bayyinaat

Published time: 04 ,December ,2018      23:03:13
কোরআন, সুন্নাত ও ঐতিহাসিক বিচারে ফাদাক
নারীকুলের শিরোমণি হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) মসজিদে নববীতে (সা.) মুহাজির ও আনসারদের সম্মুখে যে ঐতিহাসিক খুতবা প্রদান করেছিলেন, সেখানে তিনি যে সমস্ত আয়াতে নবীদের (আ.) উত্তরাধিকারী সম্পদ থাকার বিষয়ে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে সেগুলোর উদ্ধৃতি দিয়েছেন। আর কোন আনসার এবং মুহাজিরও তা অস্বীকার করেন নি।
সংবাদ: 160
কোরআন, সুন্নাত ও ঐতিহাসিক বিচারে ফাদাকমূল প্রবন্ধ: ফাদাক ভূমিটি খায়বার বিজয়ের পর ইহুদীদের পক্ষ থেকে এক সন্ধিচুক্তির বিনিময়ে রাসূল (সা.)-এর হস্তগত এবং পবিত্র কোরআনের সূরা হাশরের ﴿وما افاءالله على رسوله...﴾ ৭নং আয়াত অনুসারে সেটির সম্পূর্ণ মালিকানা তাঁর অধীনস্থ হয়।
অতঃপর যখন পবিত্র কোরআনের সূরা বনি ইসরাইলের ﴿ وآت ذاالقربى حقّه ﴾ "তোমার নিকট আত্মীয়দের হক আদায় কর” (২৬নং) আয়াতটি অবতীর্ণ হয়, তখন রাসূল (সা.) এ আয়াতের নির্দেশ মোতাবেক ফাদাক ভূমিটিকে ফাতেমা যাহরা (আ.)-এর নিকট অর্পণ করেন। এ বিষয়টি শুধু শিয়া মুফাসসিররাই নয় বরং অনেক বিশিষ্ট সুন্নী আলেমও বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। যেমন প্রখ্যাত সুন্নী মুফাসসির জালালুদ্দীন সূয়ূতী (রহঃ) তাঁর "তাফসীরে দুররুল মানসুর” গ্রন্থে সূরা ইসরার ২৬ নং আয়াতের তাফসীরে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন:  যখন এ আয়াতটি নাজিল হয়, তখন রাসূল (সাঃ) ফাতেমা (আঃ) কে আহ্বান জানান এবং ফাদাকটি তাঁকে প্রদান করেন।
     রাসূল (সা.)-এর ওফাতের পর তৎকালীন শাসক সেটি দখল করে নেয় এবং ফাতেমা যাহরা (আ.)-এর প্রতিনিধিদের সেখান থেকে বিতাড়িত করে। এ বিষয়টি প্রখ্যাত সুন্নী মনীষী ইবনে হাজার "সাওয়ায়েক” গ্রন্থে, সামহুদী "ওফাউল্ ওফা” গ্রন্থে এবং ইবনে আবীল হাদীদ "শারহে নাহজুল বালাগা” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
     নারীকুলের শিরোমণি হযরত ফাতেমা যাহরা  (আ.) স্বীয় অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে দু’টি পন্থা ব্যবহার করেন :
     প্রথমত : তাঁকে প্রদত্ত রাসূল (সা.)-এর উপহার, দ্বিতীয়তঃ উত্তরাধিকারী সম্পদ হিসেবে (রাসূল (সা.)-এর প্রদত্ত উপহারের বিষয়টি যখন নাকচ করা হয়।)
     প্রথম পর্যায়ে তিনি আমিরুল মূ’মিনীন আলী (আ.) ও উম্মে আইমান  (রা.) কে সাক্ষী হিসেবে প্রথম খলিফার নিকট হাজির করেন। কিন্তু খলিফা সাক্ষ্য প্রমাণের জন্য দু’জন পুরুষ সাক্ষী জরুরী, এ অজুহাতে উক্ত সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করেন।
     অতঃপর ‘আমরা নবী রাসূলগণ কোন উত্তরাধিকারী সম্পদ রেখে যাই না এবং যা কিছূ আমাদের থেকে রয়ে যাবে, তা সাদকা হিসেবে পরিগণিত হবে।’১ এটি রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত হাদীস, এ অজুহাত তুলে উত্তরাধিকারী সম্পদের দাবীকেও প্রত্যাখ্যান করা হয়।
     কিন্তু একটু সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করলে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, দখলকারী শাসক এ কাজের মাধ্যমে দশটি মারাত্মক ভুল করেছেন। সেগুলো আমরা এখানে সংক্ষিপ্তাকারে ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করছি, যদিও এগুলোর প্রত্যেকটির বিস্তারিত ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে :
     (১) ফাদাকের ক্ষেত্রে ফাতেমা যাহরা (আ.) ছিলেন "জুল ইয়াদ” অর্থাৎ ফাদাকের মালিকানা ছিল তাঁর আয়ত্তাধীন। ইসলামী কানুনের দৃষ্টিতে, এমনকি বিশ্বে প্রচলিত সকল আইন অনুযায়ী (ذواليد) "জুল ইয়াদ” তথা যার হাতে বস্তু রয়েছে সে-ই তার মালিক বলে গণ্য বিধায় তার মালিকানাধীন বস্তুর বিষয়ে কখনও তার কাছে সাক্ষ্য চাওয়া হয় না, তবে ঐ ক্ষেত্র ব্যতীত যেখানে তার মালিকানা অবৈধ হওয়ার সপক্ষে কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থেকে থাকে।
     উদাহরণস্বরূপ : যদি কেউ কোন বাড়ীতে বসবাস করে এবং সেটি তাঁর আয়ত্তাধীন থাকে, তবে যতক্ষণ পর্যন্ত তার মালিকানা বাতিলের ক্ষেত্রে কোন দলীল-প্রমাণ আনা না  হবে, ততক্ষণ  পর্যন্ত তাকে সে বাড়ী থেকে বহিষ্কার করা যাবে না।  আর এ ক্ষেত্রে তার মালিকানা প্রমাণের জন্য কোন সাক্ষীকে হাজির করার প্রয়োজন নেই।  বরং স্বয়ং সে অথবা তার প্রতিনিধির আয়ত্তাধীন থাকাটাই তার মালিকানার সর্বোত্তম দলীলস্বরূপ।
      (২) নারীকুলের শিরোমণি ফাতেমা যাহরা (আ.)-এর সাক্ষ্যদান এক্ষেত্রে যথেষ্ট ছিল।২ কেননা, পবিত্র কোরআনের সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতের-
﴿انّما يريد الله ليذهب عنكم الرجس اهل البيت و يطهركم تطهيراً﴾
"হে আহলে বাইত! নিশ্চয়ই আল্লাহ্ চান তোমাদের থেকে সকল ধরনের অপবিত্রতা দুর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পুতঃপবিত্র রাখতে।”৩- ভিত্তিতে আল্লাহ্ তায়ালা রাসূল (সা.), আলী (আ.), ফাতেমা (আ.), হাসান (আ.) ও হুসাইন (আ.) কে সকল ধরনের পাপ-পঙ্কিলতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত রেখেছেন। সুতরাং হযরত ফাতিমা নিষ্পাপ হিসাবে কখনও মিথ্যা বলতে পারেন না। এছাড়া হাদীসে কেসা নামে প্রসিদ্ধ হাদীসটি যা সুন্নী মাযহাবের অনেক সহীহ গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে, সে হাদীসের দৃষ্টিতেও তিনি হচ্ছেন মা’সূমাহ্ তথা সকল ধরনের ভুল-ক্রটির উর্ধ্বে। এমন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কোন ব্যক্তির সাক্ষী ও দাবী কিভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারে?
     (৩) ইমাম আলী (আ.)-এর একার সাক্ষ্যদানও এক্ষেত্রে যথেষ্ট ছিল। কেননা, তিনিও ইসমাতের অধিকারী তথা সকল ধরনের ভুল-ক্রটির ঊর্ধে। এ ছাড়া আয়াতে তাতহীর এবং অন্যান্য আয়াত ও রেওয়ায়াত এ বিষয়ের সঠিকতার প্রতি ইঙ্গিত করেছে। রাসূল (সা.)-এর প্রসিদ্ধ হাদীস :
الحقّ مع علي،  و علي مع الحقّ،  يدور معه حيثما دار
"আলী (আ.) হকের সাথে ও হক আলীর সাথে। সে যেখানেই থাকবে, হকও তাঁর সাথেই থাকবে।”৪ সুতরাং যে আলী (আ.) কে কেন্দ্র করে হক আবর্তিত হয়, তাঁর সাক্ষ্য কিভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে গণ্য হবে?
   এটা কিভাবে সম্ভব যে, আলী (আ.) সম্পর্কে রাসূল (সা.)-এর এরূপ সুস্পষ্ট ঘোষণা -যা শিয়া ও সুন্নী উভয় মাযহাবের হাদিস সংকলকরা বর্ণনা করেছেন- থাকা সত্ত্বেও তাঁর সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যাত হবে?
     (৪) হযরত উম্মে আইমান (রা.)-এর একার সাক্ষ্যদানও এক্ষেত্রে যথেষ্ট। কেননা, ইবনে আবীল হাদীদ (রহঃ) এ বিষয়ে বর্ণনা করেছেন যে, উম্মে আইমান (রা.) তাদের উদ্দেশে বলেন : তোমরা কী জান না যে, রাসূল (সা.) আমার সম্পর্কে বলেছেন যে, আমি হলাম বেহেশতবাসী। (অর্থাৎ যদি এ বিষয়টি জেনে থাক, তবে কেন আমার সাক্ষ্যকে প্রত্যাখ্যান করছ।)৫
     (৫) এতদসত্ত্বেও যখন বিভিন্ন (স্পষ্ট ও আনুষঙ্গিক) দলীল-প্রমাণের ভিত্তিতে কোন বিষয়ে বিচারকের নিশ্চিত জ্ঞান অর্জিত হয়, তখন বিচারের ক্ষেত্রে তা-ই যথেষ্ট। তাহলে একদিকে মালিকানা ও আয়ত্তাধীন থাকার বিষয়টি, আর অপরদিকে সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রদান যাদের প্রত্যেকের সাক্ষ্য যথেষ্টতার ক্ষেত্রে সুপ্রমাণিত, তা কী প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও নিশ্চয়তা প্রদান করে না?
     (৬) নবী (আ.) গণের উত্তরাধিকারী সম্পদ না রেখে যাওয়ার হাদীসটি অন্য অর্থে ও অন্যভাবে বর্ণিত হয়েছে, না ফাদাক দখলকারীরা যে অর্থে ব্যবহার করেছেন। কেননা, বিভিন্ন হাদীসগ্রন্থে হাদীসটি এভাবে বর্ণিত হয়েছে :
انّ الاَنبياء لم يورّثوا ديناراً ولا درهماً ولكن ورّثوا العلم فمن اخذ منه اخذ بحظ وافر
 "নবীগণ (আ.) উত্তরাধিকারী তথা উত্তরাধিকারী সম্পদ হিসেবে দিরহাম ও দিনার রেখে যান না, বরং তাঁদের উত্তরাধিকারী সম্পদ হচ্ছে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা।  যারা তাদের থেকে অধিকতর জ্ঞান ও শিক্ষা অর্জন করবে, তারা অধিকতর উত্তরাধিকারী সম্পদ লাভ করেছে।” ৬
     এ হাদীসটি নবীগণের (আ.) আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে এবং এটির সাথে পার্থিব উত্তরাধিকারের কোন সম্পর্ক নেই। এ প্রসঙ্গে অপর একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে :
العلماءُ ورثة الآنبياءِ
"আলেমরা হচ্ছেন নবীদের (আ.) উত্তরাধিকারী।”
      বিশেষত "আমরা যা কিছু রেখে যাই তা সাদকা হিসেবে পরিগণিত হবে।” এ বাক্যটি নিঃসন্দেহে উপরোক্ত হাদীসের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় নি। এটা কী কখনও সম্ভব যে, রাসূল (সা.) থেকে কোরআন পরিপন্থী কোন হাদীস বর্ণিত হবে? কারণ, কোরআন নবি ও সাধারণ মানুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য উত্তরাধিকার রয়েছে বলেছে।
     কেননা, পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে৭ উল্লেখ করা হয়েছে যে, নবীগণ (আ.) উত্তরাধিকারী সম্পদ রেখে যান। এ সমস্ত আয়াতে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, উত্তরাধিকার বলতে কেবল আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারই নয় বরং পার্থিব উত্তরাধিকারও সেটার অন্তর্ভুক্ত।
     এ কারণে নারীকুলের শিরোমণি হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) মসজিদে নববীতে (সা.) মুহাজির ও আনসারদের সম্মুখে যে ঐতিহাসিক খুতবা প্রদান করেছিলেন, সেখানে তিনি উক্ত আয়াতসমূহের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। আর কোন আনসার এবং মুহাজিরও তা অস্বীকার করেন নি।
এ সমস্ত দলীল প্রমাণ করে যে, (উত্তরাধিকারী সম্পদ না রেখে যাওয়া সম্পর্কে) পূর্বোক্ত হাদীসটি সঠিক নহে।
     (৭) যদি উক্ত হাদীসটি সঠিক হয়ে থাকে, তবে এটা কিভাবে সম্ভব যে, রাসূল (সা.)-এর স্ত্রীগণ তা শুনেন নি এবং প্রথম খলিফার নিকট এসে রাসূল (সা.)-এর উত্তরাধিকারী সম্পদ থেকে অংশের দাবী জানান।৮
৮) যদি উক্ত হাদীসটি সঠিক হয়ে থাকে, তবে কেন প্রথম খলিফা একটি পত্রের মাধ্যমে নির্দেশ দেন যে, ফাদাককে ফাতেমা যাহরা (আ.)-এর নিকট ফেরত দেওয়া হোক। কিন্তু দ্বিতীয় খলিফা উক্ত পত্রটি নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন। ৯
     (৯) আর যদি এ হাদীসটি বাস্তবিক অর্থে সঠিক হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই ফাদাককে সাদকা হিসেবে সেটির প্রকৃত হকদারদের মধ্যে বন্টন করা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু কেন দ্বিতীয় খলিফা তার খেলাফতকালে (যখন সময় অতিবাহিত হয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত যা সংঘটিত হওয়ার হয়ে গিয়েছিল) ইমাম আলী (আ.) ও হযরত আব্বাস (রা.) কে ডেকে তাঁদের নিকট ফাদাক ফেরত দিতে সম্মত হয়েছিলেন। আর ইসলামের ইতিহাসেও এ ঘটনাটি সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ আছে।
     (১০) শিয়া ও সুন্নী উভয় মাযহাবের বিখ্যাত ও প্রসিদ্ধ গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে যে, তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.)কে ফাদাক ফেরতদানে অস্বীকৃতি জানানোর পর, নারীকুল শিরোমণি ক্রোধান্বিত হয়ে ফাদাক দখলকারীদ্বয়ের উদ্দেশে বলেন, "আমি তোমাদের সাথে কখনও কথা বলব না।” এ অবস্থা হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) অত্যন্ত ব্যথা ও বেদনার্ত হৃদয় নিয়ে যখন এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেন তখন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।১০
     অথচ রাসূল (সা.)-এর নিম্নের হাদীসটি ইসলামের প্রসিদ্ধ হাদীসগ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে :
من احبّ ابنتي فاطمة فقد احبّني،  و من ارضى فاطمة فقد ارضاني،  ومن اسخط فاطمة فقد اسخطني 
 "যে ব্যক্তি আমার কন্যা ফাতেমা (আ.)-কে ভালবাসল, সে আমাকেই ভালবসল এবং যে তাকে সন্তুষ্ট করল, সে আমাকেই সন্তুষ্ট করল। আর যে ব্যক্তি তাকে অসন্তুষ্ট করল, সে আমাকেই অসন্তুষ্ট করল।”১১
      এতদসত্ত্বেও হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) যে অধিকারের দাবী তুলেছেন, সেটা প্রদানে অস্বীকৃতি জানানো এবং এমন একটি হাদীস যেটির সত্যতার কোন প্রমাণ নেই ও পবিত্র কোরআনের সুস্পষ্ট ঘোষণার (নবী-রাসূল (আ.) গণের উত্তরাধিকারীরা তাঁদের থেকে উত্তরাধিকারী সম্পত্তির অধিকারী হয়)’ পরিপন্থী হাদীসকে কখনও দলীল হিসেবে ব্যবহার করা কি আদৌ যৌক্তিক?
     সুতরাং, ফাদাক দখলের কোন যৌক্তিকতা এবং উক্ত কাজের পক্ষে কোন দলীলের হদিস পাওয়া যাবে না। কেননা,
     প্রথমত : সেটার মালিকানা হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.)-এর অধীনে ছিল।
     দ্বিতীয়ত : বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন।
     তৃতীয়ত : পবিত্র কোরআনের সুস্পষ্ট ঘোষণা।
     চতুর্থ : বিভিন্ন হাদীস ও রেওয়ায়েত ফাতেমা যাহরা (আ.)-এর দাবীর সত্যতা এবং ফাদাক তাঁর প্রাপ্য ও ন্যায্য অধিকার হওয়ার পক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে।
     এছাড়া পবিত্র কোরআনে বর্ণিত উত্তরাধিকারী সম্পদ সংক্রান্ত অনেক আয়াতে পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজন থেকে রক্ত সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিশেষত সন্তানদের উত্তরাধিকার দেওয়া হয়েছে।১২ আর যতক্ষণ পর্যন্ত এ সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম কোন নির্ভরযোগ্য দলীল উপস্থাপন করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত উক্ত ইসলামী বিধানকে বিন্দুমাত্র অগ্রাহ্য করা আদৌ সম্ভব নয়। এ বিষয়টিও ফাতেমা যাহরা (আ.)-এর পক্ষে অন্যতম দলীলস্বরূপ।
1.    انّا معاشرالآنبياءٍ لا نورث ما تركناه صدقة
2.    কেননা তিনি তাঁর দু’ সন্তানসহ কিয়ামতের দিন আল্লাহর রাসূলের সাথে এক পর্যায়ে থাকবেন। মুসনাদে আহমাদ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১০১ ও ২য় খণ্ড পৃ. ১২৮ হাদিস ৭৯২।–সঙ্কলক
3.    সূরা আহযাব:৩৩।
4.    মাজমাউয যাওয়ায়িদ, আল হাফিজ আল হাইসামী, ৭ম খণ্ড, পৃ. ২৩৫; মুসনাদে আবুইয়ালা, ২য় খণ্ড, পৃ.৩১৮, হাদিস ১০৫২, ইবনে হাজার  আসকালানী, আলমাতালিবুল আলীয়াহ, ১৬তম খণ্ড, পৃ.১৪৭, হাদিস ৩৯৪৫, গবেষণা: ডক্টর সায়াদ বিন নাসির বিন আবদুল আযিয আশশাতুরী, দারু আসোমাহ ও দারুল গাইস, সৌদি আরব, প্রকাশ: ১৪১৯হি; ইবনে আসাকির, তারিখু মাদিনাতি দামিস্ক, ৪০তম খণ্ড, পৃ. ৪৪৯, হাদিস ১৯৫৬৭, দারুল ফিকর প্রকাশনা, বৈরুত,তারিখে বাগদাদ, গবেষণা মোস্তফা আবদুল কাদির আতা এবং ২০তম খণ্ড, পৃ. ৩৬১, আল ইমামাহ ওয়াস সিয়াসাহ, গবেষণা : আলী শিরী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৮,তাফসীরুল কাবির, ১ম খণ্ড, পৃ. ২০৫ ও ২০৭, আল মাহসুল, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ১৩৪,আল মুসতাদরাক, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১২৪, হাদীস ৪৬২৯।–সঙ্কলক
5.    ইবনে আবীল হাদীদ রচিত "শারহে নাহজুল বালাগা”, ১৬তম খণ্ড, পৃ:২১৯ ।
6.    শেখ কুলাইনী (রহঃ) সঙ্কলিত " উসূলে কাফী "গ্রন্থ, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩৪।
7.    তুমি তোমার নিকট হতে আমাকে উত্তরাধিকারী দান কর।  যে আমার ও ইয়াকুব-এর বংশের উত্তরাধিকারী হবে; (মারইয়াম : ৫ ও ৬)  এবং সুলাইমান দাউদের উত্তরাধিকারী হয়েছিল। (নামল : ১৬) হযরত ফাতিমা এ আয়াত দুটি প্রথম খলিফার সামনে পাঠ করে নিজের উত্তরাধিকারের বৈধতা প্রমাণ করেন। তাছাড়া পবিত্র কোরআন রাসূলসহ সকলের জন্য উত্তরাধিকারের বিষয়ে অসিয়ত করাকে ফরয করেছে। বাকারা:১৮০) –সঙ্কলক
8.     মোজামুল বুলদান গ্রন্থ সূত্রে ইবনে আবিল হাদীদের শারহে নাহজুল বালাগাহ, ১৬তম খণ্ড, পৃ.২২৮।
9.    সিরাতে হালাবী, খণ্ড ৩য়,পৃঃ ৩৯১।
10.    সহীহ বুখারী, মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১১২৬, হা. ২৯২৬, ৪র্থ খণ্ড, কিতাবুল মাগাযি, বাবু গাযওয়াতু খাইবার, পৃ. ১৫৪৯, হা. ৩৯৯৮; ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২৪৭৪, হা. ৬৩৪৬; গবেষণা: ড. দিবুল বিগা, দারু ইবনে কাসির, বৈরুত, ১৪০৭ হিজরি, ১৯৮৭সাল।–সঙ্কলক
11.     আলইমামাহ ওয়াসসিয়াসাহ, ইবনে কুতাইবা, পৃ. ১৪। তেমনি রাসূল (সা.) হযরত ফাতিমা, ইমাম হাসান ও হোসাইন (আলাইহিমুস সালাম) কে উদ্দেশে বলেন: যে তোমাদের সাথে যুদ্ধে ও বিবাদে লিপ্ত হয় আমিও তার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হই এবং যে তোমাদের সাথে সন্ধি করে আমি তার সাথে সান্ধি করি।  তিনি আরো বলেন : যে ফাতিমাকে ক্রোধান্বিত করে ও কষ্ট দেয় সে আমাকে্ই ক্রোধান্বিত করল ও কষ্ট দিল। (সুনানুত তিরমিযি, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩৬০ ও পৃ. ৬৯৮, হা. ৩৮৬৭; বৈরুত, সুনানু ইবনে মাজাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৪৪, হা. ১৯৯৮ ও ১ম খণ্ড, পৃ. ৫২, হা. ১৪৫; উসদুল গাবাহ, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৫২৩) এবং নিশ্চয় আল্লাহ ফাতেমার্ ক্রোধে ক্রোধান্বিত হন। তাবারানী,  মোজামুল কাবির, ১ম খণ্ড, পৃ.৮৯ হাদিস ১৮০ ও ১৬তম খণ্ড, পৃ.২৫৫, হাদিস১৮৪৩৪; ইবনে আবি আসেম, আলআহাদ ওয়াল মাসানী, ৫ম খণ্ড, পৃ.৩৬৩, হাদিস ২৯৫৯ ও আবু ইয়ালা মাওসেলী, আলমোজাম,  ১ম খন্ড, পৃ.২৩৩, হাদিস ১৪১। -সঙ্কলক
12.    এবং আল্লাহর গ্রন্থে আত্মীয়-স্বজনদের কেউ কেউ অন্যের অপেক্ষা অধিক হকদার; (আনফাল : ৭৫); তোমাদের আদেশ দেওয়া হয়েছে যে, যখন তোমাদের মধ্যে কারও সম্মুখে মৃত্যু এসে দাঁড়ায় এবং সে যদি ধন-সম্পত্তি ত্যাগ করে যায়, তবে পিতা-মাতা ও আত্মীয়দের জন্য ন্যায়সঙ্গতভাবে অসিয়ত করে যাবে। (বাকারা : ১৮০); আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের সম্বন্ধে তোমাদের তাকিদপূর্ণ নির্দেশ দান করেছেন যে, পুত্রের অংশ দু’কন্যার অংশের সমান; (নিসা : ১১) হযরত ফাতিমা এ আয়াতগুলি প্রথম খলিফার সামনে পাঠ করে নিজের উত্তরাধিকারের বৈধতা প্রমাণ করেন।--সঙ্কলক
  ট্যাগ: কোরআন, সুন্নাত, ইতিহাস, ফাদাক, হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.), খলিফা আবু বকর,
মূল : আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাযি
সঙ্কলন ও গবেষণা : আবুল কাসেম

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: