প্রকাশ প্রভৃতি। এরফানের তরীকতও ইসলামী শরীয়ত বর্হিভূত একটি বিষয়। কারণ তরীকতে এমন কিছু বিষয় উপস্থাপনা করা হয় যা ইসলামী ফিকাহ্ ও শরীয়ত বহির্ভূত।

এ সকল ব্যক্তির মতে আরেফ ও সুফীরা তাঁদের মত ও পথকে রাসূল (সা.)-এর যে সকল সাহাবী হতে গৃহীত বলে দাবি করেন তাঁরা সাধারণ দুনিয়াবিরাগী (যাহেদ) বৈ কিছু ছিলেন না, তাঁরা এরফানের তাওহীদ ও পথ পরিক্রমা পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না। তাঁরা দুনিয়ার বস্তুসমূহ হতে বিমুখ এবং আখেরাতের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। তাঁরা আল্লাহর আযাবের ভয় এবং বেহেশতের আশাতেই এমনটি করতেন।

এ ব্যক্তিবর্গের মত কখনোই গ্রহনযোগ্য নয়। কারণ ইসলামের মৌল উপাদান তাঁদের ধারণা (অজ্ঞতাপ্রসূত হোক বা উদ্দেশ্যমূলক) হতে অনেক বেশি গভীর। ইসলামের তাওহীদী ধারণা যতটা সহজ ও অন্তঃসারশূন্য বলে তাঁরা মনে করেছেন তা যেমন সঠিক নয়, তেমনি ইসলামের নৈতিকতা ও আত্মিক দিক তাঁদের ধারণার শুষ্ক দুনিয়াবিমুখতাও নয়। তেমনি রাসূল (সা.)-এর ঐ সকল সাহাবীও জানতেন ইসলামের বিভিন্ন আচার দৈহিক কর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।

আমরা এখানে ইসলামের যে সকল মৌল শিক্ষা এরফানের তত্ত্বগত ও ব্যবহারিক গভীর জ্ঞানের উৎপত্তিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল তা হতে একটি অংশের উল্লেখ করছি যাতে করে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। পবিত্র কোরআন তাওহীদের বিষয়ে আল্লাহ্ ও তাঁর সৃষ্টিকে কখনোই গৃহ নির্মাতা ও গৃহের ন্যায় মনে করেনি। কোরআন মহান আল্লাহকে বিশ্বজগতের স্রষ্টা হিসেবে পরিচয় দানের পাশাপাশি তাঁর পবিত্র সত্তা সবকিছুর সঙ্গেই বিদ্যমান রয়েছে বলেছে। যেমন বলেছে,

فأينما تولّوا فثم وجه الله

তোমরা যেদিকে মুখ ফিরাও সেদিকেই আল্লাহ্ বিরাজমান।’১

অন্যত্র বলা হয়েছে :

و نحن أقرب إليه من حبل الوريد

আমরা তার (মানুষের) ঘাড়ের রগ হতেও তার নিকটবর্তী।’২

সূরা হাদীদের ৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে :

هو الأوّل و الآخر و الظاهر و الباطن

তিনিই প্রথম এবং সর্বশেষ (তাঁর থেকেই শুরু হয়েছে এবং তাতেই পরিসমাপ্ত ঘটবে) এবং তিনিই প্রকাশিত এবং অপ্রকাশিত।’৩ এবং এরূপ অন্যান্য আয়াত।

সুতরাং স্পষ্ট যে, এ সকল আয়াত বুদ্ধিবৃত্তি ও চিন্তাসমূহকে তাওহীদের গভীরতর ও ব্যাপক এক অর্থের প্রতি আহ্বান জানায় যা সাধারণের ধারণার তাওহীদ হতে অনেক ঊর্ধ্বের বিষয়। উসূলে কাফীর এক হাদীসে এসেছে যে, যেহেতু শেষ যামানায় এমন এক দল গভীর চিন্তার ব্যক্তিবর্গের আবির্ভাব ঘটবে সে কারণেই মহান আল্লাহ্ সূরা হাদীদের প্রথম কয়েকটি আয়াত এবং সূরা ইখলাস অবতীর্ণ করেন (যাতে তাওহীদের গভীর ও ব্যাপকতর অর্থ নিহিত রয়েছে)।

এরফানের পথ পরিক্রমায় আল্লাহর নৈকট্য হতে শেষ স্তর (ফানাফিল্লাহ্) পর্যন্ত পৌঁছার বিষয়টি কোরআনের বিভিন্ন আয়াত যেখানে আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ (لقاء الله), আল্লাহর সন্তুষ্টি (رضوان الله), নবী ব্যতীত অন্যদের সঙ্গে ফেরেশতাদের কথোপকথন, যেমন হযরত মরিয়ম (আ.) এবং রাসূল (সা.)-এর মিরাজ সম্পর্কিত আয়াতসমূহ হতে প্রমাণ করা যায়। কোরআনে নাফসে আম্মারা, নাফসে লাওয়ামা, নাফসে মুতমাইন্না প্রভৃতি যেমন এসেছে তেমনি বিশেষ অনুগ্রহপ্রাপ্ত জ্ঞান, স্রষ্টা হতে প্রাপ্ত জ্ঞান (و الّذين جاهدوا فينا لنهدينّهم سبلنا  ‘যারা আমাদের পথে কঠোর প্রচেষ্টা ও সাধনা করবে, অবশ্যই আমরা তাদেরকে আমাদের পথ দেখিয়ে দেব’)এ বিষয়গুলোও এসেছে যে সম্পর্কে এরফানেও আলোচিত হয়ে থাকে অর্থাৎ বিষয়টি কোরআন হতেই নেয়া।

কোরআন আত্মশুদ্ধির বিষয়টিকে মানুষের সফলতার একমাত্র পথ বলে মনে করেছে। তাই বলা হয়েছে :

قد أفلح من زكّاها و قد خاب من دسّاها

নিশ্চয়ই সে-ই সফল হয়েছে যে আত্মশুদ্ধি অর্জন করেছে এবং যে আত্মাকে প্রোথিত অর্থাৎ কুলষিত করেছে সে-ই ব্যর্থ মনোরথ হয়েছে।’৫

কোরআনে আল্লাহর ভালবাসাকে সকল ভালবাসা ও মানবিক সম্পর্কের ঊর্ধ্বে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কোরআনে বিশ্বের সকল বস্তুরই (তা যত ক্ষুদ্র বা বৃহৎ হোক) আল্লাহর পবিত্রতা ও প্রশংসায় রত থাকার কথা উল্লিখিত হয়েছে। বিষয়টি এমনভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, তা হতে বুঝা যায় মানুষ যদি তার অন্তরকে পূর্ণতায় পৌঁছায় তাহলে বস্তুসমূহের এ প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণা শুনতে পাবে। তদুপরি কোরআন মানুষের মধ্যে ঐশী সত্তার উপস্থিতির কথা বলেছে।

উপরোক্ত প্রমাণসমূহ আল্লাহ্, বিশ্ব, মানুষ এবং বিশেষভাবে মানুষের সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্ক বিষয়ক ইসলামী নৈতিকতার গভীর ও ব্যাপক ধারণার উপস্থিতিকে প্রমাণ করে। পূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি, মুসলিম আরেফগণ ইসলামের এই মূলধন হতে সঠিক ধারণাকে গ্রহণ করতে পেরেছেন কি পারেননি তা এখানে আমাদের বিবেচ্য নয়। আমরা শুধু ইসলামী নৈতিকতার অন্তঃসারশূন্যতা প্রমাণের (পাশ্চাত্যপ্রেমী কিছু লোকের) প্রচেষ্টাকে ভিত্তিহীন হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছি। মূল কথা হলো ইসলামের অভ্যন্তরে এক বিশাল সম্পদ লুকিয়ে রয়েছে যা হতে মুসলিম বিশ্ব উত্তমরূপে উপকৃত হতে পারে। যদি ধরেও নিই আরেফগণ সঠিকভাবে তা ব্যবহার করতে সক্ষম হননি কিন্তু নিশ্চয়ই অন্য কেউ যাঁরা আরেফ নামে প্রসিদ্ধ নন তাঁরা এ উৎসের সদ্ব্যবহার করেছেন।

তদুপরি বিভিন্ন হাদীস, ইসলামের শিক্ষায় প্রশিক্ষিত প্রসিদ্ধ ব্যক্তিবর্গের জীবনী, বিভিন্ন দোয়া, মনীষীদের বক্তব্যসহ ইসলামের বিভিন্ন উৎস হতে জানা যায় ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইসলামের ইবাদাত ও যুহদ শুষ্ক দুনিয়াবিমুখতা এবং সওয়াব বা পুরস্কারের আশায় ছিল না। বিভিন্ন হাদীস, খুতবা বা দোয়াসমূহে উচ্চমার্গের অর্থপূর্ণ প্রচুর বিষয় রয়েছে। ইসলামের প্রাথমিক যুগের অনেক ব্যক্তিত্বের জীবনী তাঁদের উচ্চ ও আলোকিত প্রাণের পরিচয় বহন করে, তাঁদের জীবনী আত্মিক প্রেমের পরিপূর্ণতার স্বাক্ষর বহন করে।

উসূলে কাফীতে বর্ণিত হয়েছে, একদিন রাসূল (সা.) ফজরের নামাজের পর এক যুবক সাহাবীর প্রতি তাকিয়ে রইলেন। যুবকটির চক্ষু ছিল কোটরাগত, দেহ শীর্ণ এবং রং ছিল বিবর্ণ। সে ছিল আত্মমগ্ন ও কিছুটা ভারসাম্যহীন। রাসূল (সা.) তাকে  প্রশ্ন করলেন, ‘কিরূপে রাত কাটিয়েছ?’ সে বলল, ‘ইয়াকীন (দৃঢ় বিশ্বাস) অর্জন করে।’ রাসূল বললেন, ‘তোমার ইয়াকীনের চিহ্ন কি?’ সে বলল, ‘আমার ইয়াকীন আমাকে গভীর চিন্তায় মগ্ন করেছে, আমি বিনিদ্র অবস্থায় (আল্লাহর ইবাদাতে মগ্ন হয়ে) রাত্রি কাটাচ্ছি, দিনগুলো কাটাচ্ছি অভুক্ত- পিপাসার্ত অবস্থায় (রোযা রেখে)আমার ইয়াকীন আমাকে পৃথিবী ও পৃর্থিবীর মধ্যকার সবকিছু হতে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। আমি যেন আল্লাহর আরশ দেখতে পাচ্ছি। সেখানে সকল মানুষ হিসাবের জন্য সমবেত হয়েছে। পুনরুত্থিত সকল মানুষের মধ্যে আমিও যেন রয়েছি। আমি যেন বেহেশতীদের বেহেশতের নেয়ামতের মধ্যে এবং জাহান্নামীদের আযাবে নিপতিত দেখতে পাচ্ছি। যেন আমি এই কান দিয়েই জাহান্নামের বিকট শব্দ শুনতে পাচ্ছি।’ রাসূল (সা.) তাঁর দিক হতে মুখ ফিরিয়ে সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘এই যুবকের হৃদয় আল্লাহ্ ঈমানের নূর দ্বারা আলোকিত করেছেন।’ অতঃপর যুবকটির উদ্দেশে বললেন, ‘তোমার এ অবস্থাকে সংরক্ষণ কর, যাতে তা পরিবর্তিত না হয়।’

যুককটি বলল, ‘আমার জন্য দোয়া করুন যেন শহীদ হতে পারি।’ এর কিছুদিন পরেই এক যুদ্ধে এ যুবক শহীদ হয়।

স্বয়ং রাসূল (সা.)-এর বিভিন্ন বাণী, দোয়াসমূহ, আত্মিক অবস্থা, সর্বোপরি সমগ্র জীবন ঐশী চরিত্র, উদ্দীপনা ও এরফানী চেতনায় পরিপূর্ণ ছিল। আমিরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.)ও এরূপ ছিলেন। অধিকাংশ সুফী ও এরফানী ধারার (সিলসিলা) হযরত আলীতে পরিসমাপ্তি ঘটেছে। তাঁর বিভিন্ন বাণী মারেফাত ও নৈতিকতায় পূর্ণ। আমি দুঃখিত যে, এরূপ দু’একটি উদাহরণও এখানে উপস্থাপনের সুযোগ আমার নেই। ইসলামের দোয়াসমূহ বিশেষত শিয়াদের নিকট বিদ্যমান দোয়াসমূহ যেমন, দোয়ায়ে কুমাইল, দোয়ায়ে আবু হামযা সুমালি, শাবান মাসের দোয়া, সহীফায়ে সাজ্জাদিয়ায় বর্ণিত দোয়াসমূহ নৈতিকতা ও আত্মিকতার সর্বোচ্চ পর্যায়ের চিন্তা ও বিশ্বাসকে ধারণ করে আছে। আমরা কি ইসলামের মধ্যে বিদ্যমান এই গভীর উৎসসমূহকে বাদ দিয়ে এর বহির্ভূত কোন উৎসের সন্ধান করব?

এর পাশাপাশি ইসলামের সামাজিক দিকটিও রাসূলের বিভিন্ন সাহাবী, যেমন আবু যার গিফারীর মধ্যে তীব্রভাবে লক্ষণীয়। তিনি তাঁর সময়ের অত্যাচারী শাসকের বৈষম্য, অবিচার, আত্মপূজা ও অনাচারমূলক বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে এতটা প্রতিবাদী ছিলেন যে, তাঁকে নির্বাসিত হতে হয় এবং তিনি নির্বাসনেই নিঃসঙ্গ অবস্থায় মৃত্যুকে বরণ করেন।

কোন কোন প্রাচ্যবিদ আবু যারের এরূপ ভূমিকার উৎস ও কারণ খুঁজতে ইসলামী চিন্তার বাইরে হাতিয়ে বেড়িয়েছেন। জর্জ জুরদাক তাঁর ‘আল ইমাম আলী সওতাল আদালাতুল ইনসানিয়াহ্’ গ্রন্থে তাদের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘আমি এ সকল ব্যক্তির ব্যাপারে আশ্চর্য বোধ করি, তারা এক ব্যক্তিকে কোন বৃহৎ নদী বা সমুদ্রের পাশে পানি ভর্তি পাত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চিন্তায় পতিত হয় এ পাত্রটি সে কোথা হতে পানি দিয়ে পূর্ণ করল। অথচ তারা ঐ নদী বা সমুদ্রের প্রতি কোন দৃষ্টি দেয় না। আবু যার ইসলাম ছাড়া অন্য কোন্ উৎস থেকে এ উদ্দীপনা পেতে পারেন? ইসলাম ভিন্ন কোন্ উৎসটি আবু যারকে এতটা উদ্দীপ্ত করতে পারে?’

এরফানের ক্ষেত্রেও আমরা একই অবস্থা লক্ষ্য করি। এখানেও প্রাচ্যবিদরা এরফানে ইসলামের উচ্চতর নৈতিকতা ভিন্ন অন্য উৎসের অনুসন্ধানে ব্যাপৃত। তাঁরা ইসলামী নৈতিকতার মহাসমুদ্রকে উপেক্ষা করে থাকে। আমরা কি কোরআন, হাদীস, খুতবা, দোয়া, মুনাজাত, জীবনেতিহাস ও অন্যান্য প্রমাণসমূহকে উপেক্ষা করে এ সব প্রাচ্যবিদ ও তাঁদের অনুসারীদের অনুকরণে এরফানের ইসলাম ভিন্ন উৎসের অনুসন্ধান করব?

আনন্দের বিষয় হলো যে, সম্প্রতি কিছু প্রাচ্যবিদ, যেমন ব্রিটিশ লেখক নিকলসন এবং ফরাসী লেখক মসিও নিওন ইসলামী এরফানশাস্ত্রের ওপর ব্যাপক পড়াশোনার পর স্পষ্টভাবে স্বীকার করেছেন, ইসলামী এরফানশাস্ত্রের মূল উৎস হলো কোরআন ও সুন্নাহ্। এ সম্পর্কে নিকলসনের বক্তব্য হতে কিছু অংশ তুলে ধরে এ আলোচনা শেষ করব। তিনি বলেছেন,

কোরআনে আমরা এমন কিছু আয়াত লক্ষ্য করি, যেমন ‘মহান আল্লাহ্ আকাশমণ্ডল ও ভূম-লের জ্যোতি’৬, ‘তিনি প্রথম ও সর্বশেষ’৭, ‘তিনি ভিন্ন ইলাহ্ নেই’৮, ‘তিনি ব্যতীত সকল কিছুই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে’৯, ‘আমি মানুষের মধ্যে নিজ হতে রূহ ফুঁকে দিয়েছি’১০, ‘নিশ্চয়ই আমরা মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং কি তার সত্তাকে দ্বিধান্বিত করে তা আমরা অবগত এবং আমরা তার ঘাড়ের রগ অপেক্ষা তার নিকটবর্তী’১১, ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন’১২, ‘তোমরা যেদিকেই মুখ ফিরাও সেদিকেই আল্লাহ্ বিরাজমান’১৩, ‘যাকে আল্লাহ্ আলো হতে বঞ্চিত করেন তার জন্য কোন আলোই অবশিষ্ট থাকে না’১৪ প্রভৃতি নিশ্চিতভাবে এরফানশাস্ত্রের বীজ রোপন করেছিল। প্রাথমিক যুগের সুফীদের নিকট এ আয়াতসমূহ আল্লাহর বাণী হিসেবেই শুধু নয়, সে সাথে তাঁর নৈকট্য লাভের মাধ্যম হয়েছিল। ইবাদাত ও কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে গভীর চিন্তার (বিশেষত যে সকল মিরাজ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে) মাধ্যমে সুফিগণ রাসূল (সা.)-এর আত্মিক অবস্থা উদ্ঘাটনের চেষ্টায় রত হয়েছেন এবং নিজেদের মধ্যে সে অবস্থা আনয়নে সচেষ্ট হয়েছেন।’

তিনি আরো উল্লেখ করেছেন,

সুফীবাদের ঐক্যের মৌল নীতিটি কোরআনে যেমনভাবে এসেছে তেমনি নবীর হাদীসেও এসেছে। নবী (সা.) বলেছেন : (হাদীসে কুদসী) আল্লাহ্ বলেছেন যে বান্দা ইবাদাত ও সৎ কর্মের মাধ্যমে আমার এতটা নিকটবর্তী হয় যে আমি তাকে ভালবাসতে শুরু করি। ফলে আমি তার কর্ণে পরিণত হই এরূপে যে, আমার মাধ্যমেই সে শোনে, আমি তার চক্ষুতে পরিণত হই এরূপে যে, আমার মাধ্যমেই সে দেখে, আমি তার জিহ্বা ও হস্তে পরিণত হই এরূপে যে, আমার মাধ্যমেই কথা বলে এবং ধারণ করে।’

তথ্যসূত্র [1]



১. সূরা বাকারাহ্ : ১১৫।

২. সূরা ক্বাফ : ১৬।

৩. সূরা হাদীদ।

৪. সূরা আনকাবুত : ৬৯।

৫. সূরা শামস : ৯, ১০।

৬. সূরা নূর : ৩৫।

৭. সূরা হাদীদ : ৩।

৮. সূরা বাকারাহ্ : ১৬৩।

৯. সূরা রহমান : ২৬।

১০. সূরা হিজর : ২৯।

১১. সূরা ক্বাফ : ১৬।

১২. সূরা হাদীদ : ৪।

১৩. সূরা বাকারাহ্ : ১১৫।

১৪. সূরা নূর : ৪০।

 

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: