bayyinaat

Published time: 23 ,November ,2018      20:41:36
আবু হুরাইরার প্রকৃত পরিচয়
আবু হুরাইরার প্রকৃত পরিচয় সারাংশ: হযরত আলী আবু হুরায়রার ব্যাপারে বলেন: রাসূলের ওপর আবু হুরাইরার থেকে বড় কোন মিথ্যারোপকারী নেই। আবু হুরায়রার সত্যবাদিতার বিষয়ে হযরত আয়েশাও বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তুলেছেন।
সংবাদ: 130

আবু হুরাইরার প্রকৃত পরিচয়

আবুল কাসেম আনোয়ার                  হযরত আলী আবু হুরায়রার ব্যাপারে বলেন: রাসূলের ওপর আবু হুরায়রার থেকে বড় কোন মিথ্যারোপকারী নেই।(আল্লামাহ আবু রাইয়া, শায়খুল মুযিরা, পৃ.৫৯)

সারাংশ: হযরত আলী আবু হুরায়রার ব্যাপারে বলেন: রাসূলের ওপর আবু হুরাইরার থেকে বড় কোন মিথ্যারোপকারী নেই আবু হুরায়রার সত্যবাদিতার বিষয়ে হযরত আয়েশাও বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তুলেছেন

ট্যাগ: আবু হুরাইরা, শায়খুল মুদ্বিরা বা মুযিরা, হাদিস জাল ও ইসরাইলী রেওয়ায়াত

মূল প্রবন্ধ: আবু হুরাইরার প্রকৃত নাম কি- এ বিষয়ে ত্রিশটি ভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। কোন কোন বর্ণনা মতে তার নাম আবদুর রহমান ইবনে ছাখর। সে বিড়াল নিয়ে খেলা করত বলে তাকে আবু হুরাইরা নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। সে শায়খুল মুদ্বিরা বা মুযিরা (যে বৃদ্ধ সিরিয়ায় প্রস্তুতকৃত গোশতের তৈরী খবার খুবই পছন্দ করে) নামেও প্রসিদ্ধ। (আল্লামাহ আবু রাইয়া, আল আযওয়া আলা সুন্নাতিল মুহাম্মদিয়া, পৃ.১৯৭) সে খায়বারের যুদ্ধের সময় ৭ম হিজরিতে রাসূলের মৃত্যুর তিন বছর পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করে কিন্তু ৮ম হিজরির যিলকদ মাসে রাসূল সা. তাকে বাহরাইনে পাঠিয়ে দেন (আল্লামাহ আবু রাইয়া, শায়খুল মুযিরা, পৃ.৫৯) ফলে সে মাত্র এক বছর নয় মাস রাসূলের (সা.) সান্নিধ্য পেয়েছিল অথচ তার থেকে ৫৩৭৪টি হাদিস বর্ণিত হয়েছে যা তার রাসূলের সান্নিধ্যের সময়কালের সাথে কখনই সামঞ্জস্যশীল নয়।

আবু হুরায়রা খুবই দরিদ্র ছিল ও অলসতার কারণে কোন কাজও করত না সে বিভিন্ন সাহাবার দরজায় ধর্না দিয়ে কোরআন পাঠ করত যাতে তাকে তারা এর বিনিময়ে খাবার দেয় আবু হুরাইরা স্বয়ং বর্ণনা করে বলেছেন : আমার মুহাজির ভাইরা বাজারসমূহে লেনদেনের কাজে ব্যস্ত থাকতেন এবং আনসার ভাইরা তাদের খেজুর বাগানে কর্মরত থাকতেন। আর আমি রাসূলের (সা.) দরিদ্র এক সাহাবী ছিলাম কিন্তু আমার উদর পূর্ণ ছিল। (সহীহ বুখারী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৫, বাবু হিফজিল ইলম, হাদীস নং ১১৮ এবং ২য় খণ্ড, পৃ. ৮২৭, মা জায়া ফিল গারস, হাদীস নং ২২২৩, আবু হুরাইরা সূত্রে, সহীহ মুসলিম, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৯৩৯, বাবু ফাজাইলে আবু হুরাইরা, হাদীস নং ২৪৯২; মুসনাদে আহমাদ, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৪০, হাদীস নং ৭২৭৩।)

রাসূলের সময়ে সে একদিন ইফতারের জন্য উমরের দ্বারে উপনীত হয় কিন্তু তিনি তার তেলাওয়াত শুনেও তাকে কিছু দিলেন না (ইবনে হাজার আসকালানী, ফাতহুল বারি, ৭ম খণ্ড, পৃ.৬১) সে নিজেই বর্ণনা করেছে যে, সে প্রায়ই বিভিন্ন জনের কাছে কোরআনের ব্যাপারে প্রশ্ন করত যাতে তারা তাকে খেতে দেয় (ফাতহুল বারি, ৭ম খণ্ড, পৃ.৬১) সে স্বীকার করেছে যে, সে পেটের দায়ে রাসূলের সঙ্গী হয়েছে(ফাতহুল বারি, ১৩তম খণ্ড, পৃ.২৭১-২৭২)

২১ হিজরিতে খলিফা উমর তাকে বাহরাইনের গভর্নর নিযুক্ত করেন কিন্তু বায়তুল মাল থেকে চুরির অপরাধে তিনি তাকে পদচ্যুত করেন (আলআযওয়া আলাস সুন্নাতিন নাবাভিয়া, পৃ. ২১৭) তার হাতে যে বার হাজার দিরহাম ছিল তা সে লোকদের থেকে উপহার পেয়েছে বলে দাবি করে (বালাজুরি, আনসাবুল আশরাফ,১০তম খণ্ড, পৃ. ৩৬৮) খলিফা উসমান ও মুয়াবিয়ার শাসনামলে তার অবস্থা রমরমা হয় এসময়েই সে হাদিস জাল ও ইসরাইলীদের (তওরাত) থেকে (বিকৃত) হাদিস বর্ণনা শুরু করে (আল্লামাহ আবু রাইয়া, আল আযওয়া আলা সুন্নাতিল মুহাম্মদিয়া, পৃ.২০৯) খলিফা উসমমানের ফজিলত বর্ণনায় অসংখ্য হাদিস সে তৈরী করে সে প্রচণ্ডভাবে ইহুদি পণ্ডিত কাবুল আহবারের ভক্ত ছিল ও তার থেকে বর্ণনা করত কাবুল আহবারও তার ভূয়সী প্রশংসা করত সে বলত : আমি আবু হুরায়রার থেকে তওরাতের ওপর পণ্ডিত কোন ব্যক্তিকে দেখিনি (যাহাবি, তাযকিরাতুল হুফফায, ১ম খণ্ড, পৃ.৩৬) মুয়াবিয়া তাকে মদিনার গভর্ণর নিযুক্ত করে ও তার জন্য মদিনায় একটি আকিক পাথরের প্রাসাদ নির্মাণের নির্দেশ দেয় (মিশরীয় গবেষক আহমাদ আমিন ও রাশিদ রেজা দ্বিতীয় খলিফা উমরের হত্যার পেছনে কাবুল আহবারের হাত ছিল বলে মনে করেন দ্রষ্টব্য: ফাজরুল ইসলাম, পৃ.১৬১; অথচ মুয়াবিয়া সিরিয়ায় তাকে তওরাত থেকে বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা ও প্রচার করার নির্দেশ দেয় (ইবনে হাজার আসকালানী, আলইছাবাহ, ৫ম খণ্ড, পৃ.৩২৩)

হযরত আলী আবু হুরায়রার ব্যাপারে বলেন: রাসূলের ওপর আবু হুরায়রার থেকে বড় কোন মিথ্যারোপকারী নেই(আল্লামাহ আবু রাইয়া, শায়খুল মুযিরা, পৃ.৫৯) আবু হুরায়রার সত্যবাদিতার বিষয়ে হযরত আয়েশাও বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তুলেছেন(দ্রষ্টব্য: সহীহ মুসলিম, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ২৯৮, হাদিস ২৪৯৩; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, হাফিয ইবনে কাছির, গবেষণা: আবদুল্লাহ তারাকি, ১১তম খণ্ড, পৃ.৩৭৩; মুসনাদে আহমাদ, ৪১তম খণ্ড, পৃ.৩৫৮)

আবু হুরাইরা হযরত আলীর ঘোর শত্রু ছিল। সে মুয়াবিয়া থেকে অর্থ গ্রহণ করত ও হযরত আলীর বিরুদ্ধে হাদিস জাল করত। (ইবনে হাজার আসকালানী, আলইছাবাহ ফি তামিযিছ ছাহাবাহ, গবেষণা: আদেল আহমাদ আবদুল মাওজুদ ও আলী মুহাম্মাদ মুওয়াভভেয, বৈরুত, দারুল কুতুব আল ইলমিয়াহ, ১৪১৫হিজরি, ১ম প্রকাশ, ১ম খন্ড, পৃ. ৭৬; ইবনু আবদিল বার, আলইসতিয়াব, গবেষণা, মুহাম্মাদ আলী বাজাভি, বৈরুত, দারুল জিল, ১ম প্রকাশ, ২য় খণ্ড, পৃ.১৫০; ইবনে আছির, উসদুল গাবাহ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৮৩) মৃত্যু পর্যন্ত সে হাদিস জালকে পেশা হিসাবে অব্যাহত রাখে (ইবনে হাজার আসকালানী, আলইছাবাহ ফি তামিযিছ ছাহাবাহ, ১ম খন্ড, পৃ.৮৮) সে অনবরত রাসূল থেকে হাদীস বর্ণনা করত (ইবনে হাজার, প্রাগুক্ত, ৫ম খণ্ড, পৃ.৫২৪) কারো কারো মতে আবু হুরারয়রা রাসূল থেকে সরাসরি কোন হাদিসশোনেনি, সে সাধারণত অপ্রসিদ্ধ সাহাবাদের থেকে হাদিস শুনে বর্ণনা করেছে (ইবনে হাজার আসকালানী, আলইছাবাহ, ১ম খণ্ড, পৃ.৬৬ ও ৭০) মুয়াবিয়ার শানে সে অনেক হাদিস জাল করেছে। (আল্লামাহ আবু রাইয়া, আল আযওয়া আলাস সুন্নাতিল মুহাম্মাদিয়া, পৃ.১৯৪ ও ২২০)

 

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: