bayyinaat

Published time: 03 ,December ,2018      21:55:11
পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করা সবর্জনীন এক দায়িত্ব
পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করা সবর্জনীন এক দায়িত্ব লেখক: আবুল কাসেম সারাংশ: পরিবার হল সমাজের মানুষের বিকাশের স্থান। যে মতবাদ ও চিন্তাধারা যতটা পরিবারকে মূল্যবান জ্ঞান করে ততটা এর বন্ধনকে দৃঢ় ও শক্তিশালী করা এবং এ সামাজিক প্রতিষ্ঠানটিকে নিরাপদ ও এর সদস্যদের মনে প্রশান্তি বজায় রাখার প্রয়াস চালায়। ইসলাম মানুষের সহজাত প্রকৃতির সাথে পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল চিন্তাধারা হিসাবে পরিবারকে অপরিসীম গুরুত্ব দান করেছে এবং এর সংরক্ষণ ও প্রতিরক্ষায় উপযুক্ত ও কার্যকর নীতি ও বিধান প্রণয়ন করেছে।
সংবাদ: 157

পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করা সবর্জনীন এক দায়িত্ব

লেখক: আবুল কাসেম     পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করা সবর্জনীন এক দায়িত্ব

সারাংশ: পরিবার হল সমাজের মানুষের বিকাশের স্থান। যে মতবাদ ও চিন্তাধারা যতটা পরিবারকে মূল্যবান জ্ঞান করে ততটা এর বন্ধনকে দৃঢ় ও শক্তিশালী করা এবং এ সামাজিক প্রতিষ্ঠানটিকে নিরাপদ ও এর সদস্যদের মনে প্রশান্তি বজায় রাখার প্রয়াস চালায়। ইসলাম মানুষের সহজাত প্রকৃতির সাথে পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল চিন্তাধারা হিসাবে পরিবারকে অপরিসীম গুরুত্ব দান করেছে এবং এর সংরক্ষণ ও প্রতিরক্ষায় উপযুক্ত ও কার্যকর নীতি ও বিধান প্রণয়ন করেছে।

ট্যাগ: পরিবার, লজ্জা ও শালীনতা, পুরুষ ও নারীর পারস্পরিক দায়িত্ব, মুসলিম বিশ্বে নারী, পাশ্চাত্যে নারী

মূল প্রবন্ধ: বর্তমান পৃথিবীর অবস্থা ও যে বাস্তবতার মধ্যে আমরা অবস্থান করছি তা থেকে এ বিষয়টি আঁচ করা যায় যে, পরিবার প্রতিষ্ঠানটি এ সময়ে বিভিন্নরূপ সমস্যার মুখোমুখি ও অনেকদিক থেকে হুমকির সম্মুখীন। স্বাধীনতার নামে বাধনহীনতা ও অনৈতিকতার প্রসার পারিবারিক বন্ধনকে শিথিল ও অস্থিতিশীল করে তুলেছে। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন,এর অসঠিক ব্যবহার এবং আধুনিকতার নামে পাশ্চাত্যের কৃত্রিম ও অপসংস্কৃতিকে মেনে নেয়া,ইসলামী পারিবারিক নীতিমালা ও শিক্ষার সাথে অপরিচিতি ইত্যাদি এ অবস্থাকে আরো নাজুক করেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মানুষের হেদায়েতের নির্দেশনাবাহী সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থের শরাণাপন্ন হওয়া আবশ্যক।

পবিত্র কোরআনের দৃষ্টিতে মানুষ ঐশী আত্মার অধিকারী (হিজর:২৯ ও ছোয়াদ:৭২) হিসাবে অন্য সকল সৃষ্টি থেকে স্বতন্ত্র ও অনুপম বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যার মধ্যে অসংখ্য সুপ্ত যোগ্যতা ও সম্ভাবনাময় সৃষ্টিশীলতার গুণাবলী বিদ্যমান (দাহর:২)এবং সে একমাত্র সৃষ্টি যার মধ্যে প্রচেষ্টার মাধ্যমে তার স্রষ্টার সাক্ষাৎ লাভের উপযোগিতা রয়েছে (ইনশিক্বাক:৬) মানুষের মধ্যে যেমন অন্যান্য প্রাণীর মত জৈবিক বৈশিষ্ট্য ও পাশবিক প্রবৃত্তি রয়েছে তেমনি রয়েছে বৃদ্ধিবৃত্তি ও বিবেক তাই সে প্রবৃত্তি ও জৈবিক প্রবণতার ঊর্ধে ওঠে বিস্ময়কর অনেক কিছু করতে পারে। এ গুণ ও বৈশিষ্ট্যের উৎস হল তার আত্মা যাকে আল্লাহ সকল কিছুর নাম শিক্ষা দিয়েছেন (বাকারাহ:৩১) যার ফলে সে সকল কিছুর অন্তর্নিহিত বাস্তবতাকে উদঘাটনে সক্ষম। এ আত্মাকেই সকল ভাল ও মন্দ এবং সুন্দর ও অসুন্দর কর্ম ও বিষয়কে বিবেচনা করার শক্তি দেয়া হয়েছে (শামস:৯-১০) এ বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণেই সে অন্য সব সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী যাকে সৃষ্টির পর মহান আল্লাহ নিজেকে সর্বোত্তম সৃষ্টিকর্তা হওয়ার দাবি করেছেন(মুমিনুন:১৪) আল্লাহ এ সৃষ্টিকে অধিকাংশ জীব ও প্রাণীর ন্যায় জোড় হিসাবে অর্থাৎ দুই লিঙ্গের করে (পুরুষ ও নারী হিসাবে) বিভক্ত করেছেন। তারা একে অপরের সান্নিধ্যে প্রশান্তি ও সান্তনা লাভ করে থাকে (আ’রাফ:১৮৯ ও রূম:২১) আর অপরের অনুপস্থিতে জীবনকে অনর্থক মনে করে এবং হৃদয়ে শূন্যতা ও অপূর্ণতা বোধ করে। বিশেষত পৃথিবীর  ঝড়ঝঞ্ঝাময় ও সমস্যাকূল পরিবেশে তারা একাকী অসহায়ত্ব বোধ করে। সুতরাং পবিত্র কোরআনের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষের সম্পর্ক জৈবিক ও দৈহিক প্রয়োজন পূরেেণর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং এ দুয়ের সম্পর্ক জৈবিকতার ঊর্ধে নিহিত যা তাদের মানবিক অনুভূতি ও আত্মিক চাহিদার থেকে উৎসারিত। একারণেই আল্লাহ অন্যান্য প্রাণীর নর ও মাদির মধ্যে যে জৈবিক আকর্ষণ রয়েছে তাকে ঐশী নিদর্শন বলে অভিহিত করেন নি কিন্তু মানবজাতিতে পুরুষ ও নারীর মধ্যের সম্পর্ককে তাঁর অন্যতম নিদর্শন বলেছেন(রূম:২১) এবং অন্যান্য জীবের মধ্যে নর ও মাদী থাকার মূল উদ্দেশ্য শুধু বংশবৃদ্ধি বলে উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারী থাকার দর্শন শুধু বংশবৃদ্ধি নয় বরং প্রশান্তি লাভ ও ভালবাসা বলা হয়েছে।

পবিত্র কোরআন মানুষের জৈবিক চাহিদা ও প্রয়োজনকে অপরিহার্য এক প্রয়োজন গণ্য করলেও একে মানবিক প্রকৃতির রূপদান করেছে এবং অন্য প্রাণীদের মধ্যে প্রচলিত রীতিকে মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য জ্ঞান করেনি। শরীয়তের রীতি ও কাঠামোতে পুরুষ ও নারীর সম্পর্ককে নির্দিষ্ট এক ধারায় প্রবাহিত করেছে যা বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানের রূপে প্রকাশিত হয়। ইসলাম পরিবার ও সমাজের মানুষের মধ্যে পশুসুলভ প্রবণতা রোধ এবং লজ্জা ও পবিত্রতা রক্ষার তাগিদে বিবাহের ক্ষেত্রে সীমানির্ধারক বিশেষ কিছু নীতি প্রণয়ন করেছে।

কেননা মানুষের মধ্যে অন্য প্রাণী থেকে ভিন্ন লজ্জা নামক যে অনন্য এক প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান তা রক্ষা করে না চললে তার সাথে পশুর কোন পার্থক্য থাকবে না। এজন্য ইসলাম কেবল বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক ও ব্যভিচারকে নিষিদ্ধ করেই ক্ষান্ন হয়নি বরং মাহরাম বলে ঘোষিত বিশেষ ব্যক্তিদের মধ্যে বিবাহকে হারাম বলে গণ্য করেছে (নিসা:২৩) কারণ নিকট সম্পর্কিত এ ব্যক্তিরা যেহেতু সার্বক্ষণিক সংশ্লিষ্টতায় থাকে সেহেতু এ গ-িতে যৌন সম্পর্কের চিন্তার অনুপ্রবেশ তাদেরকে ফিতরাতগত লজ্জার বৈশিষ্ট্য ও খোদামুখি ঐশীপ্রবণতা থেকে দূরে সরিয়ে পশুপ্রবৃত্তির দিকে পরিচালিত করবে। পিতা-মাতা, ভাইবোন, মামা-চাচা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, খালা-ফুফু এবং এরূপ অতি নিকট সম্পর্কের ব্যক্তিরা পাশবিক চিন্তার ঊর্ধে অভিন্ন আন্তরিক এক পরিবেশে একত্রে বসবাস করার ফলে তাদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই ভিন্নরূপ সম্পর্কের ধারণা জন্মায় না তদুপরি ইসলাম বিকৃত কোন ধারণা সৃষ্টির পথকে বন্ধ করতে বিধান প্রণয়নের মাধ্যমে এধরনের চিন্তার মৃত্যু ঘটানোকে আবশ্যক করেছে। এভাবে ইসলাম মানবোপযোগী পবিত্র এক পারিবারিক সম্পর্কের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করেছে।

লজ্জা ও শালীনতা পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত বিষয়। তবে এক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে ধরনের পার্থক্য রয়েছে। প্রকৃতিগতভাবে নারী কামনা করে পুরুষ তার সাথে হৃদয়ের সম্পর্ক স্থাপন করবে ও উভয়ের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কের ঊর্ধে এক সম্পর্ক থাকবে। তাই নারীর নিকট পুরুষের সঙ্গে হৃদ্যতাহীন শারীরিক সম্পর্ক অনাকাক্সিক্ষত ও ঘৃণ্য একেটি বিষয়। নারী তার প্রতি নিছক পাশবিক ও আগ্রাসী যৌন দৃষ্টিকে কখনই পছন্দ করে না। এ সম্পর্কে ফ্রান্সের নারী আইনবিদ সিমন ডু বুভার বলেন, ‘নারীরা চায় পুরুষরা যেন তাদেরকেই কামনা করে, তাদের দেহকে নয়। তাই কোন পুরুষ কোন নারীর সামনে তার শারীরিক বৈশিষ্ট্যের প্রশংসা করে তবে সে নির্যাতিত হচ্ছে বলে অনুভব করে। এরূপ প্রশংসা তার নিকট অপমানের একটি বিষয় বলে গণ্য। তাই যদি সে লক্ষ্য করে কোন পুরুষ তার দিকে ঐরূপ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে সে প্রকৃতিগতভাবেই নিজেকে ঢাকতে শুরু করে। এ থেকেই নারীর লজ্জার সহজাত প্রকৃতির বিষয়টি প্রমাণিত হয়।’ (সেকেণ্ড জেন্ডার, পৃ.৫৬)

এ কারণেই নারীর দেহের প্রতি পুরুষের দৃষ্টি তার মনে একদিকে লজ্জা অন্যদিকে ভীতির সৃষ্টি করে। কারণ তার কল্পনায় ধর্ষিত হওয়ার দৃশ্য চিত্রায়িত হয়।

পাশ্চাত্যের অপর এক নারী চিন্তাবিদ পামেলা অ্যাবোট বলেছেন, ‘নারীর মধ্যে দুটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা তাদের মধ্যে পুরুষের কল্পনায় যৌন কামনা পূরণের হাতিয়ার হওয়ার উদ্বিগ্নতা সৃষ্টি করে। প্রথমত নারীর মধ্যে যৌন প্রবণতা এতটা প্রাধান্য রাখে না যে,কোন পুরুষকে দেখা মাত্রই তার যৌন চাহিদা পূরণের চিন্তা মাথায় আসবে; দ্বিতীয়ত নারীর মধ্যে প্রকৃতিগতভাবে হোক বা ঐশীভাবে, পবিত্রতা রক্ষা এবং অশালীন কর্ম ও আচরণ থেকে দূরে থাকার গুণ রয়েছে আর এটি সংরক্ষণের বিষয়টি তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। এ দুটি বৈশিষ্ট্যই তাদের যৌন নিপীড়ন থেকে রক্ষার ঢাল হিসাবে শালীন পোশাক পরিধানে উদ্বুদ্ধ করে।’ (ওম্যান সোশিওলজি, পৃ. ২৩৪)

নারীর এ মানসিক দিকটি বিবেচনা করেই ইসলাম নারীদের জন্য পর্দার বিধান প্রণয়ন করেছে। অভিজ্ঞতার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে পর্দা যৌন নির্যাতন ও নিপীড়ন এবং লাঞ্ছিত হওয়ার উদ্বিগ্নতা থেকে মুক্ত থাকতে সহায়তা করে। কেননা এটি নারীর লজ্জার অধিকারী ও সম্ভ্রান্ত হওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করে। সাধারণত যে সব নারী ও পুরুষ শালীনতা ও লজ্জা বজায় রেখে চলে তাদের মধ্যে বিয়ের বিষয়ে অধিক আগ্রহ ও বৈবাহিক জীবনে প্রশান্তি লাভের বিষয়ে আত্মবিশ্বাস অধিক লক্ষ্য করা যায়। তারা বিয়ের পর যেন এক সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তির অনুভূতি লাভ করে যা তাদের মানসিক শান্তি দান করে। তারা উৎসাহ ও ভালবাসার সাথে পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং নতুন অভিজ্ঞতার সৌন্দর্য্যকে এক প্রাপ্তি বলে অনুভব করে।

বর্তমান সমাজে যেভাবে নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতাকে সুন্দর ও আধুনিকতার প্রতীক হিসাবে মূল্যবোধের রূপ দেয়া হচ্ছে এবং ধর্মীয় বিধি ও দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ও পশুচিত অবৈধ যৌনাচারকে স্বাভাবিকভাবে প্রকৃতস্থ করা হচ্ছে তা পরিবার ব্যবস্থার প্রতি এক সুপরিকল্পিত বিশ্বাসঘাতকতা ও ষড়যন্ত্রমূলক এক আক্রমণ ছাড়া কিছু নয়। বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে নগ্নতাকে শৈল্পিকতা এবং লজ্জা ও পর্দাকে পশ্চাদপদতা গণ্য করা, বৈধ ও জারজ সন্তানের মধ্যে পার্থক্য না করা, সমকামী জুটিদেরকে পরিবারের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা, পতিতাবৃত্তিকে বৈধ পেশা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া, ছেলে-মেয়েরা বিপরীত লিঙ্গ থেকে বন্ধু গ্রহণকে সংস্কৃতির রূপ দেয়া, ভ্রুণহত্যাকে অপরাধ গণ্য না করা, নারীর গৃহকর্ম, মাতৃত্ব ও সন্তান প্রতিপালনকে দাসত্বমূলক ও মূল্যহীন কর্ম বিবেচনা করা হচ্ছে। (দ্রষ্টব্য সিডা বা সি.ই.ডি.এ.ডব্লিউ নীতিমালা) বাস্তবে আন্তর্জাতিক অপশক্তি পরিবারের বিনাশ সাধনকে তাদের প্রধান টার্গেট নির্ধারণ করেছে। প্রশ্ন হল কেন তারা ধর্মীয় পারিবারিক নীতিমালা,  পর্দা ও শালীনতাকে তাদের জন্য হুমকি মনে করে। কেন তারা পারিবারিক বন্ধনকে শক্তিশালী কারী সকল বিধানকে পদদলিত করে এর বিপরীতে একে দুর্বলকারী সংস্কৃতি ও নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। নিঃসন্দেহে বলা যায় আন্তর্জাতিক অপশক্তির কাছে এ বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে যে, ইসলাম ও অন্যান্য ঐশী ধর্মকে ধ্বংসের জন্য সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হল যৌনতার প্রচার-প্রসার ঘটিয়ে লজ্জা নামক ঐশী মানবীয় গুণকে নষ্ট করে পরিবারের ভিত্তিকে ধ্বংস করা। কারণ তারা জানে যে, যার লজ্জা নেই তার কোন ধর্মের বালাই নেই।

যখন ইসলাম পরিবারে সন্তানের প্রশিক্ষক হিসাবে নারীর ওপর দায়িত্ব দিয়েছে সন্তানকে শিক্ষিত, ত্যাাগী, সাহসী, আত্মসংযমী, উদ্যোগী, খোদাবিশ্বাসী, লজ্জা ও আত্মসম্মান বোধসম্পন্ন গড়ে তোলার তখন তারা (পাশ্চাত্য ও তার দোসর) মানবজাতিকে এমন এক মাতা উপহার দিতে যে লজ্জাহীন, ভোগবাদী, ইন্দ্রিয়পরায়ণ, যৌনাচারী, স্বার্থপর, ভ্রুণহত্যাকারী, খোদাদ্রোহী, অবিশ্বস্ত ও দায়িত্বহীন। এরূপ মা হতে কখনই সুস্থ চিন্তা, উন্নত নৈতিক চরিত্র ও মানবিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী সন্তান কামনা করা যায় না। আজ যারা নারীকে দৈহিক সৌন্দর্যকে পণ্যরূপে ব্যবহার করে তাকে মূল্যহীন করেছে তারাই নারীর অধিকার ও মর্যাদার দাবি তোলে। অথচ ইসলাম মাতাকে স্রষ্টার সৃষ্টির প্রকাশস্থল এক সত্তা বলে বিবেচনা করেছে যার মধ্যে স্রষ্টা তার সৃষ্টিশীলতার প্রকাশ ঘটান, যাকে তিনি মানবশিশুর খাদ্যদানের মাধ্যম করে নিজেরই এক গুণ অর্থাৎ রিজিকদাতা (রাজ্জাক) হওয়ার গুণে গুণান্বিত করেছেন, যার ওপর তিনি তার ¤্রষ্ঠে সৃষ্টি মানুষকে প্রতিপালনের দায়িত্ব অর্পণ করে প্রতিপালনকারী হওয়ার মর্যাদা দিয়েছেন। যার পায়ের নীচে তিনি সন্তানের বেহেশত নির্ধারণ করেছেন। ইসলাম নারীকে শিক্ষিত, উন্নত চিন্তা ও বিশ্বাস এবং মানবিক ও নৈতিক গুণের অধিকারী, ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্বশীল হিসাবে গড়ে তুলতে চায়। কিন্তু পাশ্চাত্য এখন হযরত মরিয়মের মত খোদাপ্রেমিক ও দায়িত্ববোধসম্পন্ন মাতা হওয়াকে গর্বের বলে মনে করে না বরং যৌন আবেদনময়ী নারীদের মেয়েদের সামনে আদর্শ হিসাবে উপস্থাপন করে ধর্মের সাথে প্রকাশ্যে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে।

মুসলিম বিশ্বে নারীদের বিষয়ে তিন ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান অতিরঞ্জিত আধুনিকতাবাদী, কট্টর প্রতিক্রিয়াশীল এবং ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি। প্রথম দল পাশ্চাত্যের অনুরূপ ধারণা পোষণ করে, দ্বিতীয়দলটি নারীকে বুদ্ধিবিবর্জিত এক সৃষ্টি বিবেচনা করে তাকে শিক্ষাসহ সকল মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। তৃতীয় দলটি নারীকে সকল মানবীয় বৈশিষ্ট্য, মেধা ও যোগ্যতার অধিকারী সত্তা  হিসাবে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার ও দায়িত্ব পালনে সক্ষম জ্ঞান করে তবে পুরুষের সাথে তার আত্মিক ও শারীরিক পার্থক্য থাকার কারণে কোন কোন ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রগত ভিন্নতা রয়েছে।  কিন্তু এ পার্থক্য মানবজাতির প্রত্যেকের মধ্যে যোগ্যতাগত পার্থক্যের মত যা কখনই তার মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করে না। কারণ মানুষের মূল পর্যাদা তার মনুষ্যত্বের মধ্যে যেক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।  

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: