bayyinaat

প্রবন্ধ
আল্লামা সাইয়েদ শারাফুদ্দীন ‘আমেলী ছিলেন পবিত্র আহলে বাইতের (আ.) ধারাবাহিকতার সপ্তম ইমাম হযরত মূসা কাযেম (আ.)-এর বংশধর। তিনি হিজরী ১২৯০ সালে (১৮৭৩ খৃস্টাব্দে) বর্তমানে ইরাকভুক্ত ধর্মীয় নগরী কাযেমাইনে জন্মগ্রহণ করেন...
সংবাদ: 10

শিয়া মাযহাবের অনুসারী মহান মনীষী মরহূম আল্লামা সাইয়েদ আবদুল হোসেন শারাফুদ্দীন ‘আমেলী ছিলেন এমন একজন মহান ব্যক্তিত্ব যিনি স্বীয় মহামূল্য জীবনকে মুসলমানদের সর্বজনীন কল্যাণের জন্য ওয়াক্বফ্ করে দিয়েছিলেন। এ কারণে আজ ইসলামী জাহান তাঁকে সম্মানের সাথে স্মরণ করছে।

আল্লামা শারাফুদ্দীন ‘আমেলী যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন তাঁর জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব, তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব, মহত্ব ও খ্যাতি সকলের চক্ষু-কর্ণকে পূর্ণ করে রেখেছিলো। কালের প্রবাহ তাঁর নূরানী যিন্দেগীর পৃষ্ঠা উল্টে সামনে এগিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এ মহান ব্যক্তিত্বের ‘ইলমের খাতা, রচনাবলী, জনকল্যাণমূলক কাজ এবং আল্লাহ্ তা‘আলার ও দ্বীনের পথে তাঁর খেদমত এখনো একইভাবে উন্মুক্ত রয়েছে।

জন্ম ও বংশপরিচয়

আল্-মুরাজা'আাত এবং কোরআন-সুন্নাহর মোকাবিলায় ইজতিহাদ (النص و الاجتهاد) গ্রন্থের মহান লেখক মরহূম আল্লামা আয়াতুল্লাহ্ আলওযমা সাইয়েদ আবদুল হোসেন শারাফুদ্দীন ‘আমেলী হিজরী ১২৯০ সালে (১৮৭৩ খৃস্টাব্দে) বর্তমানে ইরাকভুক্ত ধর্মীয় নগরী কাযেমাইনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ও মাতা উভয়ই ছিলেন ‘আলাভী। মহান মনীষী মরহূম আল্লামা সাইয়েদ ইউসুফ শারাফুদ্দীন ছিলেন তাঁর পিতা এবং তাঁর সম্মানিতা মাতার নাম ছিলো যাহরা’-যিনি ছিলেন মরহূম আয়াতুল্লাহ্ হাদী ছ্বাদর-এর কন্যা। মরহূম আয়াতুল্লাহ্ হাদী ছ্বাদর ছিলেন খ্যাতনামা মারজা‘এ তাক্বলীদ্ আয়াতুল্লাহ্ সাইয়েদ হাসান্ ছ্বাদরের পিতা।

পিতা ও মাতা উভয়ের দিক থেকেই আবদুল হোসেন শারাফুদ্দীন ‘আমেলী ছিলেন পবিত্র আহলে বাইতের (আ.) ধারাবাহিকতার সপ্তম ইমাম হযরত মূসা কাযেম (আ.)-এর বংশধর। এছাড়া একই বংশের সন্তান মহান মুজতাহিদ সাইয়েদ ইবরাহীম শারাফুদ্দীনের পুত্র মুহাম্মাদ আউয়াল ছিলেন ছ্বাদর বংশ ও শারাফুদ্দীন বংশ-উভয়েরই পূর্বতন নানা। তৎকালে এ উভয় পরিবারই হুসাইন ক্বাত্বী‘ঈ বংশ নামে সুপরিচিত ছিলো। শিয়া মাযহাবের মহান মনীষী সাইয়েদ মুর্তাযা ও সাইয়েদ রাযীর বংশ এদের সাথে যুক্ত হয়েছিলো।

সাইয়েদ আবদুল হোসেন শারাফুদ্দীন তাঁর নানার বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং নানার স্নেহ-মমতা, আদরযত্ন ও বিশেষ দৃষ্টি লাভ করেন। তাঁর নানা স্বীয় পরিবারের সকল সদস্যের তুলনায় তাঁকে বেশী ভালোবাসতেন।

আর তাঁর মামা অত্র লেখকের মরহূম পিতা সাইয়েদ মুহাম্মাদ হোসেন সাদ্‌র্‌ বয়সের দিক থেকে তাঁর কাছাকাছি ছিলেন এবং একত্রে পড়াশুনা করতেন বিধায় দু’জনের মধ্যকার সম্পর্ক ছিলো বন্ধুর মতো এবং তাঁরা একত্রে লালিত-পালিত ও বড় হন।

শিক্ষা জীবন

সাইয়েদ আবদুল হোসেনের বয়স যখন মাত্র আট বছর তখন তাঁর পিতা স্বীয় দ্বীনী জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে ইজতিহাদী স্তরে উপনীত হন এবং ইরাকের মুজতাহিদগণের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে দক্ষিণ লেবাননের জাবাল ‘আমেল্ –এ ফিরে আসেন। আবদুল হোসেন তাঁর পিতার প্রিয় ভূমিতে প্রাথমিক পর্যায়ের আরবী, যুক্তিবিজ্ঞান ও বালাগ্বাত্, বিভিন্ন স্তরের ফিক্বাহ্ শাস্ত্র ও উছূল্ স্বীয় পিতার তত্ত্বাবধানে থেকে শিক্ষা করেন।

জাবাল ‘আমেলে শিক্ষাগ্রহণকালে তিনি সমবয়সীদের মধ্যে অসাধারণ প্রতিভার ও সূক্ষ্মদর্শিতার  পরিচয় দেন এবং এ ব্যাপারে বিশেষ খ্যাতির অধিকারী হন। শিক্ষাগ্রহণকালে তিনি শিক্ষকদের কাছে বহু প্রশ্ন করতেন এবং এমনকি শিক্ষকদের ভুল নির্দেশ করতেন। বিশেষ করে তিনি তাঁর নানা আয়াতুল্লাহ্ হাদী সাদ্‌র্‌-এর কাছে সবচেয়ে বেশী প্রশ্ন করতেন এবং তাঁর বক্তব্যের ভুল নির্দেশের জন্য সবচেয়ে বেশী চেষ্টা করতেন।

আবদুল হোসেনের বয়স যখন সতের বছর তখন তাঁর পিতা তাঁকে বিবাহ দেন। স্বীয় চাচাতো বোনের সাথে তাঁর বিবাহ হয়। এরপর উচ্চতর পর্যায়ে দ্বীনী শিক্ষা অব্যাহত রাখা ও সমাপ্ত করার সুবিধার্থে পিতা তাঁকে সস্ত্রীক ইরাকের দ্বীনী জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র ও অন্যতম ধর্মীয় নগরী নাজাফে পাঠিয়ে দেন। সেখানে তিনি আয়াতুল্লাহ্ খোরাসানী, শায়খুশ্ শারী‘আহ্ ইছ্বফাহানী, সাইয়েদ মুহাম্মাদ কাযেম ইয়াযদী, সাইয়েদ ইসমা‘ঈল্ ছ্বাদর ও স্বীয় মামা আয়াতুল্লাহ্ সাইয়েদ হোসেন ছ্বাদর প্রমুখ শীর্ষস্থানীয় ফক্বীহ্ ও মারজা‘এ তাক্বলীদগণের এবং অন্যান্য শিক্ষকের নিকট উচ্চতর পর্যায়ের দ্বীনী জ্ঞান অর্জন করেন।

আবদুল হোসেনের বয়স তেইশ বছর পূর্ণ হবার আগেই তিনি ইজতিহাদী স্তরে উপনীত হন। এ সময় নাজাফে অধ্যয়নকারী জাবাল ‘আমেল্-এর দ্বীনী শিক্ষার্থীদের মধ্যে মর্যাদা, খ্যাতি ও সকলের দৃষ্টি আকর্ষণের দিক থেকে কেউ তাঁর ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেন নি।

এ সময় তাঁর জ্ঞানার্জন তৎপরতা কেবল নাজাফেই সীমাবদ্ধ ছিলো না। বরং তিনি জ্ঞানার্জনের লক্ষ্যে ইরাকে দ্বীনী জ্ঞানচর্চার অন্যান্য কেন্দ্রে তথা কাযেমাইন, কারবালা ও সামেরায় যাতায়াত করতেন এবং এ সব শহরের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরামের নিকট থেকে জ্ঞানার্জন করেন। ফলে এ সব শহরের দ্বীনী জ্ঞানচর্চাকারীদের মহলে তিনি সুপরিচিত ও খ্যাতির অধিকারী হয়ে ওঠেন এবং দ্বীনী ‘ইলম ও সাহিত্য চর্চার যে কোনো মজলিসে ব্যক্তিগতভাবে স্থানলাভ করেন।

সাইয়েদ আবদুল হোসেন এ সময় কেবল বিরাট জ্ঞানভাণ্ডারেরই অধিকারী হন নি, একই সাথে তিনি সমকালীন প্রথম কাতারের কবিদের অন্যতম হিসেবেও পরিগণিত হতেন। তাঁর কবিতায় একই সাথে মাধুর্য, দৃঢ়তা, তাৎপর্যের সূক্ষ্মতা, গতিশীলতা ও সৌন্দর্যের একত্র সমাহার ঘটেছে।

রচনাবলী

মহান মনীষী আল্লামা শারাফুদ্দীন ‘আমেলী অনেক মহামূল্য চৈন্তিক ও লেখ্য উত্তরাধিকার রেখে গেছেন যার প্রতিটিই তাঁর মনীষা ও বিরাট ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করে এবং তা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তাঁকে মানুষের মাঝে স্মরণীয় করে রাখবে। এখানে আমরা শিয়া মাযহাবের অনুসারী এ ‘ইলমী ব্যক্তিত্বের রচনাবলীর একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরছিঃ

১) আল্-ফুছূলুল্ মুহিম্মাহ্ ফী তা'লীফিল্ উম্মাহ: এ গ্রন্থটির কথা ইতিপূর্বেও উল্লেখ করা হয়েছে। মহান গ্রন্থকার ইসলামী উম্মাহর মধ্যে ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে এ গ্রন্থটি রচনা করেন। এটি লেবাননে দুই বার ও ইরাকের নাজাফে দুই বার মুদ্রিত হয়েছে।

২) আল্-মুরাজা‘আত: এটি একটি অমর গ্রন্থ এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এর দ্বিতীয় কোনো নযীর নেই। আর এর গদ্যের মান বিস্ময়কর। এটি গ্রন্থকারের জীবদ্দশায় দুই বার এবং তাঁর ইন্তেকালের পরে চার বার প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া এটি ফার্সী, ইংরেজী ও উর্দূ ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

৩) আজভিবাতু মূসা জারাল্লাহ: সুন্নী মাযহাবের অনুসারী পণ্ডিত মূসা জারাল্লাহর বিশটি প্রশ্নের জবাব। এটি লেবাননের ছ্বাইদা শহর থেকে দুই বার প্রকাশিত হয়েছে।

৪) আল্-কালিমাতুল্ গ্বাররা' ফী তাফযীলেয্ যাহরা: এ গ্রন্থে হযরত ফাতেমাহ্ যাহরা’ (সালামুল্লাহি ‘আলাইহার) সমুন্নত মর্যাদা এবং অন্য নারীদের তুলনায় তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা হয়েছে। এ গ্রন্থটি আল্-ফুছূলুল্ মুহিম্মাহ্ ফী তা’লীফিল্ উম্মাহ্ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত করে প্রকাশ করা হয়েছে।

৫) আল্-মাজালিসুল্ ফাখিরাহ্ ফী মাতামিল্ 'ইতরাতিত্ ত্বাহিরাহ: এর ভূমিকা ছ্বাইদা ও নাজাফে প্রকাশিত হয়েছে। এ গ্রন্থে হযরত ইমাম হোসেন (আ.)-এর আন্দোলনের রহস্য এবং এ আন্দোলনের কাছে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ্ যে, বিরাট ঋণী-এ সত্য তুলে ধরা হয়েছে।

৬) আবূ হুরাইরাহ: এ গ্রন্থে আহলে সুন্নাতের বিখ্যাত হাদীস বর্ণনাকারী আবূ হুরাইরাহ্ সম্পর্কে অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য ও বিরলব্যতিক্রমী পদ্ধতিতে আলোচনা করা হয়েছে। এটি লেবাননের ছ্বাইদা ও ইরাকের নাজাফ থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

এ গ্রন্থটি প্রকাশিত হবার পর এতে প্রকাশিত সত্যে অনুপ্রাণিত হয়ে বিখ্যাত মিসরীয় মনীষী মুহাম্মাদ আবূ রায়্যাহ্ শাইখুল্ মুযীরাহ্ নামে আরেকটি গ্রন্থ রচনা করে এর বিষয়বস্তুর দাবী পূরণ করেন।

৭) ফালসাফাতুল্ মীছাক্ব ওয়াল্ ভিলাইয়্যাহ: এটি ছ্বাইদা থেকে দুই বার প্রকাশিত হয়েছে। স্বল্পায়তনের এ গ্রন্থটি সমুন্নত তাৎপর্যের বিচারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৮) মাসাইলুল্ ফাক্বহীয়্যাতিল্ খিলাফীয়্যাহ: এতে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ফিক্বহী বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যা থেকে গ্রন্থকারের তথ্যাভিজ্ঞতার ব্যাপকত্ব ও ‘ইলমী শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। এটি ছ্বাইদা, মিসর ও বৈরুত থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

৯) কালিমাতু হাওলার রু'ইয়্যাহ: এ গ্রন্থে আল্লাহ্ তা‘আলা যে, দর্শনযোগ্য নন-এ বিষয়ে গভীরভাবে ‘ইলমী দৃষ্টিকোণ থেকে প্রামাণ্য আলোচনা করা হয়েছে।

১০) ইলাল্ মাজমা‘ইল্ ‘ইলমী: শিয়া মাযহাবের প্রতি সাধারণতঃ যে সব মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয় এ গ্রন্থে তার জবাব দেয়া হয়েছে। এটি ছ্বাইদা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

১১) ছাবতুল্ ইছবাতি ফী সিলসিলাতির রুওয়াত: এটি ছ্বাইদা থেকে দুই বার প্রকাশিত হয়েছে।

১২) যায়নাব্ আল্-কুবরা: হযরত যায়নাব্ (সালামুল্লাহি ‘আলাইহা) সম্বন্ধে তাঁর হারাম শরীফের অঙ্গনে প্রদত্ত গ্রন্থকারের ধারাবাহিক ভাষণের সংকলন। এটি ছ্বাইদা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

১৩) আন্-নাছ্ব ওয়াল্ ইজতিহাদ:১০ সমকালীন যুগের অন্যতম গভীরতম আলোচনা সমৃদ্ধ গ্রন্থ। এ পর্যন্ত১১ তিন বার প্রকাশিত হয়েছে। সর্বপ্রথম গ্রন্থকারের জীবদ্দশায় নাজাফ শরীফ থেকে এবং এরপর মরহূম গ্রন্থকারের পুত্র কর্তৃক মরহূমের পক্ষ থেকে কিছু সংযোজন সহ প্রকাশিত হয়। তৃতীয় বার নাজাফ থেকে দারুন্ নু‘মান্ কর্তৃক প্রকাশিত হয়।

১৪) বুগ্বীয়্যাতুর রাগ্বেবীন: (হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপি) এ গ্রন্থে ছ্বাদর বংশ ও শারাফুদ্দীন্ বংশের পরিচয় ও ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। সেই সাথে মনীষী শিক্ষকগণ ও তাঁদের মনীষী ছাত্রদের প্রত্যেকের পরিচয় এবং তাঁদের সমসাময়িক যুগের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে।১২

জনকল্যাণমূলক সংস্থা

মহান আল্লামা বলতেনঃ "যে পন্থায় গোমরাহী বিস্তার লাভ করেছে সে পন্থার সহায়তা নিয়ে হেদায়াতের উপায় সংগ্রহ করতে হবে।”

এ কারণেই এ মহান আলেমে দ্বীন আরো অনেক কাজ আঞ্জাম দেন। এ সব কাজের মধ্যে তিনি বেশ কিছু সংখ্যক জনকল্যাণমূলক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।১৩ এ সব সংস্থার অন্যতমঃ

১) আল্-মাদ্রাসাতুল্ জা'ফারীয়্যাহ: তিনি শিয়া মাযহাবের অনুসারী শিশু-কিশোর ও যুবকদের দ্বীনী শিক্ষা প্রদান এবং তাদের দ্বীনী জ্ঞানের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে এটি কলেজে উন্নীত হয় এবং এর নামকরণ করা হয় "আল্-কুল্লিয়াতুল্ জা‘ফারীয়্যাহ্।

২) নাদীল্ ইমামিছ্ব ছ্বাদিক্ব 'আলাইহিস্ সালাম: এটি একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। বিভিন্ন ধরনের উৎসব এবং সাংস্কৃতিক ও দ্বীনী মজলিস অনুষ্ঠানের সুবিধার্থে তিনি এটি প্রতিষ্ঠা করেন।

৩) মসজিদ প্রতিষ্ঠা: শিক্ষার্থীদের এবং প্রতিষ্ঠানে আগত লোকদের ফরয ইবাদত আঞ্জাম দেয়ার সুবিধার্থে উপরোক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্রের পাশে তিনি একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।

৪) জামি'আতুল্ বিরর ওয়াল্ ইহসান: এটি একটি জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান যা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য অসহায় ও নিঃসম্বল লোকদেরকে সাহায্য করা এবং তাদের মৃতদের কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা ও অন্যান্য প্রয়োজন পূরণ করা। এ কারণে ছ্বাওর শহরে দরিদ্র লোকের দেখা পাওয়া একান্তই বিরল ব্যতিক্রম ব্যাপার।

মরহূম আল্লামা শারাফুদ্দীন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এ সব কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনার ভার তাঁর পরে তাঁর পুত্র ও সুযোগ্য উত্তরসুরি আন্-নাহজ সাময়িকীর পরিচালক সাইয়েদ ছ্বাদরুদ্দীনের ও মরহূমের অপর এক পুত্র ছ্বাওর শহর থেকে নির্বাচিত লেবানন পার্লামেন্টের সদস্য সাইয়েদ জা‘ফারের ওপর অর্পিত হয়। তাঁরা এ সব প্রতিষ্ঠানের কাজ অব্যাহত রাখার জন্য তাঁদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন।

ওফাত

মহামনীষী আল্লামা সাইয়েদ আবদুল হোসেন শারাফুদ্দীন ‘আমেলীর ইচ্ছা ছিলো তিনি তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলো ইরাকে তাঁর জন্মস্থানে-যেখানে তিনি লালিত-পালিত ও বড় হন এবং শিক্ষাজীবনের বিরাট অংশ অতিবাহিত করেন, সেখানে স্বীয় আত্মীয়স্বজনের মধ্যে কাটাবেন এবং নিয়মিত তাঁর মহান পূর্বপুরুষ আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আ.)-এর মাযার যিয়ারত করবেন। কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলার ইচ্ছা ছিলো অন্য রকম; তিনি তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলো লেবাননে তাঁর পিতৃপুরুষের ভূমিতে অতিবাহিত করেন এবং সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

হিজরী ১৩৭৭ সালের ৮ই জামাদিউছ্ ছানী১৪ তারিখে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ‘ইলমী জগতের এ মহান প্রদীপ নির্বাপিত হয়ে যান। যে হস্তদ্বয় চিরদিন সত্যের প্রতিরক্ষায় ও বাতিলের অপসারণের কাজে মশগুল ছিলো তা কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং যে সব অঙ্গুলি লেখনী ধারণ করে বহু মহামূল্য ও বিরলদৃষ্টান্ত গ্রন্থ উপহার দিয়েছে তা নিথর হয়ে পড়ে।

 

অনুবাদ ও গবষেণা: নূর হোসনে মাজিদি

তথ্যসূত্র:



. 'আলাভী বলতে সাধারণতঃ তাঁদেরকে বুঝানো হয় যারা আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আ.)-এর বংশধর, কিন্তু হযরত ফাতেমাহ্ (সালামুল্লাহি ‘আলাইহার) বংশধর নন, যদিও ক্ষেত্রবিশেষে ব্যাপক অর্থে হযরত আলী (আ.)-এর সকল বংশধরকে একত্রে বুঝাবার জন্য হযরত ফাতেমাহ্‌র (আ.) বংশধরদেরকেও ‘আলাভী বলা হয়। পরবর্তী উল্লেখ থেকে বুঝা যায় যে, আল্লামা শারাফুদ্দীনের পিতা-মাতা উভয়ই ফাতেমী সাইয়েদ ছিলেন।

. অর্থাৎ ইরাকের স্বনামখ্যাত সাহিত্যিক ও মুজতাহিদ আয়াতুল্লাহ্ সাইয়েদ হাসান্ ছ্বাদর (১৮৫৫-১৯৩৫) ছিলেন আল্লামা শারাফুদ্দীন ‘আমেলীর মামা।

. সাইয়েদ মুহাম্মাদ ছ্বাদেক্ব ছ্বাদর।

. স্বীয় পিতৃপুরুষের ভূমিতে।

. এটা অত্র নিবন্ধ রচনাকালীন তথ্য। এর পরে এ পর্যন্ত আল্লামা শারাফুদ্দীনের সকল গ্রন্থ, বিশেষ করে আলোচ্য গ্রন্থটি, আল্-মুরাজা‘আত্ ও আল্-নাছ্ব ওয়াল্-ইজতিহাদ বহু বার মুদ্রিত হয়েছে।

. সাইয়েদ মুহাম্মাদ ছ্বাদেক্ব ছ্বাদর কর্তৃক অত্র নিবন্ধ লিখিত হওয়ার পরে এ গ্রন্থটি আরো কয়েক বার প্রকাশিত হয়েছে।

. এটি ফার্সী ভাষায় তিন বার অনূদিত হয়েছে।

. পরে এটি স্বতন্ত্রভাবেও প্রকাশিত হয়েছে।

. فلسفة الميثاق و الولاية - অঙ্গীকার ও বেলাইয়াতের দর্শন।

১০. বক্ষ্যমাণ গ্রন্থের মূল আরবী নাম।

১১. সাইয়েদ মুহাম্মাদ ছ্বাদেক্ব ছ্বাদর কর্তৃক অত্র নিবন্ধ রচনাকাল পর্যন্ত। পরে বহু বার প্রকাশিত হয়েছে

১২. এটি সাম্প্রতিককালে (ফার্সী অনুবাদ প্রকাশিত হবার সামান্য আগে) মুদ্রিত আকারে প্রকাশিত হয়েছে।

১৩. আমরা লেবাননের ছ্বাওর শহরের কাছে এ সব সংস্থা দেখেছি। এ সব সংস্থা সম্মানিত মনীষী আল্-হাজ্ব সাইয়েদ মূসা ছ্বাদর কর্তৃক পরিপূর্ণতাপ্রাপ্ত ও সম্প্রসারিত হয়েছে এবং বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করেছে - যে সম্পর্কে স্বতন্ত্রভাবে ও বিস্তারিতরূপে আলোচনা করা যেতে পারে।

আল্-হাজ্ব সাইয়েদ মূসা ছ্বাদর ইরানের ক্বোম নগরীর দ্বীনী জ্ঞানকেন্দ্রের মনীষীদের অন্যতম। তিনি মরহূম আয়াতুল্লাহ্ ছ্বাদরের পুত্র ও মরহূম আল্লামা শারাফুদ্দীনের খালাতো ভাই। মহান আল্লামার ইন্তেকালের পর সাইয়েদ মূসা ছ্বাদরকে ছ্বাওরে আসার জন্য দাওয়াত করা হয়। এ দাওয়াতে সাড়া দিয়ে তিনি ছ্বাওরে আগমন করেন এবং মরহূম আল্লামা শারাফুদ্দীনের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে তাঁর রেখে যাওয়া দায়িত্বসমূহ কাঁধে তুলে নেন। ইমাম মূসা ছ্বাদর শীর্ষক একটি গ্রন্থ প্রকাশ করা এ সংস্থাসমূহের পরিকল্পনাসমূহের অন্যতম। - ফার্সী অনুবাদক

ইমাম মূসা ছ্বাদর পরবর্তীকালে লেবাননের শিয়া মাযহাবের অনুসারী মুসলমানদের অবিসম্বাদিত দ্বীনী ও জাতীয় নেতায় পরিণত হন। তিনি পরবর্তীকালে লিবিয়া সফরে গিয়ে ত্রিপোলী থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। ধারণা করা হয় যে, ইসরাঈলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ বা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ তাঁকে অপহরণ করে কোনো অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে শহীদ করে তাঁর লাশ গুম করে থাকবে।

১৪. খৃস্টীয় পঞ্জিকার হিসেবে ১৯৫৭ সালের ৩১শে ডিসেম্বর।

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: