bayyinaat

Published time: 06 ,December ,2018      08:40:56
সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর দৃষ্টিতে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ী (১)
আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ী ইরানে বসবাসকারী একজন ফকীহ ও নেতা মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়েও সূক্ষ্ম সঠিক জ্ঞান রাখেন। এ কারণেই মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয়ে তিনি প্রাজ্ঞজনোচিত ও সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
সংবাদ: 162
 
সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর দৃষ্টিতে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ী (১)প্রবন্ধ: ইসলামী বিপ্লবের মহান নেতা ইমাম আল খামেনেয়ীর সাথে আমার ব্যক্তিগত ও প্রত্যক্ষ পরিচয় ঘটে ১৯৮৬ সালে। তারপর থেকে তাঁর সঙ্গে আমার অসংখ্যবার সাক্ষাতের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে  যার ফলে নিকট থেকে আমি তার চিন্তাধারা, মতসমূহ, দৃষ্টিভঙ্গির বুনিয়াদ, বিভিন্ন ঘটনা ও উদ্ভূত সমস্যাসমূহ পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের পদ্ধতি, তাঁর আকর্ষণীয় চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য যেমন বিনয়ী আচরণ, কোমল ব্যবহার, ভালবাসা, উদারতা, ধৈর্য, আত্মসংযম, সাধারণ জীবন যাপন ইত্যাদি উন্নত গুণাবলীর সাথে পরিচিত হই। আমি তাঁর লিখিত প্রচুর গ্রন্থ ও লেখনী পাঠ করেছি। তাঁর সম্পর্কে আমি এ দাবি করতে পারি যে তাঁর লিখিত অধিকাংশ গ্রন্থ ও লেখনী আমি পড়েছি এবং ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর  মৃত্যুর পর তাঁর নেতৃত্ব গ্রহণের পর থেকে আজ পর্যন্ত তিনি যত বক্তব্য ও বাণী দিয়েছেন, বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের সাথে সাক্ষাৎ ও সংলাপ করেছেন সেগুলোর বেশীরভাগই আমি শুনেছি অথবা পড়েছি। তিনি ফিকাহ শাস্ত্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্লাসে (দারসে খারেজে) এ শাস্ত্রের বিভিন্ন অধ্যায়ের যে আলোচনাগুলো করেছেন তা আমি শুনেছি অথবা নোটগুলো সংগ্রহ করে পড়েছি।
তাঁকে খুবই নিকট থেকে চেনেন এমন অনেক উচ্চ পর্যায়ের ফকীহ, চিন্তাবিদ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এবং তাঁর ব্যক্তিত্ব, চিন্তাধারা, অনুসৃত রাজনৈতিক পদ্ধতি, সংগ্রামী জীবন পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করলে নিশ্চিতভাবে বলা যায়  তিনি নেতৃত্বের উত্তম বৈশিষ্ট্যসমূহের অধিকারী এক মহান নেতা। ফিকাহ ও ইজতিহাদী জ্ঞানে তিনি শীর্ষস্থানীয়দের অন্যতম, খোদাভীতি ও আত্মসংযমের বৈশিষ্ট্যে তিনি অনন্য, যুগ চিন্তা ও আধুনিক বিষয়ে সচেতন এক সুপণ্ডিত ব্যক্তি।
তাঁর চিন্তাধারা ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে অলোচনা করতে গেলে আমরা এমন এক ব্যক্তিত্বের মুখোমুখি হই যিনি দৃঢ়, সুপ্রতিষ্ঠিত, গভীর, সর্বব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী যা নিম্নোক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত।
    প্রকৃত জ্ঞান ও চিন্তার সুদৃঢ় ভিত্তি;
    যুগের চাহিদা ও বর্তমান বিশ্বের সমস্যা সম্পর্কে পূর্ণ অবগতি;
    মুসলিম উম্মাহর সুপ্ত প্রতিভা ও যোগ্যতা এবং বিদ্যমান বস্তুগত সুবিধা সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান।
    ইসলামের মৌলনীতির ভিত্তিতে বিদ্যমান সমস্যাসমূহের নিয়মতান্ত্রিক সমাধান দানের যোগ্যতা।
একারণেই আমরা দেখি প্রতিটি ঘটনা, পরিবর্তন ও জটিল বিষয়ে তিনি উপরোক্ত সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গিকে সামনে রেখে তার গভীরে প্রবেশ করছেন ও তার প্রকৃত স্বরূপকে উদঘাটন করছেন। তিনি যে কোন বিষয়ের মুখোমুখি হন না কেন যখন সে বিষয়ে তিনি তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেন তখন শ্রোতা উপলব্ধি করেন যে, তিনি বিষয়টির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে গভীরভাবে জ্ঞাত। ফলে বিষয়বস্তুর বৈচিত্র ও ভিন্নতা ঐ বিষয়ে তাঁর বিশেষজ্ঞোচিত মত প্রদানের পথে অন্তরায় হয় না। তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে আশা বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সামনে তিনি যে বক্তব্য প্রদান করেন তা আমি ভালভাবে লক্ষ্য করেছি। প্রচার মাধ্যমে আমি তাঁর যে বক্তব্যগুলির পূর্ণ বিবরণ দেখেছি তার শ্রোতাদের কিছু নমুনা আমি এখানে তুলে ধরছি।
ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, আলেম সমাজ ও ছাত্র: যখন তিনি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক,আলেম ও ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন তখন তিনি দীর্ঘ দিন এ ঐতিহ্যের মধ্যে লালিত একজন প্রথিতযশার ন্যায় এ ক্ষেত্রে তাঁর মত ব্যক্ত করেন। যেহেতু তিনি দ্বীনি শিক্ষার ধরন, পাঠ্যসূচি, পাঠ্যপুস্তক, যুগ যুগ ধরে এ ধারায় যে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত সেহেতু এক্ষেত্রে ইতিবাচক দিকসমূহকে উত্তমরূপে কাজে লাগানো এবং বিদ্যমান ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যকে সামনে রেখে একদিকে এর মৌলিকত্বকে সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন অন্যদিকে আধুনিক জ্ঞান ও শিক্ষা থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী গ্রহণ ও যুগ জিজ্ঞাসার জবাব দানের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার ওপর জোর দেন।
চিন্তাবিদ, বুদ্ধিজীবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রবৃন্দ:
চিন্তাবিদ, বুদ্ধিজীবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের উদ্দেশে বক্তব্য দানের সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের ন্যায়-যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগের বিদ্যমান সমস্যা, সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রসমূহ ও সার্বিক দিক সম্পর্কে জ্ঞাত- তাঁর বক্তব্যকে উপস্থাপন করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি নিয়ে কথা বলেন এবং জাতীয় লক্ষ্যকে সামনে রেখে দিক নির্দেশনা দান করেন।
নারীসমাজ: তিনি যখন নারী সমাজের বিভিন্ন কর্মকা- নিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দান করেন তখন ইসলামের আলোকে নারীর মর্যাদা,তাদের মূল ভূমিকা ও দায়িত্ব এবং আধুনিক সমাজে নারী সমাজের সামনে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় তাদের করণীয় সম্পর্কে পথপ্রদর্শ্ক হিসেবে স্বীয় দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন।
অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও ব্যবস্থাপকগণ
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইসলামী রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের সাথে সামঞ্জস্যশীল অর্থনীতির যে রূপরেখা (২০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা ও বেসরকারীকরণ নীতি) তিনি প্রদান করেছেন এর আলোকে কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন।
চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, শিক্ষক ও কৃষকসমাজ: এ সকল পেশার ব্যক্তিদের সাথে বৈঠকে তিনি ইসলাম ও জাতীয় স্বার্থরক্ষায় তাদের করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দান করেন।
চিত্র নির্মাতা, চিত্রশিল্পী, প্রযোজক, পরিচালক:  চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে জাতিগত ও ইসলামী সংস্কৃতিকে সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি শৈল্পিক ও যুগোপযোগী চলচ্চিত্র নির্মাণকে সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতার কথা বলেন।
সাহিত্যিক, কবি, সংগীত শিল্পী: সাহিত্য, চারুকলা, সংগীত ইত্যাদি বিষয়েও তিনি জ্ঞানবিদগ্ধ আলোচনা রাখেন।
কোরআনের কারী, হাফেজ, শোকগাঁথা রচয়িতা ও পাঠকারী, ধর্মীয় সংগীত শিল্পী: তিনি বছরে দুবার এধরনের ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ও তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দান করেন।
রাজনৈতিক ও সামরিক ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক: এ ধরনের একটি বৈঠকে আমি স্বয়ং উপস্থিত ছিলাম। তিনি যখন সামরিক বিষয়ে তাঁর আলোচনা শুরু করলেন তখন আমি প্রথমবারের মত তাঁকে একজন সমর বিশেষজ্ঞ হিসেবে আবিষ্কার করলাম। আমি জানতে পারলাম তিনি বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ কৌশল সম্পর্কেই শুধু অবহিত নন এমনকি আধুনিক ক্ষুদ্র ও ভারী বিভিন্ন প্রকারের সমরাস্ত্র বিষয়েও পর্যাপ্ত জ্ঞানের অধিকারী।প্রকৃতপক্ষে আমরা তাঁর ব্যক্তিত্বের যে দিক নিয়েই আলোচনা করতে যাই তাঁকে একজন মহান ও সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী এক ব্যক্তি হিসেবে পাই। কিন্তু (দুঃখজনকভাবে) মুসলিম উম্মাহর এক বড় অংশ তাঁর সম্পর্কে তেমন কিছু জানেনা। আমার দৃষ্টিতে সত্যিই এই মহান নেতার প্রতি এক্ষেত্রে অবিচার করা হয়েছে। তিনি শুধু মুসলিম উম্মাহর মধ্যে নন এমনকি স্বয়ং আমাদের ইরানী ভাইদের মধ্যেও যথার্থভাবে পরিচিত নন। এমনকি তাঁর ব্যক্তিত্বের সবচেয়ে প্রকাশিত দিক অর্থাৎ বিগত বিশ বছরে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রে তিনি যে সফলতার পরিচয় দিয়েছেন তাও আমাদের কাছে অজ্ঞাত থেকে গেছে। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, একদিকে তাঁর শত্রুরা তাঁর গুণ ও বৈশিষ্ট্য প্রচারিত হওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে অন্যদিকে বন্ধুরাও তাঁর পরিচয় তুলে ধরার ক্ষেত্রে শৈথিল্য প্রদর্শন করেছে ও সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেনি। শত্রুরা সবসময় তাঁকে দৃষ্টির অন্তরালে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছে ও খণ্ডিত বা বিকৃতভাবে তাঁকে উপস্থাপন করেছে। এরূপ পরিস্থিতিতে আমাদের দায়িত্ব হল মুসলিম উম্মাহর সামনে এই মহান ফকীহ, চিন্তাবিদ ও নেতাকে পরিচিত করানো। কারণ তাঁর বক্তব্য ও কর্মের মধ্যে যেমন আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শিক্ষা ও দুনিয়ার কল্যাণ রয়েছে তেমনি আখেরাতের মুক্তি ও কল্যাণও নিহিত রয়েছে।
বর্তমানে মুসলিম উম্মাহ বিভিন্ন ময়দানে যে সকল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে যার নমূনা পূর্ববর্তী শতাব্দীগুলোতে কখনই ছিল না। এ সকল চ্যালেঞ্জের মুকাবেলায় তাঁর নির্দেশনা নিঃসন্দেহে সবচেয়ে ফলপ্রসূ ও কার্যকর। আর তাই তাঁর চিন্তাধারা ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা সভা ও সেমিনারের আয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বের দাবি রাখে।
এখন আমি ইমাম আল-খামেনেয়ীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও নেতৃত্বের দিকটি নিয়ে প্রামাণ্য কিছু আলোচনা করব। এ বিষয়টি আমি হিজবুল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁর সাথে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা থেকে উল্লেখ করব যা আমাদের সামনে মধ্যপ্রাচ্য বিশেষত লেবানন বিষয়ে তাঁর গভীর রাজনৈতিক জ্ঞান ও সূক্ষদৃষ্টির পরিচয় প্রকাশ করবে। এক্ষেত্রে আমার নিকট বহু সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু সময়ের স্বল্পতার কারণে আমি তার থেকে কয়েকটির মাত্র এখানে উল্লেখ করব। তবে ঘটনার বিবরণ দিতে অত্র এলাকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও পরিবেশকে সামনে রেখে সংবেদনশীল বিষয়গুলোর উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকব।
এটা আমার কাছে আশ্চর্যের বিষয় যে, ইরানে বসবাসকারী একজন ফকীহ ও নেতা অত্র অঞ্চলের প্রতিটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়েও এতটা সঠিক জ্ঞান রাখেন। এ কারণেই মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয়ে তিনি প্রাজ্ঞজনোচিত ও সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যে ব্যক্তি সম্পর্কে আমরা কথা বলছি তিনি লেবানন, সিরিয়া, মিশর, ফিলিস্তিন কিংবা জর্ডানের অধিবাসী নন যে, এখানকার বিদ্যমান সমস্যা ও দ্বন্দ সম্পর্কে সরাসরি অবহিত।
১৯৯১ সালে যখন মাদ্রিদে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল এবং ইরাককে অভিযুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে আসল। ইতঃপূর্বে সোভিয়েট ইউনিয়নের পতনের কারণে পৃথিবীতে যুক্তরাষ্ট্র একক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। ‘ডেজাট্র্ স্টম্র্’ অভিযান শুরুর পরপরই আরব বিশ্বের দেশগুলোর রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিরা প্রথম বারের মত সকলে এক টেবিলে বসল।লেবানন ও সিরিয়াও এতে অংশগ্রহণ করেছিল। তারা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল যে,সমগ্র বিশ্বের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে। বিশেষত মার্কিনীরা মধ্যপ্রাচ্যে আসার কারণে তার প্রভাব এ অঞ্চলে সরাসরি  পড়েছে। এ অবস্থায় আমেরিকা তার রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তকে সার্বিক, ন্যায় ও শান্তিবাহী আখ্যায়িত করে বিশ্বব্যাপী তা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছিল। আমরা এ পরিকল্পনাকে ‘চাপিয়ে দেয়া নিষ্পত্তি চুক্তি’ বলে অভিহিত করতাম। এ পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞমহল  ও নেতৃবৃন্দের সকলেই এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছিলেন যে,মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর জন্য মার্কিন পরিকল্পনা মেনে নেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই।কেননা তা প্রত্যাখ্যানের পরিণতি ভয়াবহ হবে।
আমার মনে আছে সেই সময়ইমাম আল-খামেনেয়ী এ মতের বিপরীতে ভিন্ন মত ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে,মাদ্রিদ সম্মেলন তার উদ্দেশ্যে পৌঁছতে পারবে না ও এর চুক্তিসমূহ ব্যথ্র্ হবে। আর মার্কিনীরাও মধ্যপ্রাচ্যে একচেটিয়াভাবে তার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারবে না।আজ ২০ বছর পর আমরা এ কথার সত্যতাকে দিবালোকের মত স্পষ্ট লক্ষ্য করছি। সেসময় যারা মাদ্রিদ ও অসলো চুক্তিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের অনেকের সাথে যখন আমাদের দেখা হয় তারা তার নৈরাশ্যজনক পরিণতির কথা এখন স্বীকার করেন।
তেমনি ১৯৯৬ সালে ইসরাইল ও সিরিয়ার মধ্যে যখন সংলাপ শুরু হয় এবং ইসরাইল গোলান উপত্যকা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে ১৯৬৭ সালের পূব্র্ সীমায় ফিরে যেতে সম্মত হয়,তখন সকলেই বলছিল ইসরাইল ও সিরিয়ার মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হবে। যেহেতু ঠিক এর তিন বছর পূর্বেই ১৯৯৩ সালে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল এবং মিশর ও জর্ডান  এ চুক্তিকে সমর্থ্নই শুধু করে নি বরং চুক্তি স্বাক্ষরে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। এ অবস্থায় সিরিয়া ও লেবানন ছাড়া কেউই বাকি ছিল না। তাই গোলান উপত্যকা ছেড়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে সিরিয়া যদি ইসরাইলের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয় তবে লেবানন একা পড়ে যাবে। ফলে সেও বাধ্য হয়ে শান্তিচুক্তিকে শ্রেয় জ্ঞান করবে। সেক্ষেত্রে হিজবুল্লাহর সকল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের আশা তিরোহিত হবে (এবং হিজবুল্লাহর অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়বে)।এ বিষয়ে আলোচনার জন্য আমরা তেহরানে যাই এবং ইরানের কয়েকজন শীষ্র্ স্থানীয় নেতার সাথে আলোচনায় বসি। তারাও এ বিষয়ে আশাব্যঞ্জক কোন কথা বলেননি। এর পর আমি ও কয়েক ভাই ইমাম আলী আল-খামেনেয়ীর সাথে দেখা করতে যাই। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বললেন,‘আমি মনে করি না যে বিষয়টির সমাপ্তি ঘটে গেছে এবং সিরিয়া ও ইসরাইলের মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হবে। আমি আপনাদের নিকট হিজবুল্লাহর কার্যক্রমকে অব্যাহত রাখার প্রস্তাব দিচ্ছি এবং কোন প্রকার জল্পনা-কল্পনাকে প্রশয় না দিয়ে নিজেদের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের চেষ্টায় রত হওয়ার উপদেশ দিচ্ছি। তাঁর এই বিশ্লেষণ ও নির্দেশনা আমরা মধ্যপ্রাচ্যে ও লেবাননে যা প্রত্যক্ষ করছিলাম তার সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল। আমরা এ সফর থেকে লেবাননে ফিরে যাওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যেই ইসরাইলের প্রধান মন্ত্রী আইজাক রবিন এক অতর্কিত হামলায় নিহত হয়। এর ঠিক পরপরই হামাস ও ইসলামী জিহাদ ইসরাইলের অভ্যন্তরে একের পর এক আত্মঘাতি হামলা শুরু করে। ফলে ইসরাইলের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে এবং সে আক্রমণাত্মক অবস্থা থেকে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থায় চলে যায়। দক্ষিণ লেবানন ও ইসরাইলের সীমান্তেও সংঘর্ষ শুরু হয়। ফলে ১৯৯৬ সালে মিশরের শারমাল শাইখে ইসরাইলকে সমর্থন দানের উদ্দেশ্যে বিশ্বের নেতারা মিলিত হয় এবং হামাস, ইসলামী জিহাদ ও হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসবাদী দল হিসেবে আখ্যায়িত করে। তাদের আত্মরক্ষামূলক প্রতিরোধ আন্দোলনকে সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা বলে অভিহিত করে এবং তাদের ওপর সকল প্রকার চাপ প্রয়োগ ও অবরোধ আরোপের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ইসরাইল ‘গ্রেপস অফ র‌্যাথ’ নাম দিয়ে দক্ষিণ লেবাননে হামলা শুরু করে। এর পরপরই ইসরাইলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং শিমন পেরেজ নির্বাচনে পরাজিত হয়। নেতানিয়াহু নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে।ফলে অবস্থা সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায় (অর্থাৎ যেন কারো সঙ্গেই ইসরাইলের কোন চুক্তি হয়নি)।এখন প্রশ্ন হল ইমাম আল-খামেনেয়ী কিরূপে অকাট্য সুরে এ কথা বললেন এবং কোথা থেকে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন। যখনঅত্র অঞ্চলের পক্ষ-বিপক্ষের সকল রাজনৈতিক নেতা,বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক অন্যরকম চিন্তা করছিলেন ও মত দিয়েছিলেন। এটা হল দ্বিতীয় সাক্ষ্য-প্রমাণ। (চলবে)
 ট্যাগ: ইসলামী ব্যক্তিত্ব, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ী, ইসলামী বিপ্লবের মহান নেতা, রাহবার, সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ
অনুবাদ: আবুল কাসেম আনোয়ার

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: