bayyinaat

Published time: 04 ,December ,2018      22:04:35
ফাদাকের ইতিবৃত্ত
ফাদাক হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.)-এর পবিত্রময় জীবনের হৃদয়বিদারক ও বিষাদময় ঘটনাবলীর অন্যতম। ইসলামের ইতিহাস নানাবিধ রাজনৈতিক চক্রান্ত ও উত্থান-পতনে জর্জরিত। আর ফাদাক হচ্ছে ইসলামের প্রাথমিক যুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা অর্থাৎ খেলাফত ও রাসূলের (সা.) স্থলাভিষিক্ত নির্ধারণের সমস্যা সমাধানের অন্যতম মাধ্যম।
সংবাদ: 158

 ফাদাকের ইতিবৃত্ত

মূল প্রবন্ধ: ফাদাক বিশেষতঃ হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.)-এর পবিত্রময় জীবনের হৃদয়বিদারক ও  বিষাদময় ঘটনাবলীর অন্যতম এবং সার্বিকভাবে তা আহলে বাইত (আ.)-এর জন্য ছিল বেদনাপূর্ণ এক ঘটনা। ইসলামের ইতিহাস নানাবিধ রাজনৈতিক চক্রান্ত ও উত্থান-পতনে জর্জরিত। আর ফাদাক হচ্ছে ইসলামের প্রাথমিক যুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা অর্থাৎ খেলাফত ও রাসূলের (সা.) স্থলাভিষিক্ত নির্ধারণের সমস্যা সমাধানের অন্যতম মাধ্যম।

প্রখ্যাত আভিধানিক ও ইতিহাসবিদদের বর্ণনানুসারে "ফাদাক” হচ্ছে : একটি উর্বর ও কৃষি উপযোগী ভূমি। যা হিজাজ ভূখণ্ডের খায়বারের নিকটে অবস্থিত এবং মদীনা হতে দু' থেকে তিন দিনের দুরত্ব বিদ্যমান, অনেকে এ ব্যবধানকে একশত চল্লিশ  কিঃ মিঃ উল্লেখ করেছেন। উক্ত স্থানটি ছিল পানির প্রস্রবণ ও প্রচুর খেজুর বাগানে সমৃদ্ধ এবং তা খায়বারের পর ইহুদীদের প্রধান ঘাটি হিসেবে পরিচিত ছিল।

     এখানে  উল্লেখ্য যে, কিভাবে "ফাদাকের” এ উর্বর ও সবুজ ভূমিটি রাসূল (সা.)-এর হস্তগত হয়। বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (সা.) যখন খায়বার বিজয়ের পর প্রত্যাবর্তন করেন, আল্লাহ তখন ফাদাকবাসী কট্ররপন্থী ইহুদীদের মাঝে চরম ভীতি ও আতংকের সঞ্চার করেন। ফলশ্রুতিতে তারা তাদের মধ্যে একজনকে রাসূল (সা.)-এর নিকট পাঠায় এবং ফাদাকের অর্ধাংশের বিনিময়ে তাঁর সাথে সন্ধি করার  প্রস্তাব দেয়। রাসূল (সা.) তাদের সে প্রস্তাবে সম্মত হন এবং সন্ধি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

     এভাবে ফাদাকের জমিটি রাসূল (সা.)-এর নিজস্ব সম্পদে পরিণত হয়। কেননা, পবিত্র কোরআনের সুস্পষ্ট বর্ণনানুসারে যা কিছু বিনাযুদ্ধে মুসলমানদের হস্থগত হয়, তা সম্পূর্ণ রাসূল (সা.)-এর আয়ত্বাধীন এবং তা যুদ্ধে প্রাপ্ত গানীমাতের সম্পদ হিসেবে বন্টন করা হবে না।২ এ কারণে রাসূল (সা.) ফাদাক গ্রহণ করেন এবং সেটির আয় দুঃস্থ , অসহায় এবং দায়গ্রস্থ পথিকদের মাঝে বন্টন করতেন।

     এ বিষয়টি ইয়াকুত হামাবী "মো’জামুল্ বুলদান ” গ্রন্থে ও ইবনে মানজুর আন্দলুসী " লিসানুল্ আরাব ” গ্রন্থে এবং আরও অনেকে স্ব-স্ব গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।

তাবারী (রহঃ) স্বীয় ইতিহাস গ্রন্থে ও ইবনে আছীর "কামেল” গ্রন্থে এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।৩

     অনেক প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (সা.) আপন জীবদ্দশাতে ফাদাকের জমিটি হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) কে প্রদান করেন।৪

     এ অর্পণের বিষয়টি মুফাস্সিরগণ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন, বিশেষতঃ  প্রখ্যাত সুন্নী মুফাস্সির জালালুদ্দীন সূয়ূতী (রহঃ) তাঁর "তাফসীরে দুররুল মানসুর” গ্রন্থে সূরা ইসরার ২৬ নং আয়াতের তাফসীরে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন :  যখন এ আয়াতটি নাজিল হয়, তখন রাসূল (সা.) ফাতেমা যাহরা (আ.) কে আহ্বান জানান এবং ফাদাকটি তাঁকে প্রদান করেন।  হাদীসটি এভাবে বর্ণিত  হয়েছে :

لمّا نزل قوله تعالى ﴿ وءات ذالقربى حقه﴾ اعطى رسول الله صل الله عليه و آله وسلّم فاطمة فدكاً

"যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে এ আয়াতটি তোমার নিকট আত্মীয়দের হক আদায় কর নাজিল হয়, তখন রাসূল (সা.) ফাদাকটি ফাতেমা যাহরা (আ.) কে প্রদান করেন।”

     উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় অপর একটি রেওয়ায়েত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে অনুরূপ বিষয়বস্তুর প্রতি ইঙ্গিত করে বর্ণিত হয়েছে। ৫

     এ বিষয় সম্পর্কে আরও একটি জলন্ত প্রমাণ হচ্ছে আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.)-এর একটি বক্তব্য যা নাহ্জুল বালাগাতে "ফাদাক ” প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে :

بلى كانت في ايدينا فدك من كل ما اظلّته السّماء،  فشحّت عليها نفوس قومٍ،  و سخت عنها نفوس قومٍ آخرين،  ونعم الحكم الله

"হ্যাঁ, আসমানের নিচে যা কিছু আছে তন্মধ্যে শুধুমাত্র ফাদাক আমাদের  অধীনস্থ ছিল। কিন্তু কিছু ব্যক্তি তাতে কার্পণ্যতার পরিচয় দিয়েছে এবং পক্ষান্তরে অপর কিছু ব্যক্তি উদারভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেছে।  নিশ্চয়ই  আল্লাহ সর্বোত্তম বিচারক।” ৬

     এ বক্তব্যটি অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণীত করে যে, রাসূল (সা.)-এর জীবদ্দশাতে "ফাদাক” আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.) ও ফাতেমা যাহরা (আ.)-এর অধীনস্থ ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে একশ্রেণীর কৃপণমনা শাসকচক্রের দৃষ্টি তাতে নিবদ্ধ হয়, ফলে আলী (আ.) ও তাঁর সহধর্মিণী বাধ্য হয়ে তা থেকে  দৃষ্টি ফিরিয়ে নেন। তবে এ দৃষ্টি ফিরিয়ে নেওয়াটা  সন্তুষ্ট চিত্তে সম্পন্ন হয় নি। কেননা, এ ক্ষেত্রে আল্লাহর সুবিচার কামনা করা হয়েছে এবং তা না হলে نعم الحكم الله "আল্লাহ সর্বোত্তম বিচারক” উক্তিটি করার কোন অর্থ রাখে না।

     অনেক প্রখ্যাত শিয়া ধর্ম বিশেষজ্ঞগণ এ সম্পর্কে বহু রেওয়ায়েত প্রসিদ্ধ গ্রন্থসমূহে বর্ণনা করেছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলেন :

     হযরত শেখ কুলাইনী (রহঃ) উসূলে কাফী গ্রন্থে, শেখ সাদূক (রহঃ) ও মুহাম্মাদ বিন মাসউদ (রহঃ) স্ব-স্ব তাফসীর গ্রন্থে , আলী ইবনে ঈসা আরবেলী কাশফুল্ গাম্মাহ গ্রন্থে এবং আরও অনেকে বিভিন্ন তাফসীর, ইতিহাস ও হাদীসগ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, যা এখানে উল্লেখ করলে পরিসর ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে।

     এখন আমরা বিশ্লেষণ করব কেন এবং কী কারণে হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.)-এর থেকে "ফাদাক” নিয়ে নেওয়া হয়।

এক :  ফাদাক জবর দখলের রাজনৈতিক কারণসমূহ

নারীকুলের শিরোমণি হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) থেকে ফাদাক জবর দখল কোন সাধারণ ব্যাপার এবং তা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক বিষয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, এমনটি নয়। বরং রাসূল (সা.)-এর ওফাতের পর ক্ষমতাগ্রহণকারী শাসকচক্রের জন্য এটা অর্থনৈতিক অপেক্ষা রাজনৈতিকভাবে বেশি গুরুত্ববহ ছিল। প্রকৃতঃপক্ষে ফাদাকের বিষয়কে তৎকালীন সময়ের অন্যান্য ঘটনাবলী হতে পৃথকীকরণ সম্ভব নহে। বরং তা একটি বৃহৎ চেইনের রিংয়ের ন্যায় এবং ধারাবহিক ঘটনাপ্রবহের গুরুত্বপূর্ণ অংশবিশেষ।

ইতিহাসের এ জবরদখলের নেপথ্য সম্ভব্য কারণসমূহ নিম্নরূপ :

     (১) ফাদাক রাসূল (সা.)-এর বংশধরের অধীনস্থ থাকা, তা তাঁদের জন্য একটি বিশেষ আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে পরিগণিত। আর এটা আল্লাহর দরবারে তাঁদের অপরিসীম মর্যাদা ও ফজিলত এবং রাসূল (সা.)-এর অতি আপনজন হওয়ার সুস্পষ্ট দলিলস্বরূপ। বিশেষতঃ শিয়া ও সুন্নী উভয়মাযহাবের বর্ণিত রেওয়ায়েত অনুসারে (যা পূর্বেই উল্লেখ করেছি) যখন পবিত্র কোরআনের  ﴿وآت ذاالقربى حقّه﴾ আয়াতটি নাজিল হয়, তখন রাসূল (সা.) ফাতেমা যাহরা (আ.) কে আহ্বান জানান এবং ফাদাকের জমিটি তাঁকে প্রদান করেন।

     এটা অত্যন্ত সুস্পষ্ট যে, এমন বিরল ঐতিহ্যসমৃদ্ধ ফাদাক ভূমিটি যদি রাসূল (সা.)-এর বংশধরের অধীনস্থ থাকত, তবে স্বাভাবিক কারণেই জনগণ তাঁর অন্যান্য নিদর্শনাবলী বিশেষতঃ খেলাফতকে উক্ত পরিবারের মাঝেই সন্ধান করত। আর এ বিষয়টি যারা খেলাফতকে অন্যদের প্রতি স্থানান্তরের পক্ষপাতী তাদের জন্য ছিল অসহনীয়।

     (২) এ বিষয়টি অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্ববহ এবং তা রাজনীতির উপরও বিশেষ প্রভান্বিত ছিল। কেননা, ইমম আলী (আ.) ও তাঁর পরিবারবর্গ যদি কঠিন আর্থিক দৈন্যতার শিকার হতেন, তবে সে অনুপাতে তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষমতার দূর্বল থাকত।  পক্ষান্তরে ফাদাক যদি তাঁদের অধীনস্থে বহাল থাকত, তবে তারা বেলায়েত তথা উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধাদি পেতেন। যেমনভাবে রাসূল (সা.)-এর নবুওয়াতের  প্রাথমিক পর্যায়ে হযরত খাদিজা (রাঃ)-এর ধন-সম্পদ ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছিল।

     পৃথিবীর সর্বত্র এ নিয়ম প্রচলিত যে, যখন কোন বিশেষ ব্যক্তিত্ব অথবা দেশকে কোণঠাসা করার প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন তার উপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হয়। দৃষ্টান্তস্বরূপঃ ইসলামের ইতিহাসে শোবে আবু তালিবের ঘটনা এবং মুসলমানদের উপর মক্কার মুশরিকদের চাপিয়ে দেওয়া কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধ।

     সূরা মুনাফিকুনের নিম্নের আয়াতের তাফসীরে

﴿لئن رجعنا الى المدينة ليخرجنّ الاَعَزّ منها الاَذلّ﴾

"যদি মদীনায় প্রত্যাবর্তন করি তবে বিজয়ীরা পরাজীতদের বহিস্কার করবে।” অনুরূপ ষড়যন্ত্রের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা মুনাফিকদের পক্ষ থেকে করা হয়েছিল এবং তা মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে প্রাথমিক পর্যায়েই ব্যর্থ হয়েছিল। সুতরাং, এটা কোন আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, বিরোধীরা চেষ্টা চালাবে যাতে করে উক্ত সম্পদ রাসূল (সা.)-এর বংশধর থেকে কেড়ে নেওয়া এবং এভাবে তাঁদেরকে নিঃস্ব ভাবে কোণঠাসা করে রাখা যায়।৭

     (৩) যদি তারা ফাদাককে রাসূল (সা.)-এর মী’রাস (উত্তরাধিকার) অথবা প্রদত্ত উপহারস্বরূপ ফাতেমা যাহরা (আ.)-এর নিকট ফিরিয়ে দিত, তবে সেক্ষেত্রে খেলাফত ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীও উত্থাপিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হত

     এ বিষয়টি  প্রখ্যাত সুন্নী মনীষী ইবনে আবীল হাদীদ (রহঃ) তাঁর " শারহে নাহজুল বালাগাহ” গ্রন্থে অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে উপস্থাপন করেছেন।

     তিনি বলেন : আমি আমার শিক্ষক আলী ইবনে ফারুকী (রহঃ) থেকে জিজ্ঞাসা করলাম, "ফাতেমা যাহরা (আ.)-এর ফাদাকের মালিকানা দাবী কি সঠিক ছিল ?

তিনি বলেন : হ্যাঁ, আমি বললাম : তবে কেন প্রথম খলিফা তাকে ফাদাক দেয় নি, অথচ সে তার নিকট সিদ্দীকা তথা সত্যবাদী রূপে সুপ্রমাণিত ছিল ?

     তখন তিনি নরম ও ব্যঙ্গ্যোক্তির সুরে (যদিও তিনি কখনও রসিকতায় অভ্যস্থ ছিলেন না।) বলেন :

لو اعطاها اليوم فدكا بمجرّد دعواها لجائت اليه غدا و ادّعت لزوجها الخلافة و زحزحته من مكانه، و لم يمكنه الاعتذار والمدافعة بشئءٍ  لانه يكون قد اسجل على نفسه  بانّها صادقة  فيما تدّعيه،  كائناً ما كان،  من غير حاجةٍ الى بيّنة

"যদি সেদিন আবু বকর (রাঃ) ফাতেমা যাহরা (আ.)-এর ফাদাকের দাবীতে সম্মত হয়ে তা তাকে ফেরত দিত, তবে পরবর্তীতে সে তার নিকট স্বীয় স্বামীর খেলাফতের দাবী জানাত এবং তাকে উক্ত পদ হতে অপসারিত করত। আর এ ক্ষেত্রে সে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন দলিল উপস্থাপন করতে পারত না। কেননা, যদি ফাতেমা (আ.)-এর দাবিনুসারে ফাদাক ফেরত দিত, তবে তাঁর সকল দাবীর যৌক্তিকতা সুপ্রমাণিত হত এবং সে ক্ষেত্রে কোন সাক্ষী প্রমাণের প্রয়োজন হত না।

     অতঃপর ইবনে আবীল হাদীদ (রহঃ) বলেন : আমার শিক্ষক বিষয়টি যত রসিকতা করেই  উত্থাপন করুন না কেন, এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক বাস্তবতা। ৮

     সুন্নী মাযহাবের এ দু’জন প্রখ্যাত মনীষীর সুস্পষ্ট স্বীকারোক্তি, ফাদাকের বিষয়টি রাজনৈতিক হওয়ার জ্বলন্ত প্রমাণ।

     যদি আমরা ইসলামের প্রথম ক’য়েক শতাব্দীতে এ ভূমির পরিণতির প্রতি দৃষ্টিপাত করি যে, কিভাবে তা একজনের অধীন থেকে অপরজনের অধীনস্থ হয়েছে এবং প্রত্যেক খলিফা উক্ত ভূমির ব্যপারে স্ব-স্ব অবস্থান নিয়েছেন, তবে  বিষয়টি আরও অধিকতর সুস্পষ্ট হবে। এ সম্পর্কে পরবর্তী আলোচনাতে ইঙ্গিত করা হবে, ইনশাআল্লাহ্।

উপসংহার

ফাদাকের হৃদয়বিদারক ঘটনা এবং এ ছোট গ্রামকে কেন্দ্র করে সময়ের আবর্তে ইসলামের ইতিহাসে সে সব ঝড় -ঝাপটা প্রবাহিত হয়েছিল, তা থেকে  অত্যন্ত সহজে বুঝা যায় যে, এগুলো ছিল আহলে বাইত (আ.) কে ইসলামী সমাজের খেলাফত ও  শাসনক্ষমতা হতে দুরে রাখা এবং ইমামত ও বেলায়েতকে প্রত্যাখ্যানের এক গভীর ষড়যন্ত্র। আর এ সুদুর প্রসারী নীল-নকশার চক্রান্তটি ছিল পূর্ব পরিকল্পিত।

     রাজনৈতিক ক্ষমতাধররা প্রথম থেকেই বিশেষতঃ  বনী উমাইয়া ও বনী আব্বাসীর যুগে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাত আহলে বাইত (আ.) কে সার্বিক ভাবে কোণঠাসা করে রাখতে। এমন কি যদি কোন বৈশিষ্ট্য ও বিশেষত্বের কারণে তাঁদের বিজয়ের সম্ভব থাকত,তবে নির্দ্বিধায় তাঁদের থেকে তা হরণ করে নিত। আবার যদি প্রয়োজন দেখা দিত, তবে তাঁদের নাম ব্যবহার করে সুবিধা হাসিল করত, কিন্তু তাঁদের ন্যায্য অধিকার ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে চরম কার্পণ্যতা অবলম্বন করত।

     আমরা জানি যে, বনী আব্বাসী ও বনী উমাইয়াদের যুগে ইসলামী রাষ্ট্রের ব্যাপকতা ও বিস্তৃতি এবং বায়তুল মালের কোষাগারে সম্পদের পর্যাপ্ততা এতই অধিকতর ছিল যে, তা ইসলামের ইতিহাসে নজিরবিহীন অথবা অত্যন্ত বিরল হিসেবে পরিগণিত। এমতাবস্থায় ফাদাকের ন্যায় ছোট্র একটি গ্রাম সেগুলোর কাছে অত্যন্ত নগণ্য। কিন্তু তদুপরি তাদের দুরভিসন্ধিমূলক নীতির কারণে ফাদাকের প্রকৃত হকদারদের নিকট তা ফেরত দেওয়া এবং ফাদাকের রাজনৈতিক নাটকের পরিসমাপ্তি ঘটানোর মানসিকতার সৃষ্টি হয় নি।

     বস্তুতঃপক্ষে ফাদাকের ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে এমন একটি অধ্যায় যা এক দিক থেকে রাসূল (সা.)-এর আহলে বাইত (আ.) তথা পরিবারবর্গের ফজিলত ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যতা, অপর দিক থেকে তাঁদের অত্যাচারিত অবস্থা, আর সাথে সাথে তাঁদের বিরুদ্ধে শত্রুদের পক্ষ থেকে যে সব ষড়যন্ত্রের নীল-নকঁশা প্রণয়ন করা হয়েছিল, সেগুলোর প্রতিও সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।

1.    মো’জামুল্ বুলদান, ফাদাক শব্দমূল।

2.    সূরাঃ হাশর, আয়াত নং ৬ ও ৭।

3.    আল্লামা সাইয়্যেদ মোহাম্মাদ হাসান কাজবিনী হায়েরী রচিত গ্রন্থ "ফাদাক” গ্রন্থ দেখুন।

4.    কেননা সেটি রাসূল (সাঃ)-এর নিজস্ব সম্পদ ছিল।

5.    দুররুল মানসুর, খণ্ড  ৪র্থ, পৃঃ ১৭৭।  এ হাদিসটি আহলে সুন্নাতের অনেক রা’বী যেমন : বাজ্জার, আবু ইয়ালা, ইবনে মারদাভেই ও ইবনে আবি হাতাম আবু সাঈদ খুদরী  (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। মিজানুল্ এ'তেদাল খণ্ড ২য়, পৃঃ ২৮৮ ও কানজুল উম্মাল ২য় খণ্ড, পৃঃ ১৫৮।

6.    নাহজুল বালাগা, ৪৫ নং পত্র (পত্রটি উসমান বিন হানীফের নিকট প্রদত্ত)

7.    সূরাঃ মুনাফিকীন, আয়াত নং ৮।

8.    ইবনে আবীল হাদীদ রচিত"শারহে নাহজুল বালাগা”, খণ্ড ৪র্থ , পৃঃ৭৮। 

ট্যাগ: ফাদাক, হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.), ইসলামের ইতিহাস, খায়বারের বিজিত ভূমি, রাসূলের উত্তরাধিকার

মূল: আয়াতুল্লাহ আল উযমা মাকারেম শিরাজী

ভাষান্তর: মোহাম্মাদ মিজানুর রহমান

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: