bayyinaat

Published time: 21 ,November ,2018      22:35:49
শিয়া আলেমদের দৃষ্টিতে আহলে বাইতের ব্যাপারে অতিরঞ্জিত ধারণাপোষণকারী (নুসাইরী)
সারাংশ: শেইখ সাদুক (রহ.) বলেন, ‘ইমামদের ব্যাপারে অতিরঞ্জিত ধারণাপোষণকারী এবং মুফাওয়াদা (যারা বিশ্বাস করে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করে সবকিছু ইমামদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন)-দের সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস হল তারা কাফের এবং তারা হল ইহুদী, খ্রিষ্টান, অগ্নি-উপাসক, কাদরিয়া (মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী), হারুরীয়া (খারেজী) এবং সকল বিদআত সৃষ্টিকারী ও কু-প্রবৃত্তির অনুসারী পথভ্রষ্ট থেকেও নিকৃষ্ট ও অধম। তারা আল্লাহর মর্যাদাকে অনেক খাট করেছে।
সংবাদ: 121

শিয়া আলেমদের দৃষ্টিতে আহলে বাইতের ব্যাপারে অতিরঞ্জিত ধারণাপোষণকারী (নুসাইরী)

মূল: আহমাদ খমেইয়ারঅতিরঞ্জিত ধারণাপোষণকারীদের সম্পর্কে আহলে বাইতের অনুসারী মহান চিন্তাবিদদের বক্তব্য এবং ফতোয়াসমূহ তাদের ইমাম (আ.)-দের মতই। তারা অতিরঞ্জিত ধারণাপোষণকারীদেরকে কাফের ঘোষণা করেছেন এবং তাদের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

অনুবাদ: মো,. রফিকুল ইসলাম

সারাংশ: শেইখ সাদুক (রহ.) বলেন, ‘ইমামদের ব্যাপারে অতিরঞ্জিত ধারণাপোষণকারী এবং মুফাওয়াদা (যারা বিশ্বাস করে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করে সবকিছু ইমামদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন)-দের সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস হল তারা কাফের এবং তারা হল ইহুদী, খ্রিষ্টান, অগ্নি-উপাসক, কাদরিয়া (মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী),  হারুরীয়া (খারেজী) এবং সকল বিদআত সৃষ্টিকারী  ও কু-প্রবৃত্তির অনুসারী পথভ্রষ্ট থেকেও নিকৃষ্ট ও অধম। তারা আল্লাহর মর্যাদাকে অনেক খাট করেছে।

ট্যাগ: শিয়া আলেমগণ, আহলে বাইত, অতিরঞ্জিত ধারণাপোষণকারী, নুসাইরী,

মূল প্রবন্ধ: অতিরঞ্জিত ধারণাপোষণকারীদের সম্পর্কে আহলে বাইতের অনুসারী মহান চিন্তাবিদদের বক্তব্য এবং ফতোয়াসমূহ তাদের ইমাম (আ.)-দের মতই। তারা অতিরঞ্জিত ধারণাপোষণকারীদেরকে কাফের ঘোষণা করেছেন এবং তাদের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এখানে তাদের কিছু বক্তব্য তুলে ধরা হল।

শেইখ মুফিদ (রহ.) বলেছেন, ‘ অতিরঞ্জিত ধারণাপোষণকারীরা (নুসাইরী) ঐ সকল বাহ্যিক মুসলমান যারা আমিরুল মুমেনীন, আলী (আ.) এবং তাদের সন্তানদের মধ্য হতে যারা ইমাম, তাদেরকে আল্লাহ এবং রাসূল (সা.)-এর পর্যায়ে উন্নীত করে। তাদের সম্পর্কে দুনিয়া এবং ধর্মীয় বিষয়ে অতিরিক্ত ও বাড়াবাড়ি পর্যায়ের ফজিলত বর্ণনা করেছে এবং এ ক্ষেত্রে তারা ভারসাম্য রক্ষা করে নাই। তারা পথভ্রষ্ট এবং কাফের, যাদেরকে আমিরুল মুমেনীন (আ.) মৃত্যুদণ্ডের আদেশ এবং এরপর তাদের মৃতদেহগুলোকে আগুনে পুড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তাদেরকে কাফের এবং ইসলাম বহির্ভূত ঘোষণা করেছেন। ১৭ 

আল্লামা মাজলেসী বলেছেন, ‘রাসূলদের এবং ইমামদের সম্পর্কে অতিরঞ্জিত ধারণা পোষণ করা কয়েকভাবে হয়ে থাকে। হয় তাদেরকে স্রষ্টা মনে করা অথবা সৃষ্টি অথবা ইবাদত অথবা রিজিক দানের ক্ষেত্রে তাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করা অথবা আল্লাহ তাদের মধ্যে প্রবেশ করে একীভূত হয়ে গিয়েছেন বলে বিশ্বাস করা অথবা আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন ধরনের ওহী ও এলহাম ছাড়াই তারা অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞানী হিসেবে বিশ্বাস করা অথবা এ বিশ্বাস করা যে ইমামরা হলেন নবী বা রাসূল অথবা তাদের একজনের মৃত্যুর পর তার আত্মা আরেকজনের দেহে প্রবেশ  করে অথবা এ বিশ্বাস করা যে তাদের পরিচিতি লাভই মুসলমান ও তাঁদের অনুসারী হওয়ার জন্য যথেষ্ট অর্থাৎ সৎকর্ম সম্পাদন ও গুনাহ পরিত্যাগের কোন প্রয়োজন নাই।১

এই উল্লিখিত বিষয়ের সবগুলোই নাস্তিকতার ও কুফরের পরিচয় বহন করে এবং ধর্ম বহির্ভূত হিসাব করা হয়। বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তি, আয়াত ও রেওয়ায়েতসমূহ এ অর্থই নির্দেশ করে। এগুলোর পর্যালোচনার মাধ্যমে পাঠকরা ভালভাবেই অনুধাবন করতে পেরেছেন যে ইমাম (আ.)-রা অতিরঞ্জিত ধারণাপোষণকারীদের থেকে সম্পর্কহীন ছিলেন। তাদেরকে কাফের ফতোয়া দিয়েছেন। তাদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন। যদি কোন হাদিসে এ রকম কোন বিষয়ের প্রতি ইশারা থাকে তাহলে, হয় এগুলোর অন্তর্নিহিত অর্থ (তা‘ভীল) ও তাফসীর করতে হবে অথবা মনে করতে হবে এগুলো অতিরঞ্জিত ধারণাপোষণকারীদের মিথ্যাচার। ২

শেইখ সাদুক বলেন, ‘ইমামদের ব্যাপারে অতিরঞ্জিত ধারণাপোষণকারী এবং মুফাওয়াদা (যারা বিশ্বাস করে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করে সবকিছু ইমামদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন)-দের সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস হল তারা কাফের এবং তারা হল ইহুদী, খ্রিষ্টান, অগ্নি-উপাসক, কাদরিয়া (মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী),  হারুরীয়া (খারেজী) ৩ এবং সকল বিদআত সৃষ্টিকারী  ও কু-প্রবৃত্তির অনুসারী পথভ্রষ্ট থেকেও নিকৃষ্ট ও অধম। তারা আল্লাহর মর্যাদাকে অনেক খাট করেছে। ৪

শেইখ কাশিফুল গিতা অতিরঞ্জিত ধারণাপোষণকারীদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘ইমামীয়া শিয়া এবং নিষ্পাপ ইমাম (আ.)-রা এই অতিরঞ্জিত ধারণাপোষণকারী ফির্কার প্রতি অসন্তুষ্ট। তাদের সাথে সম্পর্ককে হারাম মনে করে... এবং তাদের বিশ্বাসের থেকে নিজেদের সম্পর্কহীনতা ঘোষণা করে। তাদেরকে কাফেরদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও পথভ্রষ্ট মনে করে। শিয়া মাযহাব নির্ভেজাল তৌহিদে বিশ্বাসী এবং তারা সৃষ্টিকর্তাকে সকল সৃষ্টির সদৃশ হওয়া থেকে মুক্ত বলে বিশ্বাস করে।’ ৫

আয়াতুল্লাহ খুয়ী বলেছেন, ‘অতিরঞ্জিত ধারণাপোষণকারীরা (নুসাইরী) কয়েক শ্রেণীতে বিভক্ত। তাদের এক শ্রেণী বিশ্বাস করে আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.) অথবা আহলে বাইতের কোন একজন পবিত্র ইমামই হলেন সৃষ্টিকর্তা। তারা এ বিশ্বাস করে যে ইমাম (আ.)-রাই হচ্ছেন মহিমান্বিত প্রভু ও মূর্তিমান আল্লাহ, যিনি জমিনে অবতরণ করেছেন। যদি তাদের এরূপ বিশ্বাস থাকার বিষয়টি সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের মুক্তি না পাওয়া এবং কাফের হওয়ার বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নাই; কারণ এ ধরনের বিশ্বাসের অর্থ হল আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করা। স্পষ্ট যে আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করার ক্ষেত্রে কোন বিশেষ ব্যক্তির খোদা হওয়ার বিশ্বাস এবং কোন মূর্তিকে স্রষ্টা হিসেবে মনে করা অথবা আমিরুল মুমিনীন (আ.)-কে স্রষ্টা হিসেবে মনে করার মধ্যে প্রকৃত অর্থে কোন পার্থক্য নাই; কারণ তারা সকলেই প্রভু ও স্রষ্টা হওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্বকে অস্বীকার  করে এবং এ কারণেই তারা কাফির বলে গণ্য হবে।৬

১. তাসহীহু এতেকাদাতিল ইমামীয়া, শেইখ মুফিদ, পৃ. ১৩১।

২. বিহারুল আনওয়ার, মুহাম্মাদ বাকির মাজলেসী, ২৫তম খ-, পৃ. ৩৪৬।

৩. আলী (আ.)-এর সাথে যুদ্ধকারী খারেজী সম্প্রদায়।

৪. আল-এয়তিকাদাত ফী দ্বীনীল-ইমামীয়াতি, শেইখ সাদুক, পৃ. ৯৭।

৫. আসলুশ-শিয়া ওয়া উসুলুহা, কাশিফুল গিতা, পৃ. ১৭৪ ও ১৭৫।

৬. আত-তানকীহ ফী শারহীল অরওয়াতুল উছকা, সাইয়্যেদ আবুল কাশেম খুয়ী, ৩য় খ-, পৃ. ৭৩।

 

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: