bayyinaat

Published time: 20 ,November ,2018      19:45:09
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানদের দায়িত্ব ও র্কতব্য
পবিত্র কোরআনের বহু স্থানে মহান আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি পিতা-মাতার আনুগত্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানব জাতির প্রতি প্রথম নির্দেশ হিসাবে পিতা-মাতার আনুগত্য উল্লিখিত হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে: তোমার প্রভু নির্দেশ দিয়েছেন যে, একমাত্র তাঁরই তোমরা ইবাদত-বন্দেগী করবে এবং নিজ পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে।
সংবাদ: 115

পিতা-মাতার প্রতি সন্তানদের দায়িত্ব ও র্কতব্য

 

সারাংশ : পবিত্র কোরআনের বহু স্থানে মহান আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি পিতা-মাতার আনুগত্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানব জাতির প্রতি প্রথম নির্দেশ হিসাবে পিতা-মাতার আনুগত্য উল্লিখিত হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে: তোমার প্রভু নির্দেশ দিয়েছেন যে, একমাত্র তাঁরই তোমরা ইবাদত-বন্দেগী করবে এবং নিজ পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে।

ট্যাগ : সন্তানদের দায়িত্ব ও র্কতব্য, পিতা–মাতার আনুগত্য করা, জিহাদের সমান সওয়াব, পিতা–মাতার প্রতি সদাচরণ

মূল প্রবন্ধ: সব মানুষই স্বীয় পিতা-মাতার সম্মান ও মর্যাদা উপলব্ধি করে এবং তাঁদেরকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে। ইসলাম ধর্মও পিতা-মাতার প্রতি মানুষের এই আত্মিক টান ও অনুভূতি যা তার আবেগ, মনুষ্যত্ব ও বিবেকবোধ থেকে উৎসারিত তা আরো জাগ্রত ও উদ্দীপ্ত করে। এ ধর্ম বারবার বিশদভাবে মানুষের এ আত্মিক অনুভূতি ও উপলব্ধির যথার্থ মূল্য ও গুরুত্ব প্রদান করেছে এবং সন্তানদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে যেন তারা এক মুহূর্তের জন্যও স্বীয় পিতা-মাতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার ব্যাপারে অবহেলা না করে এবং অমনোযোগী না থাকে।

পিতা-মাতার আনুগত্য করা : পবিত্র কোরআনের বহু স্থানে মহান আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি পিতা-মাতার আনুগত্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানব জাতির প্রতি প্রথম নির্দেশ হিসাবে পিতা-মাতার আনুগত্য উল্লিখিত হয়েছে।

পবিত্র কোরআনের এক স্থানে বলা হয়েছে :

و قضى ربّك إلّا تعبدوا إلّا إياه و بالوالدين إحسانا امّا يبلغن عندك الكبر أحدهما أو كلاهما فلا تقل لهما اف و لا تنهرهما و قل لهما قولا كريما و اخفض لهما جناح الذّلّ من الرحمة و قل ربّ ارحمهما كما ربّياني صغيرا

"তোমার প্রভু নির্দেশ দিয়েছেন যে, একমাত্র তাঁরই তোমরা ইবাদত-বন্দেগী করবে এবং নিজ পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে। যদি তাদের মধ্য থেকে একজন অথবা তারা উভয়ই তোমার সামনে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তাহলে তাদের সামনে উহ্ শব্দটি পর্যন্ত করবে না; তাদেরকে ধমকাবে না এবং তাদের সাথে মিষ্টি ভাষায় কথা বলবে। তাদের সামনে দয়া-মমতা সহকারে নম্রতার ডানা নীচু করে (বিছিয়ে) দেবে এবং স্বীয় প্রভুর কাছে প্রার্থনা করে বলবে : হে প্রভু! তারা যেমন আমাকে শৈশবে প্রতিপালন করেছেন ঠিক তেমনি আপনিও তাদের ওপর দয়া করুন।

পবিত্র কোরআনের অন্য একটি স্থানে মহান আল্লাহ্ বলেছেন :

و وصّينا الإنسان بوالديه حملته أمّه و هنا على و هن و فصاله عامين أن أشكرلي و لوالديك إليّ المصير

"আমরা (প্রত্যেক) মানুষকে তার পিতা-মাতার (প্রতি সদাচরণ করার) ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছি; কারণ তার মা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভধারণ (করেছে) এবং তাকে দুবছর পর্যন্ত স্তন্যদান করেছে; তাই (প্রথমে স্রষ্টা ও নেয়ামতদাতা হিসাবে) আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং (এরপর) নিজ পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; কারণ (সকল সৃষ্টিকে) আমার কাছেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে।

হাদীস সমূহে পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ :

মহানবী (সা.) বলেছেন :

برّا لوالدين أفضل من الصّلوة و الصّوم و الحجّ و العمرة و الجهاد في سبيل الله

‘‘পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ নামায, রোযা, হজ্ব, উমরাহ্ ও মহান আল্লাহর পথে জিহাদ করা অপেক্ষা উত্তম।

মহানবী (সা.) আরো বলেছেন,

من أصبح مرضيّا لأبويه أصبح له بابان مفتوحان إلى الجنّة

"যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় রাত কাটিয়ে ভোরে পদার্পণ করে যে, তার পিতা-মাতা তার প্রতি সন্তুষ্ট রয়েছে, তার জন্য বেহেশতের দিকে দুটি দরজা খোলা থাকবে।

পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করার সওয়াব জিহাদ করার সওয়াবের চেয়েও বেশি তা এই রেওয়ায়েত থেকে প্রমাণিত হয়।

হযরত ইমাম সাদিক (আ.) বলেন :

و أتاه (النّبيّ) رجل آخر و قال: إنّي رجل شابّ نشيط واجب الجهاد و لي والدة تكره ذالك، فقال له النّبيّ (ص) ارجع فكن مع والدتك، فوالّذي بعثني بالحقّ لا نسها بك ليلة خير من جهاد في سبيل الله سنة

"এক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-এর কাছে এসে আরজ করল : আমি এক দৈহিক শক্তি ও সামর্থ্যের অধিকারী যুবক। মহান আল্লাহর পথে জিহাদ করা আমার ওপর ওয়াজিব। তবে আমার মা এ ব্যাপারটা (আমার জিহাদে অংশগ্রহণ) পছন্দ করে না। মহানবী (সা.) তখন তাকে বললেন : (তুমি) ফিরে যাও এবং তোমার মায়ের সাথে থাক। কারণ যে মহান সত্তা আমাকে সত্য সহ প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ, এক রাত মায়ের সাথে থাকা (তার খেদমত করা) মহান আল্লাহর পথে এক বছর পর্যন্ত জিহাদ করা অপেক্ষা উত্তম।৫ তবে মনে রাখা আবশ্যক এরূপ অনুমতি রাসূল (সা.) তখনই দিতেন যখন যুদ্ধের জন্য পর্যাপ্ত সৈন্য সংগৃহীত থাকত এবং মুসলমানদের জন্য জিহাদ ‘ফরয়ে কিফায়া’ বলে গণ্য হত।

و جاء آخر إليه (النّبيّ) للجهاد فقال (ص) ألك والدة؟ قال: نعم. قال: فالزمها فإنّ الجنّة تحت قدمها

আরেক ব্যক্তি মহানবীর কাছে জিহাদে অংশগ্রহণ করার অনুমতি নেয়ার জন্য আসলে তাকে তিনি বলেছিলেন : "তোমার কি মা আছে?” তখন সে বলেছিল : "জী, হ্যাঁ।তখন তিনি বলেছিলেন : "তার সাথে তুমি থাকবে। কারণ মায়ের পদতলেই (হচ্ছে) বেহেশত।

পিতা-মাতার সাথে সদাচরণকে ইসলাম ধর্ম শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার মাপকাঠি হিসাবে নির্ধারণ করেছে। অর্থাৎ যারা নিজ পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে তারা ইসলামের দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার অধিকারী হবে।

ইমাম সাদিক (আ.)-এর নিকট থেকে বর্ণিত : মহানবী (সা.)-এর কাছে তাঁর এক দুধভগ্নী আসলে তাকে দেখে তিনি অত্যন্ত খুশী হলেন এবং তার জন্য তিনি তাঁর নিজ বস্ত্র বিছিয়ে দিয়ে সম্মানের সাথে তাকে ঐ বস্ত্রের ওপর বসিয়ে তার সাথে কথা বলতে লাগলেন এবং তার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। অতঃপর সে সেখান থেকে উঠে চলে গেল। এরপর সেখানে তার ভাই আসলে মহানবী (সা.) তাঁর দুধভগ্নীর সাথে যে আচরণ করেছিলেন তার সাথে সেই আচরণ করলেন না। (এতে সবাই বিস্মিত হলো)। মহানবীকে জিজ্ঞাসা করা হলো : "হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তার বোনের সাথে যে আচরণ করেছেন তা আপনি তার সাথে করেন নি; অথচ সে পুরুষ।তখন তিনি বললেন : "কারণ এ মহিলাটি তার চেয়ে নিজ পিতা-মাতার প্রতি অধিক সদাচরণ করত।

ইসলাম পিতা-মাতার অধিকারকে সকল অধিকার অপেক্ষা মহান ও শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচনা করে এবং সব কিছুর ওপর অগ্রগণ্য বলে মনে করে।

قال للصّادق (ع) : رجل : إنّ لي أبوين مخالفين فقال برّ هما كما تبرّ المسلمين ممّن يتولّانا

এক ব্যক্তি ইমাম সাদিক (আ.)-এর কাছে এসে আরজ করল : "আমার পিতা-মাতা আহ্লে বাইতের অনুসারী নয়।তখন তিনি বললেন : আমাদের অর্থাৎ আহ্লে বাইতের প্রতি ভালবাসা প্রদর্শনকারী (এবং তাঁদের অনুসারী) মুসলমানদের সাথে তুমি যেমন সদাচরণ করে থাক, তাদের (তোমার নিজ পিতা-মাতা) প্রতিও তেমন সদাচরণ করবে।

আর ঐ ব্যক্তি দুর্ভাগা যে এসব দায়িত্ব পালন করার ব্যাপারে অবহেলা প্রদর্শন করে অথবা নিজ পিতা-মাতার রোষানলে পড়ে।

মহানবী (সা.) বলেছেন,

من أصبح مسخّطا لأبويه أصبح له بابان مفتوحان إلى النّار. إيّاكم و عقوق الوالدين فأنّ ريح الجنّة توجد من مسيرة ألف عام، و لا يجدها عاقُّ

"যে ব্যক্তির প্রতি পিতা-মাতা অসন্তুষ্ট তার জন্য রয়েছে দোযখে যাওয়ার দুটি উন্মুক্ত দরজা। তোমাদেরকে স্বীয় পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়ার ব্যাপারে সাবধান করে দিচ্ছি। কেননা ১০০০ বছরের দূরত্ব থেকেই জান্নাতের সুগন্ধ পাওয়া যাবে (বিদ্যমান থাকবে); কিন্তু যে পিতা-মাতার অবাধ্য, সে তা পাবে না।

পবিত্র কোরআনের সূরা বনি ইসরাঈলের ২৩-২৪ নং আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, পিতা-মাতার অবাধ্যতার সর্বনিম্ন পর্যায় হচ্ছে পিতা-মাতার সামনে সন্তানের উহ্বলা।

ইমাম সাদিক (আ.) বলেন :

لو علم اللهُ شيئا هو أدني من أف لنهى عنه و هو من أدنى العقوق و من العقوق أن ينظر الرّجل إلى والديه فيحدّ النّظر إليهما

"যদি মহান আল্লাহ্ উহবলা অপেক্ষা অন্য কিছুকে অপেক্ষাকৃত নীচু পর্যায়ের বলে বিবেচনা করতেন, তাহলে তা নিষেধ করতেন; আর এই উহ্বলা পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়ার সর্বনিম্ন পর্যায়স্বরূপ। আর পিতা-মাতার প্রতি কড়া চাহনীও (অর্থাৎ তীক্ষ্ন ও কড়া দৃষ্টিতে তাকানো বা চোখ রাঙানো) তাঁদের প্রতি অবাধ্যতা ও বিরুদ্ধাচরণের অন্তর্ভুক্ত।১০

আমাদের উচিত মহানবী (সা.)-এর এ উপদেশ বাণীটিও স্মরণে রাখা। তিনি বলেছেন :

حقُّ كبيرِ الإخوةِ على صغيرهم كحقِّ الوالد على ولَده

"সন্তানের ওপর পিতার যেমন অধিকার আছে, ঠিক ছোট ভাই-বোনদের ওপর (তাদের) বড় ভাইয়েরও অধিকার আছে।১১

সংগ্রহে : মোহাম্মাদ ফারুক হুসাইন

 

তথ্যসূত্র : [1]



১.সূরা বনি ইসরাঈল : ২৩-২৪।

২. সূরা লোকমান : ১৪।

৩. জামেউস্ সাআদাত, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৫৯।

৪. জামেউস সাআদাত, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৫৯।

৫.জামেউস সাআদাত, ২য় খণ্ড, পৃ ২৬০।

৬.জামেউস সাআদাত, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৬১।

৭.জামেউস সাআদাত, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৬০।

৮.জামেউস সাআদাত, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৬০।

৯.জামেউস সাআদাত, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৫৭।

১০.জামেউস সাআদাত, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৫৮।

১১.জামেউস সাআদাত, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৬২।

 

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: