bayyinaat

Published time: 21 ,November ,2018      23:28:32
আহলে বাইতের ইমামদের সম্পর্কে অতিরঞ্জিত ধারণা নিষিদ্ধ
সারাংশ: আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমি অতিরঞ্জনকারীদের (নুসাইরী) প্রতি অসন্তুষ্ট, যেভাবে মারিয়ামের সন্তান ঈসা (আ.) খ্রিষ্টানদের প্রতি অসস্তুষ্ট ছিলেন। হে আল্লাহ! তাদেরকে সব সময় অপমানিত ও লাঞ্ছিত কর; তাদের কাউকে কোন সাহায্য করো না।
সংবাদ: 123

আহলে বাইতের ইমামদের সম্পর্কে অতিরঞ্জিত ধারণা নিষিদ্ধ

মূল: আহমাদ খমেইয়ার

অনুবাদ: মো. রফিকুল ইসলাম

 ইমাম আলী (আ.) বলেছেন: ‘যদি কেউ রাসূলদেরকে প্রতিপালক মনে করে ও (রাসূলের স্থলাভিষিক্ত) ইমামদেরকে প্রতিপালক অথবা নবী মনে করে এবং (আল্লাহর মনোনীত) ইমাম ছাড়া অন্যদেরকে ইমাম মনে করে তাহলে দুনিয়াতে ও আখেরাতে তাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নাই।’ ৫

সারাংশ: আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমি অতিরঞ্জনকারীদের (নুসাইরী) প্রতি অসন্তুষ্ট, যেভাবে মারিয়ামের সন্তান ঈসা (আ.) খ্রিষ্টানদের প্রতি অসস্তুষ্ট ছিলেন। হে আল্লাহ! তাদেরকে সব সময় অপমানিত ও লাঞ্ছিত কর; তাদের কাউকে কোন সাহায্য করো না।

ট্যাগ: আহলে বাইতের ইমামগণ, গালী ও অতিরঞ্জিত ধারণাপোষণকারী, নুসাইরী,

মূল প্রবন্ধ: আরবী গুলুভ (غلو) শব্দের অর্থ কোন কিছুর সীমা লঙ্ঘন ও বাড়াবাড়ি করাকে বুঝায়। এ বিষয়ে শব্দতত্ত্ববিদ ইবনে মানজুর বলেন, ‘ধর্মে  এবং  কোন কর্মের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করার অর্থ হল এর সীমা লঙ্ঘন করা। অনেকে বলেছেন কোন কাজের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করার অর্থ হল ঐ কাজের সীমা লঙ্ঘন করা। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে ধর্মের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি অর্থ সীমা লঙ্ঘন করা।’ ১

রাগেবে ইসফাহানী বলেন, ‘আরবী গুলুভ (غلو) অর্থাৎ সীমা লঙ্ঘন করা। এ বিষয়টি তখনি বলা হয় যখন কোন কিছুর দাম বৃদ্ধি পায়।’ ২

ইবনে আশুর এর মতে, ‘আরবি গুলুভ (غلو) অর্থ হল সাধারণ ও নির্ধারিত সীমা ছাড়িয়ে চরম অবস্থায় যাওয়া। এ শব্দটি আরবি গুলুভুুস সাহ্ম (غلوالسهم) থেকে উৎপত্তি ঘটেছে; যা কোন তীরের সর্বশেষ সীমা পর্যন্ত নিক্ষেপ করাকে বুঝায়। এ অর্থটি কোন বুদ্ধিবৃত্তিক অথবা যৌক্তিক কোন মৌলিক বিশ্বাস অথবা কোন কিছু অনুধাবন করা অথবা কোন কর্মের কাক্সিক্ষত মাত্রার অতিরিক্ত চাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ধর্মের ক্ষেত্রে গুলুভ অর্থ হল ধর্মে কোন ব্যক্তি, বিষয় বা বস্তু সম্পর্কে যা কিছু বলা অথবা যে সীমা নির্দিষ্ট করা হয়েছে, তা থেকে অতিরিক্ত ও চরম আকারে তাদের সম্পর্কে প্রকাশ করে।৩ 

গুলুভ শব্দটি দুটি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে:

হে গ্রন্থধারীরা! নিজেদের ধর্মীয় বিষয়সমূহকে অতিরঞ্জিত কর না এবং আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ছাড়া (অন্য কথা) বল না; মারইয়াম এর সন্তান ঈসা মাসীহ্ শুধু আল্লাহর একজন প্রেরিত পুরুষ এবং তাঁর বাণী (সৃষ্টিমূলক নির্দেশ) (সূরা নিসা, আয়াত: ১৭১)

(হে রাসূল!) তুমি বল, ‘হে গ্রন্থধারীরা! তোমরা তোমাদের ধর্মে অন্যায়ভাবে বাড়াবাড়ি কর না এবং সেই সম্প্রদায়ের প্রবৃত্তির অনুসরণ কর না যারা পূর্বেই পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং বহু সংখ্যক লোককে পথভ্রষ্ট করেছে, আর সোজা পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে।’ (সূরা মায়েদাহ, আয়াত: ৭৭)

এ দুটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা খ্রিষ্টানদেরকে, ঈসা (আ.)-এর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও চরম ধারণা পোষণ করতে নিষেধ করেছেন। কারণ তারা ঈসা (আ.)-কে আল্লাহর সমপর্যায়ে স্থান দিত। প্রাগুক্তভাবে কোরআনের সূরা নিসার ১৭১নং আয়াতে এ বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন:

সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং (খবরদার!) এ কথা বল না, ‘(আল্লাহ) তিন জন’; এর থেকে বিরত হও, এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আল্লাহ একমাত্র অদ্বিতীয় উপাস্য, তিনি এ (ত্রুটি) থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত যে, তাঁর কোন পুত্র থাকবে। যা কিছু নভোম-ল ও ভূম-লে আছে সব তো তাঁরই; এবং কার্যনির্বাহের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সূরা নিসা, আয়াত: ১৭১)

উল্লিখিত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয় যে কোরআনে বাড়াবাড়ি করার অর্থ হল সৃষ্টির জন্য নির্ধারিত সীমানা অতিক্রম করা এবং তা আল্লাহর সমপর্যায়ে পৌঁছানোকে বুঝায়।

ইসলামে বিশ্বাসের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন

হাদিস ও ইসলামের ইতিহাস গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন ও বিশ্লেষণে বোঝা যায় অতিরঞ্জনকারীরা ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ে ভুল ও বিকৃত বিশ্বাস পোষণ করত। তারা আল্লাহর নবিগণ ও তাঁর ওলীদের বিষয়ে অতিরঞ্জিত ধারণা যেমন স্রষ্টা ও প্রতিপালক ও উপাস্য হওয়া, আল্লাহর অনুমতি ছাড়াই সত্তাগতভাবে তাঁদের গায়েবের জ্ঞান থাকা, বিশ্বজগতের পরিচালনার দায়িত্ব স্বাধীন ও সম্পূর্ণরূপে তাঁদের ওপর অর্পিত হওয়া, পুনর্জন্মবাদ, তাঁদের আল্লাহর অনুরূপ হওয়া ইত্যাদি বিশ্বাস রাখত।

আহলে বাইত (আ.)-এর দৃষ্টিতে অতিরঞ্জনকারী (নুসাইরী)

হিজরীর প্রথম শতাব্দি থেকেই আহলে বাইতের ইমাম (আ.)-রা অতিরঞ্জনকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত ভূমিকা গ্রহণ করেছেন। তাঁরা তাঁদের অনুসারীদেরকে অতিরঞ্জনকারীদের সাথে উঠাবসা এবং তাদের কথা শুনা থেকে বিরত থাকতে আদেশ দিয়েছেন। এমনকি এদের নেতাদেরকে প্রকাশ্যে অভিসম্পাত দিয়েছেন। আহলে বাইত (আ.)-এর ইমাম (আ.)-রা স্বীয় অনুসারীদেরকে তাঁদের সম্পর্কে বাড়াবাড়ি ধারণা পোষণ করা, অতিরঞ্জিত কথা বলা এবং তাঁদেরকে স্রষ্টা ও প্রভুর পর্যায়ে নিয়ে যেতে নিষেধ করেছেন। এ বিষয়ে শিয়া হাদিস গ্রন্থে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.) বলেছেন:

আমার ক্ষেত্রে দুই শ্রেণী ধ্বংস হবে, অথচ এর জন্য আমি দায়ী নই। যে বন্ধু আমার ব্যাপারে অতিরঞ্জন করে এবং যে শত্রু আমার সম্পর্কে অন্যায় কথা বলে (আমার প্রকৃত মর্যাদাকে অস্বীকার করে) যারা আমার সম্পর্কে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে এবং আমাকে আমার সীমানার ঊর্ধ্বে নিয়ে যায়। আমি তাদের থেকে আল্লাহর নিকট বিচ্ছেদ ঘোষণা করছি। যেমনভাবে মারিয়ামের সন্তান ঈসা (আ.) খ্রিষ্টানদের থেকে বিচ্ছেদ ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:

 "এবং যখন আল্লাহ বলবেন, ‘হে মারইয়ামের সন্তান, ঈসা! তুমিই কি মানুষকে এ কথা বলেছিলে যে, আল্লাহকে ছেড়ে আমাকে ও আমার মাতাকে দুই উপাস্য হিসেবে গ্রহণ কর?’ সে (ঈসা) বলবে, ‘তোমার সত্তা (সকল ত্রুটি থেকে মুক্ত ও) পবিত্র, আমার জন্য সঙ্গত নয় যে, আমি এমন কথা বলব যার কোন অধিকার আমার নেই। আমি যদি তা বলে থাকি, নিঃসন্দেহে তুমি তা জ্ঞাত; (কেননা,) আমার অন্তরে যা আছে তুমি তা অবগত, অথচ তোমার সত্তায় যা আছে সে সম্পর্কে আমি অবগত নই; নিশ্চয় তুমি অদৃশ্যের বিষয়সমূহ সম্পর্কে সম্যক অবহিত। তুমি আমাকে যে আদেশ দিয়েছ তা ভিন্ন আমি তাদের কিছুই বলিনি, (আর তা হল) আল্লাহরই উপাসনা কর যিনি আমার ও তোমাদের প্রতিপালক। এবং আমি যতদিন তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন তাদের (কর্মের) ওপর সাক্ষী ছিলাম। অতঃপর যখন তুমি আমাকে পূর্ণরূপে গ্রহণ করলে, (তারপর) তুমিই তাদের ওপর পর্যবেক্ষক ছিলে; এবং তুমি সকল বিষয়ের ওপর সাক্ষী।”৪

অতঃপর ইমাম আলী (আ.) বলেছেন: ‘যদি কেউ রাসূলদেরকে প্রতিপালক মনে করে ও (রাসূলের স্থলাভিষিক্ত) ইমামদেরকে প্রতিপালক অথবা নবী মনে করে এবং (আল্লাহর মনোনীত) ইমাম ছাড়া অন্যদেরকে ইমাম মনে করে তাহলে দুনিয়াতে ও আখেরাতে তাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নাই।’ ৫

সাঈদ বিন তারীফ, আসবাক বিন নাবাতাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমি অতিরঞ্জনকারীদের (নুসাইরী) প্রতি অসন্তুষ্ট, যেভাবে মারিয়ামের সন্তান ঈসা (আ.) খ্রিষ্টানদের প্রতি অসস্তুষ্ট ছিলেন। হে আল্লাহ! তাদেরকে সব সময় অপমানিত ও লাঞ্ছিত কর; তাদের কাউকে কোন সাহায্য করো না। ৬

ফুদাইল ইবনে উসমান বলেন: ‘ইমাম সাদিক (আ.) থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন: ‘আল্লাহকে ভয় কর  এবং মর্যাদা সহকারে তাঁকে স্মরণ কর। আল্লাহর রাসূল (আ.)-কে সম্মান কর। কাউকে আল্লাহর রাসূল (আ.) থেকে অধিক মর্যাদা দিও না; কেননা আল্লাহ তায়ালা তাঁকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। রাসূল (আ.)-এর আহলে বাইত (আ.)-কে ভারসাম্যতার সাথে ভালবাস। তাদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং মতভেদ সৃষ্টি করো না। আমরা যা কিছু বলি নাই, তা মুখে এনো না; কারণ যদি তোমরা কিছু বলে থাক যা আমরা বলি নাই, এর পর আমরা ও তোমরা মৃত্যু বরণ করবো, এরপর আল্লাহ আমাদেরকে ও তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন, তখন আমারা এমন স্থানে থাকবো যেখানে আল্লাহ চান এবং তোমরা এমন স্থানে থাকবে যেখানে আল্লাহ চান। ৭

শেইখ তূসীর ‘আমালী’ গ্রন্থে ফুদাইল বিন ইয়াসার থেকে বর্ণিত হয়েছে:

"ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন: ‘অতিরঞ্জনকারীদের থেকে তোমাদের যুবকদেরকে সাবধানে রেখ যেন তাদেরকে ফিতনা-ফেসাদের দিকে না নিয়ে যায়; কারণ অতিরঞ্জনকারীরা আল্লাহর সবচেয়ে নিকৃষ্ট সৃষ্টি। তারা আল্লাহকে হীন মনে করে এবং তাঁর বান্দাদের স্রষ্টা হওয়ার মিথ্যা দাবি করে। আল্লাহর কসম! অতিরঞ্জনকারীরা ইহুদী, খ্রিষ্টান, অগ্নি-উপাসক এবং মুশরিকদের থেকেও জঘন্য।

তখন ইমাম (আ.) বলেছেন: ‘যদি কোন অতিরঞ্জনকারী আমাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করে, তাদের গ্রহণ করবো না; তবে যদি কোন ব্যক্তি অজ্ঞাতভাবে আমাদের অধিকার খর্ব করে এবং পরে আমাদের কাছে ফিরে আসে তাহলে তাদেরকে গ্রহণ করা হবে।’

ইমাম (আ.)-কে প্রশ্ন করা হয়েছে, ‘কেন? হে রাসূলের সন্তান।’

ইমাম (আ.) জবাবে বলেছেন, ‘কারণ অতিরঞ্জনকারীরা নামাজ, যাকাত, রোজা, হজ্ব ত্যাগ করাকে অভ্যাসে পরিণত করেছে। তারা অভ্যাস ত্যাগ করতে এবং আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করতে পারবে না; কিন্তু অজ্ঞাত ব্যক্তি যেহেতু না জেনে (আমাদের সম্পর্কে) ভুল (ধারণা) করে থাকে সেহেতু যখন তারা জানতে পারে যে তার কাজটি ভুল ছিল, তখন সে ফিরে এসে সত্যের ওপর আমল এবং আমাদের আনুগত্য করবে।” ৮

"আবদুর-রাহমান বিন কাছির বলেন:

ইমাম জাফর সাদিক (আ.) একদিন দীর্ঘ এক বক্তব্যে বলেছেন: ‘আল্লাহর কসম! আমরা আল্লাহর বান্দা ছাড়া আর কিছু নই; যাদেরকে আল্লাহ সৃষ্টি এবং মনোনীত করেছেন। আমরা (আল্লাহর অনুমতি ব্যতিত) নিজের কোন কল্যাণ ও ক্ষতির সামর্থ্য রাখি না। যদি আমাদেরকে রহমত করা হয়, তাহলে তা আল্লাহর রহমতের কারণে। যদি আমাদের শাস্তি দান করতে চান, তাহলে তা আমাদের গুনাহের কারণেই করবেন। আল্লাহর কসম! আমরা আল্লাহর উপর কোন কর্তৃত্ব রাখি না। আমরা আল্লাহর (হিসাব-নিকাশ) থেকে মুক্ত নই; আমরাও মৃত্যু বরণ করবো, আমাদেরকে দাফন করা হবে এবং পুনরুত্থিত হব...(এভাবে বর্ণনা করতে থাকলেন এবং এখানে পৌঁছালেন) বললেন, ‘অতিরঞ্জনকারীদের প্রতি ধিক্কার, তাদের কি হয়েছে? তাদের প্রতি আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক। প্রকৃতপক্ষে এরা আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করে এবং রাসূল (সা.)-কে তাঁর কবরে কষ্ট দেয়। মুমিনদের নেতা আলী (আ.), ফাতিমা যাহরা (আ.), ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.), আলী ইবনুল হুসাইন (আল্লাহর দরুদ তাদের ওপর বর্ষিত হোক) এবং  মুহাম্মাদ বিন আলী (আ.) -কে কষ্ট দেয়। এখন আমি (ইমাম সাদিক) যার মাংস ও চামড়া আল্লাহর রাসূল (সা.) থেকে, ভয় ও কম্পমান অবস্থায় বিছানায় ঘুমাতে যাই...’ অতঃপর বললেন, ‘আল্লাহর কসম! যদি তাদেরকে আমাদের মাধ্যমে পরিক্ষা করা হত এবং তাদেরকে আমরা কোন বিষয়ে বাড়াবাড়ি করতে আদেশ করতাম তাহলেও তা গ্রহণ না করা তাদের ওপর আবশ্যক হত। তারা আমাদেরকে আল্লাহর ভয়ে ভীত ও কম্পিত অবস্থায় দেখেও কিভাবে ধারণা করে যে আমারা তাদেরকে আল্লাহর শত্রুতার দিকে আহবান করবো এবং তাদেরকে আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দিব। তোমাদেরকে সাক্ষ্য রেখে বলছি, আমি রাসূল (সা.)-এর বংশের সন্তান এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে শর্তহীন জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির ঘোষণা আমার সাথে নাই। যদি তাঁর অনুসরণ করি তাহলে মুক্তি পাব; আর যদি তাঁর আদেশ অমান্য করি তাহলে আমাকে শাস্তি দেওয়া হবে...”৯

"মুসআদা বিন সাদাকা বলেন: ‘ইমাম জাফর সাদিক (আ.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন; তিনি রাসূল (সা.) থেকে শুনেছেন, ‘দুই শ্রেণী আমার শাফায়াত লাভ করবে না। অত্যাচারি শাসক এবং ধর্মে অতিরঞ্জনকারী ব্যক্তি যে তার বাড়াবাড়ি করা ত্যাগ করে নি। ১০

মুফাদ্দাল বিন মাযিদ বলেন: (ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর নিকট অতিরঞ্জনকারী গোষ্ঠী (নুসাইরী) এবং তাদেও নেতা আবুল  খাত্তাব সম্পর্কে অলোচনা উঠলে) তিনি আমাকে বললেন: ‘তাদের সাথে উঠা-বসা করো না, খাওয়া-দাওয়া করো না, কোন কিছু পান করো না, হাত মিলিয়ো না।’ ১১

প্রাগুক্তভাবে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) অতিরঞ্জনকারীদের উদ্দেশ্য করেছেন: ‘আল্লাহর নিকট তওবা করো, তোমরা ফাসিক, কাফের ও মুশরিক।’১২

হুসাইন বিন খালেদ, ইমাম রেজা (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন: ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে সৃষ্টির সদৃশ বলে বিশ্বাস করবে এবং মানুষকে কর্মের ক্ষেত্রে বাধ্য অথবা (র্আরাহর ইচ্ছা থেকে) সম্পূর্ণ স্বাধীন বিশ্বাস করবে, সে কাফির ও মুশরিক। আমরা তার থেকে দুনিয়া ও আখেরাতে সন্তুষ্ট নই। হে খালেদের সন্তান! অতিরঞ্জনকারীরা আল্লাহর মর্যাদাকে খাট করে। তারা আমাদের কথার উদ্ধৃতি দিয়ে আল্লাহকে সৃষ্টির সাদৃশ্য করে এবং মানুষ কর্মের ক্ষেত্রে বাধ্য হওয়ার বিষয়ে আমাদের নামে হাদিস জাল করে। যারা তাদেরকে ভালবাসে তারা আমাদের ঘৃণা করে। যারা তাদেরকে ঘৃণা করে তারা আমাদেরকে ভালবাসে। যারা তাদের বন্ধু তারা আমাদের শত্রু। যারা তাদের সাথে শত্রুতা করলো তারা আমাদের বন্ধু। যারা তাদের সাথে যোগ দিয়েছে তারা আমাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলো। যারা তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলো তারা আমাদের সাথে যোগ দিয়েছে। যারা তাদের প্রতি নির্দয় হল তারা আমাদেরকে দয়া করল। যারা তাদের প্রতি দয়া দেখালো তারা আমাদের প্রতি নির্দয় হল। যারা তাদেরকে সম্মান দেখালো তারা আমাদেরকে অপমানিত করলো। যারা তাদেরকে অপমানিত করলো তারা আমাদেরকে সম্মান করলো। যারা তাদেরকে গ্রহণ করে তারা আমাদেরকে বর্জন করলো। যারা তাদেরকে বর্জন করে তারা আমাদের গ্রহণ করলো। যারা তাদের জন্য কোন কল্যাণ করলো তারা আমাদের অকল্যাণ করলো। যারা তাদের অকল্যাণ করলো তারা আমাদের কল্যাণ করলো। যারা তাদের সত্যায়ণ করলো তারা আমাদেরকে মিথ্যবাদী প্রমাণ করলো। যারা তাদেরকে মিথ্যাবাদী মনে করলো তারা আমাদেরকে সত্যায়ণ করলো। যারা তাদেরকে ক্ষমা করে দিল তারা আমাদেরকে বঞ্চিত করলো। যারা তাদেরকে বঞ্চিত করলো তারা আমাদেরকে ক্ষমা করলো। হে খালেদের সন্তান! আমাদের অনুসারিরা তাদেরকে বন্ধু ও সহযোগী হিসেবে নির্বাচন করবে না। ১৩

হুসাইন বিন খালিদ সাইরুফী বলেন:

ইমাম রেজা বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মৃত্যুর পর আত্মার দেহ পরিবর্তন অর্থাৎ পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে সে কাফির। অতঃপর তিনি বললেন, আল্লাহ তায়ালা বাড়াবাড়ি কারীদের (নুসাইরী) ওপর লানত বর্ষণ করুক। তারা হল ইহুদী, অগ্নি-উপাসক, খ্রিষ্টান, কাদারিয়া (মানুষ ভাগ্যের ক্ষেত্রে আল্লাহর ইচ্ছা থেকে স্বাধীন হওয়ায় বিশ্বাসী), মুরজেয়া (মানুষের আখেরাতের মুক্তির জন্য ঈমানই যথেষ্ট, সৎকর্ম ও আমলের কোন প্রয়োজন নেই বলে বিশ্বাসী সম্প্রদায়) , হারুরিয়া (খারেজী সম্প্রদায়ের শাখা)

অতঃপর ইমাম (আ.) বললেন, ‘তাদের সাথে উঠাবসা ও বন্ধুত্ব করো না, তাদের থেকে সন্তুষ্ট থেকো না; কারণ আল্লাহ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট। ১৪

আবু হাশেম জাফরী বলেন, ইমাম রেজা (আ.) থেকে অতিরঞ্জনকারীদের (নুসাইরী) এবং যারা বিশ্বাস করে আল্লাহ মানুষকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন মুফাওয়াদা), তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। ইমাম (আ.) উত্তরে বললেন, ‘অতিরঞ্জনকারীরা কাফের এবং মুফাওয়াদারা মুশরিক। যারা তাদের সাথে উঠাবসা করবে অথবা খাওয়া-দাওয়া ও পানাহার করবে অথবা তাদের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক সৃষ্টি করে, অর্থাৎ তাদের কোন মেয়েকে বিবাহ করে এবং তাদেরকে নিজেদের কোন মেয়ে বিবাহ দেয় অথবা তাদের কাউকে আশ্রয় দেয় অথবা আমানতের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত মনে করে অথবা তাদের কথা বিশ্বাস করে অথবা কোন কিছু বলার মাধ্যমে তাদের সমর্থন করে, তারা আল্লাহ তায়ালা, রাসূল (সা.) এবং আহলে বাইত (আ.)-এর বেলায়াত (কর্র্তৃত্ব) বহির্ভূত হয়েছে। ১৫

আলী ইবনে সালিম তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন, ‘সর্বনিম্ন যে কারণে কোন ব্যক্তির ঈমান বাতিল হয় তা হল সে যদি কোন অতিরঞ্জনকারীদের সাথে বসে এবং তার কথা শুনে এবং তা বিশ্বাস করে। আমার পিতা তার পিতা (আমার দাদা) থেকে এবং (আমার দাদা) তার দাদা আলী (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে দুই শ্রেণী ইসলাম থেকে লাভবান হবে না; একটি অতিরঞ্জনকারীরা অপরটি যারা ভাগ্যকে আল্লাহ কর্তৃক মানুষের হাতে সমর্পিত হওয়াতে বিশ্বাসী ক্বাদারিয়া সম্প্রদায়। ১৬

১. লিসানুল আরাব, ইবনে মানজুর, ১০ম খ-, পৃ. ১১২।

২. আল-মুফরাদাতু ফী গারীবিল কোরআন, রাগিব আলইসফাহানী, পৃ. ৩৬৪।

৩. আত-তাহরীর ওয়াত তানভীর, ইবনে আশুর তুনেসী, ৪র্থ খ-, পৃ. ৩৩০।

৪. সূরা মায়েদাহ, আয়াত ১১৬-১১৭।

৫. উয়ুনু আখবারির রিদা (আ.), শেইখ সাদুক, ২য় খ-, পৃ. ২১৭।

৬. তারতীবুল-আমালী, মুহাম্মাদ জাওয়াদ মাহমুদী, ৩য় খ-, পৃ. ৫৮; আমালী, শেইখ তূসী, ৩৩তম অধ্যায়, ১২নং হাদিস।

৭. কুরবুল ইসনাদ, আবদুল্লাহ ইবনে জাফর হামিরী, পৃ. ১২৯।

৮. তারতীবুল-আমালী, মুহাম্মাদ জাওয়াদ মাহমুদী, ৩য় খ-, পৃ. ৫৭; আমালী তূসী, শেইখ তূসী, ৩৩তম অধ্যায়, ১২নং হাদিস।

৯. ইখতিয়ারু মারিফাতির রিজাল, শেইখ তূসী, পৃ. ২২৫-২২৬।

১০. কোরবুল ইসনাদ, পৃ. ৪।

১১. ইখতিয়ারু মারিফাতির রিজাল, শেইখ তূসী, পৃ. ২৯৭।

 ১২. প্রাগুক্ত

 ১৩. উয়ুনু আখবারির রেদা (আ.), শেইখ সাদুক, ১ম খ-, পৃ. ১৩০।

 ১৪. প্রাগুক্ত, ২য় খ-, পৃ. ২১৮।

 ১৫. উয়ুনু আখবারুর রেদা (আ.), শেইখ সাদুক, ২য় খ-, পৃ. ২১৯।

 ১৬. খিসাল, শেইখ সাদুক, ১ম খ-, পৃ. ৭২।

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: