bayyinaat

Published time: 20 ,November ,2018      00:11:39
আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী এক নারী
হিন্দ ছিলেন আমর ইবনে হাযামের মেয়ে এবং জাবির ইবনে আবদুল্লাহ্ আনসারীর ফুফু। তিনি উহুদ প্রান্তরে যান। এই নারী তাঁর স্বামী, ভাই ও সন্তানদের লাশ উটের উপর বেঁধে মদীনা নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ অবস্থায়ও মনে হলো তাঁর যেন কোন বিপদই হয় নি! অত্যন্ত উৎফুল্ল কণ্ঠে তিনি মদীরার নারীদের বললেন : “আমার কাছে আনন্দের খবর আছে। আল্লাহর রাসূল জীবিত আছেন। এই বিরাট নেয়ামতের মুকাবেলায় সকল দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদ নগণ্য ও তুচ্ছ।”
সংবাদ: 111

আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী এক নারী

আবুল কাসেম

 মহানবী বললেন :

সারাংশ: হিন্দ ছিলেন আমর ইবনে হাযামের মেয়ে এবং জাবির ইবনে আবদুল্লাহ্ আনসারীর ফুফু। তিনি উহুদ প্রান্তরে যান। এই নারী তাঁর স্বামী, ভাই ও সন্তানদের লাশ উটের উপর বেঁধে মদীনা নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ অবস্থায়ও মনে হলো তাঁর যেন কোন বিপদই হয় নি! অত্যন্ত উৎফুল্ল কণ্ঠে তিনি মদীরার নারীদের বললেন : "আমার কাছে আনন্দের খবর আছে। আল্লাহর রাসূল জীবিত আছেন। এই বিরাট নেয়ামতের মুকাবেলায় সকল দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদ নগণ্য ও তুচ্ছ।”

ট্যাগ: হিন্দ বিনতে আমর, শহীদ আমর ইবনে জামূহ, শহীদ আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর, উহুদের যুদ্ধ

আমর ইবনে জামূহ খোঁড়া এবং জিহাদ তাঁর ওপর ফরয না হলেও অনেক পীড়াপীড়ি করে মহানবীর কাছ থেকে অনুমতি আদায় করেন এবং মুজাহিদদের প্রথম সারিতে গিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর ছেলে খাল্লাদ এবং তাঁর শ্যালক আবদুল্লাহ্ ইবনে আমরও এ পবিত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা তিনজনই শাহাদাত লাভ করেন। তাঁর স্ত্রী হিন্দ ছিলেন আমর ইবনে হাযামের মেয়ে এবং জাবির ইবনে আবদুল্লাহ্ আনসারীর ফুফু। তিনি উহুদ প্রান্তরে যান। তিনি তাঁর প্রিয়ভাজন শহীদগণকে মাটির উপর থেকে তুলে একটি উটের ওপর রাখেন এবং মদীনায় চলে যান।

মদীনায় গুজব রটেছিল, মহানবী (সা.) যুদ্ধের ময়দানে নিহত হয়েছেন। নারীরা মহানবীর ব্যাপারে সঠিক খবর পাওয়ার জন্য উহুদের দিকে রওয়ানা হন। তিনি পথিমধ্যে মহানবীর স্ত্রীগণের সাক্ষাৎ পান। তাঁরা কাছ থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর অবস্থা জানতে চান। এই নারী তাঁর স্বামী, ভাই ও সন্তানদের লাশ উটের উপর বেঁধে মদীনা নিয়ে যাচ্ছিলেন। এহেন অবস্থায়ও মনে হলো তাঁর যেন কোন বিপদই হয় নি! অত্যন্ত উৎফুল্ল কণ্ঠে তিনি বললেন : "আমার কাছে আনন্দের খবর আছে। আল্লাহর রাসূল জীবিত আছেন। এই বিরাট নেয়ামতের মুকাবেলায় সকল দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদ নগণ্য ও তুচ্ছ।”

অপর খবর হলো, মহান আল্লাহ্ কাফেরদেরকে ক্ষুব্ধ ও ক্ষিপ্ত অবস্থার মধ্যে ফিরিয়ে দিয়েছেন।  এরপর তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো : "এই লাশগুলো কার?” তিনি বললেন : "সবই আমার নিজের লোক। একজন আমার স্বামী, অন্যজন আমার সন্তান, তৃতীয় আমার ভাই; মদীনায় দাফন করার জন্য তাদের নিয়ে যাচ্ছি।”

আমরা পুনরায় ইসলামের ইতিহাসের এ অধ্যায়ে ঈমানের আরেক দৃষ্টান্ত পাই। অর্থাৎ দুঃখ ও বিপদাপদ তুচ্ছ জ্ঞান করা এবং পবিত্র লক্ষ্যের জন্য সকল দুঃখ-কষ্ট ও যন্ত্রণা সহ্য করা। এ ঘটনা তারই জ্বলন্ত সাক্ষী। বস্তুবাদী আদর্শ কখনো এ ধরনের আত্মত্যাগী নারী ও পুরুষকে প্রশিক্ষিত করতে পারে নি। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, এই ব্যক্তিরা লক্ষ্য ও আদর্শের জন্য লড়াই করেন; পার্থিব ভোগ-লিপ্সা বা পদমর্যাদার জন্য নয়।

এ ঘটনার পর আরো ঘটনা আছে, যা আরো বিস্ময়কয়, যা বস্তুগত দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা ও যারা ঐতিহাসিক বিষয়াদি বিশ্লেষণ করার জন্য প্রণয়ন করেছে, সেগুলোর আলোকে কখনোই ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। কেবল মহান আল্লাহর মনোনীত বান্দাগণ এবং ঊর্ধ্ব জগতের প্রভাব-প্রতিক্রিয়ার প্রতি যাঁদের অটুট ঈমান রয়েছে এবং অলৌকিকত্ব ও কারামাতের বিষয়গুলো যাদের কাছে স্পষ্ট, কেবল তাঁরাই এসব ঘটনা বিশ্লেষণ করতে সক্ষম এবং সবদিক থেকে সঠিক ও বিশুদ্ধ বলে গ্রহণ করতে পারবেন।

ঘটনার বিবরণ

উটের লাগাম তাঁর হাতে ছিল। মদীনার দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু উটটি খুব কষ্টে পথ চলছিল। মহানবী (সা.)-এর স্ত্রীগণের মধ্যে একজন বললেন : "নিশ্চয়ই উটের বোঝা খুব ভারী হয়েছে।” জবাবে হিন্দ বললেন : "এই উট খুব শক্তিশালী। একাই দুই উটের বোঝা বহন করতে পারে। বরং এর অন্য কারণ আছে। তা হচ্ছে, যখনই আমি উটটি উহুদের দিকে নিয়ে যাই, উটটি খুব স্বচ্ছন্দে পথ চলে। আবার যখন মদীনার দিকে নিতে চাই, তখন খুব কষ্টে টেনে নিতে হয় বা হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়ে। হিন্দ সিদ্ধান্ত নিলেন, উহুদে ফিরে যাবেন এবং মহানবী (সা.)-এর কাছে এ ঘটনা জানাবেন। তিনি সেই উটটি ও লাশগুলো নিয়ে উহুদ প্রান্তরে যান। উটের পথ চলার বৃত্তান্ত মহানবীকে শোনান। মহানবী বললেন : "তোমার স্বামী যখন উহুদ আসছিল, তখন আল্লাহর কাছে কী দুআ করেছিল?” তিনি জবাব দিলেন : "আমার স্বামী আল্লাহর কাছে হাত তুলে মুনাজাত করেছিলেন : হে আল্লাহ্! আমাকে আমার ঘরে ফিরিয়ে আনবেন না।”

মহানবী বললেন : "তোমার স্বামীর দুআ কবুল হয়েছে। আল্লাহ্ চান না, এ লাশ আমরের ঘরে ফিরে যাক। তোমার এখন কর্তব্য, এই তিনটি লাশই উহুদ প্রান্তরে দাফন করা। জেনে রেখ, পরকালে তারা তিনজনই একত্রে থাকবে।”

হিন্দ অশ্রুসিক্ত নয়নে মহানবীর কাছে একটি আবেদন করেন। তা হলো, তিনি যেন দুআ করেন যাতে তিনিও (হিন্দ) তাঁদের সাথে থাকতে পারেন। (আল ওয়াকিদী প্রণীত আল মাগাযী, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৬৫)

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: