bayyinaat

Published time: 02 ,December ,2018      08:54:52
দুই নাস্তিকের সাথে ইমাম জাফর সাদিকের (আ.) বিতর্ক
দুই নাস্তিকের সাথে ইমাম জাফর সাদিকের (আ.) বিতর্ক সংকলন ও সম্পাদনা: আবুল কাসেম সারাংশ: মহান আল্লাহর এমন বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী আছে তিনি ছাড়া অন্য কেউ যার যোগ্য নয় এবং তিনি ব্যতীত অন্য কেউ ঐ বৈশিষ্ট্যে তাঁর শরিক নয় এবং তিনি ছাড়া অন্য কেউ তার উপর আয়ত্ত রাখে না এবং তিনি ছাড়া অন্য কেউ জানে না যে তার প্রকৃতি ও ধরন কিরূপ।
সংবাদ: 144

দুই নাস্তিকের সাথে ইমাম জাফর সাদিকের (.) বিতর্ক

সংকলন সম্পাদনা: আবুল কাসেম                              আমরা এখানে দুই নাস্তিকের সাথে ইমাম জাফর সাদিকের (আ.) বিতর্ক ও কথোপকথনের ঘটনা তুলে ধরব।

সারাংশ: মহান আল্লাহর এমন বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী আছে তিনি ছাড়া অন্য কেউ যার যোগ্য নয় এবং তিনি ব্যতীত অন্য কেউ ঐ বৈশিষ্ট্যে তাঁর শরিক নয় এবং তিনি ছাড়া অন্য কেউ তার উপর আয়ত্ত রাখে না এবং তিনি ছাড়া অন্য  কেউ জানে না যে তার প্রকৃতি ও ধরন কিরূপ

ট্যাগ: ইমাম জাফর সাদিক, নাস্তিক, আখেরাত ও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, দুনিয়ার অস্থায়ী সুখ ও কষ্ট, আখেরাতের স্থায়ী সুখ ও কষ্ট

মূল প্রবন্ধ: আমরা এখানে দুই নাস্তিকের সাথে ইমাম জাফর সাদিকের (.) বিতর্ক ও কথোপকথনের ঘটনা তুলে ধরব।

১. এক নাস্তিক ইমাম সাদিকের (আ.) কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করে আল্লাহ্ সম্পর্কে জানতে চাইলো

ইমাম: তিনি এক অস্তিত্ব যা অন্য সব অস্তিত্বের বিপরীত। আমার কথায় আমি এটাই বোঝাতে চাচ্ছি যে, তিনি অস্তিত্বমান যেমনি অন্যান্য সমস্ত কিছু অস্তিত্বমান (প্রকৃতপক্ষে তিনি এমনই এক অস্তিত্ব) কিন্তু না  তাঁর কোন শরীর আছে, না কোন আকৃতি, না তাকে দেখা যায়, না স্পর্শ করা যায়, না আমাদের পঞ্চইন্দ্রিয় দিয়ে তাকে অনুভব করা যায়, না কোন চিন্তা বা কল্পনা তাকে উপলব্ধি করতে পারে, না কোন ধ্বংস বা শেষ বলে তাঁর মধ্যে কিছু আছে যা তাঁর অস্তিত্বের ক্ষেত্রে কোন প্রকার ত্রুটি বলে গণ্য হতে পারে, না সময় তার পরিবর্তনের সাথে সাথে তাঁর কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

নাস্তিক: আপনি কী বলেন, তিনি কী শুনতে ও দেখতে পান?

ইমাম: তিনি শুনতে ও দেখতে পান। কিন্তু তাঁর শুনতে ও দেখতে পাওয়া  দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে অর্থাৎ কান ও চোখের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় না। বরং তিনি তাঁর অস্তিত্বের মাধ্যমে শুনতে ও দেখতে পান। আমি যখন বলছি তিনি তাঁর সত্তার মাধ্যমে শুনতে ও দেখতে পান এর অর্থ এমনটি নয় যে, তিনি আলাদা কিছু ও তার সত্তা আলাদা কিছু। শুধুমাত্র এটা তোমার বোঝার জন্য বলেছি। বরং এটাই বলতে চাই যে, তিনি তার সম্পূর্ণ সত্তা দিয়ে শুনতে ও  দেখতে পান। তাঁর সম্পূর্ণ সত্তার অর্থ এই নয় যে তাঁর অস্তিত্ব বিভিন্ন অংশে বিভক্ত বরং সম্পূর্ণ সত্তা বলে আমি কেবল তোমাকে বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছিআর আমার উদ্দেশ্য এটা ছাড়া অন্য কিছুই নয় যে, তিনি তাঁর সত্তার বা গুণাবলীর মধ্যে কোন প্রকার পরিবর্তন ব্যতিরেকেই শুনতে ও দেখতে পান। তিনি মহাজ্ঞানী ও সকল বিষয়ে অবহিত আছেন।

নাস্তিক: তাহলে তিনি কে?

ইমাম: তিনি হচ্ছেন «رَبْ» (প্রভূ),  «مَعْبُودْ» (উপাস্য) ও «الله» (আল্লাহ্); আর এই নামগুলোতে ব্যবহারিত অক্ষরের প্রতি দৃষ্টি রেখে আমি কথা বলছি না বরং আমার দৃষ্টি ঐ অর্থ বা অস্তিত্বের প্রতি যে তিনি সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং ঐ অক্ষরগুলো ঐ অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করছে। আর তাই আমি এই অক্ষরগুলোকে ঐ উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করেছি যে, এগুলো ঐ অর্থ প্রকাশ করে যা «الله», ,«رحيم» «رحمن» و «عزيز»  বা অন্যান্য নামের মধ্যেও পরিলক্ষিত হয়। আর তিনি এমনই সৃষ্টিকর্তা যিনি মহাপরাক্রমশালী ও মহিমান্বিত।

নাস্তিক: যা কিছুই আমাদের চিন্তায় আসে তা সৃষ্টি বৈ কিছু নয়।

ইমাম: যদি তাই হয় তবে আমাদের থেকে তাওহীদের (একত্ববাদের পরিচয় লাভের) দায়িত্ব তুলে নেয়া হয়েছে। কারণ যা কিছু আমাদের চিন্তায় আসে না সে বিষয়ে আমাদের দায়িত্ব নেই। কিন্তু আমরা বলি যা কিছু ইন্দ্রিয়সমূহের মাধ্যমে আমাদের চিন্তা ও কল্পনায় আসে এবং এর মাধ্যমে অনুধাবিত হয় ও ইন্দ্রিয়সমূহ তাকে সীমাবদ্ধ করে এবং তার প্রতিরূপ সৃষ্টি করে তাই সৃষ্ট। (সুতরাং সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণে অবশ্যই তাকে দু’টি অসঙ্গত বিষয় থেকে আলাদা জানবো প্রথমতঃ) যা কিছুই আমাদের ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে আমাদের চিন্তায় আসে না তাকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করার পরিণতি হলো তাকে প্রত্যাখ্যান ও অনস্তিত্ব মনে করা। দ্বিতীয়তঃ তাঁকে কোন কিছুর সদৃশভাবা ও তার উপমা দেয়া। কারণ সদৃশ ও উপমা থাকা২ সৃষ্ট বস্তুর বৈশিষ্ট্য যার গঠনশৈলী প্রকাশিত (অর্থাৎ যে অংশগুলোর সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়েছে তা দেখেই তা সৃষ্ট বলে বোঝা যায়)। অতএব, সকল সৃষ্ট বস্তুর স্রষ্টা থাকা প্রয়োজন তাদের নির্ভরশীলতার কারণে এবং তাদের সৃষ্টিকর্তা তারা ভিন্ন অন্য কেউ হবে যার অস্তিত্ব তাদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে অর্থাৎ কখনই তাদের মত হবে না। কিন্তু সৃষ্ট বস্তুর সদৃশ, গঠন ও উপাদানগত ভাবে তাদের মতই হবে। যেমন পূর্বে অস্তিত্বমান ছিল না, পরে অস্তিত্বমান হয়েছে, ক্ষুদ্র থেকে বড় হওয়া, অন্ধকার থেকে আলোয় আসা, শক্তিমান থেকে শক্তিহীনে পরিণত হয়। এর বেশী কিছু বর্ণনার প্রয়োজন নেই।

নাস্তিক: যখন আল্লাহর অস্তিত্বকে প্রমাণ করছেন প্রকৃতপক্ষে তাকে কোন এক সীমারেখার আওতায় আনলেন।

ইমাম: না কখনই তা নয়, তাকে সীমারেখার আওতায় আনি নি, বরং শুধুমাত্র তাঁর অস্তিত্বকে প্রমাণ করেছি অর্থাৎ তিনি যে আছেন তা প্রমাণ করেছি। আর অস্বীকার ও প্রমাণ করার মধ্যে অন্য কোন স্তর নেই।

নাস্তিক: তাঁর কি অস্তিত্ব আছে?

ইমাম: অবশ্যই, কোন কিছুই অস্তিত্ব বা সত্তা ছাড়া প্রমাণিত হয় না।

নাস্তিক: তাঁর কি প্রকৃতি ও ধরন আছে?

ইমাম: না। কেননা কোন কিছুর প্রকৃতি ও ধরণ তার বেষ্টিত অবস্থা ও বিশেষণের (সত্তা বহির্ভূত বৈশিষ্ট্যের) উপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে। কোন কিছুর উপর পূর্ণ জ্ঞান থাকলে তার প্রকৃতি ও ধরনকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়। কিন্তু আল্লাহ্ তা’য়ালার অস্তিত্বকে প্রমাণ করতে অবশ্যই এ দুটি পথ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে প্রথমটি (تَعْطِيلْ) (তাকে অস্বীকার ও অনস্তিত্ব মনে করা) এবং  দ্বিতীয়টি  (تَشْبِيه)অর্থাৎ তুলনা করা (তাকে অন্য বস্তুর সাথে তুলনা করা)। কেননা যারা তাকে অস্তিত্বের ঊর্ধ্বে জ্ঞান করলো প্রকৃতপক্ষে তারা তাঁকে অস্বীকার করলো ও তাঁর প্রতিপালক হওয়াকে প্রত্যাখ্যান করলো এবং তাঁকে অকার্যকর গণ্য করলো। আর যারাই তাকে অন্য কিছুর সাথে তুলনা করলো তারাই তাকে সৃষ্ট বস্তুর- যারা প্রতিপালক হওয়ার যোগ্যতা রাখে না- সাথে তুলনা করলো। সুতরাং অবশ্যই বলতে হয় তাঁর এমন বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী আছে তিনি ছাড়া অন্য কেউ যার যোগ্য নয় এবং তিনি ব্যতীত অন্য কেউ ঐ বৈশিষ্ট্যে তাঁর শরিক নয় এবং তিনি ছাড়া অন্য কেউ তার উপর আয়ত্ত রাখে না এবং তিনি ছাড়া অন্য  কেউ জানে না যে তার প্রকৃতি ও ধরন কিরূপ?

নাস্তিক: সৃষ্টিকে তিনি কি সঞ্চালনের দ্বারা পরিচালনা করেন অর্থাৎ কোন কাজ করেন?

ইমাম: তিনি এসবের উর্দ্ধে যে, বিচলনের দ্বারা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন। কেননা এটা সৃষ্ট বস্তুসমূহের বৈশিষ্ট্য। তারা তাদের অস্তিত্বের মাধ্যমে বস্তুর সাথে সম্পর্ক স্থাপন ও তার তত্ত্বাবধান করে (কর্মগুলি তাদের দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে করে)। আর আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীনের প্রভাবশালী ইচ্ছা প্রতিটি বিষয়ের উপর কার্যশীল এবং যা কিছু ইচ্ছা করেন তা ঘটে যায়। (অর্থাৎ তিনি স্বীয় ইচ্ছাশক্তির দ্বারা বিশ্বকে পরিচালনা করেন, মাধ্যমের দ্বারা নন নিশ্চয় তাঁর কাজ হল এরূপ যে, যখন কিছু করার সংকল্প করেন তাকে বলেন হও; ফলে তা হয়ে যায় সূরা ইয়াসীন:৮২)

২.     আবু মানছুর বলেন: আমার এক বন্ধু আমাকে বলেছে যে, সে ইবনে আবিল আ’উজা ও আব্দুল্লাহ্ বিন মুকাফফা’র (এ দু’জনই ঐ জামানায় দাহরী বা বস্তুবাদী মতবাদে বিশ্বাসী ছিল) সঙ্গে মক্কায় কাবা ঘরের নিকটে বসে ছিল; ইবনে মুকাফ্ফা বলল: এই মানুষদেরকে দেখছো? এই বলে যে দিকে হাজীরা তাওয়াফ করছিল সে দিকে ইশারা করে বলল তাদের মধ্যে একটিরও মানুষ নাম ধারণের যোগ্যতা নেই। কিন্তু ঐ যে মহান লোকটিকে দেখছো বসে আছেন (অর্থাৎ ইমাম সাদিককে (আ.) দেখালো) তিনি ছাড়া আর সবাই অমানুষ বা পশু!

ইবনে আবিল আ’উজা বলল: এতগুলো মানুষের মধ্যে কেন শুধুমাত্র তাকেই মানুষ বলে মনে কর?

কেননা তার মধ্যে এমন কিছু (জ্ঞান, ফযিলত, মহানুভবতা) দেখেছি যা অন্য কারও মধ্যে দেখি নি।

অবশ্য তুমি যা বলছো সে কথার প্রমাণ তাঁর সাথে কথা বলে বুঝবো এবং নিজেই সে ব্যাপারে অবগত হব।

এ কাজ করা থেকে বিরত থাক, কেননা আমি নিশ্চিত যে তাঁর সাথে কথা বললে তোমার বিশ্বাসকে পরিবর্তন করে দিবে (অর্থাৎ যে আল্লাহ্ ও দীনের প্রতি তুমি বিশ্বাস রাখ না তিনি তোমাকে সে দিকেই প্রত্যাবর্তন করাবেন)।

তোমার ইচ্ছা এটা নয়, বরং তুমি এটাই চাইছো যে আমি যেন তাঁর কাছে না যাই। কারণ যা কিছু তাঁর ব্যাপারে বলেছো সেটা যে মিথ্যা, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে তাই

যেহেতু আমার উপর সন্দেহ করছো, ঠিক আছে তাহলে তার কাছে যাও এবং যেভাবে চাও পরীক্ষা কর। তবে যেন ভয় পেওনা এবং মনোবল হারিয়ে ফেল না। তাহলে তার কাছে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হবে। আর যা কিছু বলতে চাও সে বিষয়ে হিসাব নিকাশ কর। কি কথায় তোমার লোকসান আর কি কথায় তোমার লাভ হবে সে গুলিকে ঠিক কর। যাতে করে কথা বলার সময় যেন দিশেহারা হয়ে ভুল-ভ্রান্তি না হয়ে যায়।

ইবনে আবিল আ’উজা ইমামের কাছে গেল এবং আমি ও ইবনে মুকাফফা’ আগের জায়গাতেই বসে থাকলাম। সে ফিরে এসে বলল: ওহে মুকাফফা’র  ছেলে! তোমার কি হবে, তুমি বলেছিলে তিনি মানুষ; কিন্তু আমি দেখলাম তিনি মানব শ্রেণীর নয়! যদি পৃথিবীতে এমন কেউ থেকে থাকে যে, চাইলেই রুহ এবং চাইলেই এই মাটির শরীরে আবির্ভূত হতে পারেন, একমাত্র তিনিই!!)

ইবনে মুকাফফা’ জিজ্ঞেস করলো কেন কি হয়েছে?

বলল: তার কাছে গিয়ে বসলাম অন্যদের চলে যাওয়ায় আমরা একা ছিলাম। তিনি বললেন: যদি ধর্ম ও ঈমানের ক্ষেত্রে তাদের (তাওয়াফকারীদের দিকে ইশারা করে) কথাই সঠিক হয় এবং বাস্তবেও তাই সঠিক অর্থাৎ আল্লাহ্, ধর্ম, আখেরাতের বিষয়টিই সত্য -সেক্ষেত্রে তারা নিরাপত্তা লাভ করেছে আর তুমি সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে ধ্বংস হয়েছো। (অর্থাৎ প্রকৃতই আখেরাতের অস্তিত্ব থাকলে সে ঐশী সীমিত কিছু কষ্টকর দায়িত্ব পালন না করার কারণে অনন্ত কষ্টে পতিত হবে) আর যদি তোমার কথা সঠিক হয় অর্থাৎ আল্লাহ্ ও আখেরাত বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই এবং অবশ্যই তা সঠিক নয়- সেক্ষেত্রে তুমি ও অন্যান্য মুসলমানরা সমান হয়েছো। কারণ তারা ধ্বংসের সম্মুখীন হচ্ছে না ও কোন ক্ষতিই তাদের হবে না। (কারণ মুসলমানরা আখেরাতের বড় এক সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য পৃথিবীর জীবনে সামান্য কিছু বস্তু থেকে নিজেকে বঞ্চিত করে)

বললাম: তোমার উপর আল্লাহর রহমত হোক। কিন্তু আমরা কি বলি আর তারাই বা কি বলে। আমাদের আকীদা বা বিশ্বাসের সাথে তাদের আকীদা বা বিশ্বাসের কোন পার্থক্য নেই সব একই!

বললেন: কিভাবে তোমার আর তাদের কথা একই হতে পারে? কেননা তারা  তো কিয়ামত, আখেরাতের পুরস্কার, আজাব, ও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং মনে করে আসমানে বসতি ও সেখানে অধিবাসী আছে। অন্যদিকে তোমরা মনে কর আসমান (আকাশ মণ্ডলী) অধিবাসী শূণ্য এবং আল্লাহরও অস্তিত্ব নেই।

আল্লাহ্ সম্পর্কিত কথা উঠতেই সুযোগকে হাত ছাড়া না করে নিজের আকীদাকে বর্ণনা করার সুবর্ণ সুযোগ ভেবে বললাম: যদি তাই হয় তারা যা বলে, তাহলে কেন আল্লাহ্ নিজেই তাঁর সৃষ্টির মাঝে আবির্ভূত হয়ে তাঁকে উপাসনা করার জন্য দাওয়াত করেন না? যদি তা করতেন তাহলে তাঁর সৃষ্টির মধ্যে মতপার্থক্য থাকতো না। কেন নিজেকে তাদেরর কাছ থেকে গোপন করে নবীদেরকে পাঠান? যদি তিনি নিজে আসতেন তাহলে মানুষের জন্য ঈমান আনা অধিক সহজ হতো।

বললেন: ‘তোমার জন্য দুঃখ হয়, যার শক্তি তোমার অস্তিত্বে বিরাজমান কিভাবে তা তোমার কাছে অস্পষ্ট থাকে? অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন তার প্রমাণ হলো অনস্তিত্ব অবস্থা থেকে তোমার অস্তিত্বমান হওয়া, তোমার ছোট থেকে বড় হওয়া, শক্তিহীনতা থেকে তোমার শক্তিমান হওয়া, আবার শক্তিমান থেকে শক্তিহীন হওয়া, অসুস্থতার পরে সুস্থ হওয়া, আবার সুস্থতার পরে অসুস্থ হওয়া, দুঃখের পরে সুখ ও সুখের পরে দুঃখিত হওয়া, কষ্টের পরে আনন্দ ও আনন্দের পরে ব্যথিত হওয়া, শত্রুর পরে বন্ধুত্বে ও বন্ধুত্বের পরে শত্র"তে পরিণত হওয়া, অস্থিরতার পরে স্থিরতা ও স্থিরতার পরে অস্থিরতায় পতিত হওয়া, চাওয়ার পরে না পাওয়া ও না চাওয়ার পরেও পাওয়া, পছন্দের পরে অপছন্দ ও অপন্দের পরে পছন্দ করা, নিরাশার পরে আশা ও আশার পরে নিরাশ হওয়া, অবহিত হওয়া ও স্মরণে আনা যা তোমার স্মরণে ছিল না এবং ভুলে যাওয়া যা কিছু তোমার স্মরণে ছিল (তোমার ওপর এ সকল বিপরীত অবস্থা তুমি নিজে সৃষ্টি কর না বরং সর্বশক্তিমান এক সত্তার প্রভাবে তা ঘটে যিনি এ অবস্থাগুলোর উৎপত্তি ঘটান)...

এমনভাবে আল্লাহর সৃষ্টির ও ক্ষমতার নিদর্শন সমুহ যা আমার অস্তিত্বে বিরাজমান এবং যা অস্বীকার করা অসম্ভব, একের পর এক আমাকে বলতে থাকলেন। এমনভাবে বলতে থাকলেন ঐ সময় আমি মনে করছিলাম এখনই আল্লাহ্ আমার ও তাঁর মধ্যে প্রকাশিত হয়েছেন।৩

তথ্যসূত্র

১. ইন্দ্রিয় শুধুমাত্র বস্তুকে দর্শন ও অনুধাবন করতে পারে অবস্তু ও অতি প্রাকৃতিক বিষয়কে নয়। কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে আমরা ইন্দ্রিয়লব্ধ বস্তুসমূহের ঊর্ধ্বে অবস্তুর অস্তিত্বকে স্বীকার করতে বাধ্য যেহেতু বস্তু নিজের পরিচালক নয়।

 . উছুলে কাফি, খণ্ড ১, পৃ. ৮৩। তিনি যখন কোন কিছু সংকল্প করেন তখন তাঁর আদেশ কেবল এই, তিনি বলেন, ‘হও’, আর তা হয়ে যায়। (সূরা ইয়াসীন:৮২ অর্থাৎ তিনি ইচ্ছাশক্তির দ্বারা কাজ করেন, মাধ্যমের সাহায্যে নন অসম্পূর্ণ কিন্তু বোধগম্য নমূনাস্বরূপ বলা যায় আমরা আমাদের মনোজগতের যেভাবে বিভিন্ন বস্তুকে নিজের ইচ্ছামত রূপ দান করি)

. উছুলে কাফি, খণ্ড ১, পৃ. ৭৪, হাদিস নং- ২।

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: