bayyinaat

Published time: 10 ,October ,2018      21:02:03
ওসিলা গ্রহণ করা
কোন কিছু মানুষকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করলে, সেই বস্তুকে ওসিলা বলা হবে, কারণ তা বান্দাকে আগ্রহ ও মহব্বত সহকারে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। অতএব যেবস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের মাধ্যম হয়, তাই মানুষের জন্যে আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার ওসিলা।
সংবাদ: 102

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

ওসিলা গ্রহণ করা

মুহাম্মাদ আব্দুল হান্নান

 يا أَيُّهَا الَّذينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَ ابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسيلَةَ وَ جاهِدُوا في‏ سَبيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونহে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর, তাঁর নৈকট্য লাভের জন্যে ওসিলা অনুসন্ধান কর এবং তাঁর পথে জেহাদ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সুরা মায়েদা, ৩৫।)

সারাংশঃ কোন কিছু মানুষকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করলে, সেই বস্তুকে ওসিলা বলা হবে, কারণ তা বান্দাকে আগ্রহ ও মহব্বত সহকারে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। অতএব যেবস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের মাধ্যম হয়, তাই মানুষের জন্যে আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার ওসিলা

মূল শব্দসমূহঃ দোয়া, ওসিলা, আল্লাহর অলিগণ, তওহিদ, আল্লাহর সান্নিধ্য

মূল প্রবন্ধ: আল্লাহ তায়ালা এ পৃথিবী এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে এখানে সকলেই একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। বৈষয়িক ক্ষেত্রে যেমন আমরা অন্যের সাহযোগিতা গ্রহণ করে থাকি অনুরূপভাবে আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রেও ওসিলা বা সহযোগিতা গ্রহণের মাধ্যমে সহজেই আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করতে পারি। নবি, রাসুল, ইমাম, সৎকর্ম এবং আল্লাহর অলিগণকে ওসিলা করে, আল্লাহর নিকট দোয়া করলে তাড়াতাড়ি কবুল হয়। ওসিলা গ্রহণের ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আল্লাহপাক নির্দেশ দিচ্ছেনঃ

يا أَيُّهَا الَّذينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَ ابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسيلَةَ وَ جاهِدُوا في‏ سَبيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُون

হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর, তাঁর নৈকট্য লাভের জন্যে ওসিলা অনুসন্ধান কর এবং তাঁর পথে জেহাদ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সুরা মায়েদা, ৩৫।)

ওসিলার অর্থঃ

ওসিলা' শব্দের অর্থ সংযোগ স্থাপন করা। ওসিলা সেই বস্তুকে বলা হয়, যা একজনকে অপরজনের সহিত আগ্রহ ও সম্প্রীতি সহকারে সংযুক্ত করে দেয়। কোন কিছু মানুষকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করলে, সেই বস্তুকে ওসিলা বলা হবে, কারণ তা বান্দাকে আগ্রহ ও মহব্বত সহকারে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। অতএব যেবস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের মাধ্যম হয়, তাই মানুষের জন্যে আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার ওসিলাইমান ও সৎকর্ম যেমন এর অন্তর্ভুক্ত তেমনি পয়গাম্বর (আঃ) ও সৎকর্মশীলদের সংস্পর্শ এবং মহব্বতও এর অন্তর্ভুক্ত। কেননা, এগুলোও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়। এ কারণেই তাঁদেরকে ওসিলা করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করা জায়েজ। দুর্ভিক্ষের সময় হজরত উমর (রাঃ) হজরত আব্বাসকে (রাঃ) ওসিলা করে বৃষ্টির জন্যে দোয়া করেন এবং আল্লাহ তাআলা তা কবুল করেন। (তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন, পৃঃ ৩২৬-৩২৭।)

কোরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে ওসিলা গ্রহণ

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছেঃ

يا أَيُّهَا الَّذينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَ ابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسيلَةَ وَ جاهِدُوا في‏ سَبيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُون

হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর, তাঁর নৈকট্য লাভের জন্যে ওসিলা অনুসন্ধান কর এবং তাঁর পথে জেহাদ কর,যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সুরা মায়েদা, ৩৫।)

এ ছাড়া কোরআনের অন্যান্য আয়াতেও ওসিলা গ্রহণ সম্পর্কে এসেছে যা প্রমাণ করে যে, ওসিলা গ্রহণ করা তওহিদের পরিপন্থি নয় বরং তওহিদের দাবী।

وَ ما أَرْسَلْنا مِنْ رَسُولٍ إِلاَّ لِيُطاعَ بِإِذْنِ اللَّهِ وَ لَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جاؤُكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَ اسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّاباً رَحيماً.

আমি একমাত্র এই উদ্দেশ্যেই রসুল প্রেরণ করেছি, যাতে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করা হয়। আর যখন তারা নিজেদের প্রতি জুলুম করে তখন আপনার কাছে আসলে ও আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করলে এবং রসুলও তাদের জন্যে ক্ষমাপ্রার্থনা করলে, অবশ্যই তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারী ও মেহেরবানরূপে পাবে। (সুরা নিসা, ৬৪।)

হজরত ইউসুফের (আঃ) ভায়েরা যখন স্বীয় ভুল বুঝতে পারল তখন তাদের পিতা হজরত ইয়াকুবের (আঃ) নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার আবেদন করলে তিনি তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

قالوا يا أَبانَا اسْتَغْفِرْ لَنا ذُنُوبَنا إِنَّا كُنَّا خاطِئين * قالَ سَوْفَ أَسْتَغْفِرُ لَكُمْ رَبِّي إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحيم.

তারা বল্ল, 'হে আমাদের পিতা! আপনি আমাদের গুণাহ্‌গুলি মোচনের জন্যে দোয়া করেন; নিশ্চয় আমরা অপরাধী।' তিনি (ইয়াকুব আঃ) বল্লেন, 'অতি শীঘ্রই আমি আমার প্রতিপালকের নিকট তোমাদের জন্যে ক্ষমাপ্রার্থনা করব। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা ইউসুফ, ৯৭-৯৮।)

উল্লেখ্য যে, ওসিলার ব্যাপক পরিধি রয়েছে। যেমন: আল্লাহ্‌ ও রসুলের (সাঃ) প্রতি ইমান, জিহাদ, নামাজ, রোজা, জাকাত, কাবা শরিফ, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা, আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করাসহ যে কোন ভাল কাজই ওসিলার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

আহলে সুন্নতের প্রসিদ্ধ ইসলামি চিন্তাবীদ মরহুম সামহুদি লেখেন: হজরত মুহাম্মদকে (সাঃ) এবং তাঁর পদমর্যাদা ও ব্যক্তিত্বকে ওসিলা করে; তাঁর জন্মের পূর্বে, জীবদ্দশায়, ওফাতের পর, বারজাখে (কবরের জগতে) এবং কিয়ামত দিবসে সাহায্য চাওয়া জায়েজ। অতঃপর তিনি (সামহুদি) হজরত আদম (আঃ) 'হজরত মুহাম্মদকে (সাঃ)' ওসিলা করে দোয়া করা সম্পর্কিত হাদিসটি উল্লেখ করেন যা হজরত উমর ইবনে খাত্তাব হতে বর্ণিত।

يا رب اسئلك بحق محمد لما غفرت لى

হে আমার পালনকর্তা! মুহাম্মদের (সাঃ) ওসিলায় আপনার নিকট দরখাস্ত করছি যাতে আমাকে ক্ষমা করেন। (ওয়াফা উল ওয়াফা, খঃ ৩, পৃঃ ১৩৭১।)

অতঃপর তিনি (সামহুদি) মুহাদ্দিস তিরমিযি ও নাসায়ি'র রবাত দিয়ে নিম্নোক্ত হাদিসটি উল্লেখ করেনঃ

জনৈক অন্ধব্যক্তি রসুলের (সাঃ) নিকট রোগমুক্তির জন্যে দোয়ার আবেদন করলে, তিনি সে ব্যক্তিকে নিম্নোক্তভাবে দোয়া করতে বলেনঃ

 اللهم انى اسئلك و اتوجه اليك بنبيك محمد نبى الرحمة يا محمد انى توجهت بك الى ربى فى حاجتى لتقضى لى اللهم شفعه فى

হে আল্লাহ! আপনার রহমতের নবি মুহাম্মদকে (সাঃ) আমি ওসিলা করে আপনার কাছে দরখাস্ত করছি। হে মুহাম্মদ! আপনার ওসিলায় আমার প্রয়োজন পূরণের জন্যে, আমার পালনকর্তার দিকে মুখ ফিরিয়েছি। হে আল্লাহ! আমার ব্যাপারে তাঁকে শাফায়াতকারী হিসাবে কবুল কর। (ওয়াফা উল ওয়াফা, খঃ ৩, পৃঃ ১৩৭২।)

একই আলোচনার সূত্র ধরে জনাব সামহুদি, 'রসুলের (সাঃ) ইন্তেকালের পর তাঁকে ওসিলা করা জায়েজ' উল্লেখ করে নিম্নোক্ত হাদিসটি উপস্থাপন করেনঃ

হজরত উসমানের খেলাফতকালে জনৈক ব্যক্তি রসুলের (সাঃ) রওজার নিকট এসে নামাজ আদায় করেন। অতঃপর স্বীয় অভাব পূরণের জন্যে নিম্নোক্তভাবে দোয়া করেনঃ

اللهم انى اسئلك و اتوجه اليك بنبينا محمد صلی الله علیه و اله و سلم نبى الرحمة، يا محمد انى اتوجه بك الى ربك ان تقضى حاجتى

হে আল্লাহ! আমি আমাদের রহমতের নবি মুহাম্মদের (সাঃ) ওসিলায় তোমার অভিমুখে মুখ করেছি এবং আবেদন করছি। হে মুহাম্মদ! (সাঃ) আমি আপনাকে ওসিলা করে আপনার প্রভুর নিকট দরখাস্ত করছি যেন আমার অভাব পূরণ হয়। এ দোয়ার পরেই সে ব্যক্তির অভাব পূরণ হয়। (ওয়াফা উল ওয়াফা, খঃ ৩, পৃঃ ১৩৭৩।)

বায়হাকি বর্ণনা করেনঃ দ্বিতীয় খলিফার খিলাফতের সময় একবছর চরম দুর্ভিক্ষ নেমে আসে। হজরত বেলাল (রাঃ) কিছু সংখ্যক সাহাবাকে সঙ্গে নিয়ে মহানবির রওজায় আসেন এবং নিম্নোক্তরূপে দোয়া করেনঃ

يا رسول اللَّه استسق لامتك ... فانهم قد هلكوا

ইয়া রসুলাল্লাহ! আপনার উম্মতের জন্যে, আপনার প্রভুর নিকট বৃষ্টির আবেদন করুন ... তাছাড়া আপনার উম্মত ধ্বংস হয়ে যাবে। (আত্‌ তাওয়াস্‌সুল, পৃঃ ২৫৩।)

সুতরাং, ওসিলা গ্রহণের ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ওসিলার সাথে শিরকের কোন সম্পর্ক নেই। কেউ যদি আল্লাহকে বাদ দিয়ে সরাসরি কোন ব্যক্তি অথবা অন্য কারো নিকট কোন কিছু কামনা করে তাহলে তা হবে শিরক। কিন্তু একজন মুসলমান কখনোই এ ধরণের কাজ করে না। মুসলমানরা এ কারণেই আল্লাহর নেক বান্দা অথবা নেক আমলকে ওসিলা করে দোয়া করে, কেননা আল্লাহ এসবকে ওসিলা হিসেবে প্রদান করেছেন। কোরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ওসিলা গ্রহণ করা তওহিদের পরিপন্থি নয় বরং তওহিদেরই দাবী।

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: