bayyinaat

Published time: 06 ,March ,2017      11:26:12
প্রবন্ধ
ইসলাম ধর্মে আকিদাগত বিষয়গুলোর মধ্য হতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রাজআত, যা পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাজআত অর্থাৎ মৃত ব্যক্তি কিয়ামতের পূর্বে জীবিত হওয়ার পর আবার এই পৃথিবীতে জীবন যাপন করবে এবং তার পর মৃত্যুবরণ করবে। এ বিষয়টির প্রতি শুধু মুসলমানরাই বিশ্বাস রাখে না বরং প্রায় সব ধর্মের অনুসারীরাই এতে বিশ্বাস করে...
সংবাদ: 35

ইসলাম ধর্মে আকিদাগত বিষয়গুলোর মধ্য হতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রাজআত, যা পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাজআত অর্থাৎ মৃত ব্যক্তি কিয়ামতের পূর্বে জীবিত হওয়ার পর আবার এই পৃথিবীতে জীবন যাপন করবে এবং তার পর মৃত্যুবরণ করবে। এ বিষয়টির প্রতি শুধু মুসলমানরাই বিশ্বাস রাখে না বরং প্রায় সব ধর্মের অনুসারীরাই এতে বিশ্বাস করে। উল্লেখ্য যে রাজআত অতীতের উম্মতের মাঝে সংঘটিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও সংঘটিত হবে। রাজআত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে প্রচুর আয়াত রয়েছে। এই লেখনিতে আমরা কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করেছি। যেমনঃ সুরা নামল, আয়াত নং ৮২ ও ৮৩, সুরা কাহাফ, আয়াত নং ৪৭, সুরা গাফের, আয়াত নং ১১ এবং সুরা আম্বিয়া, আয়াত নং ৯৫।

রাজআতের গুরুত্ব

ইসলামে আকিদাগত বিষয়গুলোর মধ্য হতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রাজআত, যা কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। অবশ্য এ বিষয়টির প্রতি শুধু মুসলমানরাই বিশ্বাস রাখে না বরং খৃষ্টান ও ইহুদিসহ প্রায় সব ধর্মের অনুসারীরাই এতে বিশ্বাস করে। উল্লেখ্য যে রাজআত অতীতের উম্মতের মাঝে সংঘটিত হয়েছে, এই উম্মতের মাঝেও সংঘটিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও সংঘটিত হবে।

রাজআত অর্থাৎ মৃত ব্যক্তি কিয়ামতের পূর্বে জীবিত হওয়ার পর আবার এই পৃথিবীতে জীবন যাপন করবে। যেমন: হজরত ইসা (আ.) কোন মৃত ব্যক্তিকে লক্ষ করে বলতেনঃ (কুম বি ইজনিল্লাহ) আল্লাহর নির্দেশে দাড়াও। সঙ্গে সঙ্গে ঐ মৃত ব্যক্তি দাড়িয়ে যেত এবং তাঁর সাথে কথা বলত। আর এ কারণেই তাঁকে খোদা বলা হত। কেননা মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করা আল্লাহর কাজ বলে মনে করত।

প্রশ্ন হতে পারে যে, কেন আমরা রাজআতকে বিশ্বাস করব? অথবা রাজআতে বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা কি? এর উত্তর অত্যন্ত স্পষ্ট; আমরা জানি যে, হজরত ইসা (আ.) আসমানে আছেন। শেষ জামানায় ইমাম মাহদি (আ.) এর আগমনের পর হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এর উম্মত হিসেবে আবার আসবেন। কিন্তু মানুষ তাঁকে কিভানে চিনবে যে তিনি হজরত ইসা (আ.) তাঁর চিহ্ন কি হবে? যে ব্যক্তি বলবে যে আমি ইসা; তাকেই কি গ্রহণ করবে? যেহেতু ইসা (আ.) এর মুজিজা ছিল মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করা, তাই স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে বলা হবে যে আপনি যদি ইসা মাসিহ হয়ে থাকেন, তাহলে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করে দেখান। সুতরাং অবশ্যই রাজআতকে বিশ্বাস করতে হবে। কেননা এটাই তো রাজআত।

পৃথিবীতে এত অমুসলিম আছে, ইমাম মাহদি (আ.) আগমনের পর সকলকে কি হত্যা করবে? এর উত্তর অবশ্যই না। খৃষ্টানরা হজরত ইসা (আ.) এর মাধ্যমেই ইসলাম গ্রহণ করবে। হজরত ইসা (আ.) আগমনের পর যখন নিজের পরিচয় দিবেন, তখন খৃষ্টানরা তাঁকে বলবে আপনি যদি ইসা মসিহ হন; তাহলে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করে দেখান। তিনি মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করে দেখানোর পর খৃষ্টানরা তাঁকে তাদের নবি হিসেবে গ্রহণ করবে। অতপর হজরত ইসা (আ.) হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এর নবুওয়াতের প্রতি সাক্ষ্য দান করবেন এবং নিজেকে তাঁর উম্মত হিসেবে ঘোষণা করবেন। তার পর খৃষ্টানরাও ইসলামের ধর্মের প্রতি ইমান আনবে।

উল্লেখ্য যে হজরত ইসা (আ.) পৃথিবীতে আগমনের পর, ইমাম মাহদি (আ.) এর পিছনে মুকতাদি হয়ে নামাজ পড়বেন। আমরা জানি যে হজরত ইসা (আ.) এর মুজিজা ছিল মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করা, অনারোগ্য ব্যক্তিকে রোগমুক্তি দান করা ও ভবিষ্যত সম্পর্কে খবর দেয়া ইত্যাদি। তাহলে অবশ্যই ইমাম মাহদিও (আ.) এ ধরনের কাজ করতে পারবেন। কেননা ইমামের জ্ঞান মুকতাদি হতে অবশ্যই বেশী হবে। ইসলাম আসার পর সব দ্বীন রহিত হয়ে গিয়েছে। সুতরাং হজরত ইসা (আ.) নবি হলেও হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এর উম্মত হয়েই আগমন করবেন এবং ইমাম মাহদি (আ.) কে ইমাম হিসেবে গ্রহণ করবেন; বিধায় তাঁর মুজিজা যতই থাক না কেন ইমাম মাহদি (আ.) এর কারামত তাঁর চেয়ে বেশী হওয়াই স্বাভাবিক।

পবিত্র কোরআনে রাজআতঃ রাজআত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে প্রচুর আয়াত বিদ্যমান রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করা হলোঃ

﴿وَ إِذا وَقَعَ الْقَوْلُ عَلَيْهِمْ أَخْرَجْنا لَهُمْ دَابَّةً مِنَ الْأَرْضِ تُكَلِّمُهُمْ أَنَّ النَّاسَ كانُوا بِآياتِنا لا يُوقِنُون

"যখন তাদের প্রতি কথা (প্রতিশ্রুতি) পূর্ণ হবে তখন আমরা ভূমি হতে এক বিচরণকারী নির্গত করব যে তাদের সঙ্গে (এ বিষয়ে) কথা বলবে যে, মানুষ আমাদের নিদর্শনাবলিতে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিল না?(সুরা নামল, আয়াত নং ৮২।)

এই আয়াতে বলা হয়েছে যে উক্ত জীব কথা বলবে। যদি মানুষ না হয় তাহলে কিভাবে কথা বলবে? এছাড়াও যদি ততকালীন সময়ের লোকরা রাজআতকে বিশ্বাস না করে তাহলে বিষয়টিকে কিভাবে গ্রহণ করবে?

﴿وَ يَوْمَ نَحْشُرُ مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ فَوْجاً مِمَّنْ يُكَذِّبُ بِآياتِنا فَهُمْ يُوزَعُونَ

(সেদিনকে স্মরণ কর,) "যেদিন আমরা প্রত্যেক সম্প্রদায় হতে এমন এক একটি দলকে সমবেত করব যারা আমার নিদর্শনাবলিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করত। অতঃপর তাদের পৃথক পৃথক দলে বিভক্ত করা (ও বিচ্ছিন্নতা ও বিশৃঙ্খলা হতে ফিরিয়ে রাখা) হবে।” (সুরা নামল, আয়াত নং ৮৩।)

এই আয়াতে একটি দলকে উঠানোর কথা বলা হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে কিয়ামতের দিন নয়, যদি কিয়ামতের দিন হত তাহলে একটি দলের কথা বলা হত না বরং সকলের কথা বলা হত। কেননা কিয়ামতের দিন সকলকে উঠানো হবে, একটি দলকে নয়। সুরা কাহাফে এরশাদ হচ্ছে;

﴿وَ يَوْمَ نُسَيِّرُ الْجِبالَ وَ تَرَى الْأَرْضَ بارِزَةً وَ حَشَرْناهُمْ فَلَمْ نُغادِرْ مِنْهُمْ أَحَداً

"যে দিন পাহাড়গুলোকে চলমান করব, দেখবে যে জমিনের মাঝে যা কিছু আছে বাইরে বের করে দিয়েছে এবং সকলকে হিসাবের জন্য একত্রিত করা হবে; এবং তাদের মধ্য হতে কাউকে ছেড়ে দেওয়া হবে না।” (সুরা কাহাফ, আয়াত নং ৪৭।)

এ আয়াত হতে আমারা বুঝতে পারি যে কিয়ামতের দিন সকলকে একত্রিত করা হবে। সুতরাং উপরোক্ত আয়াতে দলটির রাজআতের কথা বলা হয়েছে।

﴿قالُوا رَبَّنا أَمَتَّنَا اثْنَتَيْنِ وَ أَحْيَيْتَنَا اثْنَتَيْنِ فَاعْتَرَفْنا بِذُنُوبِنا فَهَلْ إِلى‏ خُرُوجٍ مِنْ سَبيلٍ

"তারা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের দু'বার মৃত্যু ঘটিয়েছ এবং দু'বার জীবন দান করেছ, এখন আমরা আমাদের অপরাধ স্বীকার করছি, তবে কি এ থেকে নির্গমনের কোন পথ আছে?(সুরা গাফের, আয়াত নং ১১।)

আমরা যদি রাজআতকে বিশ্বাস না করি তাহলে এ আয়াতকে কিভাবে ব্যাখ্যা করব। এ আয়াত হতেও রাজআতের বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। এ আয়াত দ্বারা বুঝানো হচ্ছে যে প্রথমে একবার মৃত্যুবরণ করেছে, অতঃপর রাজআতের মাধ্যমে জীবিত হয়েছে, তারপর আবার মৃত্যুবরণ করেছে এবং কিয়ামতের দিন পুনরায় জীবিত হবে।

﴿وَ حَرامٌ عَلى‏ قَرْيَةٍ أَهْلَكْناها أَنَّهُمْ لا يَرْجِعُونَ

"এবং যে জনপদকে আমরা ধ্বংস করেছি তার জন্য (পৃথিবীতে) প্রত্যাবর্তন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।” (সুরা আম্বিয়া, আয়াত নং ৯৫।)

এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলছেনঃ যে জনপদকে আমি ধবংস করেছি তারা আর ফিরে আসবে না। এর অর্থ কি? তাহলে তারা কি কিয়ামতের দিনও ফিরে আসবে না? এর আর্থ অবশ্যই এটা নয়। কিয়ামতের দিন তো সকলকেই ফিরে আসতে হবে। সুতরাং এখানে বলা হচ্ছে তাদের রাজআত হবে না।

উপসংহারঃ সতরাং রাজআতের বিষয়টি সরাসরি কোরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। পবিত্র কোরআন বর্ণনা করছে যে মৃত্যুর পর রাজআতের মাধ্যমে জীবিত হয়েছে, তারপর আবার মৃত্যুবরণ করেছে এবং কিয়ামতের দিন পুনরায় জীবিত হবে। এটা এমন একটি বিষয় যে অতীতের সব উম্মতই এতে বিশ্বাস করত।

 

মূল: মুহাম্মাদ আব্দুল হান্নান