bayyinaat

Published time: 05 ,March ,2017      23:22:14
প্রবন্ধ
যে সকল নারী আল্লাহর নির্দেশ ও নীতিমালাকে নিজেদের জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছেন, তাদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআন, নবী ও তাঁর আহলে বাইতগণের (আ.) হাদীসসমূহে প্রশংসাসূচক বাণী বর্ণিত হয়েছে...
সংবাদ: 26

যে সকল নারী আল্লাহর নির্দেশ ও নীতিমালাকে নিজেদের জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছেন, তাদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআন, নবী ও তাঁর আহলে বাইতগণের (আ.) হাদীসসমূহে প্রশংসাসূচক বাণী বর্ণিত হয়েছে। এখন এ পর্যায়ে আমরা সংক্ষিপ্তাকারে আপনাদের সামনে উক্ত আয়াতসমূহকে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

কোরআনের দৃষ্টিতে নারীর মর্যাদা

ক)

اِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِينَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِينَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِ وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّـهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ اَعَدَّ اللَّـهُ لَهُم مَّغْفِرَةً وَاَجْرًا عَظِيمًا

"নিশ্চয়ই মুসলমান পুরুষ ও মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, ইবাদতকারী পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ ও নারী, খোদাভীরু পুরুষ ও নারী, দানকারী পুরুষ ও নারী, রোযাদার পরুষ ও নারীগণ এবং যে সকল পুরুষ ও নারী তাদের লজ্জাস্থানের সংরক্ষণ করে এবং যে সকল পুরুষ ও নারী আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের সকলের জন্যেই আল্লাহ্ তায়ালা ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান প্রস্তত রেখেছেন।

এই পবিত্র আয়াতে, (যা আপনারা লক্ষ্য করছেন) পুরুষ ও নারী পাশাপাশি উল্লেখিত হয়েছে। আল্লাহ্ তায়ালা পুরস্কার দান ও ক্ষমা করার ব্যাপারে তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করেননি।

খ)

يَاأَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ

"হে মানব সকল! আমরা তোমাদের সকলকে একজন পুরুষ ও একজন নারীর মাধ্যমে সৃষ্টি করেছি এবং পরবর্তীতে দলে দলে ও গোত্রে গোত্রে বিভক্ত করেছি যেন তোমরা একে অপরকে চিনতে পার (ও বুঝতে পার বংশ ও গোত্র কোন গর্বের বিষয় নয়)। তোমাদের মধ্যে সেই আল্লাহর কাছে অধিক উত্তম যে বেশী তাকওয়া সম্পন্ন। আল্লাহ্ মানুষের ভাল ও মন্দ কাজের প্রতি সম্ম্যক অবগত আছেন।

এই পবিত্র আয়াতেও আল্লাহ্ তায়ালা পুরুষ ও নারী সৃষ্টির উদ্দেশ্যকে তাঁর নিজের একত্ববাদের প্রতি আরো বেশী জানার জন্য নির্দিষ্ট করেছেন। আর বংশ, ক্ষমতা, ধনদৌলাত, জ্ঞান, রং, ভাষা বা জন্মভূমি (আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া ইত্যাদি) এর ভিত্তিতে আল্লাহ্ মানুষের মর্যাদাকে নির্ধারণ করেননি বরং আল্লাহর কাছে উত্তম জিনিষ হচ্ছে তাকওয়া, আর তাকওয়ার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর আদেশ-নিষেধকে মেনে চলা।

গ)

مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

"পুরুষ ও নারীগণের মধ্য থেকে যারাই ঈমান আনয়ন করবে এবং উত্তম কাজ করবে, তাদেরকে পবিত্র জীবন দান করবো এবং তাদরেকে তাদের সর্বোত্তম কর্মানুযায়ী পুরস্কার দান করবো।

এই পবিত্র আয়াতেও আল্লাহ্ তায়ালা উত্তম কাজ সম্পাদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুরস্কার ও সাওয়াব দানের অঙ্গীকার করেছেন, আর সে পুরুষই হোক অথবা নারী কোন পার্থক্য নেই বরং যে কোন উত্তম বান্দাই এই ভাল কাজগুলো করবে আল্লাহ্ তায়ালা তাকেই এই পুরস্কারে পুরস্কৃত করবেন।

ঘ)

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

"আল্লাহ্ তায়ালার নিদর্শনাবলীর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যে, তোমাদের জন্য তোমাদের প্রকৃতির সহধর্মীনিদেরকে সৃষ্টি করেছেন যাতে করে তাদের সান্নিধ্যে প্রশান্তি অনুভব করতে পার, আর তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও মমতা সৃষ্টি করেছেন। এ সব কিছুই হচ্ছে নিদর্শন তাদের জন্য যারা চিন্তা করে।

এই পবিত্র আয়াতেও আল্লাহ্ তায়ালা নারী সৃষ্টিকে তাঁর আয়াত ও নিদর্শন হিসেবে পেশ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, নারীরাই হচ্ছে ভালবাসা, রহমত ও প্রাশান্তির কারণ। আল্লামা তাবাতাবাই (রহঃ) (বিশিষ্ট কুরআন তফসিরকারক) এই আয়াতের তফসিরে বলেন, পুরুষ ও নারী এমনই এক সৃষ্টি যা একে অপরের সাথে ধর্মীও বন্ধনযুক্ত হওয়ার পরে উভয়ই পরিপূর্ণতা অর্জন করে এবং দুয়ের মিলনের মাধ্যমে বংশ বিস্তার সাধন করে থাকে, আর একজন অপরজন ছাড়া অসম্পূর্ণ।

আল্লাহ্ তায়ালা এই আয়াতের শেষে বলছেন : এই বিষয়টি তাদের জন্য যারা চিন্তা করে বা যারা বিবেক সম্পন্ন, তারা এর মাধ্যমে বুঝতে পারবে যে, পুরুষ ও নারী একে অপরের পরিপূরক। আর নারীই একটি পরিবারকে সতেজ ও উদ্যমী করে রাখে এবং একটি পরিবারের সদস্যদের (ইনসানে কামেল) প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার কারণও হচ্ছে সেযে কারণে পুরুষ ও নারী শুভ এক নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ হয় তা হচ্ছে আল্লাহ্ প্রদত্ত ভালবাসা ও রহমত। শুধুমাত্র দৈহিক চাহিদার কারণেই এ বন্ধনে আবদ্ধ হয় না।

কিন্তু পুরুষ ও নারীর বন্ধনের মধ্যে দুটি দিক বিদ্যমান : একটি হচ্ছে এলাহী ও স্রষ্টামুখি আত্মা ও অপরটি হচ্ছে পাশবিক প্রবৃত্তি। তবে মানুষ তার ঐ এলাহী ও স্রষ্টামুখি আত্মার মাধ্যমেই পরিপূর্ণতায় পৌছে থাকে।

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা বিশেষ প্রয়োজন বলে মনে করছি যা হচ্ছে, অনেক তফসিরকারক উল্লিখিত আয়াত ও এ ধরনের আরো কিছু আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, নারী পুরুষের শরীরের অংশ। কেননা তাদেরকে পুরুষের শরীরের অংশ দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এই ধরনের তফসিরের ফলে অনেক সুবিধাবাদী পুরুষ, নারীদেরকে তাদের থেকে নিম্ন পর্যায়ের মনে করে থাকেন যা নারীর জন্যে একটি অপমান জনক বিষয়। যেমন নিম্নলিখিত আয়াতসমূহ:

يَاأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً

হে মানব সকল! তোমাদের পরওয়ারদিগারকে ভয় কর। যিনি তোমাদেরকে একজন থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর তার থেকে তার সহধর্মীনিকেও এবং ঐ দুজন থেকে অনেক পুরুষ ও নারী সৃষ্টি করাবে।

هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا  

তিনিই তোমাদেরকে একসত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার স্ত্রীকেও।

خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا

তোমাদেরকে একসত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার স্ত্রীকেও।

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا

আর এটা তাঁর নিদর্শনমূহের নমুনা স্বরূপ যে, তোমাদের জন্য তোমাদের প্রকৃতির সহধর্মীনি সৃষ্টি করেছেন।

وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَجَعَلَ لَكُمْ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ بَنِينَ وَحَفَدَةً

আর আল্লাহ্ তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রী নির্দিষ্ট করেছেন এবং তোমাদের স্ত্রীদের থেকে সন্তান ও সন্তানদের থেকে সন্তান সৃষ্টি করাবেন।

 جَعَلَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا

তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীগণকে সৃষ্টি করেছেন।১০

বাহ্যিকভাবে দেখা যায় যে, প্রথম তিনটি আয়াতে বলা হয়েছে সমস্ত মানুষ একটি নফস (সত্তা) থেকে সৃষ্টি হয়েছে এবং তাদের স্ত্রীগণও ঐ নফস থেকেই সৃষ্টি হয়েছে।

কিন্তু পরের তিনটি আয়াতে উক্ত বিষয়টিকে সমস্ত পুরুষের প্রতি ইশারা করে বলা হচ্ছে যে, তোমাদের স্ত্রীগণকে তোমাদের থেকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। যদি আমরা একটুখানি এই বিষয়ের প্রতি গভীর দৃষ্টি দেই তবে এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, এ আয়াতসমূহে আল্লাহ্ তায়ালা এটাই বুঝাতে চেয়েছেন যে, তাদের স্ত্রীগণ তাদেরই প্রকৃতির, তারা অন্য প্রকৃতির বা জাতের নয় বা তাদের থেকে আদালা কোন সৃষ্টি নয়। এটা নিশ্চয় বুঝাতে চাননি যে, স্ত্রীগণ তাদের দেহের অংশ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। যদি তাই হয়ে থাকে তবে বলতে হয় যে, প্রতিটি স্ত্রীই তার স্বামীর দেহের অংশ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তী তিনটি আয়াত প্রথম তিনটি আয়াতের অর্থ করেছে, যাতে করে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায়।

আল্লামা তাবাতাবাই এই আয়াতের তফসিরে বলেছেন : ওয়া খালাকা মিনহা যাওজাহাআয়াতের বাহ্যিক অর্থ হচ্ছে যে, নারীদের পুরুষের প্রকৃতিতে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাদের উভয়েরই সৃষ্টির উৎস হচ্ছে একই।

এই আয়াতে মিনশব্দটি উৎস বর্ণনায় এসেছে (অর্থাৎ কোন কিছু সৃষ্টির উৎসকে বর্ণনা করে)। এই আয়াতটি অন্যান্য আয়াতের মতই পুরুষ ও নারীর সৃষ্টির প্রকৃতি বর্ণনা করেছে।

অতএব, এটা আমাদের কাছে পরিষ্কার এবং বিভিন্ন তফসির গ্রন্থের ভাষ্য অনুযায়ী পৃথিবীতে মানুষকে পুরুষ আর নারী হিসাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই যে বলা হয়ে থাকে আল্লাহ্ তায়ালা নারীকে পুরুষের বাম পাজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করেছেন তা সম্পূর্ণ দলিলহীন এক দাবি।১১ (বিকৃত বাইবেল ও তওরাত থেকে এ ইসরাইলী বর্ণনাটি গ্রহণ করা হয়েছে)

উপরোল্লিখিত বিষয়টি যেভাবে বর্ণিত হয়েছে তার পক্ষে আহলে সুন্নতের মুফাসসিরগণ যেমন : ওয়াহ্বাহ্ যুহাইলী এবং ফাখরে রাযি তাদের নিজ নিজ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন ও গ্রহণ করেছেন।

সুতরাং উক্ত আলোচনা থেকে আমাদের কাছে যা প্রমাণিত হয়েছে তা হচ্ছে, পবিত্র কোরআন পুরুষ ও নারী সৃষ্টির প্রকৃতিগত আলোচনা করেছে এবং তাদের মধ্যকার সাদৃশ্যকে তুলে ধরেছে। এর পক্ষে আমাদের আরো জোরাল যুক্তি রয়েছে যা নিম্নরূপ :

ইমাম সাদিকের (আ.) কাছে প্রশ্ন করা হল যে, ‘একদল বলে হযরত হাওয়াকে হযরত আদমের বাম পাজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছেএ ব্যাপারে আপনার মত কি?

তিনি বললেন : আল্লাহ্ তায়ালা এমন ধরনের কাজ করা থেকে মুক্ত ও পবিত্র। এরপর তিনি তাদেরকে পাল্টা প্রশ্ন করে বললেন : আল্লাহর কি ক্ষমতা ছিল না যে, হযরত আদমের জন্য এমন স্ত্রী সৃষ্টি করবেন যে তার পাজরের হাড় থেকে হবে না? যাতে করে পরবর্তীতে কেউ বলতে না পারে যে, হযরত আদম নিজেই নিজের সাথে বিয়ে করেছেন। আল্লাহ্ আমাদের মধ্যে বিচার করুন।১২

(অর্থাৎ এখানে ইমাম বুঝাতে চেয়েছেন যে, আল্লাহ্ যখন হযরত আদমকে শুন্য থেকে সৃষ্টি করতে পেরেছেন তবে তার স্ত্রী সৃষ্টির জন্য, তার পাজরের হাড় থেকে করতে হবে কেন? যেহেতু আল্লাহ্ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তাই এ কথা বললে তাঁর অক্ষমতাকে তুলে ধরা হয় নয় কি? নাউযুবিল্লাহ্)।

অন্য আরেকটি হাদীসে এসেছে যে : আল্লাহ্ তায়ালা হযরত আদম সৃষ্টির পরে অবশিষ্ট্য কাদামাটি থেকে হযরত হাওয়াকে হযরত আদমের অনুরূপ পদ্ধতিতেই সৃষ্টি করেছেন।১৩

ঙ)

وَأَوْحَيْنَا إِلَى أُمِّ مُوسَى أَنْ أَرْضِعِيهِ فَإِذَا خِفْتِ عَلَيْهِ فَأَلْقِيهِ فِي الْيَمِّ وَلَا تَخَافِي وَلَا تَحْزَنِي إِنَّا رَادُّوهُ إِلَيْكِ وَجَاعِلُوهُ مِنَ الْمُرْسَلِينَ

"আমরা মুসার মায়ের প্রতি এরূপে ইলহাম করেছিলাম যে, তাকে যেন দুধ দেয় এবং যখনই তার ব্যাপারে ভয় পাবে তখনই তাকে নিল নদের পানিতে ভাসিয়ে দেয়, আর তাকে বলেছিলাম তুমি দুঃখিত হয়োনা আমরা তাকে পূনরায় তোমার কাছে ফিরিয়ে দিব এবং তাকে রাসূলগণের মধ্যে স্থান দিব।১৪

এই আয়াতে পরিষ্কার যে, আল্লাহ্ তায়ালা হযরত মুসার (আ.) মায়ের প্রতি ইলহাম করেছেন। আর তাই নারীদের জন্য এটা একটি গর্বের বিষয় যে, মহান আল্লাহ্ একজন নারীকে লক্ষ্য করে কথা বলেছেন।

চ)

إِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ يَامَرْيَمُ إِنَّ اللَّهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِنْهُ اسْمُهُ الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ وَجِيهًا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمِنَ الْمُقَرَّبِينَ

"(ঐ সময়কে স্মরণ কর) যখন ফেরেশ্তাগণ বলেছিলেন: হে মারিয়াম! আল্লাহ্ তায়ালা তোমাকে তাঁর পক্ষ থেকে এক (সৃষ্টিগত) বাণীর সুসংবাদ দান করছেন যে, তার নাম হচ্ছে মাসিহ্ ঈসা ইবনে মারিয়াম, সে এই দুনিয়া ও আখেরাতে একজন সম্মানীয় ও মর্যাদাবান ব্যক্তি এবং নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।১৫

এ আয়াত থেকে আমাদের কাছে এ বিষয়টা পরিষ্কার হয় যে, একজন নারীর পক্ষে এমন পরিপূর্ণতায় পৌছা সম্ভব যে, আল্লাহ্ তায়ালার ফেরেশতারা তাঁর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে তার সাথে কথা বলবেন ও স্বয়ং জিব্রাঈল (আ.) তার জন্য সুসংবাদ বয়ে আনবেন এবং তাঁর আসমানী কিতাবে এ ঘটনাকে মর্যাদার সাথে উল্লেখ করবেন। আর এমন নজির হয়তো অনেক মহাপুরুষের মধ্যেও দেখা যায় না।

ছ)

وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا لِلَّذِينَ آمَنُوا امْرَأَتَ فِرْعَوْنَ إِذْ قَالَتْ رَبِّ ابْنِ لِي عِنْدَكَ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ وَنَجِّنِي مِنْ فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهِ وَنَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

"আল্লাহ্ তায়ালা মুমিনদের জন্য ফিরআউনের স্ত্রীকে উদাহরণ দিয়েছেন, যখন সে বলেছিল যে, হে আল্লাহ্! বেহেশ্তে তোমার কাছে আমার জন্য একটি বাড়ী নির্মাণ কর এবং আমাকে ফিরআউনের কুকর্ম ও তার অত্যাচারী দলবল থেকে রক্ষা কর।১৬

১-আল্লাহ্ তায়ালা এই আয়াতে চেয়েছেন যে, সকল পুরুষ ও নারীর সামনে একজন নারীকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করতে।

২-আছিয়া (ফিরআউনের স্ত্রী) সকল নারীকে এটাই শিক্ষা দিলেন যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা কোন বাদশাহর প্রাসাদে বিলাসবহুল জীবনযাপন করার থেকেও উত্তম। আরো প্রমাণ করলেন যে, কোন নারীরই উচিৎ নয় এই দুনিয়ার বাহ্যিক রূপের মোহে পড়া। কেননা দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তা ধ্বংস হয়ে যাবে। আর শুধুমাত্র আল্লাহ্ই থাকবেন।

৩-তিনি আরো শিক্ষা দিলেন যে, নারীদের স্বাধীনতার সীমা হল ততটুকু যতটুকু আল্লাহ্ অনুমতি দিয়েছেন এবং তাদেরকেও জুলুম ও জালিমকে ঘৃণা করতে হবে; এমনকি যদি ঐ জালিম তার স্বামীও হয়ে থাকে।

জ)

إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ

"হে রাসূল! আমরা তোমাকে কাউসার (নেয়ামতের অফুরন্ত ধারা -যার অন্যতম হল ফাতিমা যে তোমার নবুওয়াত ও শাফায়াতের সমমর্যাদার) দান করেছি। সুতরাং তুমি (এই নেয়ামতের শুকরিয়া স্বরূপ) নামায আদায় এবং কুরবানী কর। আর প্রকৃতপক্ষে তোমার শত্রুরাই হচ্ছে আবতার।১৭

সূরা কাউসারের তিনটি আয়াতের তিনটি মুজিযাহ্ :

প্রথম মুজিযাহ (অলৌকিকতা)

যেহেতু রাসূল (সা.) এর সব পুত্র সন্তান মারা গিয়েছিল তাই শত্রুরা মনে করেছিল যে, তাঁর ইন্তেকালের পর তার আর কোন উত্তরাধিকারী নেই ফলে তার ওপর তারা জুলুম ও অত্যাচারের ধারাকে অব্যাহত রাখতে পারবে ও নির্বিঘ্নে তাঁর আনীত ধর্মকে নিশ্চিহ্ন করতে সক্ষম হবে। কিন্তু আল্লাহ্ তায়ালা হযরত যাহরাকে (আ.) দান করলেন, যাতে তাঁর সন্তানদের থেকে মনোনীত ইমামরা ইসলামের ভিত্তি স্থাপন ও বিশ্ব জুড়ে তা ছড়িয়ে দিতে পারেন এবং সেইসাথে আস ইবনে ওয়াইলের বংশকে নিশ্চিহ্ন করলেন যাতে করে তাদের কেউ ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুতা করতে না পারে।

দ্বিতীয় মুজিযাহ

যদিও রাসূল (সা.) তাঁর রিসালতের প্রথম দিকে অর্থনৈতিকভাবে চাপের মুখে ছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে আল্লাহ্ তায়ালা তাকে এত পরিমানে ধনসম্পদ দান করেছিলেন যে, তিনি হজ্জ মৌসুমে একশটি অথবা তারও বেশী পরিমান উট কুরবানী করতেন।

তৃতীয় মুজিযাহ্

রাসূল (সা.) এর শত্রুদের বিশাল সৈন্য বাহিনীর সবাই কিছু দিনের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যায় এবং তাদের কোন অস্তিত্বই আর অবশিষ্ট ছিল না। এতে করে শত্রুদের বংশই ধ্বংস হয়েছিল, না রাসূলের (সা.) এরপর দিনের পর দিন হযরত ফাতিমার (আ.) মাধ্যমে রাসূল (সা.) এর বংশের বিস্তৃতি হতে থাকলো।

সাধারণ মানুষের হযরত ফাতিমার (আ.) ব্যাপারে কোন কথা বলার সাহস ছিল না, কেননা তিনি ছিলেন একজন পরিপূর্ণ মানুষ (ইনসানে কামেল) ও উৎকর্ষিত আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। আর সাধারণ মানুষ হচ্ছে অপরিপূর্ণ ও ত্রুটিযুক্ত। সে কারণেই তাদের পক্ষে হযরত ফাতিমার (আ.) মত একজন পরিপূর্ণ মানুষকে বুঝে উঠার ক্ষমতা নেই। তাই তাঁর ব্যাপারে অবশ্যই আশরাফুল মাখলুকাত খাতামুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সা.) ও তাঁর উত্তরসূরী মাসুম ইমামগণের (আ.) মুখ থেকেই শুনতে হবে :

 قال رسول الله (صلى الله عليه و آله) : ان الله تعالى ليغضب لغضب فاطمة و يرضى لرضاها.

রাসূল (সা.) বলেছেন: আল্লাহ্ তায়ালা ফাতিমার (আ.) রাগে রাগান্বিত হন এবং তার সন্তুষ্টিতে তিনিও সন্তুষ্ট হন।১৮

 قال رسول الله (صلى الله عليه و آله) : اول شخص تدخل الجنة فاطمة .

রাসূল (সা.) বলেছেন: সর্ব প্রথম যে ব্যক্তি বেহেশ্তে প্রবেশ করবে সে হচ্ছে ফাতিমা (আ.)।১৯

 قال الحسن (عليه السلام) : ما كان فى الدنيا اعبد من فاطمة عليها السلام كانت تقوم حتى تتورم قدماها.

ইমাম হুসাইন (আ.) বলেছেন: ফাতিমার (আ.) মত ইবাদতকারী পৃথিবীতে আর কেউ ছিল না, কেননা তিনি এত বেশী ইবাদত করতেন যে তাঁর পা দুটো ফুলে যেত।২০

ইমাম হুসাইন (আ.) বলেছেন: আমার মা ফাতিমা (আ.) প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে শুরু থেকে ভোর পর্যন্ত ইবাদতে মশগুল থাকতেন। তাকে মুমিনদের জন্য প্রচুর দোয়া করতে শুনতাম কিন্তু নিজের জন্য দোয়া করতেন না। মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, হে জননী! যেভাবে অন্যদের জন্য দোয়া করেন কেন আপনার নিজের জন্য দোয়া করেন না? তিনি বললেন : يا بنى الجار ثم الدار হে আমার ছেলে! প্রথম প্রতিবেশীরা তারপর ঘরের মানুষ ও নিজের জন্য।২১

 

রাসূল (সা.) বলেছেন: ফাতিমা (সা.) পৃথিবীর সকল (প্রথম থেকে শেষের) নারীর নেত্রী এবং সে যখন মেহরাবে ইবাদতে দণ্ডায়মান হয় তখন ৭০ হাজার ফেরেশ্তা তাকে সালাম করতে থাকে ও তাকে বলে: হে ফাতিমা! আল্লাহ্ তায়ালা তোমাকে মনোনিত করেছেন এবং তোমাকে সব ধরনের অপবিত্রতা থেকে মুক্ত করছেন, আর তোমাকে পৃথিবীর সমস্ত নারীগণের উপরে স্থান দিয়েছেন।২২

একজন মুসলিম নারীকে অবশ্যই যা জানতে হবে’-গ্রন্থ থেকে সঙ্কলিত

সঙ্কলন ও সম্পাদনা : আবুল কাসেম

তথ্যসূত্র:

আহযাব : ৩৫।

হুজুরাত : ১৩।

নাহল : ৯৭।

রূম : ২১।

নিসা : ১।

রাফ : ১৮৯।

যুমার : ৬।

রূম : ২১।

নাহল : ৭২।

১০শুরা : ১১।

১১আল মিযান ফি তাফসিরুল কুরআন, খণ্ড- ৪, পৃঃ-১৩৬।

১২ওয়াসায়েলুশ শিয়া, খণ্ড-২০, পৃ.৩৫২, বাব- ২৮, হাদীস নং-২৫৮০৪।

১৩বিহারুল আনোয়ার, খণ্ড-১১, পৃঃ-১১৫, হাদীস নং-৪২।

১৪কাসাস : ৭।

১৫আলে ইমরান : ৪৫।

১৬তাহরিম : ১১।

১৭কাউসার।

১৮আল্ হিকামুয যাহরাহ্, পৃ. ৯৪।

১৯, পৃঃ-৯৫।

২০, পৃঃ-৯৯।

২১, পৃ.৯৮।

২২আল্ হিকামুয যাহরাহ্, পৃ. ৯৯।

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: