bayyinaat

Published time: 06 ,December ,2018      09:33:55
কোরআন বিকৃতি সম্পর্কিত হাদিসসমূহের ওপর একটি পর্যালোচনা
শিয়া মনীষীদের মধ্যে বিকৃতি নির্দেশক হাদীসসমূহের সূত্রসমূহের সঠিকতা (নির্ভরযোগ্যতা) যাচাইয়ের ক্ষেত্রে তেমন মতদ্বৈততা নেই। তাদের অধিকাংশই এই হাদীসগুলির সনদগুলি (বর্ণনাসূত্র) ভিত্তিহীন বলে মনে করেন অর্থাৎ এ বিষয়ে সকল শিয়া হাদীসবেত্তা ও রেজাল শাস্ত্রবিদ (সনদ বিশেষজ্ঞ) একমত পোষণ করেন।
সংবাদ: 164
কোরআন বিকৃতি সম্পর্কিত হাদিসসমূহের ওপর একটি পর্যালোচনামূল প্রবন্ধ: শিয়া গ্রন্থসমূহে এমন কোন হাদীস বিদ্যমান নেই যাতে একটি পূর্ণ আয়াত অথবা কয়েকটি আয়াত কোরআন থেকে হ্রাস অথবা তার সাথে সংযোজিত হয়েছে বলে বলা হয়েছে। এ গ্রন্থসমূহে বিকৃতি সম্পর্কিত যে সকল হাদীস বর্ণিত হয়েছে তাতে শুধুমাত্র আয়াতসমূহের মধ্যে কোন একটি আয়াত থেকে শব্দ অথবা শব্দসমূহ বাদ পড়েছে অথবা পরিবর্তিত হয়েছে বলা হয়েছে।১ যদিও আপাতদৃষ্টিতে কোন কোন হাদীস অধ্যয়নে এই সার্বিক মতটির ব্যতিক্রম রয়েছে মনে হতে পারে কিন্তু একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে স্পষ্ট হবে যে এই নীতির ব্যতিক্রম ঘটেনি। উদাহরণস্বরূপ রাজমের হাদীসের২  ন্যায় কিছু হাদীস যা আহলে সুন্নাতের গ্রন্থসমূহ থেকে শিয়া তাফসীর গ্রন্থসমূহে প্রবেশ করেছে; অনুরূপ সুরা বেলায়েত ও নুরাঈন নামে কল্পিত সুরাটি যা কয়েকটি অবাস্তব ও পরস্পর অসম্পর্কিত বাক্য সমষ্টি বৈ কিছু নয়।
এই কল্পিত বাক্যসমগ্রের কোন হাদীসগত ভিত্তি নেই এবং একাদশ হিজরী শতাব্দী পর্যন্ত এ ধরনের বাক্যের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। এই বানোয়াট সুরাটি (সুরা নুরাঈন) একাদশ হিজরী শতাব্দীতে প্রথমবারের মত একজন অজ্ঞাত খোদাদ্রোহী লেখক কর্তৃক রচিত হয়েছে এবং স্বয়ং রচয়িতা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যে, এ সুরাটি সে একদল ব্যক্তির মুখে শুনেছে।৩ কল্পিত সুরা ‘বেলায়েত’ও একাদশ অথবা দ্বাদশ শতাব্দীতে সংকলিত কোরআনে লিপিবদ্ধ হয়েছে!!৪
কিন্তু সুন্নী গ্রন্থসূত্রে এমন কিছু হাদীসের অস্তিত্ব রয়েছে যাতে একটি অথবা কয়েকটি পূর্ণ আয়াত কোরআন থেকে বাদ পড়েছে বলে বলা হয়েছে।৫ এজন্য তারা বাধ্য হয়ে এই আয়াতগুলির ‘তেলাওয়াত রহিত’ (পঠন নিষিদ্ধ ঘোষিত) হয়েছে বলেছেন।
বিকৃতি নির্দেশক হাদীসসমূহের ক্ষেত্রে গুণগত পার্থক্য
আহলে সুন্নাতের উৎসসমূহে বর্ণিত বিকৃতি নির্দেশক হাদীসসমূহ বিভিন্ন ধরনের যেমন- হ্রাসগত বিকৃতি, আয়াত ও সুরার ক্ষেত্রে বৃদ্ধি ঘটা, কোন কোন আয়াতের ক্ষেত্রে পরিবর্তন, ওহী অবতীর্ণের ক্ষেত্রে শয়তানের বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও পরবর্তী ওহীর মাধ্যমে তা রহিতকরণ, কোরআনের পঠন ও উচ্চারণে বিভ্রান্তি ইত্যাদি।৬
এ হাদীসগুলির প্রতিটিকে উত্থাপিত বিষয়বস্তুর জন্য তার ধরন অনুযায়ী উত্তর প্রয়োজন এবং আহলে সুন্নাতের গবেষক আলেম ও মুফাসসিরদের দৃষ্টিতে যদি ঐগুলির ভিন্নরূপ ব্যাখ্যা করা সম্ভব না হয় তবে তা ভিত্তিহীন বলে গণ্য হবে।৭ শিয়া উৎসসমূহে উল্লিখিত বিকৃতি নির্দেশক হাদীসসমূহের মধ্যে বৈচিত্র নেই এবং সেগুলো থেকে কোরআনের আয়াত বা বাক্যেও মধ্যে শুধুমাত্র শব্দগত অথবা বর্ণনাগত কমতি ঘটেছে বলে মনে হয়। শিয়া গবেষক ও মুফাসসিরদের দৃষ্টিতে যদি এসকল হাদীসকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা না যায় তবে তার কোন ভিত্তি নেই।৮
বর্ণিত সূত্রের সমালোচনা ও পর্যালোচনার ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গীর পার্থক্য
শিয়া মনীষীদের মধ্যে বিকৃতি নির্দেশক হাদীসসমূহের সূত্রসমূহের সঠিকতা (নির্ভরযোগ্যতা) যাচাইয়ের ক্ষেত্রে তেমন মতদ্বৈততা নেই। তাদের অধিকাংশই এই হাদীসগুলির সনদগুলি (বর্ণনাসূত্র) ভিত্তিহীন বলে মনে করেন অর্থাৎ এ বিষয়ে সকল শিয়া হাদীসবেত্তা ও রেজাল শাস্ত্রবিদ (সনদ বিশেষজ্ঞ) একমত পোষণ করেন।৯
কিন্তু আহলে সুন্নাতের আলেমদের মধ্যে এই বিষয়ে তীব্র মত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় এমনকি বিকৃত নির্দেশক হাদীসসমূহের পর্যালোচনায় তাদের দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ ও অস্বীকার অর্থাৎ সম্পূর্ণ বিপরীত দুই অবস্থানে পর্যবসিত হয়েছে। তাদের একদল বিকৃতি নির্দেশক হাদীসসমূহকে একশ’ভাগ সঠিক ও নির্ভরযোগ্য বলেছেন। তার বিপরীতে অপরদল উক্ত হাদীসসমূহকে দুর্বল ও ভিত্তিহীন গণ্য করেছেন।১০
হাদীসের বিষয়বস্তুর পর্যালোচনায় দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য
মূলতঃ শিয়া গবেষক ও মনীষীরা বিকৃতি নির্দেশক হাদীসসমূহের বিষয়বস্তু ও বর্ণনার পর্যালোচনায় উপরিউক্ত হাদীসসমূহে উল্লিখিত কেন্দ্রীয় শব্দসমূহ (শবু ড়িৎফং) যেমন ‘اقرا’ (ইকরা বা পঠন), ‘تنزيل’ (তানযীল বা অবতীর্ণ হওয়া), ‘تحريف’ (তাহরীফ বা বিকৃতি) বিশে¬ষণ এবং ঐতিহাসিক পরিবর্তনের ধারায় ঐগুলির অর্থগত ব্যবহারের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রেখেছেন। সেইখানে কোরআনের পঠনের সঙ্গে তার মূল পাঠ্য (ঞবীঃ) ও বিষয়বস্তুর পার্থক্যের বিষয়টিও উক্ত হাদীসগুলির পর্যালোচনায় তারা লক্ষ্য রেখেছেন। এভাবে তারা এ বিষয়টি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন যে, বিকৃতি নির্দেশক হাদীসসমূহ কোরআনের মূলপাঠ্যেও ব্যাখ্যা ও বিশে¬ষণ করতে বর্ণিত হয়েছে এবং কোরআনের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে অর্থগত যে বিকৃতি ঘটেছে তার প্রতিই উক্ত হাদীসসমূহে ইঙ্গিত করা হয়েছে। ফলে এ বিষয়টির সঙ্গে কোরআনে শব্দগত বিকৃতি (হ্রাস, বৃদ্ধি ও পরিবর্তন) ঘটার কোন সম্পর্ক নেই। ১১
আহলে সুন্নাতের গবেষক ও মুফাসসিরগণ কোরআনে বিকৃতি নির্দেশক হাদীসসমূহ পর্যালোচনায় কোরআনের মূলপাঠ্য ও তার পঠন পদ্ধতি ও রীতির মধ্যে পার্থক্যের দিকটির যুক্তি উপস্থাপনে (উপরিউক্ত পার্থক্যের ভিত্তিতে) ‘পঠন রহিতকরণ’ মতের ওপর নির্ভর করেছেন। ১২ এর মাধ্যমে তারা একদিকে বিকৃতি নির্দেশক হাদীসসমূহের জবাব দানের চেষ্টা করেছেন অপরদিকে সিহাহ সিত্তাহর (প্রসিদ্ধ ছয় শীর্ষ সুন্নী হাদীস গ্রন্থ) রচয়িতাদের কোরআন বিকৃতির বিশ্বাসের অপবাদ থেকে রক্ষার প্রয়াস চালিয়েছেন। যদিও ‘পঠন রহিতকরণ’ তত্ত্বটি তাত্ত্বিক দৃষ্টিতে প্রমাণযোগ্য কিন্তু ব্যবহারিক দৃষ্টিতে কার্যত প্রমাণ করা প্রায় অসম্ভব অর্থাৎ কোন কোন ক্ষেত্রে তা ঘটেছে তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো সম্ভবপর নয় এবং এরূপ দৃষ্টান্ত উপস্থাপনের কাজটি কেউ প্রমাণ করতে পারেননি। বিষয়টি প্রমাণের ক্ষেত্রে যে সকল সমস্যা রয়েছে তা একদল শিয়া তাফসীরকারক ও সুন্নী গবেষক নিুোক্ত ধারায় উল্লেখ করেছেন।
ক. এ বিষয়ক (আয়াতের পঠন রহিতকরণ সম্পর্কিত) হাদীসসমূহ খবরে ওয়াহেদ (একক বা দ্বৈত সূত্রে বর্ণিত হাদীস) সুতরাং নিশ্চিতভাবে বলা যায় খবরে ওয়াহেদের ওপর ভিত্তি করে কোরআনের কোন আয়াতকে প্রমাণ অথবা রহিত করা সম্ভব নয় (কেননা কোরআনের প্রতিটি আয়াত এতটা অধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তা আল্লাহর  পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হওয়ার বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই)। ১৩
খ. এ সকল হাদীসে যে বিশেষ বাক্যটি কোরআনের আয়াত ছিল বলে দাবি করা হয়েছে তা কোরআনের অন্যান্য আয়াতের বর্ণনাভঙ্গি (বচনভঙ্গী), বর্ণনা পদ্ধতি ও ধারা, অলংকার শাস্ত্র (ইলমে বালাগাত) এবং বাগ্মিতার সমপর্যায়ে ও তার সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল হতে হবে অর্থাৎ এ দিকগুলি থেকেও কোরআনের নিশ্চিত আয়াতের মত হওয়া বাঞ্ছনীয়। যেহেতু এ তত্ত্ব অনুযায়ী রহিত বাক্যটি কোরআনের আয়াতের অন্তর্ভূক্ত ছিল পরে রহিত হয়েছে। কিন্তু লক্ষ্য করা যায় রহিত বাক্যসমূহ এ দৃষ্টিকোন থেকে শুধু উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্য বিবর্জিতই নয় বরং সেগুলোর মধ্যে বৈপরীত্য ও অমিলও পরিদৃষ্ট হয় যা ঐ বাক্যসমূহ ওহী না হওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করে। ১৪
গ. কোরআনের আয়াত রহিত হওয়ার বিষয়টি শুধুমাত্র কোরআন অবতীর্ণ হওয়াকালীন সময়ে সম্ভব অথচ এই সকল হাদীসের কোন কোনটি বর্ণনাভঙ্গি হতে বোঝা যায় রহিতকরণের ঘটনাটি মহানবী (সা.) এর মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে ঘটেছে। যেমন মালিক ইবনে আনাস স্বীয় সূত্রে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা থেকে বর্ণনা করেছেনঃ
কোরআনে অবতীর্ণ বাণীর মধ্যে ‘জ্ঞাত সংখ্যায় দশবার দুধ দান নিষিদ্ধতা সৃষ্টি করে’ অংশটি ছিল অতঃপর ‘জ্ঞাত সংখ্যায় পাঁচবার দুধ দান’ সেটিকে রহিত ঘোষণা করেছে। রাসুল (সা.) ইন্তেকাল করলেন এবং কোরআনের পঠিত অংশের মধ্যে এ দু’টি আয়াতও ছিল।১৫ এই হাদীসটি একক সূত্রে বর্ণিত এবং এর বিষয়বস্তু ও বাণী কোনআনের আয়াতের সাথে সামঞ্জস্যশীল নয় এবং বাহ্যতঃ রাসুলের (সা.) মৃত্যুর পর তা রহিত হয়েছে বোঝা যায়।
উপরন্তু যে সকল আয়াতের পঠন রহিত হয়েছে বলা হচ্ছে (দাবি করা হচ্ছে) ঐ সকল হাদীসের বর্ণনাকারীরা তার পঠন রহিত হয়েছে বলেননি। যেমন উপরিউক্ত হাদীসেও পঠন রহিত হওয়ার বিষয়টির প্রতি ইশারা করা হয়নি এবং এরূপ কোন চিহ্ন ও প্রমাণও তাতে নেই।১৬
ইমাম মাহদী (আ.) এর গায়বাতে সোগরা বা স্বল্পকালীন অন্তর্ধানের সময়কার প্রসিদ্ধ হাদিসবেত্তা ও আলেম শেখ সাদুক (রহ. মৃত্যু ৩৮১ হিজরি) তার রিসালাতুল ইতিকাদ গ্রন্থের পৃ. ৯৩ বলেন: ‘কোরআনের বিষয়ে আমাদের বিশ্বাস হল যে কোরআন মহানবি (সা.) এর ওপর নাযিল হয়েছে তা বর্তমানে মানুষের হাতে বিদ্যমান দুই মলাটের মধ্যে সঙ্কলিত কোরআনই। তার বেশি কিছুই নয়।’
ইমাম খোমেইনী (রহ.) বর্তমানে বিদ্যমান কোরআন সম্পর্কে বলেন:
‘এখনও ইমাম আলী (আ.) ও ইমাম সাজ্জাদ আ. এর হাতের লেখা যে কোরআন আমাদের নিকট রয়েছে তা বর্তমানে বিদ্যমান কোরআনের অনুরূপ। এর ব্যতিক্রম ও এর বাইরে কিছুই নেই। তা এই কোরআনই। তাতে কোন পরিবর্তন ঘটেনি।’ (ইমাম খোমনীর বক্তব্যমালা, ৪র্থ খণ্ড, পৃ.১৯১)
তথ্যসূত্র:
১. দেখুন, নুরী, হুসাইন, ফাসলুল খিতাব, পৃ. ২৩৪-২৫০।
২,  বিস্তারিত জানতে দেখুন, বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল, সহীহ, ৮ম খ-, পৃ. ৩০৮, ইবনে আনাস, মালিক, আলমুয়াত্তা, ২য় খ-, পৃ.৮২৪, তুসী, মুহাম্মাদ, আত তিবইয়ান, ১ম খ-, পৃ. ১৩, আল উদ্দাতু ফিল উসুল, ২য় খ-, পৃ. ৫১৪।
৩. এই গ্রন্থের লেখক অজ্ঞাত (সম্ভবতঃ লেখকের নাম মুবাদ কেইখসরু এসফানদিয়ার, দারিসতান মাজাহেব, ১ম খ-, পৃ.২৪৬)।
৪. কল্পিত সুরাটির উৎস ও সূত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন, মুহাম্মদী, ফাতহুল্লাহ, সালামাতুল কুরআন মিনাত তাহরীফ, পৃ. ৩৮২-৪০৭।
৫. প্রাগুক্ত, পৃ. ১৬৩-১৭০।
৬. প্রাগুক্ত, পৃ. ১৫৫-১৮৭।
৭. প্রাগুক্ত, পৃ.১৮৭-২২২।
৮. প্রাগুক্ত, পৃ. ৬৪-৮৪।
৯. প্রাগুক্ত, পৃ. ১১৯-১২৬, বিস্তারিত জানতে দেখুন, বালাগী, নাজাফী, মুহাম্মাদ জাওয়াদ, আলাউর রাহমান ফি তাফসীরিল কুরআন, ১ম খ-, পৃ.২৬, আসকারী, সাইয়্যেদ মুর্ত্তাজা, আল কুরআনুল কারিম ওয়া রিওয়াইয়াতুল মাদরাসাতাইন, এই গ্রন্থের ৩য় খ-ে তিনি এ সম্পর্কিত হাদীসসমূহকে বর্ণনাসূত্রের নির্ভরযোগ্যতা ও বর্ণনাকারীদের বিশ্বস্ততার মানদ-ে পর্যালোচনা করেছেন এবং রিজাল শাস্ত্রবিদদের দৃষ্টিতে উক্ত বর্ণনাসমূহের দুর্বলতা ও ভিত্তিহীনতাকে প্রমাণ করেছেন।
১০. মুহাম্মাদী, ফাতহুল্লাহ, সালামাতুল কুরআন মিনাত তাহরীফ, পৃ. ১৮৭-২০০।
১১. প্রাগুক্ত, প্রথম খ-, পৃ. ২৮৬-৩১৬, মারেফাত, মুহাম্মাদ হাদী, সিয়ানাতুল কোরআন মিনাত তাহরীফ, পৃ. ২৩৯-২৭২, বালাগী, মুহাম্মাদ জাওয়াদ, তাফসীরু আলাইর রাহমান, ২য় খ-, পৃ. ৭৭ এবং অন্যান্য।
১২. দেখুন, মুহাম্মাদী, ফাতহুল্লাহ, সালামাতুল কুরআন মিনাত তাহরীফ, পৃ. ২০৯-২১৩, বিকৃতি নির্দেশক হাদীসের সমস্যা সমাধানে কোন কোন সুন্নী গবেষক উপরিউক্ত হাদীসসমূহ কোরআনের বাণীর ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে বলেছেন যেমন ইবনে সালাম, কাসেম, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৯৫, জারকেশী, আলবুরহান ফি উলুমিল কুরআন, ১ম খ-, পৃ.২১৫, সুবহী সালেহ, মাবাহিসু ফি উলুমিল কুরআন, পৃ. ১১২, আহলে সুন্নাতের কিছু সংখ্যক আলেম ও মুফাসসির উপরিউক্ত হাদীসসমূহ রাসুলের (সা.) অনুসৃত নীতি ও পদ্ধতির (সুন্নাত) প্রতি ইঙ্গিত করছে বলে উল্লেখ করেছেন, যেমন, নাহহাস, আবু জা’ফর, কিতাবুন নাসিখ ওয়াল মানসুখ, পৃ.৮, খৃষ্টান লেখকদের মধ্যে জেফরী, আর্থার তার ‘প্রাথমিক কোরআন বিজ্ঞান’ গ্রন্থের ৮৫ পৃষ্ঠায় সুন্নী মনীষীদের উদ্ধৃতি দিয়ে এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন কেউ কেউ হাদীসগুলি হাদীসে কুদসী (আল্লাহর যে সকল বাণী রাসুলের ভাষায় বর্ণিত হয়েছে) ছিল বলে বলেছেন যেমন- ইবনে কুতাইবা, আব্দুল্লাহ, তাভীলু মুখতালাফাল হাদীস, পৃ. ২৯২, আসেমী, আহমাদ, আল মাবানী লি নাজমিল মায়ানী মাখতুতুন, পৃ.৬২ ও ৬৩, কোন কোন সুন্নী লেখক হাদীসগুলি বর্ণনাকারীদের (রাবী) ভুল এবং রচিত (জাল) বলেছেন যেমন- আলুসী, মাহমুদ, ১২তম খ-, পৃ. ২১৭, রাফিয়ী, সাদিক, ইজামুল কুরআন, পৃ. ৪৪, আহলে সুন্নাতের বিকৃতি নির্দেশক হাদীসের সমস্যা সমাধান পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন, মুহাম্মাদী, ফাতহুল্লাহ, সালামাতুল কুরআন মিনাত তাহরীফ, পৃ. ১৮৭-২০৭।
      ১৩. দ্রষ্টব্য, নাহহাসী, আবু জা’ফর, প্রাগুক্ত, পৃ. ১০-১১।
      ১৪. দ্রষ্টব্য, মুহাম্মদী, ফাতহুল্লাহ, সালামাতুল কুরআন মিনাত তাহরীফ, পৃ. ২১৫।
        ১৫. ইবনে আনাস, মালিক, আল মুয়াত্তা, কিতাবুর রিজা (كتاب الرضاع) বাবু রিজাআতুল কাবির, হাদীস নং ২৬, ২৭ এবং ২৮।
        ১৬. ‘আয়াতের পঠন রহিতকরণ তত্ত্ব’ সংক্রান্ত বিষয়ে (এ তত্ত্বেও ত্রুটি সম্পর্কিত আলোচনা) জানতে দেখুন, খুয়ী, আবুল কাসেম, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৭২-২০৬, মুহাম্মদী, ফাতহুল্লাহ, পৃ. ২০৯-২২০। কোন কোন সুন্নী লেখক ‘পঠন রহিতকরণ’ তত্ত্বটি শিয়া-সুন্নী উভয় মাজহাবের স্বীকৃতি মতসমূহের অন্যতম বলার প্রয়াস চালিয়েছেন এবং বলেছেন, শেখ তুসী, সাইযেদ মুর্তাজা আলামুল হুদা এবং শেখ তাবারসী এ মতের সমর্থক ছিলেন। দেখুন, কাফারী, নাসের, উসুলু মাযহাবিশ শিয়াতিল ইমামিয়াতিল ইস্না আশারিয়া, পৃ. ১০২১-১০২২। কিন্তু এ দাবীটি সঠিক নয় কারণ তাদের রচিত গ্রন্থসমূহ অধ্যয়নে স্পষ্ট হয় তারা বিষয়টি বাস্তবে ঘটেছে বলে স্বীকার করেন না বরং তারা এ বিষয়টির অসম্ভবতাকে তাত্ত্বিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। দ্রষ্টব্য, সাইয়েদ মুর্তাজা শারিফ, (আলামুল হুদা), আযযারিয়াতু ইলা উসুলিশ শিয়া, ১ম খ-, পৃ. ৮২৯, অবশ্য শেখ তুসী ও তাবারসী একটি আয়াতের ক্ষেত্রে বিধান ব্যতীত পঠন রহিতকরণের তত্ত্বকে মেনে নিয়েছেন এবং ঐ আয়াতটি হল ‘রাজমের আয়াত’ অর্থাৎ বিবাহিত নারী-পুরুষের ব্যভিচারের জন্য পাথর নিক্ষেপে হত্যার বিধান সম্পর্কিত আয়াত। দ্রষ্টব্য, তুসী, আবু জা’ফর, প্রাগুক্ত, ১ম খ-, পৃ. ১৩ ও ৩৯৮, তাবারসী, ফাজল, প্রাগুক্ত, ১ম খ-, পৃ. ১৮০।
ট্যাগ: কোরআন বিকৃতি, আহলে সুন্নাতের দৃষ্টিভঙ্গি, শিয়া মনীষীদের দৃষ্টিভঙ্গি, সুরা ‘বেলায়েত’, রাজমের আয়াত সম্পর্কিত ‍হাদীস
 মূল: ডক্টর ফাতহুল্লাহ নাজ্জারযাদেগান
অনুবাদ: আবুল কাসেম

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: