bayyinaat

Published time: 06 ,December ,2018      23:48:54
সাময়িক বা খণ্ডকালীন বিবাহের সাথে স্থায়ী বিবাহের পার্থক্য
সাময়িক বিবাহে জন্ম গ্রহণকারী সন্তানাদি সম্পূর্ণ বৈধ এবং তারা স্থায়ী বিবাহে জন্ম গ্রহণকারী সন্তানাদির ন্যায় প্রদত্ত অধিকারসমূহের প্রাপ্য হকদার। সাময়িক বিবাহে স্ত্রী জীবন নির্বাহের ব্যয় এবং উত্তরাধিকার সম্পত্তির অংশীদার হবে না। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছু ফিকাহবিদের মত হচ্ছে যে, যদি স্ত্রী আকদের সময় জীবন নির্বাহের ব্যয় এবং উত্তরাধিকার সম্পত্তির অংশীদারিত্বের শর্তারোপ করে তাহলে তাকে তা প্রদান করতে হবে।
সংবাদ: 166
সাময়িক বা খণ্ডকালীন বিবাহের সাথে স্থায়ী বিবাহের পার্থক্যপ্রবন্ধ: ইসলামের সমস্ত মনীষী ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিশ্বাস করেন যে, রাসূলুল্লাহর (সা.) জীবদ্দশার এক পর্যায়ে সাময়িক বিবাহের প্রচলন ছিল। কেউ কেউ বলেন যে, দ্বিতীয় খলিফার খেলাফতকালে মু’তা বা সাময়িক বিবাহের বিধান রহিত করা হয়। আবার কারও কারও মতে রাসূলের (সা.) যুগেই এ বিধান রহিত হয়েছে। কিন্তু আমরা রাসূলের (সা.) আহলে বাইতের (আ.) অনুসারীরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সাময়িক বিবাহের বিধান আদৌ রহিত হয় নি। বরং এ বিধান জারি হওয়ার পর হতে একাধারে বহাল রয়েছে (অবশ্য বিশেষ শর্তসাপেক্ষে)।
     এ ক্ষেত্রে সুন্নী মাযহাবের একটি অংশ আমাদের সাথে একমত প্রকাশ করেন। কিন্তু অধিকাংশরাই বিরোধিতা করেন এবং এ ব্যাপারে আপত্তি তুলে থাকেন। অথচ এখানে আপত্তির কোন প্রশ্নই উঠে না। বরং সমাজে যদি এ বিধানের যথাযথ বাস্তবায়ন থাকত তাহলে অনেক সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব হত।
     আমরা অত্র অধ্যায়ে এ সম্পর্কে বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা ও পর্যালোচনা করব।
সাময়িক বিবাহের অপরিহার্যতা
     এমন অনেক ব্যক্তি (বিশেষতঃ বিবাহ উপযুক্ত প্রাপ্ত:বয়স্ক যুবক) রয়েছে; অনিবার্য কিছু কারণে যাদের পক্ষে স্থায়ী বিবাহে আবদ্ধ হওয়া সম্ভব নয়। কেননা সঙ্গত কারণেই স্থায়ী বিবাহের জন্য পূর্বপ্রস্তুতি, খরচাদি, দায়দায়িত্ব এবং অনুষাঙ্গিক উপকরণাদির সুবন্দোবস্তের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে; যা একশ্রেণীর ব্যক্তির পক্ষে যখন-তখন ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। উদাহরণস্বরূপ :
(১)    অনেক যুবকের পক্ষে ছাত্র জীবনে (বিশেষতঃ বর্তমান সময়ে যখন ছাত্র জীবন অনেক দীর্ঘায়িত হয়েছে) স্থায়ী বিবাহে আবদ্ধ হওয়া সম্ভবপর নয়। কেননা এমন অবস্থাতে তাদের নিকট বাসস্থান ও জীবন নির্বাহের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় খরচাদির কোন ব্যবস্থা নেই। এমনকি কারও কারও পক্ষে সাদাসিধেভাবেও বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার সামর্থ নেই।
(২)    এমনও ব্যক্তি রয়েছেন যারা বিবাহিত কিন্তু দীর্ঘকাল পরবাসে থাকার কারণে স্বাভাবিক যৌন চাহিদা পুরণের সুযোগ হতে বঞ্চিত। এমতাবস্থায় তারা না স্ত্রীদেরকে নিজেদের কাছে রাখতে সক্ষম, না দ্বিতীয় কোন স্থায়ী বিবাহের সুযোগ সেখানে আছে।
(৩)    এমনও ব্যক্তি আছেন যাদের স্ত্রীবর্গ বছরের পর বছর যাবত দূরারোগ্য ব্যাধি কিংবা অন্য কোন সমস্যার শিকার। আর এ কারণে তারা স্বামীদের যৌন চাহিদা পূরণে অক্ষম।
(৪)    যে সব সেনা সদস্যরা দীর্ঘমেয়াদী দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে দূর-দূরান্তে কিম্বা সীমান্ত এলাকাসমূহে স্বীয় মাতৃভূমির সার্বভৌমত্ব রক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকে; এমতাবস্থায় তারা স্ত্রী ও পরিবার হতে অনেক দূরত্বে বসবাস করে। ফলে যৌন চাহিদা পূরণের কোন সুযোগ পায় না। যেমনভাবে ইসলামের প্রাথমিক যুগে রাসূলের (সা.) জীবদ্দশায় মুসলিম সৈনিকরা এমন সমস্যার মুখোমুখি ছিলেন। আর সেই কারণেই সর্বপ্রথম ইসলামে সাময়িক বিবাহের বিধান জারি হয়েছিল।
(৫)    আবার অনেক সময় স্ত্রী গর্ভবতী থাকায় স্বামী একটি নির্দিষ্ট সময় স্ত্রীর সাথে সব ধরনের যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হয়। এমতাবস্থায় সে হয়তো মানসিক চাপের শিকার হতে পারে।
       এ ধরনের অনিবার্য চাহিদা ও সমস্যাবলী সব সময় ছিল এবং থাকবে। তা শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহর (সা.) যুগেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশেষতঃ বর্তমান আধুনিক সময়, যখন যৌন উদ্দীপক বিভিন্ন উপকরণাদির ছড়াছড়ি সর্বত্র।
     এহেন পরিস্থিতিতে মানুষের সামনে শুধুমাত্র দু’টি পথ খোলা থাকে; তন্মধ্যেএকটি হচ্ছে অবৈধ উপায়ে যৌন চাহিদা চরিতার্থ করা (নাউযুবিল্লাহ) অপরটি হলো অনাড়ম্বরভাবে এবং শরিয়তসম্মত উপায়ে সাময়িক বিবাহে আবদ্ধ হওয়া। এক্ষেত্রে স্থায়ী বিবাহের ন্যায় বাড়তি আনুষ্ঠানিকতা ও খরচাদির কোন সমস্যা নেই। পাশাপাশি সাময়িকভাবে এবং বৈধ পদ্ধতিতে যৌন চাহিদা পূরণের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
     অবশ্য এক্ষেত্রে আত্মসংবরণ এবং যৌনাবেগ নিয়ন্ত্রণ দু’টি প্রস্তাবই সুন্দর। কিন্তু তা অনেকের পক্ষে মেনে চলা অসাধ্য ব্যাপার। আবার কারও কারও নিকট তা নিছক কাল্পনিক বিষয় হিসেবে গণ্য হতে পারে।
মিসইয়ার নিকাহ!
     মজার ব্যপার হচ্ছে শরিয়তসম্মত সাময়িক বিবাহ অস্বীকারকারীরা (সুন্নী মাযহাবের অধিকাংশ অনুসারী) যখন যুবসমাজ ও অন্যান্য শ্রেণীর মানুষদের চাপের সম্মুখীন হয়েছে, তখন ধীরে ধীরে (সাময়িক বিবাহের অনুরূপ) একটি বিবাহের শরণাপন্ন হয়েছে। আর এ বিবাহকে তারা মিসইয়ার নিকাহ নামকরণ করেছে। যদিও তারা এ বিবাহকে সাময়িক বিবাহ বলে না, কিন্তু বাস্তবে তা সাময়িক বিবাহের সাথে কোন পার্থক্য রাখে না। এ বিবাহের নিয়ম হচ্ছে যদি কোন ব্যক্তির বিবাহ করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে, তাহলে সে কোন নারীর সাথে নামমাত্র স্থায়ী বিবাহে আবদ্ধ হবে। কিন্তু প্রথম থেকে সে মনস্থ করবে কিছুদিন পরে তাকে তালাক দিবে এবং তার সাথে শর্ত করবে যে, সে এ বিবাহ বাবদ জীবন নির্বাহের খরচাদি, বাসস্থান এবং মি’রাসী সম্পত্তির দাবী করতে পারবে না। আর এ বিবাহের সাথে সাময়িক বিবাহের হুবহু মিল রয়েছে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র পার্থক্য হচ্ছে মিসইয়ার বিবাহে তালাকের মাধ্যমে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়। কিন্তু সাময়িক বিবাহে পুরুষ ও মহিলা উভয়ে প্রথমেই পরস্পরের সম্মতিক্রমে একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে নেয়। অতঃপর উক্ত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর বিবাহের মেয়াদ উত্তির্ণ হয়ে যায়।
      বলা বাহুল্য, সম্প্রতি সুন্নী মাযহাবের কিছু কিছু যুবক বিবাহের ক্ষেত্রে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ইন্টারনেটের সাহায্যে আমাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে জিজ্ঞাসা করেছে যে, সাময়িক বিবাহের ক্ষেত্রে আমরা শিয়া মাযহাবের ফিকাহ শাস্ত্র অনুসরণ করতে পারব কি?
     জবাবে আমরা বলেছি : এ ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই। যারা সাময়িক বিবাহকে অস্বীকার করে। কিন্তু তদস্থলে মিসইয়ার বিবাহের শরণাপন্ন হয়। তারা যদিও সাময়িক বিবাহের নাম আনে না; কিন্তু বাস্তবে সেটাকেই গ্রহণ করে।
     হ্যাঁ, আবশ্যকীয় প্রয়োজনীয়তা পরিণতিতে মানুষকে বাস্তবতা মেনে নিতে বাধ্য করে। যদিও বিরোধিতার কারণে তারা সেটির নাম পরিবর্তন করুক না কেন।
     সুতরাং আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, যারা অহেতুকভাবে শরিয়তসম্মত সাময়িক বিবাহের বিধানকে উপেক্ষা করে, তারা ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবে সমাজে অবৈধ যৌনাচার বা নৈতিক অবক্ষয়ের পথকে সুগম করেছে। কাজেই এ ক্ষেত্রে এর বিকল্প কোন উপায় অর্থাৎ মিসইয়ার বিবাহের বিধান মেনে ছাড়া কোন গতন্তর নেই। এ কারণে আহলে বাইতের ইমামগণ (আ.) হতে বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে: যদি সাময়িক বিবাহের বিধানের সাথে বিরোধিতা করা না হত, তাহলে কেউ ব্যভিচারের ন্যায় জঘন্য কর্মে লিপ্ত হত না।
     পক্ষান্তরে যারা সাময়িক বিবাহের বিধানকে অপব্যবহার করেছে; (অর্থাৎ মানুষের অপরিহার্য চাহিদা মিটানোর তাগিদে এ বিধান জারি করা হয়েছে, কিন্তু তারা এ বিধানের স্বরূপকে বিকৃত করে নিজেদের ইন্দ্রিয়জাত কামনা-বাসনা চরিতার্থের হাতিয়ারে পরিণত করেছে।) তারাও মুসলিম সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ও ব্যভিচারের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। ফলে তারা এ সব পাপকর্মে লিপ্ত ব্যক্তিদের গুনাহের অংশীদার। কেননা তাদের এহেন পদক্ষেপ সাময়িক বিবাহের বৈধ ও শরিয়তসম্মত পদ্ধতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।
     বস্তুত: ইসলাম এমনই এক ঐশী ধর্ম যা মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ ধর্মে মানুষের যাবতীয় বাস্তব (জৈবিক ও আত্মিক উভয় প্রকার) চাহিদা পূরণের সুব্যবস্থা রয়েছে। এমতাবস্থায় এটা আদৌ মেনে নেয়া সম্ভব নয় যে, সাময়িক বিবাহের ন্যায় একটি অপরিহার্য বিধান ইসলাম ধর্মে থাকবে না। আমরা এ অধ্যায়ে নির্ভরযোগ্য দলিলসমূহের ভিত্তিতে প্রমাণিত করব যে, সাময়িক বিবাহের বিধান সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের আয়াত ও রাসূলুল্লাহর (সা.) বর্ণিত হাদীসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক সাহাবী নিজেদের ব্যবহারিক জীবনেও এ বিধানটি বাস্তবায়িত করেছেন। অবশ্য কারও কারও মতানুযায়ী এ বিধানটি রহিত করা হয়েছে। কিন্তু আমরা বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাব যে, এ ক্ষেত্রে তাদের নিকট নির্ভরযোগ্য কোন দলিল-প্রমাণ নেই।
সাময়িক বিবাহ কি?
     এক শ্রেণীর অজ্ঞ ব্যক্তিরা সাময়িক বিবাহকে অত্যন্ত জঘন্য ও বিকৃতভাবে চিত্রায়িত করেছে। তারা এ বিবাহের বিধানকে অবাধ যৌনাচারের স্বীকৃতি দানের মাধ্যম হিসেবে গণ্য করেছে।
     যদি এ শ্রেণীর ব্যক্তিরা সবাই সাধারণ লোক হত, তাহলে কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু দুঃখের বিষয় তাদের মাঝে সুন্নী মাযহাবের আলেমরাও রয়েছেন; যারা এ ধরনের ভিত্তিহীন কুৎসা রটনা করে থাকেন। নিঃসন্দেহে মাযহাবগত গোঁড়া মানসিকতার কারণে তারা সাময়িক বিবাহের সমর্থকদের ধর্মীয় বই পুস্তকসমূহের একটি মাত্র বাক্যও পাঠ করে না; যা সত্যিই চরম আশ্চর্যের বিষয়। কাজেই এ স্বল্প পরিসরে সাময়িক বিবাহের শর্তাবলী এবং স্থায়ী বিবাহের সাথে এর পার্থক্য সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট বিবরণী তুলে ধরা যথোপযুক্ত মনে করছি; যাতে এ ক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব সুসম্পন্ন এবং সবার নিকট চুড়ান্ত দলিল-প্রমাণাদি প্রকাশিত হয় :
     সাময়িক বিবাহ অধিকাংশ শর্তাবলী ও বিধি-বিধানের দিক থেকে হুবহু স্থায়ী বিবাহের অনুরূপ; যেমন :
(১)     সাময়িক বিবাহের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ই স্বেচ্ছায় এবং সন্তুষ্টি চিত্তে পরস্পরের প্রতি সম্মতি জ্ঞাপন করবে।
(২)     এ বিবাহের আক্দের সিগাহ্ অবশ্যই ‘নিকাহ’, ‘ইযদেওয়াজ’ কিম্বা ‘মু’তা এ তিনটি শব্দমূলের যে কোন একটির মাধ্যমে হতে হবে। এক্ষেত্রে অন্য কোন শব্দের সংযোগ কিংবা প্রতিস্থাপন সহীহ হবে না।
(৩)     যদি স্ত্রী কুমারী হয় তাহলে অভিভাবকের অনুমতি অবশ্যক। অন্যথায় অনুমতির শর্ত নেই।
(৪)     আকদের সময়সীমা এবং দেন মোহরের পরিমাণ সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা আবশ্যক। যদি আক্দের সময় সময়সীমা নির্ধারণ করা না হয়, তাহলে অধিকাংশ ফিকাহ শাস্ত্রবিদগণের দৃষ্টিতে তা স্থায়ী বিবাহ হিসেবে পরিগণিত হবে। আর এ বিষয় হতে প্রমাণিত হয় যে, সময়সীমা নির্ধারণ ব্যতিত স্থায়ী বিবাহ ও সাময়িক বিবাহের আকদের মধ্যে কোন পার্থক্য বিদ্যমান নেই। (বিযয়টি অনুধাবনযোগ্য)
(৫)     এ বিবাহের সময়সীমার পরিসমাপ্তি তালাক হিসেবে পরিগণিত। আর এ সময়ের পর হতে উক্ত মহিলাকে ইদ্দত রক্ষা করতে হবে। (অবশ্য যদি তার সাথে সহবাস করা হয়ে থাকে।)
(৬)     স্থায়ী বিবাহের ক্ষেত্রে ইদ্দতের সময়সীমা হচ্ছে পরপর তিনবার মাসিক ঋতুস্রাব দেখা। তৃতীয়বার ঋতুস্রাব দেখার পর ইদ্দত সমাপ্ত হবে। পক্ষান্তরে সাময়িক বিবাহের ইদ্দত হচ্ছে পর পর দু’বার ঋতুস্রাব দেখা।
(৭)     সাময়িক বিবাহে জন্ম গ্রহণকারী সন্তানাদি সম্পূর্ণ বৈধ এবং তারা স্থায়ী বিবাহে জন্ম গ্রহণকারী সন্তানাদিকে প্রদত্ত অধিকারসমূহের প্রাপ্য হকদার। এ ক্ষেত্রে তারা কোনরূপ ব্যতিক্রম ছাড়াই পিতা-মাতা, ভাই-বোন কিংবা অন্যান্য আত্মীয়স্বজন হতে মি’রাসী তথা উত্তরাধিকারভুক্ত সম্পত্তির অংশিদারিত্ব পেয়ে থাকে। বস্তুতঃ এ দু’টি শ্রেণীর সন্তানাদির মাঝে আদৌ কোন পার্থক্য বিদ্যমান নেই।
     সাময়িক বিবাহে জন্ম গ্রহণকারী সন্তানাদির দায়দায়িত্ব পিতামাতার উপর বর্তায়। স্থায়ী বিবাহে জন্ম গ্রহণকারী সন্তানাদির ন্যায় তাদের যাবতীয় ভরণ-পোষণ প্রদান করা বাঞ্ছনীয়।
     হয়তো কেউ কেউ সাময়িক বিবাহের উপরোক্ত নিয়মাবলীর কথা শুনে হতভম্ব হয়ে পড়তে পারেন। অবশ্য এজন্য তারা দায়ী নন; কারণ এ বিবাহ সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত ধারণার জন্ম দেয়া হয়েছে। এক শ্রেণীর ব্যক্তিরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাময়িক বিবাহকে চোরাচালনী ও নিয়মবহির্ভূত বিবাহ হিসেবে অখ্যায়িত করেছে। এক কথায় বলা যায় যে, তারা এ বিাবহকে ব্যভিচারের অনুরূপ একটি পদ্ধতি হিসেবে অপপ্রচার চালিয়েছে। অথচ  বাস্তবতার সাথে এহেন ধারণার বিন্দুমাত্র মিল নেই।
     হ্যাঁ, এ দু’বিবাহের আকদ এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কিছু পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। নীতিগতভাবে সাময়িক বিবাহে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি স্থায়ী বিবাহের তুলনায় কম দায়িত্বশীল। কেননা এ বিবাহের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সহজসাধ্য করা এবং জটিল ও কঠিন আইন-কানুন না থাকা। যেমন :
(ক)     সাময়িক বিবাহে স্ত্রী জীবন নির্বাহের ব্যয় এবং উত্তরাধিকার সম্পত্তির অংশীদার হবে না। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছু ফিকাহবিদের মত হচ্ছে যে, যদি স্ত্রী আকদের সময় জীবন নির্বাহের ব্যয় এবং উত্তরাধিকার সম্পত্তির অংশীদারিত্বের শর্তারোপ করে তাহলে তাকে তা প্রদান করতে হবে।
(খ)     এ বিবাহে স্ত্রী স্বামীর অনুমতি ব্যতিরেকে বাড়ির বাইরে বের হতে এবং নিজের ইচ্ছাধীন যে কোন কাজ সম্পন্ন করতে পারবে। তবে শর্ত হচ্ছে স্বামীর অধিকার যেন ক্ষুন্ন না হয়। পক্ষান্তরে স্থায়ী বিবাহে স্বামীর সম্মতি ছাড়া স্ত্রী এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারবে না।
(গ)     স্বামী রাত্রে স্ত্রীর সাথে থাকতে বাধ্য না।
      সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা প্রেক্ষিতে মু’তা বা সাময়িক বিবাহ সম্পর্কে যে সব অপপ্রচার ও অপবাদের প্রচলন রয়েছে, সেগুলোর কিছু  অকাট্য জবাব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অত্র আলোচিত এ বৈধ ও শরিয়তসম্মত গুরুত্বপূর্ণ বিধান সম্পর্কে যে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট ধারণার প্রচলন রয়েছে- সেগুলোর অপনোদন ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। সাথে সাথে এ বাস্তবতাও সবার নিকট প্রকাশিত হল যে, সাময়িক বিাহের সাথে ব্যভিচার কিংবা অসামাজিক কার্যকলাপের আদৌ কোন সাদৃশ্যতা নেই। আর যারা এ বিবাহের সাথে এসব জঘন্যতম কার্যকলাপের তুলনা করে থাকে, তারা এ বিবাহের স্বরূপ এবং এর নিয়মাবলী সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জ্ঞান রাখে না।
অপব্যবহারকারীরা
     বরাবরই কোন ইতিবাচক বিষয়ের নেতিবাচক ব্যবহার নিন্দুক ব্যক্তিদের মুখ খুলে দেয় এবং তা সুযোগ সন্ধানীদের সামনে মোক্ষম সুযোগ হয়ে দাঁড়ায়, যাতে তারা এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার নিমিত্তে ইতিবাচক ও বৈধ বিষয়ের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে পারে।
     মু’তা বা সাময়িক বিবাহ উক্ত ইতিবাচক বিষয়াবলীর মধ্যে অন্যতম নমুনা। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় একশ্রেণীর কামুক ব্যক্তিরা সাময়িক বিবাহকে (মূলত: যে বিবাহের বিধানটি অপরিহার্য চাহিদা পূরণ ও নানাবিধ সামাজিক সমস্যাদি নিরসনের লক্ষ্যে অবতীর্ণ হয়েছে) নিজেদের অযথচিত ইন্দ্রিয়গত কামনা-বাসনা চরিতার্থের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে। আর তাদের এহেন অপব্যবহারের কারণে অজ্ঞত লোকদের দৃষ্টিতে এ বিবাহের প্রকৃত স্বরূপ বিকৃত এবং এ গুরুত্বপূর্ণ বিধান সম্পর্কে বিরোধিদের কুৎসা রটনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
     কিন্তু এখানে আমাদের একটি প্রশ্ন রয়েছে- কোন্ গুরুত্বপূর্ণ বিধান রয়েছে যা ন্যূনতম একবার হলেও অসদুপায় অবলম্বনকারীদের হীন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় নি কিংবা কোন্ মূল্যবান সম্পদ রয়েছে যা অযোগ্য ব্যক্তিদের অপব্যবহারের শিকার হয় নি?
     যদি কোন দিন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অবৈধ ও জালিম প্রশাসনের পক্ষে জন সমর্থন আদায়ের হীন উদ্দেশ্যে পবিত্র কোরআনকে বল্লমের উপর স্থান দেয়া হয়, তাহলে এর ফলাফল কি এটা হবে যে, আমরা কোরআনকে এড়িয়ে চলব?
     যদি কোন সময় মুনাফিক গোষ্ঠী মসজিদে জিরার নির্মাণ করায় রাসূলুল্লাহ (সা.) সেটা ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দিবার কিংবা আগুনে পুড়িয়ে ভস্মিভূত করার নির্দেশ দিয়ে থাকেন, তবে তার অর্থ কী চিরদিন সব মসজিদকে এড়িয়ে চলতে হবে?
     আমাদের স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী এ শাশ্বত বিধানকে অপব্যবহার করেছে। কিন্তু তাই বলে একদল বে-নামাযীর কারণে মসজিদের দরজা অন্যদের জন্য বন্ধ করতে পারি না।
     কাজেই ইন্দ্রিয়পরায়ণ গোষ্ঠী যাতে সাময়িক বিবাহের শাশ্বত বিধানকে অপব্যবহার করতে না পারে সেজন্য কার্যকারী উদ্যেগ গ্রহণ আমাদের প্রত্যেকের নৈতিক ও ঈমানী দায়িত্ব। বিশেষতঃ আমাদের বর্তমান যুগে যখন সুপরিকল্পিত নীতিমালা ছাড়া কার্যকরী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। কাজেই বিশেষজ্ঞ ও মনীষীবর্গের উচিত এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা যাতে ইন্দ্রিয়পরায়ন গোষ্ঠীর অপব্যবহারের পথ রোধের পাশাপাশি এ শরিয়তসম্মত বিধানের প্রকৃত স্বরূপ সবার নিকট প্রকাশ করা সম্ভব হয়। আর এমন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে দু’শ্রেণীর ব্যক্তিদের পথ রোধ করা সম্ভব হবে- যথা : ইন্দ্রিয়পরায়ণ সুবিধাবাদী গোষ্ঠী এবং বিদ্বেষপরায়ণ বিরোধী গোষ্ঠী।
মূল: আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজি
অনুবাদ: মিজানুর রহমান ও আবুল কাসেম
ট্যাগ: তুলনামূলক ফিকাহশাস্ত্র, সাময়িক বা খণ্ডকালীন বিবাহ, স্থায়ী বিবাহ, উত্তরাধিকার সম্পত্তি, ভরণপোষণ

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: