bayyinaat

Published time: 19 ,November ,2018      23:08:03
এক নিকৃষ্ট নারী ‘কলিজা ভক্ষণকারিণী হিন্দ’
আবূ সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ উহুদের যুদ্ধে মুসলমান শহীদগণের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গেঁথে গলার মালা তৈরি করে। ইসলামের আত্মত্যাগী বীর সেনাপতি হযরত হামযার পেট চিরে ফেলে। তাঁর কলিজা বের করে নিয়ে তা চিবায় এবং খাওয়ার জন্য বহু চেষ্টা করার পরও সে তা খেতে পারে নি। এ জঘন্য কাজটির কারণে হিন্দ মুসলমানদের মাঝে هند آكلة الأكباد ‘কলিজা ভক্ষণকারিণী হিন্দ’ নামে কুখ্যাত হয়।
সংবাদ: 109

এক নিকৃষ্ট নারী ‘কলিজা ভক্ষণকারিণী হিন্দ’

আবুল কাসেম 

আবূ সুফিয়ানের স্ত্রী, ওতবার মেয়ে হিন্দ মনে মনে হামযার প্রতি চরম বিদ্বেষ পোষণ করত। 
 

সারাংশ: আবূ সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ উহুদের যুদ্ধে মুসলমান শহীদগণের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গেঁথে গলার মালা তৈরি করে। ইসলামের আত্মত্যাগী বীর সেনাপতি হযরত হামযার পেট চিরে ফেলে। তাঁর কলিজা বের করে নিয়ে তা চিবায় এবং খাওয়ার জন্য বহু চেষ্টা করার পরও সে তা খেতে পারে নি। এ জঘন্য কাজটির কারণে হিন্দ মুসলমানদের মাঝে هند آكلة الأكباد ‘কলিজা ভক্ষণকারিণী হিন্দ’ নামে কুখ্যাত হয়।

ট্যাগ: হিন্দ বিনতে উতবা, আবূ সুফিয়ানের স্ত্রী, মুআবিয়ার মা, কলিজা ভক্ষণকারিণী নারী

মূল প্রবন্ধ: আবূ সুফিয়ানের স্ত্রী মুআবিয়ার মা হিন্দ। তার চারিত্রিক রেকর্ড অত্যন্ত খারাপ ও অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। সে সহিংস ও রূঢ় স্বভাবের ছিল, সে কারণে সে তার চিন্তা-ভাবনা স্বামী আবূ সুফিয়ানের ওপর চাপিয়ে দিত। আবূ সুফিয়ান সন্ধি ও শান্তির দিকে ঝুঁকে পড়ার দিন সে জনগণকে যুদ্ধ ও রক্তপাতের দিকে আহ্বান জানাচ্ছিল (মক্কা বিজয় দিবসে)

এ নারীর প্রত্যক্ষ উস্কানি উহুদ প্রান্তরে যুদ্ধের অগ্নিশিখা প্রজ্বলিত হবার কারণ হয়েছিল এবং তা নির্বাপিত করার জন্য মহানবীকে সত্তর ব্যক্তিকে কুরবানী দিতে হয়েছিল, যাঁদের একজন ছিলেন হামযাহ্। এ নিষ্ঠুর হৃদয়ের অধিকারী নারী বিশেষ এক ধরনের হিংস্রতা সহ হযরত হামযার পার্শ্বদেশ ছিঁড়ে তাঁর কলিজা বের করে দাঁত দিয়ে কামড়ে টুকরো টুকরো করেছিল।

আবূ সুফিয়ানের স্ত্রী, ওতবার মেয়ে হিন্দ মনে মনে হামযার প্রতি চরম বিদ্বেষ পোষণ করত। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যে কোন মূল্যেই হোক, মুসলমানদের কাছ থেকে তার পিতার প্রতিশোধ নেবে। হিন্দ এবং অন্যান্য নারীরা কুরাইশ সৈন্যদের মধ্যে যুদ্ধের উন্মাদনা সৃষ্টির জন্য যেসব কবিতা আবৃত্তি করছিল ও গান গাইছিল, তাতে  দফ ও খঞ্জনা বাজিয়ে তাদেরকে রক্তপাত ঘটানো ও বিদ্বেষ চরিতার্থ করার আহ্বান জানাচ্ছিল। তাতে বোঝাই যাচ্ছিল যে, এই জাতি নৈতিক চেতনা, পবিত্রতা, স্বাধীনতা ও সচ্চরিত্রের উন্মেষ ঘটানোর জন্যে লড়ছিল না; বরং তাদের জন্য উত্তেজক ছিল বস্তুগত কামনা-বাসনা চরিতার্থ করা ও যৌন সম্ভোগ। দফ ও তবলাবাদক নারীরা কুরাইশ বাহিনীর মাঝখানে এক বিশেষ সুর মূর্চ্ছনায় গান গাইছিল :

نحـن بنات طـارق           نـمشى على النّـمارق

إن تـقبلـوا نعـانق           أو تــدبـروا نـفـارق

"আমরা বালিকা পথের

গালিচার উপর দিয়ে করি পদচারণ।

যদি মুখোমুখি হও শত্রুর, করবো আলিঙ্গন

(আর) যদি শত্রু থেকে কর পৃষ্ঠ প্রদর্শন,

তা হলে ছেড়ে যাবো তোমাদের।”

ওয়াহশী ছিল এক হাবশী বীর যোদ্ধা। সে যুবাইর ইবনে মুতয়েমের ক্রীতদাস ছিল। যুবাইরের চাচাও বদর যুদ্ধে নিহত হয়েছিল। হিন্দের পক্ষ থেকে সে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিল যে, সে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তার মনের আশা পূরণ করবে। হিন্দ্ ওয়াহশিকে প্রস্তাব দিয়েছিল, আমার পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ করার জন্য তোমাকে তিনজনের (মুহাম্মদ, আলী ও হামযাহ্) মধ্যে যে কোন একজনকে হত্যা করতে হবে। ওয়াহশী জবাবে বলেছিল : আমি কখনোই মুহাম্মদের নাগাল পাব না। কেন না তার সাহাবীরা যে কারো চাইতে তার নিকটবর্তী। আলীও যুদ্ধের ময়দানে অসম্ভব রকমের সজাগ। কিন্তু যুদ্ধের সময় হামযার ক্রোধ ও উত্তেজনা এত প্রবল থাকে যে, লড়াই চলাকালীন তার আশপাশে কি হচ্ছে, সে তা বুঝতে পারে না। হয় তো আমি তাকেই ধোঁকায় ফেলে হত্যা করতে পারব। হিন্দ্ ঐটুকুতেই রাজি হয়ে যায়। তাকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়, এক্ষেত্রে যদি সে সফল হয়, তা হলে তাকে মুক্তি দান করবে।

হাবশী গোলাম ওয়াহশী নিজেই বলেছে : "উহুদের দিন আমি কুরাইশের বিজয় লাভের সময়টিতে হামযার খোঁজে ছিলাম। তিনি ক্রুদ্ধ সিংহের মতো প্রতিপক্ষের ব্যূহের মধ্যে ঢুকে পড়েন এবং তাঁর সামনে যে-ই আসছিল, তাকেই তিনি ধরাশায়ী করছিলেন। আমি এমনভাবে গাছ ও পাথরের পেছনে লুকিয়ে রইলাম যে, এর ফলে তিনি আমাকে দেখতে পাচ্ছিলেন না। তিনি তুমুল লড়াইয়ে লিপ্ত ছিলেন। আমি আমার গোপন স্থান থেকে বেরিয়ে আসলাম। আমি হাবশী ছিলাম বিধায় হাবশীদের মতোই বর্শা নিক্ষেপ করতাম। এজন্য তা খুব কমই লক্ষ্যভ্রষ্ট হতো। এ কারণে আমি একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে বিশেষ এক ভঙ্গিতে দুলিয়ে তাঁর দিকে আমার দুই ফলা বিশিষ্ট বর্শা নিক্ষেপ করলাম। বর্শা তাঁর পাঁজর ও জঙ্ঘার মধ্যবর্তী পার্শ্বদেশে আঘাত করল এবং তাঁর দু’ পায়ের মাঝ দিয়ে বেরিয়ে গেল। তিনি আমার ওপর আক্রমণ করতে চাইলেন; কিন্তু প্রচণ্ড ব্যথা তাঁকে এই সুযোগ দেয় নি। ঐ অবস্থায় তিনি পড়ে রইলেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর প্রাণ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। এরপর আমি খুব সতর্কতার সাথে তাঁর দিকে গেলাম। আমার বর্শাটি বের করে এনে কুরাইশ বাহিনীর শিবিরে ফিরে গেলাম; আর নিজের মুক্তির জন্য দিন গুণতে লাগলাম।

যুদ্ধের আগুন নিভে গেলো। উভয়পক্ষ পরস্পর থেকে দূরে সরে গেল। মুসলমানদের নিহতের সংখ্যা ছিল কুরাইশদের নিহতের সংখ্যার তিন গুণ। কাজেই এ প্রিয়জনদের তাড়াতাড়ি দাফনের ব্যবস্থা করা জরুরী হয়ে পড়েছিল।

কুরাইশ মহিলারা তাদের বিজয়কালে দেখতে পেয়েছিল, যে কোন অপরাধ সংঘটনের জন্য ময়দান একেবারে উন্মুক্ত। মুসলমানরা শহীদদের কাফন-দাফনের ব্যবস্থার আগে এ মহিলারা এক জঘন্য পৈশাচিকতায় লিপ্ত হয়। এ ধরনের অপরাধ ইতিহাসে বলতে গেলে বিরল ঘটনা। তারা তাদের বাহ্যিক বিজয়ের ওপর সন্তুষ্ট হয় নি, বরং আরো অধিক প্রতিশোধ নেবার জন্য মাটিতে পড়ে থাকা (শহীদ) মুসলমানদের নাক-কান ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে নেয়। আসলে এর মাধ্যমে তারা নিজেদের গায়ে জঘন্য কালিমা লেপন করে। বিশ্বের সকল জাতির কাছেই শত্রুপক্ষের নিহতরা অসহায় এবং তারা সম্মান পাওয়ার উপযুক্ত। কিন্তু আবূ সুফিয়ানের স্ত্রী মুসলমান শহীদগণের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গেঁথে গলার মালা তৈরি করে। ইসলামের আত্মত্যাগী বীর সেনাপতি হযরত হামযার পেট চিরে ফেলে। তাঁর কলিজা বের করে নিয়ে তা চিবায় এবং খাওয়ার জন্য বহু চেষ্টা করার পরও সে তা খেতে পারে নি। এ কাজটি এত জঘন্য ও ন্যাক্কারজনক ছিল যে, স্বয়ং আবূ সুফিয়ানও বলেছিল : "এ কাজের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি এ ধরনের নির্দেশ দিই নি। তবে এ ব্যাপারে আমি খুব বেশি অসন্তুষ্টও নই।”

এ জঘন্য কাজটির কারণে হিন্দ মুসলমানদের মাঝে هند آكلة الأكباد ‘কলিজা ভক্ষণকারিণী হিন্দ’ নামে কুখ্যাত হয়। পরবর্তীতে হিন্দ্-এর সন্তান-সন্ততিরা ‘কলিজা ভক্ষণকারিণীর সন্তান’ হিসেবে পরিচিত হয়।  মুসলমানরা মহানবীর সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে যান। তাঁরা ঐ সত্তর জন শহীদের লাশ দাফনের প্রস্তুতি নেন। হঠাৎ রাসূলের নযর পড়ে হামযার লাশের উপর। হামযার মৃতদেহের করুণ অবস্থা দেখে তিনি ভীষণভাবে মর্মাহত হন। ক্রোধের প্রচণ্ড ঝড় বয়ে যায় তাঁর অন্তরে। তিনি মন্তব্য করেন : "আমার মধ্যে এখন যে ক্রোধের উদ্রেক ঘটেছে, আমার জীবনে এর আগে কখনো তা হয় নি।”

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: