bayyinaat

Published time: 07 ,May ,2017      01:47:38
সংবাদ
সৌদি রাজবংশ স্বীয় স্বার্থ ও রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত এবং মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের আধিপত্যকামী ও আগ্রাসী নীতিকে বাস্তবায়নের পথকে সহজ করতে পাশ্চাত্য ও রাজতান্ত্রিক শাসকগোষ্ঠীর ক্রীড়ানক ও জনগণের হাতে পদচ্যুত বিশ্বাসঘাতক ও পলাতক রাষ্ট্রপতি মনসুর হাদিকে ক্ষমতার ফিরিয়ে আনার অজুহাতে ইয়েমেনে হামলা চালায়। কিন্তু ইয়েমেনের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষায় দৃঢ়পদ সংগ্রামী জনতা তাদের এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। ফলে সৌদি নরপিশাচরা আরো উগ্র হয়ে ওঠে এবং বিলিয়ন বিলিয়ন পেট্রোডলার খরচ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন থেকে ক্রয়কৃত মারণাত্মক বিভিন্ন অস্ত্র, বোমা (এমনকি নিষিদ্ধ গুচ্ছবোমা) ও যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ইয়েমেন গণহত্যা শুরু করে যা দুই বছরের অধিক সময় ধরে অব্যাহত রয়েছে। এ নিষ্ঠুর হামলায় চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলেও বিশ্ব নিরবতা অবলম্বন করছে। অথচ বিধ্বংসী এ আক্রমণে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। কোন কোন পরিসংখ্যান অনুযায়ী গড়ে প্রতিদিন ৬জন শিশু মৃত্যুর শিকার হচ্ছে...
সংবাদ: 55

ইয়েমেনে সৌদি জোটের আগ্রাসন

২০১৫ সালের ২৬ মার্চ থেকে ইয়েমেনের নিরীহ জনগণের ওপর বিমান ও স্থল হামলা শুরু করেছে সৌদি নেতৃত্বাধীন কয়েকটি দেশের জোট। এই আগ্রাসী হামলার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সৌদি জঙ্গি বিমানগুলো ইয়েমেনের বিভিন্ন প্রদেশগুলোতে প্রতিনিয়ত বোমাবর্ষণ করে চলেছে। যার ফলে এ পর্যন্ত হাজার হাজার নারী, শিশু ও বেসামরিক ইয়েমেনি নাগরিক নিহত ও আহত হয়েছে এবং কয়েক লাখ সাধারণ মানুষ গৃহহারা হয়েছে দেশটির অধিকাংশ বেসামরিক অবকাঠামো (শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো, আবাসিক ভবন, মসজিদ, বাজার ও সমুদ্র বন্দরগুলো) ধ্বংস ও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রধান বলেছেন, ইয়েমেনে বেসামরিক মানুষ হত্যার জন্য সৌদি আরব দায়ী

 ইয়েমেনে সৌদি জোটের আগ্রাসন

 ইয়েমেনে সৌদি জোটের আগ্রাসন

ইয়েমেনের হুদাইদাহ সমুদ্র বন্দর সৌদি বিমান হামলায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। হুদাইদাহ প্রদেশে একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরেক হামলায় কয়েক ডজন মানুষ হতাহত হয়েছে।

আগ্রাসন শুরু থেকে এই পর্যন্ত অন্তত ১২ হাজার বেসামরিক ইয়েমেনি নাগরিক নিহত ও ৩৫ হাজার আহত হয়েছে এবং নিহতদের মধ্যে শিশু ও নারীর সংখ্যা ৫ হাজারেরও বেশি বলে জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের ঘোষণা দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী নিহতদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। এ ছাড়াও ৩৫ লাখ ইয়েমেনি হয়েছে গৃহহারা ও শরণার্থী এবং প্রায় ২ কোটি ইয়েমেনি হয়েছে খাদ্যসহ নানা ধরনের জরুরি ত্রাণ সাহায্যের মুখাপেক্ষী

Picture Point

ফ্রিডম হাউজ ফাউন্ডেশন সম্প্রতি এক হিসাবে বলেছে, সৌদি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে যুদ্ধে ২ হাজারেরও বেশী ইয়েমেনি শিশু হামলায় নিহত এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী আরও প্রায় ১০ হাজার শিশু শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত প্রদাহ, নিউমোনিয়া ও পানিবাহিত রোগে মারা গেছে।

জাতিসংঘের শিশু তহবিল ‘ইউনিসেফ’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়েমেনে সৌদি হামলা শুরুর পর থেকে দেশটিতে প্রতিদিন গড়ে ৬-৭ টি শিশু হতাহত হচ্ছে ইউনিসেফ’র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে হতাহতের এ পরিসংখ্যানের মধ্যদিয়ে ইয়েমেনি শিশুদের দূরাবস্থার আংশিক চিত্র ফুটে উঠেছে।

 ইয়েমেনে সৌদি জোটের আগ্রাসন

 ইয়েমেনে সৌদি জোটের আগ্রাসন

ইয়েমেনে নিযুক্ত ইউনিসেফের প্রতিনিধি জুলিয়েন হার্নেস বলেছেন, ইয়েমেনের কোথাও শিশুদের নিরাপত্তা নেই। নিশ্চিন্তে ঘুমানো বা খেলার সুযোগ নেই দেশটির শিশুদের। ইউনিসেফ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে ইয়েমেনে ২২ লাখ শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে তারা পর্যাপ্ত খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না। জেরেমি হফকিনসের রিপোর্টে দুই কোটি মানুষ খাদ্যাভাব ও দুর্ভিক্ষের মুখে বলা হয়েছে যার মধ্যে ৯৫লক্ষ শিশু রয়েছে।

ইয়েমেনে সৌদি জোটের আগ্রাসন 

এদিকে ত্রাণ সংস্থা অক্সফাম বলেছে, ইয়েমেনে সংঘাত চলতে থাকায় বর্তমান বিশ্বে মানবীয় ত্রাণ-চাহিদা পূরণের সবচেয়ে বড় দাবি মেটানো জরুরি হয়ে পড়েছে। ইয়েমেনের এক কোটি ৪৪ লক্ষ মানুষ এখন ক্ষুধার্ত এবং খাদ্যের দাম ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় তাদের বেশির ভাগই চড়া দাম দিয়ে খাদ্য কিনতে সক্ষম নয়। ইয়েমেনের ক্ষেত-খামার ও বাজারগুলো সৌদি হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ব্যাংকসহ নানা ক্ষেত্রে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকায় ইয়েমেনে পণ্য আমদানি বন্ধ রয়েছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদি জ্বালানী সংকটের কারণে ইয়েমেনে কৃষি উৎপাদনে ধস নেমেছে বলেও সংস্থাটি উল্লেখ করেছে।

এদিকে ইয়েমেনের রাজধানী সানায় প্রায় প্রতি শুক্রবার সৌদি আগ্রাসন বিরোধী জনসমাবেশ ও গণ-মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। লাখ লাখ জনতা মার্কিন ও সৌদি সরকার এবং ইসরাইল-বিরোধী শ্লোগান দেন। রাজধানী সানা ছাড়াও ইয়েমেনের অন্যান্য শহরগুলোতেও সৌদি আগ্রাসন বিরোধী ব্যাপক গণ-বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

ইয়েমেনে সৌদি জোটের আগ্রাসন

হুথি নেতা সাইয়্যেদ আবদুল মালিক টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে তার দেশের ওপর সৌদি সরকারের ধ্বংসাত্মক আগ্রাসন ও গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানান এবং এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নীরবতার কঠোর সমালোচনা করেন। সৌদি আগ্রাসন নিরপরাধ বেসামরিক ইয়েমেনি জনগণকে হত্যা করা ছাড়া আর কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি বলে তিনি মন্তব্য করেন সৌদি সেনা ও তাদের অনুচর গোষ্ঠী ইয়েমেনের একটি প্রজন্মকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে এবং দেশটিকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে চায় বলে আবদুল মালিক উল্লেখ করেন। ব্রিটেন ও মার্কিন সরকার সৌদি সরকারকে ইয়েমেন-বিরোধী আগ্রাসনে সহায়তা দিচ্ছে বলে তিনি জানান। ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি-ইসরাইলি-মার্কিন জোট সক্রিয় বলেও জনপ্রিয় আনসারুল্লাহর নেতা মন্তব্য করেন।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নীরবতার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, এ পরিষদ কেবল দাম্ভিক ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোকেই পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। জাতিসংঘের ইশতেহার মজলুম জনগণের জন্য প্রণয়ন করা হয়নি, তা কেবলই বলদর্পী ও স্বৈরশাসকদের সেবার জন্য তৈরি করা হয়েছে বলে হুথি নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

হুথি নেতা ইয়েমেনি জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের প্রশংসা করে বলেছেন, এ থেকেই ইয়েমেনিদের দাবির বৈধতা ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, এ অঞ্চলে ইহুদিবাদী ইসরাইলকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিতে পরিণত করার জন্যই গোটা অঞ্চলকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করতে চায় আগ্রাসী সৌদি সরকার।

সৌদি সরকার তার লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি আরও বলেন, ইয়েমেনের সর্বস্তরের জনগণ তাদের জাতীয় অঙ্গীকার রক্ষার জন্য প্রতিরোধ অব্যাহত রাখবে। প্রতিরোধের ফলাফল এখন দেখা যাচ্ছে বলে উল্লেখ করে আবদুল মালিক বলেন, ইয়েমেনি শহীদদের রক্ত আগ্রাসী শক্তির ওপর বড় ধরনের আঘাত হেনেছে।

যুদ্ধ আরম্ভের কারণ

ইয়েমেন মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ। এটি আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। সুউচ্চ পর্বতমালা ইয়েমেনের উপকূলীয় সমভূমিকে অভ্যন্তরের জনবিরল মরুভূমি থেকে পৃথক করেছে। এক হাজার বছরেরও বেশি সময় এটি একটি দরিদ্র ও অবহেলিত দেশ হিসেবে বিরাজ করছিল। বিংশ শতাব্দীর শেষে এসে এখানে খনিজ তেল আবিষ্কার হলে ইয়েমেনের অর্থনৈতিক উন্নতি ও জনগণের জীবনের মান উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

১৯৯০ সালে ইয়েমেন আরব প্রজাতন্ত্র (উত্তর ইয়েমেন) এবং গণপ্রজাতন্ত্রী ইয়েমেন (দক্ষিণ ইয়েমেন) দেশ দুইটিকে একত্রিত করে ইয়েমেন প্রজাতন্ত্র গঠন করা হয়। সানা’আ ইয়েমেন প্রজাতন্ত্রের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। ইয়েমেনের পশ্চিমে লোহিত সাগর এবং দক্ষিণে এডেন উপসাগর। এটি আফ্রিকা মহাদেশ থেকে বাব এল মান্দেব প্রণালীর মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন। দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বে সৌদি আরব এবং পূর্বে ওমান অবস্থিত। সৌদি আরব ও ওমানই ইয়েমেনের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। ইয়েমেনের আয়তন ৫,২৭,৯৭০ বর্গকিমি। ইয়েমেনের জনসংখ্যা তিন কোটির কাছাকাছি। তার মধ্যে ৫৬.৩৬% সুন্নি শাফেয়ী, ৩৫% যাইদী শিয়া, ২.৫% বার ইমামী (জাফরী) শিয়া, ৬% ইসমাইলী শিয়া এবং বাকীরা সালাফি মতবাদে বিশ্বাসী।

সৌদি আরব এই দেশের একটি অংশ ১৯৩৪ সালে আগ্রাসন চালিয়ে দখল করে নেয়। ইয়েমেনের উত্তর অংশে যাইদী শিয়ারা বাস করলেও তাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষা-দীক্ষাতে তারা যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়ায় তারা বেশী রাজনীতি সচেতন।

২০১৪ সালে যখন ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদি জনসাধারণের পক্ষ থেকে উত্থাপিত সর্বদলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্র সৃষ্টির দাবিকে উপেক্ষা করে জনগণ তার বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সে আমেরিকা  ও সৌদিদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন অর্থাৎ ইয়েমেনকে পূর্বের ন্যায় দ্বিখণ্ডিত করার জন্য দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়। এভাবে সৌদিদের নিকট সাহায্যের হাত পাতে ও বিদেশী শক্তির আগ্রাসনের পথকে উন্মুক্ত করে। এ অবস্থা লক্ষ্য করে হুতি বা হুসি গোত্রের নেতা আব্দুল মালেক আল- হুসি গঠিত আনসারুল্লাহ দল ইয়েমেনের অখণ্ডতা রক্ষা ও গৃহযুদ্ধ পরিহারের জন্য জনগণের সমর্থনে রাজধানী সানআ দখল করে।  মনসুর হাদি এডেনে পালিয়ে যায়। তাকে ক্ষমতায় পুনপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য সৌদি আরব ইয়েমেনে আগ্রাসন চালায়।

হুতি বা হুসি ইয়েমেনের যাইদি শিয়াদের একটি গোত্র। যাইদি শিয়ারা শিয়া নামে পরিচিত হলেও তাদের আকীদা-বিশ্বাস আহলে সুন্নাতের নিকটবর্তী। তারা শিয়াদের মূল ধারা বার ইমামী শিয়াদের মত ইমামদের নিষ্পাপতা ও আবশ্যকভাবে ঐশীভাবে মনোনীত হওয়ায় বিশ্বাসী নয়। ওয়াহাবী গোষ্ঠী যেমন আহলে সুন্নাতের মূলধারা নয়, তেমনি যাইদীরাও শিয়াদের মূলধারার অন্তর্ভুক্ত নয়। এই দলের নেতার নাম আব্দুল মালেক আল- হুসি। তার নাম অনুসারেই তাঁদেরকে হুতি বা হুসি বলা হয়। তাদের নেতৃত্বের রাজনৈতিক জোটের নাম হল আনসারুল্লাহ। এই দলটার গঠন ও কর্মকৌশল লেবাননের হিজবুল্লাহর অনুসরণে হলেও তারা এরা বর্তমানে ইয়েমেনে প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তাদেরকে শিক্ষিত ও প্রগতিশীল সুন্নীরাও সমর্থন করে। এর পাশাপাশি ইয়েমেনের সেনাবাহিনীও সৌদির বিরুদ্ধে আনসারুল্লাহর সঙ্গে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। আর এজন্য ইয়েমেনের স্বৈরাচারী শাসক আলী আব্দুল্লাহ সালেহ এবং মনসুর হাদি জনরোষের কারণে সৌদি আরব পালিয়ে যান।

 ইয়েমেনে সৌদি জোটের আগ্রাসন

ইয়েমেনের শিয়াদের সৌদি আরব প্রচন্ড ভয়ের চোখে দেখে। কারণ তারা যোদ্ধা জাতি। তারা সৌদি আরবের ওহাবী মতবাদ প্রচারকারী শাসককে পছন্দ করে না। উপরন্তু সৌদি আরব ইয়েমেনের অনেক এলাকা ১৯৩২ সাল হতে দখল করে রেখেছে।

২০১১ সালে আরব জাগরণের ঢেউ ও ইয়েমেন

২০১২তে অনুষ্ঠিত জনগণের অংশগ্রহণশূন্য এক অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে একক প্রার্থীর নির্বাচনে  জিসিসি সমর্থিত মনসুর আবদুল হাদি প্রেসিডেন্ট মনোনীত হয়।১০

২০১৫তে সে গণপ্রতিরোধের মুখে প্রথমে এডেন ও পরে সৌদি আরবে পালিয়ে আশ্রয় নেয়ার পর ইয়েমেনে আনসারুল্লাহ সকল রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী নিয়ে জাতীয় ঐক্যমতের সরকার প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়। তারা জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় প্রাক্তন পলাতক শাসকের সমর্থক দলের সাথে সমঝোতা করতে সম্মত হলেও কুয়েতে ২০১৬ জুনে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে আমেরিকা ও উপসাগরীয় জোট জিসিসি সমর্থিত মনসুর হাদির পক্ষের প্রতিনিধিরা তাদের জনভিত্তিহীনতার বিষয়টি বিবেচনায় না এনে আনসারুল্লাহকে নিরস্ত্র করাসহ তাদেরকে পুনরায় ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করার আবদার করে আলোচনাকে অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দেয়। প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধিরা ইয়েমেনের বাস্তব রাজনৈতিক অবস্থাকে অস্বীকার করে আন্তর্জাতিক সুবিধাবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর সহযোগিতায় ইয়েমেনের জনগণের দাবিকে পদদলিত করে স্বৈরাচারী শাসককে পুনপ্রতিষ্ঠিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এমনকি তারা বিগত দেড় বছর ধরে ইয়েমেনে আগ্রাসন চালানো, এ দেশের অবকাঠামোগতভাবে ধ্বংস ও বিমান হামলার মাধ্যমে সহস্র নিরপরাধ ও বেসামরিক মানুষকে হত্যার জন্য সৌদি আরবকে দায়ি পর্যন্ত করতে রাজি হয়নি। অথচ উচিত ছিল সৌদি আগ্রাসী গোষ্ঠীর কাছ থেকে এজন্য ক্ষতিপূরণ আদায় করা। এসব কারণে আলোচনা ব্যর্থ হয়ে যায়। জনসমর্থনপুষ্ট আনসারুল্লাহ দল সবসময়ই ইয়েমেনের সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে আগ্রহ ব্যক্ত করলেও সৌদি মদদপুষ্ট মনসুর হাদির দল তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে ও বিভিন্ন অজুহাতে বহিঃশক্তির প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতা পুনর্দখলের চেষ্টায় রয়েছে।

ইয়েমেনের জাতীয় সংলাপ কমিটির সদস্য হামিদ রিযক এ সম্পর্কে বলেন, ‘ইয়েমেনের জনগণ ও জাতীয় ঐকমত্যের সরকার দেশে শান্তি প্র্রতিষ্ঠায় আন্তরিক ও আগ্রহী। যেমনটি আনসারুল্লাহ নেতা আবদুল মালেক হুসি বলেছেন: আমরা কুয়েতে অনুষ্ঠিত আলোচনায় এ উদ্দেশে অংশগ্রহণ করেছি যে, বিশ্বসমাজের সামনে আমাদের শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐকান্তিকতা প্রকাশ করতে ও মনসুর হাদির পক্ষ থেকে সবধরনের অজুহাত দেখানোর পথ বন্ধ করতে। এমনকি এ ক্ষেত্রে আমরা আমাদের পূর্ববর্তী অবস্থান থেকে সরে এসে অনেক বিষয়ে ছাড়ও দিয়েছি কিন্তু তারা আমাদের পূর্ণ (শক্তি ও জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও) আত্মসমর্পণের দাবি জানানো শুরু করল। অথচ এ দাবি মেনে নেয়া ইয়েমেনের জনগণের পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা সংলাপে অংশগ্রহণ আমাদের দুর্বলতার কারণে নয়, বরং আমরা আমাদের শান্তিকামিতা প্রমাণ করতেই তা করেছি। ইয়েমেনীরা আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও এ সংগ্রামে তারা আল্লাহর ইচ্ছা ও সাহায্যে অবশ্যই জয়ী হবে।

ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ দলের মুখপাত্র বলেছেন, আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে আল্লাহর সহায়তায় আমরা শয়তানের শিং নামে সহিহ হাদিসে অভিহিত সৌদি আরবকে প্রতিরোধ করে যাবো। আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।

ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ দলের পরিচিতি

যাইদি শিয়া নেতা ‘আব্দুল মালেক আল-হুসি’–এর নেতৃত্বে স্বৈরাচারী শাসক ‘আবদে রাব্বি মনসুর হাদি’ কে উৎখাত করার জন্য ইয়েমেনের জনগণ আন্দোলন করা শুরু করে। তারা আনসারুল্লাহ নামক দল গঠন করে। ব্যাপক জনসমর্থনের অধিকারী এই দলটাকে পাশ্চাত্য গণমাধ্যমগুলোতে অন্যায়ভাবে হুথি বিদ্রোহী বা হুসি বিদ্রোহী বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। এর ফলে ইয়েমেনের অধিকাংশ এলাকা আনসারুল্লাহ দলের অধিকৃত হয়। আর মনসুর হাদি দল-বল নিয়ে সৌদি আরব পালিয়ে যায়।

সৌদি আরবের ইয়েমেন আক্রমন:

২০১২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে গণঅভ্যুত্থানে আলী আবদুল্লাহ সালেহর স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর ভাইস প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদি ক্ষমতা হাতে নেয়। কিন্তু গণবিক্ষোভে সেও রাজধানী ত্যাগ করে দক্ষিণ ইয়েমেনের এডেনে আশ্রয় নেয়। ফলে আনসারুল্লাহ পুরো দেশের নিয়ন্ত্রন নেয়। দক্ষিণের চারটা ছোট প্রদেশ স্বৈরাচারী শাসক মনসুর হাদির সমর্থকদের অধিকারে থাকে। এমন অবস্হায় সৌদি আরব ও সারা বিশ্বের ওহাবীরা ভয় পেয়ে যায়। কারণ ইয়েমেনে সব সময় স্বৈরাচারী শাসকদের মাধ্যমে সৌদি আরবই আড়ালে শাসন করতো ও ইয়েমেনের জনসাধারণের অধিকার হরণ করতো। এখন অত্যাচারিতরা জেগে ওঠেছে। সুতরাং সৌদি আরবে তাবেদার শাসকগোষ্ঠীর আর ক্ষমতা থাকবে না এই ভয় সৌদিদের তাড়া করতে থাকে।

তাই সৌদি বাদশাহ ইয়েমেনকে পুনরায় নিজের কব্জায় আনার উদ্দেশ্যে আমেরিকার ও ইসরাইলের সাথে আলোচনা করে। কারণ ওহাবী ‘আলে সৌদ’ বংশ ইহুদী ও খৃস্টানদের সহযোগিতা নিয়েই হিজাযে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল, তাই তারাই হলো তাদের প্রকৃত বন্ধু। আমেরিকা ও ইসরাইলের পক্ষ থেকে সবুজ সঙ্কেত পেয়ে সৌদি আরবের বাদশাহ ইয়েমেনকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়ার ব্রত নিয়ে হামলা শুরু করে। তারা পেট্রো ডলারের বিনিময়ে সবধরনের সামরিক সাহায্য দানে প্রতিশ্রুতবদ্ধ হয় ও অস্ত্র-গোলা-বারুদ সরবরাহ করে।” এজন্য ২৭ মার্চ ২০১৫ তারিখ হতে ইয়েমেনে বিমান ও স্হল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে সৌদি আরব এবং তার আরব মিত্ররা।

আমাজন প্রেসের ২০০১ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৮৪-১৯৯৫ মেয়াদে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলি ২৫৭ বিলিয়ন ডলার অস্ত্র ক্রয় করেছে যার মধ্যে সৌদি আরবের অংশ ১৮৭ বিলিয়ন ডলার। ২০১১ সালে যার পরিমাণ হয়েছিল ৩৩.৭ বিলিয়ন। (রয়টার্স, ২৭ অগাষ্ট, ২০১২ রিপোর্ট) ২০১৫ সালে সৌদি অস্ত্র ক্রয়ের পরিমাণ ছিল ৬৫ বিলিয়ন এবং ২০১৬ তা দাড়িয়েছে ৮০ বিলিয়ন ডলারে। আরব আমিরাত কিনেছে ২৩ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র (Stockholm International Peace Research Institute report 2016 July) লক্ষণীয় যে এ অস্ত্রগুলোর কোনটিই ইসরাঈলের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়নি বরং তা ব্যবহৃত হয়েছে মূলত সিরিয়া ও ইয়েমেনে মুসলমানদের হত্যার জন্য। কেননা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ২০১৫ ও অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের ২০১৭ সালের প্রারম্ভে দেয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে সৌদি আরব ইয়েমেনে মার্কিন ও ব্রিটিশদের দেয়া ক্লাস্টার বোমা ব্যাপক আকারে ব্যবহার করছে১১

‘সাইনস অফ দা টাইমস’ সাইট আমেরিকা ও ব্রিটেনকে ইয়েমেনে মানবতা বিরোধী অপরাধে সৌদিকে সহযেগিতার জন্য যুদ্ধাপরাধী বলে অভিযুক্ত করেছে১২

গ্লোবাল রিসার্চের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে ইসরাইল ইয়েমেনে পারমানবিক বোমা ব্যবহার করেছে যা এফ ১৬ জঙ্গী বিমান থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছে এ রিপোর্ট সৌদি আরবের সাথে ইসরাইলের গোপন যোগসাজসের ব্যাপারটিকে সত্য বলে প্রমাণ করে।১৩

দুই বছরেরও বেশী ধরে সৌদি আগ্রাসনের ফলাফল

ব্রিটেনের দৈনিক গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে লিখেছে, ইয়েমেনে এক বছর ধরে হামলা চালিয়েও সৌদি সরকার তার প্রধান লক্ষ্য তথা ক্ষমতাচ্যুত মানসুর হাদিকে ইয়েমেনে পুনরায় ক্ষমতাসীন করতে ব্যর্থ হয়েছে। দৈনিকটি লিখেছে, সৌদি সরকার মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকানোর যে আশা করেছিল তাও ব্যর্থ হয়েছে। ইয়েমেনে সৌদি হামলা চলতে থাকায় আল-কায়দা ও আইএস বা দায়েশ লাভবান হচ্ছে বলেও দৈনিকটি মন্তব্য করেছে।

ইতিমধ্যে কয়েকবার জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় কয়েকবার যুদ্ধবিরতির সন্ধি হয়েছে কিন্তু কোনবারই সৌদিরা সন্ধি মেনে চলেনি এবং প্রতিবার তারা বোমা হামলা চালিয়ে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। তবে সৌদি সরকার ইয়েমেনে যুদ্ধ-অপরাধে জড়িত বলেই মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ ও আশঙ্কা ক্রমেই জোরদার হচ্ছে।

আর সেইসাথে দিন দিন ইয়েমেনসহ বিশ্বের সকল স্বাধীনতাকামী মানুষের মধ্যে সৌদি আগ্রাসন ও সৌদি সরকারের সমর্থক প্রতিক্রিয়াশীল গণভিত্তিহীন আরব দেশগুলো এবং পৃষ্ঠপোষক পাশ্চাত্যের বিরুদ্ধে ঘৃণা সৃষ্টি হচ্ছে। তাদের মধ্যে এ প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে যে কেন আজ আরব স্বৈরাচারী শাসকদের পক্ষ থেকে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যেরূপ জোট তৈরী করা হয়েছে ইতিহাসের কোন প্রেক্ষাপটেই এ জালেম গোষ্ঠী ইসরাইলের বিরুদ্ধে এমন জোট গঠনের উদ্দোগ নেয়নি। অথচ ইসরাইল বিগত সত্তর বছরে ফিলিস্তিনীদের ওপর হত্যা, নির্যাতন, ভূমি থেকে উচ্ছেদসহ সবধরনের মানবাধিকার বিরোধী অপরাধ করেছে।

 

বিস্তারিত জানার জন্য

https://www.unicef.org/videoaudio/PDFs/Yemen_2_Years_-_children_falling_through_the_cracks_FINAL.pdf

http://www.odvv.org/news-322-UNICEF-Over-20-Million-in-Yemen-in-Need-of-Aid

https://www.amnesty.org/en/countries/middle-east-and-north-africa/yemen/report-yemen/

http://reliefweb.int/sites/reliefweb.int/files/resources/G1617238.pdf

http://www.telegraph.co.uk/news/2016/06/06/un-removes-saudi-led-coalition-in-yemen-from-black-list-of-child/

https://encyclopediageopolitica.com/2017/01/22/invisible-victims-yemens-hidden-refugee-crisis/

http://foreignpolicy.com/2016/06/07/saudi-arabia-threatened-to-break-relations-with-un-over-human-rights-criticism-in-yemen/

http://time.com/4528393/yemen-saudi-arabia-strike-wedding/

http://www.unhcr.org/protection/operations/55e41a7f9/yemen-situation-update.html?query=Killed%20yemen

http://www.abc.net.au/news/2017-02-26/humanitarian-crisis-unfolds-in-yemen-as-world-refuses-to-act/8304896

https://www.theguardian.com/commentisfree/2016/oct/15/us-bombed-yemen-middle-east-conflict

http://www.presstv.ir/Detail/2017/03/28/515848/Yemen-Saudi-Arabia-UNICEF

http://www.presstv.ir/Detail/2017/03/25/515603/yemen-ansarullah-houthi-speech

http://www.presstv.ir/Detail/2017/04/20/518796/Yemen-UN-McGoldrick-Saudi-Arabia-bombardment-Hudaydah

 

 

তথ্যসূত্র


. https://www.amnesty.org/en/countries/middle-east-and-north-africa/yemen/report-yemen/

. Spokesperson for the UN High Commissioner for Human Rights - Rupert Colville - Location: Geneva

   http://www.ohchr.org/EN/NewsEvents/Pages/DisplayNews.aspx?NewsID=16518&LangID=E

   http://www.un.org/ga/search/view_doc.asp?symbol=s/2016/360&referer=/english/&Lang=E

   http://www.telegraph.co.uk/news/2016/08/05/un-report-says-saudi-led-coalition-and-houthis-violate-human-rig/

   http://time.com/4528393/yemen-saudi-arabia-strike-wedding/

. http://www.presstv.ir/Detail/2017/03/25/515603/yemen-ansarullah-houthi-speech

   http://www.presstv.ir/Detail/2017/03/24/515487/Yemen-civilians-Saudi-war-UN

   http://www.presstv.ir/Detail/2017/03/28/515848/Yemen-Saudi-Arabia-UNICEF

. http://www.un.org/apps/news/story.asp?NewsID=56625#.WQMPz8m4rIU

 *  https://encyclopediageopolitica.com/2017/01/22/invisible-victims-yemens-hidden-refugee-crisis/

 * http://www.lcrdye.org/en/2017/04/17/the-outcome-of-2-yars/

. https://freedomhouse.org/country/yemen

    https://piazzadcara.wordpress.com/2015/05/14/yemen-6th-statistical-report-from-freedom-house-yemen-about-humanitarian-status-in-yemen/

. http://www.abc.net.au/news/2016-11-01/yemen-10,000-children-dead-from-preventable-diseases-un-says/7982474

. https://www.unicef.org/media/media_92068.html

    https://www.unicef.org/media/media_94382.html

    http://www.odvv.org/news-322-UNICEF-Over-20-Million-in-Yemen-in-Need-of-Aid

. http://www.presstv.ir/Detail/2017/03/28/515848/Yemen-Saudi-Arabia-UNICEF

   http://www.presstv.ir/Detail/2017/04/17/518425/Yemen-UNICEF-children-teachers-school-Hadi-Saudi-Arabia-Houthis-war

. https://www.unicef.org/videoaudio/PDFs/Yemen_2_Years_-_children_falling_through_the_cracks_FINAL.pdf

১০. http://www.ihrc.org.uk/publications/briefings/11476-war-in-yemen

১১. https://www.hrw.org/world-report/2017/country-chapters/yemen

    https://www.hrw.org/news/2015/05/03/yemen-saudi-led-airstrikes-used-cluster-munitions

১২. https://www.sott.net/article/295257-US-and-UK-accused-of-war-crimes-in-Yemen-for-supplying-weapons-to-Saudis

১৩. http://www.globalresearch.ca/possible-tactical-nuclear-strike-neutron-bomb-in-yemen/5452876ÂÂÂÂ

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: